প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক এবং আমাদের দায়িত্বশীলতা

(ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) ৬ষ্ঠ: প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক এবং আমাদের দায়িত্বশীলতা – সমাধান

প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক এবং আমাদের দায়িত্বশীলতা হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই এর ১০ম অধ্যায়। প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক এবং আমাদের দায়িত্বশীলতা অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক এবং আমাদের দায়িত্বশীলতা

কাজ-১: প্রাকৃতিক এবং সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক অনুধাবন এবং কারখানা পরিদর্শনের পরিকল্পনা।
কাজের উদ্দেশ্য: কাজটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক পরিবেশের কাঠামোর সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের কাঠামোর সম্পর্ক অনুধাবন করতে পারবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি কারখানা পরিদর্শনের জন্য অনুসন্ধানী প্রশ্নপত্র, তথ্য সংগ্রহের ছক।

কাজের নির্দেশনা:

  • শ্রেণিশিক্ষকের প্রদর্শিত ছবি দেখে শিক্ষার্থীরা কারখানার মাধ্যমে দূষণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে এবং এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞত ব্যক্ত করবে।
  • কারখানা পরিদর্শনে যাবার আগে শিক্ষার্থীরা কলকারখানার মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন কোন ধরনের প্রভাব পড়েছে সে বিষয়ে দলে আলোচনা করে প্রশ্ন তৈরি করবে।
  • প্রশ্ন তৈরির সময় শিক্ষর্থীদের লক্ষ রাখতে হবে যেন কাঁচামাল, জ্বালানি ও বর্জ্য এর উৎস এবং পরিবেশের উপর বর্জ্যের প্রভাবের বিষয়টি উঠে আসে।
  • এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের প্রশ্নগুলোকে বিশ্লেষণ করে মূল অংশগুলো (Key points) খুঁজে বের করবে। পরবর্তী ধাপে তারা কাঁচামাল, জ্বালানি এবং বর্জ্য বিষয়ে অনুসন্ধানের ছক তৈরি করে উপস্থাপন করবে।

নমুনা সমাধান
প্রদর্শিত ছবি:

CamScanner 08 19 2023 00.41 1

শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা:
ছবিগুলোতে শিল্প-কলকারখানার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। মানুষ তার নানাবিধ প্রয়োজনে বনাঞ্চল ধ্বংস করে নানা রকম কলকারখানা, ইটভাটা স্থাপন করছে। এগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। যার ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, এসব শিল্প-কারখানার বর্জ্য গিয়ে পড়ছে আশপাশের খাল-বিল, নদীগুলোতে, যা পানি দূষিত করছে। পরিবেশের এ ধরনের নানা রকম দূষণের ফলে বদলে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
কলকারখানা আমাদের পরিবেশের উপর আরো কী কী প্রভাব ফেলছে এ বিষয়ে জানার জন্য একটি কারখানা পরিদর্শনে যাওয়া যায়। তবে কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার আগে আমাদের এ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন তৈরি করতে হবে।

কারখানা পরিদর্শনের জন্য প্রশ্ন:
১. কারখানাটি থেকে কী উৎপাদন করা হয়?
২. এটি কোন ধরনের শিল্প?
৩. কারখানাটি থেকে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল কী?
৪. কাঁচামালগুলো কোন কোন উৎস থেকে নেওয়া হয়?
৫. পণ্যটি উৎপাদনে কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হয়?
৬. এ সব জ্বালানির উৎস কী?
৭. উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে কী ধরনের বর্জ্য তৈরি হচ্ছে?
৮. কারখানার বর্জ্যগুলো পরিশোধনযোগ্য কিনা?
৯. এই বর্জ্য কোথায় যাচ্ছে?
১০. কারখানার বর্জ্য কী ধরনের দূষণ ঘটায়?
১১. পরিবেশের উপর এ দূষণের প্রভাব কী?
১২. মানুষ ও সমাজের উপর এ দূষণের প্রভাব কী?

