জীবন পাঠ হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র জীববিজ্ঞান বই এর ১ম অধ্যায়। জীবন পাঠ অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
জীবন পাঠ অধ্যায়ের সৃজনশীল
১. জীববিজ্ঞান শিক্ষক জীবের শ্রেণিবিন্যাস পড়াতে গিয়ে মৃতজীবী বা পরজীবী ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করলেন। তারপর তিনি বহুকোষী, স্বভোজী উদ্ভিদ ও বহুকোষী, পরভোজী প্রাণীর রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিলেন।
ক. দ্বিপদ নামকরণ কী?
খ. কীটতত্ত্বকে ফলিত শাখার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কেন?
গ. শিক্ষকের বর্ণনাকৃত প্রথম রাজ্যটির বৈশিষ্ট্য লেখ।
ঘ. শেষোক্ত রাজ্য দুইটির মধ্যে কোনটির জীব অধিকতর উন্নত? বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ICBN এর নীতিমালা অনুসারে কোনো গণ নামের শেষে একটি প্রজাতিক নাম যুক্ত করে দুটি পদের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক নাম প্রদান করাকে বলা হয় দ্বিপদ নামকরণ।
খ. জীববিজ্ঞানের কীটতত্ত্ব শাখায় কীটপতঙ্গের জীবন, উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। যেহেতু কীটতত্ত্বে তত্ত্বীয় বিষয় আলোচনা না করে কীটপতঙ্গ সম্পর্কিত প্রায়োগিক বিষয় আলোচনা করা হয়, সেহেতু কীটতত্ত্বকে জীববিজ্ঞানের ফলিত শাখা বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে শিক্ষকের বর্ণনাকৃত প্রথম রাজ্যটি হলো ফানজাই। কারণ এ রাজ্যের অধিকাংশ জীবই স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী। নিচে ফানজাই রাজ্যের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
১. এদের অধিকাংশই স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী।
২. দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত।
৩. এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত।
৪. কোষপ্রাচীর কাইটিন বস্তু দিয়ে গঠিত।
৫. খাদ্যগ্রহণ শোষণ পদ্ধতিতে ঘটে।
৬. ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত।
৭. হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে।
ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষকের বর্ণনাকৃত শেষোক্ত রাজ্য দুটি হলো প্লানটি ও অ্যানিমেলিয়া। এ রাজ্য দুটির মধ্যে অ্যানিমেলিয়া অধিক উন্নত। নিচে এর কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-
গ্লানটি রাজ্যের সদস্যরা প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত সালোকসংশ্লেষণকারী এ উদ্ভিদ। এদের দেহে উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। এদের ভূণ সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে ডিপ্লয়েড পর্যায় শুরু হয়। প্রধানত স্থলজ, তবে অসংখ্য জলজ প্রজাতি আছে। এদের যৌন জনন অ্যানাইসোগ্যামাস (Anisogamaus) অর্থাৎ আকার, আকৃতি অথবা শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যবিশিষ্ট ভিন্নধর্মী দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। এরা আর্কিগোনিয়েট অর্থাৎ আর্কিগোনিয়াম বা স্ত্রীজনন অঙ্গবিশিষ্ট উদ্ভিদ। এরা সপুষ্পক।
অন্যদিকে, অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের সদস্যরা নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট ও বহুকোষী প্রাণী। এদের কোষে কোনো জড় কোষপ্রাচীর, প্লাস্টিড ও কোষগহ্বর নেই। প্লাস্টিড না থাকায় এরা হেটারোট্রোফিক অর্থাৎ পরভোজী এবং খাদ্য গলাধঃকরণ করে, দেহে জটিল টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। এরা প্রধানত যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। পরিণত ডিপ্লয়েড পুরুষ এবং স্ত্রী প্রাণীর জননাঙ্গ থেকে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপন্ন হয়। ভ্রূণ বিকাশকালীন সময়ে ভ্রূণীয় স্তর সৃষ্টি হয়। উপর্যুক্ত রাজ্য দুটির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনামূলক বলা যায়, প্লানটি রাজ্য থেকে অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের জীব অধিকতর উন্নত।
২. নিচের উদ্দীপকটি লক্ষ কর-

ক. জাতীয় ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
খ. শ্রেণিবিন্যাসে নেস্টেড হায়ারার্কি প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের A-তে বিদ্যমান জীবসমূহের রাজ্যের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের B-তে নির্দেশিত নামকরণ পদ্ধতি বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতীয় ফুল শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea nouchali.
