(পৌরনীতি) SSC: রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র পৌরনীতি বই এর ৪র্থ অধ্যায়। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে করেন, একনায়কতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা জনগণের সুযোগ-সুবিধার অন্তরায়। এ ব্যবস্থার অসুবিধার দিক বিবেচনা করে বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র একনায়কতন্ত্র সমর্থন করে না।
ক. নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
খ. উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. কীভাবে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা যায়? বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতামতের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজা বা রানি উত্তরাধিকারসূত্রে বা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে, রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে সীমিত ক্ষমতা ভোগ করেন তাকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলে।

খ. উত্তরাধিকার সূত্রের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, তার একটি হলো নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র এবং অন্যটি হলো নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র। উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজা বা রানি যখন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে তখন তাকে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বলা হয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে সৌদি আরবে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলতে বুঝি, যে ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রের রাজা বা রানি উত্তরাধিকারসূত্রে বা নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হন এবং তিনি সীমিত ক্ষমতা ভোগ করেন। রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসনক্ষমতা থাকে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। যুক্তরাজ্যে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে।

গ. যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে, তাকে আমরা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলি।
এ ধরনের রাষ্ট্র গঠনে প্রথমত, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বেকার ভাতা প্রদান, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সমাজের মঙ্গলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
তৃতীয়ত, সচ্ছলদের ওপর উচ্চহারে কর ধার্য করে ও কম সচ্ছলদের ওপর কম কর ধার্য করে দরিদ্র ও দুস্থদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
চতুর্থত, কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থরক্ষার জন্য ন্যূনতম মজুরির ব্যবস্থা করে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। পণ্য মত, সমবায় সমিতি গঠন ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন করে কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতামত যথার্থ ও বাস্তব।
একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে না থেকে স্বেচ্ছাচারী শাসক বা দলের হাতে ন্যস্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় শাসকের – কারও কাছে জবাবদিহিতা থাকে না। দেশের জনগণকে শাসকের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলতে হয়। ফলে জনগণের চাহিদার কোনো প্রতিফলন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে দেখা যায় না। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বা সুযোগ-সুবিধার প্রতি শাসকের তোয়ারা থাকে না, যা তাকে স্বেচ্ছাচারী শাসকে রূপান্তর করে। তাই একনায়কতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা জনগণের সুযোগ-সুবিধার অন্তরায়। আবার, আধুনিক বিশ্বে জনগণের অধিকারকে সরকারব্যবস্থার মৌলিক বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ফলে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থাকে সব রাষ্ট্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। যদিও নগণ্য কয়েকটি রাষ্ট্রে একনায়কতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা রয়েছে। তবুও বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রই একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ত্যাগ করে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেছে। যে ব্যবস্থায় জনগণকেই সকল ক্ষমতার উৎস বিবেচনা করা হয়। জনগণের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতামত যথার্থ হয়েছে।

২. মধ্যপ্রাচ্যের ‘ক’ নামক একটি দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মামুন নামক এক ব্যক্তির শাসন। তার বাবাও দীর্ঘদিন ওই দেশ শাসন ও শোষণ করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বর্তমানে দেশটির সকল ক্ষমতা তার হাতে। সকল সিদ্ধান্ত তিনি একাই গ্রহণ করেন। এমনকি দেশের গণমাধ্যমগুলো তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে না, তার কাজের জন্য তাকে কারও কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না।
ক. ডিকটেটর শব্দের অর্থ কী?
খ. একনায়কতন্ত্র বিশ্ব শান্তির বিরোধী- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাষ্ট্রে যে ধরনের শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি চরম স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ডিকটেটর শব্দের অর্থ একনায়ক।

খ. একনায়কতন্ত্রে উগ্র জাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয়। ক্ষমতার লোভ একনায়কের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব সৃষ্টি করে। হিটলার এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে সারা পৃথিবীতে ধ্বংস ডেকে এনেছিলেন। এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী। এজন্য এ ধরনের শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বশান্তির বিরোধী বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাষ্ট্রে যে ধরনের শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান তা হলো একনায়কতন্ত্র।
একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা জনগণের হাতে না থেকে একজন স্বেচ্ছাচারী শাসক বা দল বা শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে। এতে নেতাই দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। একনায়কতান্ত্রিক শাসককে সহায়তা করার জন্য মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকে। তারা শাসকের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলে। একনায়কের আদেশই আইন। এ ব্যবস্থায় শাসকের কারও কাছে জবাবদিহিতা থাকে না। এতে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। এই দলের নেতাই সরকারপ্রধান। তার ইচ্ছা অনুযায়ী দল পরিচালিত হয়। একনায়কতন্ত্রে গণমাধ্যমগুলো যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি নেতা ও তার দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এগুলো নিরপেক্ষভাবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয় না। বরং সরকারি দলের গুণকীর্তনে ব্যবহৃত হয়। এ সরকারব্যবস্থায় আইন ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। একনায়কের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও বিচারকাজ সম্পন্ন করা হয়। যে কেউ ইচ্ছা করলে তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে না, তার কাজের জন্য তাকে কারও কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না। উল্লিখিত উদ্দীপকেও আমরা অনুরূপ চিত্র দেখতে পাই। উদ্দীপকের শাসকও তেমনি সকল সিদ্ধান্ত একাই গ্রহণ করেন এবং গণমাধ্যমগুলো তার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি যে কেউ ইচ্ছে করলে তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে না। অর্থাৎ উদ্দীপকের শাসক একজন একনায়ক । সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত রাষ্ট্রে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান।

