(অর্থনীতি) এসএসসি: অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র অর্থনীতি বই এর দ্বিতীয় অধ্যায়। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. ফজলে কবির একজন নামকরা কবি। তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। সারা দেশে তার অনেক সুনাম। এ ছাড়া নিজ উদ্যোগে তিনি একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেও অনেক প্রশংসিত হয়েছেন।

ক. দ্রব্য কী?
খ. অর্থনৈতিক ও অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলির মধ্যে পার্থক্য রচনা কর।
গ. জনাব ফজলে কবিরের কবিতা লেখার পারদর্শিতা কোন ধরনের সম্পদ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “জনাব ফজলে কবিরের স্থাপিত বিদ্যালয়টি একটি উৎপাদিত সম্পদ”- মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মানুষের অভাব মেটার ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তুগত সব জিনিসই দ্রব্য।

খ. মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য যে কার্যাবলি করে থাকে, তাকে অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলা হয়। অন্যদিকে, যেসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ উপার্জিত হয় না এবং তা জীবনধারণের জন্য ব্যয় করা যায় না তাকে অ-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়।

গ. জনাব ফজলে কবিরের কবিতা লেখার পারদর্শিতা মানবিক সম্পদ।
মানুষের মানবীয় গুণাবলিকে মানবিক সম্পদ বলা হয়। অর্থনীতিতে সম্পদ হলো সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য যেগুলো পেতে চাইলে সেগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। কোনো জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে হয় তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- উপযোগ, অপ্রাচুর্যতা, হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা। হস্তান্তরযোগ্যতা বলতে হাত বদল হওয়া বোঝায়। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায় তা-ই হলো সম্পদ। আবার যেসব দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বোঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। কেননা, এর কোনো বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।
উদ্দীপকে ফজলে কবিরের কবিতা লেখার পারদর্শিতা মানবিক সম্পদ। এটি কোনো অর্থনৈতিক সম্পদ নয়। কারণ এর হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত ফজলে কবিরের কবিতা লেখার পারদর্শিতা মানবিক সম্পদ; কিন্তু অর্থনীতির ভাষায় তা সম্পদ নয়।

ঘ. জনাব ফজলে কবিরের স্থাপিত বিদ্যালয়টি একটি উৎপাদিত সম্পদ- মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করা হলো।
প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যেসব দ্রব্য মানুষের প্রয়োজন মেটায়, তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন— ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদনদী ইত্যাদি। আবার, মানুষের বিভিন্ন প্রকার যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মানবিক সম্পদ বলা হয়। যেমন— শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগাঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ। প্রাকৃতিক ও মানষিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদিত সম্পদ বলা হয়। যেমন— কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, যাতায়াত ও যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি মানুষ তৈরি করে বলে এগুলো উৎপাদিত সম্পদ।

২. সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা দশম শ্রেণির অর্থনীতির ছাত্রী কাকনের ভাই টিভিতে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার ফুটবল ম্যাচ দেখছিল। ম্যাচে এক ফুটবলারের খেলা দেখে সে মন্তব্য করল, এ ধরনের ফুটবলাররা দেশের সম্পদ। একথা শুনে কাকন বলল, ফুটবলাররা সম্পদ হলেও অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পদ নয়। তবে টিভি অর্থনৈতিক সম্পদ।

ক. বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ কত ভাগ?
খ. হস্তান্তরযোগ্যতা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফুটবলারদের প্রতিভা কোন ধরনের সম্পদ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত টিভি অর্থনৈতিক সম্পদ কেন? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলাদেশের বনভূমি মোট ভূখণ্ডের শতকরা ১১.১ ভাগ।