খ. জীবজগতের জীবসমূহকে রাজ্য, পর্ব, শ্রেণি, বর্গ, গোত্র, গণ ও প্রজাতি এভাবে বড় থেকে ছোট ধাপে ধাপে শ্রেণিবিন্যাসের পদ্ধতিই হলো নেস্টেড হায়ারার্কি। শ্রেণিবিন্যাসে নেস্টেড হায়ারার্কির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ নেস্টেড হায়ারার্কির মাধ্যমে শ্রেণিবিন্যাসে জীবের বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা জানা যায়। এছাড়াও কোন ধাপের উপসেট, কোন ধাপ তাও জানা যায়। যেমন- রাজ্যের উপসেট হলো পর্ব, পর্বের উপসেট হলো শ্রেণি, শ্রেণির উপসেট হলো বর্গ, বর্গের উপসেট হলো গোত্র, গোত্রের উপসেট গণ, গণের উপসেট প্রজাতি, যা নেস্টেড হায়ারার্কির মাধ্যমে জানা যায়।
গ. উদ্দীপকের A-তে বিদ্যমান জীবসমূহ হলো Amoeba. Paramecium, যারা প্রোটিন্টা রাজ্যের সদস্য। নিচে প্রোটিস্টা রাজ্যের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-
প্রোটিন্টা রাজ্যের জীব এককোষী বা বহুকোষী হয়ে থাকে। তবে কিছু সদস্য বহুকোষী প্রকৃতির। এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত এবং কোষে ক্রোমাটিন বস্তু নিউক্লিয়ার পর্দা দ্বারা পরিবৃত্ত থাকে। ক্রোমাটিন বস্তুতে DNA, RNA এবং প্রোটিন থাকে। তবে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন এবং কনজুগেশনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটে। কিন্তু কোনো ভ্রূণ গঠিত হয় না।
ঘ. উদ্দীপকে B-তে বিদ্যমান জীবসমূহ হলো Mangifera indica এবং Oryza sativa এবং এদের নির্দেশিত নামকরণ পদ্ধতি হলো দ্বিপদ নামকরণ। নিচে দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হলো-
১. নামকরণ ল্যাটিন ভাষায় কিংবা ল্যাটিন ভাষার মতো করে উপস্থাপন করতে হবে।
২. বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশটি গণ নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নাম। যেমন- Oryza sativa এটি ধানের বৈজ্ঞানি নাম এখানে Oryza গণ নাম এবং sativa প্রজাতিক পদ।
৩. জীবজগতের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক নামকে অনন্য হতে হবে। কারণ, একই নাম দুটি পৃথক জীবের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেই।
৪. বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশের প্রথম অক্ষর বড় অক্ষর হবে, বাকি অক্ষরগুলো ছোট অক্ষর হবে। দ্বিতীয় অংশটির নাম ছোট অক্ষর দিয়ে লিখতে হবে। যেমন- আম Mangifera indica.
৫. বৈজ্ঞানিক নাম মুদ্রণের সময় সর্বদা ইটালিক অক্ষরে লিখতে হবে। যেমন- ধান Oryza sativa.
৬. হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতির নামের নিচে আলাদা আলাদা দাগ দিতে হবে। যেমন- Oryza sativa.