CamScanner 08 19 2023 00.41 2

কাজ-২: কারখানা পরিদর্শন ও পরিদর্শন পরবর্তী দলীয় উপস্থাপনা
কাজের উদ্দেশ্য: কাজটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশের উপর কলকারখানার ক্ষতিকর প্রভাব ও ফলাফলগুলো চিহ্নিত করতে পারবে এবং এ বিষয়ে আরো সচেতন হবে।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষার্থীরা প্রথমে কয়েকটি দলে বিভক্ত হবে।
  • শিক্ষকের সাথে পরামর্শ করে তারা এলাকার কাছাকাছি কোনো একটি কারখানা নির্বাচন করবে।
  • নির্বাচিত সে কারখানাটি শিক্ষকের সহায়তায় পরিদর্শনে যাবে।
  • কারখানা পরিদর্শন শেষে তারা অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ অনুসরণ করে তথ্য সংগ্রহ করবে।
  • তথ্য সংগ্রহ শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে সবার সামনে উপস্থাপন করবে।
  • সবশেষে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

নমুনা সমাধান
কাঁচামাল বিষয়ের অনুসন্ধানের ছক:
একটি পোশাক কারখানা পরিদর্শনের পর শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত তথ্যাবলী নিচের ছকে দেখানো হলো:

যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কারখানা পরিদর্শন শেষে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, কলকারখানা আমাদের পরিবেশে বায়ু, পানি, মাটিসহ নানা রকম দূষণ ঘটাচ্ছে।

কাজ-৩: পৃথিবীব্যাপী পরিবেশ দূষণের প্রভাব।
কাজের উদ্দেশ্য: কাজটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ দূষণের বিশ্বব্যাপী ফলাফল অনুধাবন করতে পারবে।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষকের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা প্রথমে তিনটি দলে বিভক্ত হবে।
  • ১ নং দল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি গাছের ছায়াযুক্ত স্থানে এক খণ্ড বরফ, একটি পাত্র ও একটি ঘড়ি নিয়ে যাবে।
  • ২ নং দল রোদের মধ্যে এক খণ্ড বরফ, একটি পাত্র ও একটি ঘড়ি নিয়ে যাবে।
  • ৩ নং দল দুটি থার্মোমিটার ও একটি মুখবন্ধ কাঁচের গ্লাস নিয়ে যাবে।
  • প্রথমে ১ নং ও ২ নং দল তাদের বরফটি সম্পূর্ণ গলে যাওয়া সময় পরিমাপ করবে।
  • তারপর ৩ নং দল তাদের দুটি থার্মোমিটারের একটিকে এমনি রোদের মধ্যে রাখবে এবং অন্যটি কাঁচের গ্লাসে রেখে মুখ বন্ধ করে রোদের মধ্যে রেখে দেবে এবং কিছুক্ষণ পর পর তাপমাত্রার পরিমাণ রেকর্ড করবে।
  • পরবর্তী ১০-১৫ মিনিট সবাই যার যার অবস্থানে অপেক্ষা করবে।
    এরপর তিনটি দল ক্লাসে তাদের অভিজ্ঞতা কারণসহ আর্ট পেপারে লিখে অন্যদলের সাথে শেয়ার করবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: আর্ট পেপার।
১ নং দল— এক খণ্ড বরফ, একটি পাত্র, ঘড়ি।
২ নং দল – এক খণ্ড বরফ, একটি পাত্র, ঘড়ি।
৩ নং দল দুটি থার্মোমিটার ও একটি মুখবন্ধ কাঁচের গ্লাস।

নমুনা সমাধান

CamScanner 08 19 2023 00.41 4

পরীক্ষণের ফলাফল বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন: শিক্ষার্থীদের পরীক্ষণে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১ নং দলের পরীক্ষণে ব্যবহৃত বরফ খণ্ডটি গলতে একটু বেশি সময় নিয়েছে। কারণ গাছের ছায়ায় তাপমাত্রা তুলনামূলক কম ছিল।

২ নং দল সরাসরি রোদের মধ্যে বরফ খণ্ডটি রাখার ফলে ১ নং দলের বরফ খন্ডটির আগেই তা গলে যায়। কারণ সেখানে গাছ ছিল না, ফলে তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল।

৩ নং দলের পরীক্ষণে দেখা যাচ্ছে, ১ নং থার্মোমিটারটিকে সরাসরি রোদে রাখা হয়েছিল। ১০-১৫ মিনিট পরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় প্রায় ১০০ ফারেনহাইট। ২ নং থার্মোমিটারটিকে তারা কাঁচের গ্লাসে রেখে মুখ বন্ধ করে রোদের নিচে রেখে দিয়েছিল। ১০-১৫ মিনিট পরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় প্রায় ১০৩ ফারেনহাইট। যেহেতু কাঁচ তাপ পরিবাহী এবং কাঁচের গ্লাসটি মুখ বন্ধ অবস্থায় থাকায় তাপ ভেতরে ঢুকলেও তা বের হতে সময় নিয়েছিল । তাই ২ নং থার্মোমিটারে তাপমাত্রার রেকর্ড বেশি ছিল।

কাজ-৪: পৃথিবী দূষিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান।

কাজের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থী এ কাজের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ, গ্রিন হাউজ ইফেক্ট ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারবে। পরিবেশ দূষণ রোধে দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারবে।