খ. সম্পদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর হস্তান্তরযোগ্যতা। কোনো সম্পদের হাত বদল হওয়ার ক্ষমতাকে হস্তান্তরযোগ্যতা বলে।
যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা হয় তাই সম্পদ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কম্পিউটারের মালিকানা বদল করা যায় বলে কম্পিউটার একটি সম্পদ। আবার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যায় না। কারণ তাঁর প্রতিভাকে হস্তান্তর বা মালিকানার বদল করা সম্ভব নয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফুটবলারদের প্রতিভা একটি মানবিক সম্পদ।
মানুষের মানবীয় গুণাবলিকে মানবিক সম্পদ বলা হয়। অর্থনীতিতে সম্পদ হলো সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য যেগুলো পেতে চাইলে সেগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। কোনো জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে হয় তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। বৈশিষ্ট্যগুলো উপযোগ, অপ্রাচুর্যতা, হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা। হস্তান্তরযোগ্যতা বলতে হাত বদল হওয়া বোঝায়। অর্থাৎ যে ঘরের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায় তাই হলো সম্পদ। আবার যেসব দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বোঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। কেননা এর কোনো বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।
উদ্দীপকে ফুটবলারদের প্রতিভা একটি মানবিক সম্পদ। এটি কোনো অর্থনৈতিক সম্পদ নয়। কারণ এর হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত ফুটবলারদের প্রতিভা মানবিক সম্পদ; কিন্তু অর্থনীতির ভাষায় তা সম্পদ নয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত টিভিকে অর্থনীতিতে সম্পদ বলা হয়।
অর্থনীতিতে সম্পদ হলো যেসব জিনিস বা দ্রব্য পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হয়। যেমন— ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি ইত্যাদি। এগুলো দৃশ্যমান বস্তুগত সম্পদ। আবার ডাক্তারের সেবা, শিক্ষকের পাঠদান ইত্যাদি অদৃশ্যমান ও অবস্তুগত সম্পদ। সম্পদের চারটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে হস্তান্তরযোগ্যতা একটি। হস্তান্তরযোগ্য বলতে বোঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায় তাই হলো সম্পদ।
উদ্দীপকে কাকনদের টিভি একটি সম্পদ। অর্থনীতিতেও একে সম্পদ বলা হয়। কারণ কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে সেই দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিভির উপযোগ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে বিধায় এটি একটি সম্পদ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যাবে না। কারণ তার প্রতিভাকে হস্তান্তর বা মালিকানা বদল করা সম্ভব নয়। কিন্তু টিভির মালিকানা বদল করা যায় বলে টিভি একটি অর্থনৈতিক সম্পদ।
অতএব, উদ্দীপকে উল্লিখিত টিভি একটি অর্থনৈতিক সম্পদ।

পড়ুন → অর্থনীতি পরিচয় অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. মিসেস জমিলা একজন গৃহিণী। তিনি ব্যক্তিগত মহলে সকলকে এ বিষয়ে বোঝান যে, গ্যাসের অপচয় যেন কেউ না করেন, অযথা চুলা জ্বালিয়ে না রাখেন। প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো বাংলাদেশে আরও অনেক প্রকার খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়; যেমন- চীনামাটি, কয়লা, কঠিন শিলা, সিলিকা বালু, গন্ধক ইত্যাদি।

ক. সম্পদ কী?
খ. বাংলাদেশের খনিজ তেল দ্বারা পরিচালিত দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন, কেন্দ্রের নাম লেখ।
গ. মিসেস জমিলার সাথে আমরাও একমত ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চীনামাটি, কয়লা, কঠিন শিলা, সিলিকা বালু, গন্ধক ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।- মূল্যায়ন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যেসব দ্রব্যের উপযোগ আছে, যোগান সীমাবদ্ধ এবং বিক্রয়যোগ্য সেসব দ্রব্যকে অর্থনীতিতে সম্পদ বলে।

খ. গ্যাস, তেল, কয়লার সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাকে তাপ বিদ্যুৎ বলে। বাংলাদেশের খনিজ তেল দ্বারা পরিচালিত দুটি বিদ্রু‍ উৎপাদন কেন্দের নাম হলো- ১. ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কুষ্টিয়া; ২. ঠাকুরগাঁও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

গ. উদ্দীপকে জমিলা খাতুন ব্যক্তিগত মহলে সকলকে বোঝান গ্যাসের অপচয় যেন কেউ না করেন। অযথা চুলা জ্বালিয়ে না রাখেন মিসেস জমিলার সাথে আমরাও একমত।
বাংলাদেশের কলকারখানা, যানবাহন ও যোগাযোগ, যান্ত্রিক চাষাবাদ, গৃহকর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে শক্তি সম্পদের ব্যবহার অপরিহার্য। কয়েকটি উৎস থেকে শক্তি সম্পদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস অন্যতম প্রধান। আমরা প্রাকৃতিক গ্যাস কলকারখানা, গৃহকর্ম ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করি। এছাড়া যানবাহন চলাচলেও প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৯ অনুযায়ী এ যাবৎ দেশে ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে গ্যাসের মোট মজুদ প্রায় ৩৯.৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ গ্যাস রাসায়নিক সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । উদ্দীপকের জমিলা গ্যাসের অপচয় না করার জন্য সকলকে বোঝান। আমরাও মিসেস জমিলার সাথে একমত পোষণ করি।