ঘ. উক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থাৎ একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি চরম স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা- উক্তিটি যথার্থ।
একনায়কতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে। ফলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। একনায়ককে কারও নিকট জবাবদিহি করতে হয় না। তার আদেশই আইন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। এতে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই। এদের স্বেচ্ছাচারীর জন্য বিকল্প নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টির অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এতে গণমাধ্যমগুলো বিশেষ করে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অস্বীকার করা হয় একনায়কতন্ত্রে সমস্ত ক্ষমতা নেতা ও দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়। ফলে জনগণের মধ্যে দায়িত্ববোধ জন্ম নেয় না। কারও নিকট জবাবদিহিতা করতে হয় না বলে একনায়ক দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যায়। এ শাসনব্যবস্থায় উগ্র জাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয়। এক জাতি, এক দেশ, এক নেতা একনায়কতন্ত্রের আদর্শ বলে পরিগণিত হয়। তারা খেয়াল খুশিমতো শাসন ক্ষমতা পরিচালিত করে থাকেন। ফলে একনায়কতন্ত্র স্বেচ্চাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তাই উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি চরম স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা- উক্তিটি যথার্থ।

আরো পড়ো →পৌরনীতি ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো নাগরিক ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. আরমান ‘ক’ রাষ্ট্রের নাগরিক। আয়তনে ছোট হওয়ায় রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনিক কাজ এক জায়গা থেকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উক্ত দেশটি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে জনি ‘খ’ রাষ্ট্রের নাগরিক। উক্ত রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা দুই-ই বেশি। তাই রাষ্ট্রকে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ছোট ছোট অঙ্গরাজ্যে ভাগ করা হয়েছে। ফলে দেশটির সার্বিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে দেশটির সরকার ও অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।
ক. সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাকে বলে?
খ. গণতন্ত্রকে কীভাবে সফল করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ‘ক’ রাষ্ট্রটি কোন ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ‘খ’ রাষ্ট্রটি বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রের অনুরূপ-বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে সেই ধরনের রাষ্ট্রকে বোঝায়, ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করে না এবং এতে উৎপাদনের উপকরণগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে।

খ. বর্তমান যুগে প্রচলিত শাসনব্যবস্থাগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও উৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। কিন্তু গণতন্ত্র চর্চা বা বাস্তবায়নের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠী, অর্থনৈতিক সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, দক্ষ প্রশাসন এবং উপযুক্ত নেতৃত্ব সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে গণতন্ত্রকে সফল করে তুলতে পারে। এছাড়াও পরমতসহিষ্ণুতা, আইনের শাসন, মুক্ত ও স্বাধীন প্রচারযন্ত্র, একাধিক রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক সহনশীলতা গণতন্ত্রকে সফল করার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

গ. উদ্দীপকে ‘ক’ রাষ্ট্রটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করে। ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র দুই ধরনের হয়।
যথা- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা থাকে। দেশ কেন্দ্র থেকে পরিচালনা করা হয়। এ ব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। রাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রদেশ বা প্রশাসনিক অঞ্চল থাকতে পারে। তবে তারা কেন্দ্রের প্রতিনিধি বা সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
উদ্দীপকে আরমানের বসবাসকৃত ‘ক’ রাষ্ট্রটির সকল প্রশাসনিক কাজ এক জায়গা থেকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, যা এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে গৃহীত হওয়ার ফলে দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয় যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। আর উদ্দীপকের ‘ক’ রাষ্ট্রটিও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ‘ক’ রাষ্ট্রটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করে।