৭. যদি কয়েকজন বিজ্ঞানী একই জীবকে বিভিন্ন নামকরণ করেন, তবে অগ্রাধিকার আইন অনুসারে প্রথম বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত নামটি গৃহীত হবে।
৮. যিনি প্রথম কোনো জীবের বিজ্ঞান সম্মত নাম দিবেন। তাঁর নাম প্রকাশের সালসহ উক্ত জীবের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে সংক্ষেপে সংযোজন করতে হবে। যেমন- Oryza sativa L., 1753.
৩. নিচের ছকটি লক্ষ কর-

ক. স্ক্লেরাইড কী?
খ. অনৈচ্ছিক পেশিকে মসৃণ বলা হয় কেন?
গ. ‘Z’ এর শ্রেণিবিন্যাস ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘Y’ যে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সে রাজ্যটি X রাজ্য থেকে উন্নত বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ফ্লোরাইড হলো স্ক্লেরেনকাইমা জাতীয় কোষ যা স্টোনসেল নামেও পরিচিত।
খ. যেসকল পেশি টিস্যুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয় তাদেরকে অনৈচ্ছিক পেশি বলে। এ পেশির কোষগুলো মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না অর্থাৎ মসৃণ। এজন্য এ পেশিকে মসৃণ পেশি বলা হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তনালি, পৌষ্টিক নালির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে।
গ. উদ্দীপকের Z হলো Ho-mo sapiens, যা মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম। নিচে Ho-mo sapiens অর্থাৎ মানুষের শ্রেণিবিন্যাস ব্যাখ্যা করা হলো-
রাজ্য: Animalia
পর্ব: Chordata
শ্রেণি: Mammalia
বর্গ: Primate
গোত্র: Hominide
গণ: Ho-mo
প্রজাতি: Ho-mo sapiens (মানুষ)
ঘ. উদ্দীপকের Y হলো Penicillium, যা ফানজাই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং X হলো Nostoc, যা মনেরা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। ফানজাই রাজ্যের জীবসমূহ মনেরা রাজ্যের জীব থেকে উন্নত- উক্তিটি নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
ফানজাই রাজ্যের অধিকাংশ জীবই স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী। এদের দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত। এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত, কোষপ্রাচীর কাইটিন বন্ধু দিয়ে গঠিত, খাদ্য গ্রহণ শোষণ পদ্ধতিতে ঘটে। এদের ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত এবং হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে।
অন্যদিকে, মনেরা রাজ্যের জীবসমূহ এককোষী, ফিলামেন্টাস কলোনিয়াল। কোষে ক্রোমাটিন বন্ধু থাকলেও নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা নেই। এদের কোষে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুর মধ্যে শুধুমাত্র রাইবোসোম থাকে। কোষ বিভাজন দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। প্রধানত শোষণ পদ্ধতিতে খাদ্যগ্রহণ করলেও কিছু সদস্য সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য তৈরি করতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, মনেরা অপেক্ষা ফানজাই রাজ্যের জীবদের গঠন জটিলতর। তাই বলা যায়, মনেরা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত জীব অপেক্ষা ফানজাই রাজ্যের জীবসমূহ উন্নততর।
৪. তিনটি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে-
Oryza sativa, Mangifera indica এবং Penicillium SP
ক. আর্কিগোনিয়েট কাকে বলে?