ঘ. চীনামাটি, কয়লা, কঠিন শিলা, সিলিকা বালু, গন্ধক ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে এ কথাটি মূল্যায়ন করা হলো-
চীনামাটি : নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজর ও চট্টগ্রাম জেলায় চীনামাটি পাওয়া যায়। এটি বাসনপত্র, সেনিটারি দ্রব্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
কয়লা : বাংলাদেশের সিলেট, রাজশাহী, জয়পুরহাট, ফরিদপুর ও দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায় কয়লার পাঁচটি ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্প্রতি দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব কয়লা বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কঠিন শিলা : দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া এবং রংপুর জেলার রাণীপুকুরে কঠিন শিলার মজুদ রয়েছে। বর্তমানে এসব খনি হতে কঠিন শিলা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। রাস্তা, রেলপথ, বাঁধ, নির্মাণ ইত্যাদি কাজে এ শিলা দরকার হয়।
সিলিকা বালু : হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও জামালপুরে সিলিকা বালুর মজুদ রয়েছে। এটি কাচ, রং, রাসায়নিক দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
গন্ধক : বারুদ তৈরি, দিয়াশলাই কারখানা, তেল পরিশোধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গন্ধক লাগে। চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া দ্বীপে গন্ধক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং দেখা যায় চীনামাটি, কয়লা, কঠিন শিলা, সিলিকা বালু, গন্ধক ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসেব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান খনিজ সম্পদগুলো হলো— প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর, চীনামাটি, কয়লা, কঠিন শিলা, সিলিকা বালু, গন্ধক, খনিজ তেল ইত্যাদি। আমাদের দেশে সম্ভাবনাময় খনিজ সম্পদ থাকার কারণে সম্প্রতি বেশকিছু বিদেশি কোম্পানি শিল্পপণ্য ও শক্তি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু আমাদের অবকাঠামোগত কিছু সমস্যার কারণে খনিজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

ক. খনিজ সম্পদ বলতে কী বোঝায়?
খ. সম্পদের বাহ্যিকতার বৈশিষ্ট্যটি ব্যাখ্যা কর।
গ. কয়লা উত্তোলনের বিশেষ প্রযুক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে আমাদের দেশের কয়লা সম্পদকে সম্ভাবনাময় করার উপায় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্দীপকের সম্পদের প্রভাব মূল্যায়ন কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করা হয় এমন কঠিন, তরল বা প্যানীয় খনিজগুলোকে একত্রে খনিজ সম্পদ বলা হয়।

খ. যেসব দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বোঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। কেননা, এর কোনো বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন- কোনো ব্যক্তির কম্পিউটারের ওপর বিশেষ অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান কিংবা কারও শারীরিক সৌন্দর্য বা চারিত্রিক গুণাবলিকে সম্পদ বলা যাবে না। তবে পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে নানাভাবে এগুলোকেও বিক্রয়যোগ্য সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

গ. কয়লা উত্তোলনের বিশেষ প্রযুক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে আমাদের দেশের কয়লা সম্পদকে সম্ভাবনাময় করার কিছু উপায় রয়েছে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫টি কয়লা ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ৫টি কয়লা ক্ষেত্রে কয়লার মোট মজুদের পরিমাণ আনুমানিক ৩৩০০ মিলিয়ন টন। এসব কয়লা উৎপাদনের জন্য ও নতুন কয়লা ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে দুর্নীতিমুগ্ধ করে কয়লা উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা করতে হবে। পদক্ষেপ প্রয়োজনে উন্নত দেশগুলোতে গবেষক দল প্রেরণ করে প্রশিক্ষণ গ্রহ করতে হবে। মোটকথা খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো শক্তিশালী নিয়ে কয়লা সম্পদকে সম্ভাবনাময় করে তুলতে পারবে।