ঘ. উদ্দীপকের ‘খ’ রাষ্ট্রটি বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রের অনুরূপ। বর্তমানে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে যে দুই ধরনের রাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় একাধিক অঞ্চল বা প্রদেশ মিলিত হয়ে একটি রাষ্ট্র গঠন করে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বলে। এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশ বা অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পাশাপাশি অবস্থিত কতকগুলো ক্ষুদ্র অঞ্চল বা প্রদেশ একত্রিত হয়ে একটি বড় রাষ্ট্র গঠন করে বলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী হয়। এতে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ প্রদেশ বা আঞ্চলিক সরকারের হাতে এবং জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। ফলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারই মৌলিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে দেশ পরিচালনা করে থাকে। এরূপ রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম একটি উদাহরণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর উদ্দীপকের ‘খ’ রাষ্ট্রটিও প্রশাসনিক সুবিধার্থে ছোট ছোট অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত এবং মাঝে মাঝে দেশটির সরকার ও অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায়। এসব বৈশিষ্ট্যসমূহ যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় ক্ষমতার এখতিয়ার নিয়ে কেন্দ্র, প্রদেশ এমনকি বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হতে দেখা যায়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং ‘খ’ রাষ্ট্রটিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা থাকায় তা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ।

৪. দুটি দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বরূপ :
১ম দেশ : রাজতান্ত্রিক দেশ তবুও শাসকের ছেলে শাসক। তবে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
২য় দেশ : গণতান্ত্রিক দেশ। তবুও শাসকের ছেলে শাসক তবে সীমিত ক্ষমতার অধিকারী।
ক. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাকে বলে?
খ. ‘গণতন্ত্রই জনগণের ক্ষমতার উৎস’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ১ম দেশে কোন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা বিদ্যমন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ১ম ও ২য় দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা কি একই? বিশ্লেষণপূর্বক মতামত দাও ।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যে সরকারব্যবস্থায় একাধিক অঞ্চল বা প্রদেশ মিলে একত্রিত হয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে।

খ. গণতন্ত্রই জনগণের ক্ষমতার প্রধান উৎস— উক্তিটি যৌক্তিক।
গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। অর্থাৎ জনগণ একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তার ক্ষমতা তথা অধিকার ভোগ করতে পারে। অন্য কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণ তার মতামত সঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয় না। এমনকি অনেক সময় জনমতকে কলুষিত করা হয়। শুধু গণতন্ত্রই জনগণকে স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। তাই বলা যায়, গণতন্ত্রই জনগণের ক্ষমতার প্রধান উৎস।

গ. উদ্দীপকে ১ম দেশে নিরঙ্কুশ রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিদ্যমান।
উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজা বা রানী যখন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে তখন তাকে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বলা হয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে সৌদি আরবে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে। উদ্দীপকে ১ম দেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশটি রাজতান্ত্রিক; সেখানে শাসকের ছেলে শাসক হন। শাসক একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। দেশটি শাসনব্যবস্থার এরূপ চিত্র পর্যবেক্ষণ করে সহজেই অনুমান করা যায়, দেশটিতে নিরঙ্কুশ রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকে ১ম দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র এবং ২য় দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা হলো নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র। এ কারণে দুটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য এক নয়।
রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে সেই রাষ্ট্রকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। রাজতন্ত্রের দুটি রূপ রয়েছে; যথা— নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রে রাজা বা রানী রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এ শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। বর্তমান বিশ্বে এ ধরনের রাষ্ট্রের সংখ্যা নগণ্য। আবার, নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকার সূত্রে নির্বাচিত হন কিন্তু তিনি সীমিত ক্ষমতা ভোগ করেন। রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা থাকে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। এ ধরনের রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে ১ম দেশে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিদ্যমান। কারণ সেখানে শাসকের ছেলে শাসক হন এবং তিনি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। আর ২য় দেশটি হলো গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু সেখানে শাসকের ছেলে শাসক হন। তবে তিনি সীমিত ক্ষমতার অধিকারী। অর্থাৎ হয়। দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান। উদ্দীপকের দেশ দুটিতে উত্তরাধিকার সূত্রে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেও তাদের ক্ষমতা ভোগের ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়, এছাড়া সরকারব্যবস্থাতেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক ও নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
উপরিউক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয়, নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হলো রাজতন্ত্রের প্রকৃত রূপ। আর নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র হলো সীমিত ক্ষমতার রাজতন্ত্র এবং পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার উপস্থিতি। বিশ্বে সৌদি আরবে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র এবং ব্রিটেনে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান।