খ. মানুষ Primate বর্গের সদস্য হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ৩য় জীবটির রাজ্যগত বৈশিষ্ট্য লিখ।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ৩য় জীবটির প্রথম ও দ্বিতীয় জীব থেকে আলাদা বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. আর্কিগোনিয়াম বা স্ত্রীজনন অঙ্গবিশিষ্ট উদ্ভিদকে আর্কিগোনিয়েট বলে।
খ. Primate বর্গের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এদের আঁকড়ে ধরার উপযোগী হাত এবং ঘ্রাণ অপেক্ষা দৃষ্টিশক্তি বেশি উন্নত হয়। আর এ বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকার কারণেই মানুষকে Primate বর্গের প্রাণী বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের তৃতীয় জীবটি হলো পেনিসিলিয়াম। এটি সুপার কিংডম-২ অর্থাৎ ইউক্যারিওটার একটি রাজ্য ফানজাই-এর অন্তর্ভুক্ত। ফানজাই-এর রাজ্যগত বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো-
১. এদের অধিকাংশই স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী।
২. দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত।
৩. এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত।
৪. কোষপ্রাচীর কাইটিন বস্তু দিয়ে গঠিত।
৫. খাদ্যগ্রহণ শোষণ পদ্ধতিতে ঘটে।
৬. ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত।
৭. হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে।
ঘ. উদ্দীপকের তৃতীয় জীবটি হলো Penicillium যা ফানজাই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। আবার প্রথম ও দ্বিতীয় জীবদ্বয় হলো যথাক্রমে Oryza sativa (ধান) ও Mangifera indica (আম); যা প্লানটি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। জীব তিনটির মধ্যে তৃতীয় জীবটি প্রথম ও দ্বিতীয় জীব থেকে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে আলাদা। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
১. তৃতীয় জীবটি নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় জীবের পাতায় সালোকসংশ্লেষণকারী বর্ণকণিকা ক্লোরোফিল থাকায় সূর্যের আলো ও পানির সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে।
২. তৃতীয় জীবটি হ্যাপ্লয়েড স্পোরের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় জীব যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটায়।
৩. তৃতীয় জীবটি অপুষ্পক অর্থাৎ এদের ফুল হয় না। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় জীব সপুষ্পক অর্থাৎ এদের ফুল হয়।
৪. তৃতীয় জীবটিকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় জীবকে মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায়।
৫. তৃতীয় জীবটিতে পরিবহন কলাগুচ্ছ অনুপস্থিত। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় জীবে উপস্থিত।
উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে, তৃতীয় জীবটি প্রথম ও দ্বিতীয় জীব থেকে আলাদা।
৫. ডা: খাস্তগীর স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জীববিজ্ঞান বইটি পাঠ করে ডায়াটম ও কাঁঠাল গাছের জগৎ সম্পর্কে অবহিত হয় এবং জাতীয় পশু বাঘের বৈজ্ঞানিক নামকরণ পদ্ধতিও জানতে পারে।
ক. শ্রেণিবিন্যাসের লক্ষ্য কী?
খ. প্রোক্যারিওটা ব্যাখ্যা কর।
গ. উল্লেখিত শেষ লাইনটির পদ্ধতিটির বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের প্রথম দুটি জীবে ক্লোরোফিল থাকলেও শ্রেণিবিন্যাসে তাদের অবস্থান ভিন্ন হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিবিন্যাসের লক্ষ্য হচ্ছে এই বিশাল ও বৈচিত্র্যময় জীবজগৎকে সহজভাবে অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে সঠিকভাবে জানা।
খ. প্রোক্যারিওটা বলতে আদিকোষ বা প্রাককেন্দ্রিক কোষকে বুঝায়। এ ধরনের কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না। এ জন্য এদের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষও বলা হয়। এসব কোষের নিউক্লিয়াস কোনো পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে না। তাই নিউক্লিও বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবোজোম থাকে। ক্রোমোজোমে কেবল DNA থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল বা ব্যাকটেরিয়ায় এ ধরনের কোষ পাওয় যায়।
গ. উদ্দীপকের শেষ লাইনে জাতীয় পশু বাঘের বৈজ্ঞানিক নামকরণ পদ্ধতি অর্থাৎ দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-
১. নামকরণ ল্যাটিন ভাষায় কিংবা ল্যাটিন ভাষার মতো করে উপস্থাপন করতে হবে।
২. বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশটি গণ নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নাম। যেমন- Panthera tigris এটি বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম এখানে Panthera গণ নাম এবং tigris প্রজাতিক পদ।
৩. জীবজগতের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক নামকে অনন্য হতে হবে। কারণ, একই নাম দুটি পৃথক জীবের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেই।
৪. বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশের প্রথম অক্ষর বড় অক্ষর হবে, বাকি অক্ষরগুলো ছোট অক্ষর হবে। দ্বিতীয় অংশটির নাম ছোট অক্ষর দিয়ে লিখতে হবে। যেমন- বাঘ Panthera tigris.