ঘ. উদ্দীপকে খনিজ সম্পদের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে খনিজ সম্পদের প্রভাব অপরিসীম।
খনিজ পদার্থ একটি অতি গুরত্বপূর্ণ ও অপ্রতুল সম্পদ। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিপুল চাহিদা মেটাতে সব দেশ ব্যাপকভাবে খনিজ সম্পদ আহরণ করছে। বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের খনিজ সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর, চীনামাটি, কয়লা, কঠিন শিলা, সিলিকা বালু, গন্ধক, তামা ইত্যাদি খনিজ সম্পদ পাওয়া গেছে। এসব খনিজ সম্পদ নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। প্রধান খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস রাসায়নিক সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে, কলকারখানা ও গৃহে এ গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিমেন্ট, কাঁচ, কাগজ, সাবান প্রভৃতি উৎপাদনের চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়। বাসনপত্র, সেনিটারি দ্রব্য তৈরিতে চীনামাটি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া শক্তি সম্পদের অন্যতম উৎস হিসেবে কয়লা ব্যবহৃত হয়। এভাবে প্রাপ্ত প্রতিটি খনিজ সম্পদ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং দেখা যায়, আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্দীপকের সম্পদের তথ্য খনিজ সম্পদের প্রভাব অপরিসীম।

৫. উদ্দীপক-১ : উচ্চশিক্ষিত গৃহিণী সুমনা সংসারের যাবতীয় কাজ একাই করেন, পারিবারিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি দরিদ্র শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদান করেন।
উদ্দীপক-২ : হাসান শিক্ষা সফরে সারকারখানা পরিদর্শন করে সেখানে সে জানতে পারে দেশের প্রধান খনিজ সম্পদ সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ক. আয় কাকে বলে?
খ. সূর্যের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পদ বলা যায় না কেন ?
গ. উদ্দীপক-১-এ উল্লিখিত সুমনার কাজ কোন ধরনের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্দীপক-২-এ উল্লিখিত খনিজ সম্পদটির অবদান মূল্যায়ন কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. উৎপাদনের কোনো উপকরণ ব্যবহারের জন্য উপকরণটি বা এটির মালিক একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে অর্থ পায়, তাকে আয় বলে।

খ. সূর্যের আলো সম্পদ নয়। কারণ সূর্যের আলো অবাধলভ্য দ্রব্য যার জন্য মানুষকে অর্থ ব্যয় করতে হয় না।
যেসব দ্রব্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাকে অবাধলভ্য দ্রব্য বলে। এসব দ্রব্য প্রকৃতিতে অবাধে পাওয়া যায় এবং এর যোগান সীমাহীন থাকে। আর তাই সূর্যের আলো অর্থনৈতিক সম্পদ নয়।

গ. উদ্দীপক-১-এ সুমনার কাজ অ-অর্থনৈতি কার্যাবলি অন্তর্ভুক্ত।
যেসব কার্যাবলির মাধ্যমে অর্থ উপার্জিত হয় না এবং যা জীবনধারণের জন্য ব্যয় করা যায় না, তাকে অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলে। এ ধরনের কার্যাবলি মানুষের অভাব পূরণ করলেও অর্থ উপার্জনে ভূমিকা রাখতে পারে না। যেমন— পিতামাতার সন্তান লালন-পালন, খেলাধুলা করা, ধার্মিক লোকের ধর্মচর্চা করা ইত্যাদি। এছাড়াও যেসব কাজে সমাজে বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত বা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাও অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলি ৷ যেমন— চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি। উদ্দীপক-১-এ সুমনা সংসারের যাবতীয় কাজ করেন এবং দরিদ্র শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদান করেন। তার এসব কাজের বিনিময়ে তিনি কোনো অর্থ উপার্জন করেন না। অর্থাৎ তার এসব কাজই অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপক-২-এ উল্লিখিত খনিজ সম্পদটি হলো প্রাকৃতিক গ্যাস।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদটির অবদান অপরিসীম। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৯ অনুযায়ী এ যাবত দেশে ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে গ্যাসের মোট মজুদ প্রায় ৩৯.৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ গ্যাস রাসায়নিক সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে, কলকারখানা ও গৃহে এ গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে শক্তির যোগান বহুলাংশে প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ ও প্রচলিত উপকরণ থেকে আসে। আমরা প্রাকৃতিক গ্যাস কলকারখানা, গৃহকর্ম ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস যথেষ্ট সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যায়। আর উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার ফলে আমরা দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পারছি। উদ্দীপক-২-এ হাসান জানতে পারে দেশের প্রধান খনিজ সম্পদ সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমরা জানি, সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিক গ্যাস।
সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপক-২-এ উল্লিখিত খনিজ সম্পদটি প্রাকৃতিক গ্যাস, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপরিসীম অবদান রাখছে।

Leave a Comment