৫. সেজান সাহেব একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার নিয়মগুলো তাকে ভাবিয়ে তোলে। কারণ কাজের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। কর্তৃপক্ষই সব ক্ষমতার দারিদার এবং তার আদেশই আইন। অপরদিকে, মিজান সাহেব একটি সেবামূলক সংস্থার প্রধান শাখায় কাজ করেন। সংস্থার আরও কয়েকটি শাখা থাকলেও প্রধান শাখাই পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দ অন্যান্য শাখা কেন্দ্রবিন্দুর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, রাজিব সাহেব বহুমুখী সমবায় সংস্থার সদস্য। কাজের সুবিধার জন্য একাধিক শাখায় নীতিগতভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। এ কারণে সংস্থাটি গঠনগত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী।
ক. গণতন্ত্র কাকে বলে?
খ. কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে সেজান সাহেবের প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন ধরনের রাষ্ট্রের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে রাজিব সাহেব এবং মিজান সাহেবের সংস্থার কাজের প্রকৃতি ভিন্ন- পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যে রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণের কল্যাণের জন্য জনগণের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে তাকে গণতন্ত্র বলে।

খ. যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে তাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে। এ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র জনকল্যাণের জন্য যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলো হলো নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) পূরণের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বেকারভাতা প্রদান, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এছাড়াও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র জনকল্যাণের জন্য নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে।

গ. উদ্দীপকের সেজান সাহেবের প্রতিষ্ঠানের সাথে একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মিল রয়েছে।
একনায়কতন্ত্র হলো ক্ষমতার উৎসের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি প্রকরণ, যা কার্যত গণতন্ত্রের বিপরীত। এটি এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা। এতে রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত না। থেকে একজন স্বেচ্ছাচারী শাসক বা দল বা শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে।
এ শাসক বা শাসকশ্রেণিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন এবং একে বলা হয় একনায়ক বা ডিক্টেটর। একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ডিক্টেটরকে সহায়তা করার জন্য মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকলেও ডিক্টেটর তাদের কথা মানতে বাধ্য নন। বরং এই মন্ত্রিপরিষদই একনায়কের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকে। একনায়ক কাউকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন এবং তার আদেশই আইন। অপরদিকে, উদ্দীপকের সেজান সাহেবের প্রতিষ্ঠানেও এরূপ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। উক্ত প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষই সর্বময় ক্ষমতার দাবিদার এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশই সেখানে আইন। আবার, প্রতিষ্ঠানটিতে কাজের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না, যা একনায়কতন্ত্রে মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদের উপেক্ষিত হওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর তাই উল্লিখিত আলোচনা প্রসঙ্গে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, উদ্দীপকের সেজান সাহেবের প্রতিষ্ঠানের সাথে একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের রাজিব সাহেব এবং মিজান সাহেবের সংস্থার প্রকৃতি আলাদা হওয়ায় তাদের কাজের প্রকৃতিও ভিন্ন।
উদ্দীপকের রাজিব সাহেবের বহুমুখী সমবায় সংস্থাটি কাজের সুবিধার জন্য একাধিক শাখায় নীতিগতভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে। এরূপ বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার আদলে পরিচালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুফলের স্পষ্ট একটি প্রতিফলন রয়েছে সংস্থাটির গঠনগত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার মাধ্যমেও। অপরদিকে, এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থার আদলে পরিচালিত হচ্ছে মিজান সাহেবের কর্মরত সংস্থাটি। কেননা, এককেন্দ্রিক সরকারের মতো এ সংস্থাটির বিভিন্ন শাখা থাকলেও পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু প্রধান শাখা এবং অন্যান্য শাখা কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। সাধারণভাবেই এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার কার্যক্রম ও কার্যপ্রকৃতি আলাদা। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রীয়, সরকারব্যবস্থার ক্ষমতা প্রদেশ বা অঞ্চলসমূহের মধ্যে সাংবিধানিকভাবে বন্টিত হয়ে থাকে। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে প্রদেশ বা অঞ্চলসমূহের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন বা প্রয়োজনে ক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার বণ্টন সংবিধানে উল্লিখিত ও সুনির্দিষ্ট থাকে বলে তা পরিবর্তন দুঃসাধ্য। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতার চর্চা হয় বলে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের অভাব থাকে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রদেশসমূহ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। আর ঠিক এভাবেই রাজিব সাহেবের উক্ত সংস্থাটির শাখাসমূহ পৃথক ও স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হলেও মিজান সাহেবের কর্মরত প্রতিষ্ঠানটির শাখাসমূহ কেন্দ্রের নির্দেশে, কেন্দ্রের এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রের পক্ষে কাজ করবে।
সুতরাং উদ্দীপকের রাজিব সাহেব ও মিজান সাহেবের সংস্থার কাজের প্রকৃতি হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

Leave a Comment