৫. বৈজ্ঞানিক নাম মুদ্রণের সময় সর্বদা ইটালিক অক্ষরে লিখতে হবে। যেমন: বাঘ Panthera tigris.
৬. হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতির নামের নিচে আলাদা আলাদা দাগ দিতে হবে। যেমন- Panthera tigris.
৭. যদি কয়েকজন বিজ্ঞানী একই জীবকে বিভিন্ন নামকরণ করেন, তবে অগ্রাধিকার আইন অনুসারে প্রথম বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত নামটি গৃহীত হবে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম জীব দুটি হলো ডায়াটম ও কাঁঠাল। উভয় জীবেই ক্লোরোফিল থাকায় এরা সবুজ বর্ণের হয়। কিন্তু বৈশিষ্ট্যে মিল না থাকার কারণে শ্রেণিবিন্যাসে তাদের অবস্থান ভিন্ন ধরনের। এরা যথাক্রমে প্রোটিল্টা ও প্লানটি রাজ্যের অন্তর্গত। নিচে জীব দুটির ভিন্ন রাজ্যভুক্ত হওয়ার সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো- প্রোটিন্টা রাজ্যের সদস্যরা এককোষী বা বহুকোষী, একক বা কলোনিয়াল (দলবদ্ধ) বা ফিলামেন্টাস এবং সুগঠিত নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট। কোষে ক্রোমাটিন বস্তু নিউক্লিয়ার পর্দা দ্বারা পরিবৃত্ত থাকে। ক্রোমাটিন বস্তুতে DNA, RNA এবং প্রোটিন থাকে। কোষে সকল ধরনের অঙ্গাণু থাকে।
খাদ্য গ্রহণ শোষণ, গ্রহণ বা ফটোসিনথেটিক পদ্ধতিতে ঘটে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন ঘটে এবং কনজুগেশনের মাধ্যমে অর্থাৎ জৈবনিকভাবে ভিন্ন কিন্তু গঠনগতভাবে এক, এইরূপ দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটে। কোনো ভ্রূণ গঠিত হয় না। ডায়াটমে এসকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অপরদিকে, প্লানটি রাজ্যের সদস্যরা প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত সালোকসংশ্লেষণকারী উদ্ভিদ। এদের দেহে উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। এদের ভ্রূণ সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে ডিপ্লয়েড পর্যায় শুরু হয়। প্রধানত স্থলজ, তবে অসংখ্য জলজ প্রজাতি আছে। এদের যৌন জনন অ্যানাইসোগ্যামাস অর্থাৎ আকার, আকৃতি অথবা শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যবিশিষ্ট ভিন্নধর্মী দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন হয়।
এরা আর্কিগোনিয়েট অর্থাৎ আর্কিগোনিয়াম বা স্ত্রীজনন অঙ্গবিশিষ্ট উদ্ভিদ। এরা সপুষ্পক। কাঁঠালে এ সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ডায়াটমে প্রোটিস্টা রাজ্যের বৈশিষ্ট্য থাকায় ডায়াটম প্রোটিস্টা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে কাঁঠালে প্লানটি রাজ্যের জীবদের বৈশিষ্ট্য থাকায় কাঁঠাল প্লানটি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার কারণেই ডায়াটম ও কাঁঠাল শ্রেণিবিন্যাসে একই রাজ্যভুক্ত হয়নি।