কাজের নির্দেশনা:

  • প্রথমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দেওয়া একটি কমিক্স বই মনোযোগের সাথে পড়বে।
  • এরপর শিক্ষার্থীরা কমিক্স বইটি থেকে যা জেনেছে তা নিয়ে দলীয় আলোচনা করবে।
  • শিক্ষার্থীরা এর আগে যতগুলো পরীক্ষা করেছে সে সবগুলো পরীক্ষণের অভিজ্ঞতার আলোকে পৃথিবী দূষিত হওয়ার কারণ ও প্রভাব ছকে উপস্থাপন করবে।
  • সবশেষে বিষয়গুলো তারা ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করবে।

নমুনা সমাধান

CamScanner 08 19 2023 00.41 5

১. বায়ু দূষণ: কলকারখানা ও যানবাহন হতে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ু দুষিত করে।
২. শব্দ দূষণ: বিভিন্ন যানবাহনের চলাচলের শব্দ ও মাত্রাতিরিক্ত হর্ন শব্দ দূষণ ঘটায়।
৩. পানি দূষণ: কল-কারখানার নানা রকম বর্জ্য ও মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিত্যক্ত দ্রব্য পানির সাথে মিশে পানি দূষিত করে।
৪. মাটি দূষণ: কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার মাটি দূষিত করে।

গ্রিন হাউস ইফেক্ট:
১. কলকারখানা হতে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া: বর্তমানে মানুষের প্রয়োজনে বহু কলকারখানা গড়ে উঠেছে, যা থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত নানা গ্রিন হাউজ গ্যাস যেমন- কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি। এগুলো সূর্যের তাপ ধরে রাখে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে গ্রিন হাউস ইফেক্ট দেখা দিচ্ছে।
২. গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি: কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসগুলোকে গ্রিন হাউজ গ্যাস বলা হয়। মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার: বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অধিকহারে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে পরিবেশ নষ্ট করছে।
৪. পারমাণবিক চুল্লির ব্যবহার: বিভিন্ন দেশগুলো পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করে, যা থেকে প্রচুর বর্জ্য সৃষ্টি হয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং:
১. বৃক্ষনিধন: গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। কিন্তু ব্যাপকহারে বৃক্ষনিধনের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
২. নতুন করে গাছ না লাগানো; মানুষ গাছ কাটার পর নতুন করে সে পরিমাণ গাছ লাগাচ্ছে না। এটিও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর অন্যতম কারণ।
৩. শিল্পায়ন ও নগরায়ণ: বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক হারে নগর গড়ে উঠছে। তার সাথে বাড়ছে শিল্পায়ন। ফলে শহরে জনসংখ্যার চাপ ও বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। শিল্পকারখানা ও যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া শহরের বাতাসে কার্বন-ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার তাৎক্ষণিক ফল গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
৪. সমুদ্র দূষণ: সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিক্ষেপ করার ফলে তা দূষিত হচ্ছে। এ দূষিত বাষ্প বাতাসে মিশে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখছে।

জলবায়ু পরিবর্তন:
১. বৈশ্বিক উষ্ণতা: জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, যা বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে । ফলাফলে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
২. গ্রিন হাউজ ইফেক্ট: গ্রিন হাউজ ইফেক্ট-এর প্রত্যক্ষ ফল জলবায়ু পরিবর্তন।

কাজ-৫: রিভার পাজল খেলা ও ভূমির ব্যবহার অনুসন্ধান।
কাজের উদ্দেশ্য: প্রাকৃতিক কাঠামোর পরিবর্তনে সামাজিক জীবন/পরিবেশ কীভাবে প্রভাবিত হয় তা অনুধাবন করা।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষার্থীরা প্রথমে শ্যামলী গল্প অনুসারে প্রাকৃতিক কাঠামোতে পরিবর্তন হলে সামাজিক পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়ে তা দলীয় আলোচনা করে চিহ্নিত করবে।
  • এরপর তারা প্রাকৃতিক কাঠামোর একটি উল্লেখযোগ্য কাঠামো নদী নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করবে। এ আলোচনায় নদীর ধারের ভূমি, ভূমির ব্যবহার, বসতি, শহর, গ্রাম, খামার, কারখানা প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
  • এরপর তারা দলে ভাগ হয়ে হাতে আঁকা রিভার পাজলের ছবি লাইন বরাবর কেটে টুকরোগুলো মিলিয়ে পাজল সমাধান করবে। উৎস অংশটি নদীর শুরুতে এবং মুখ অংশটি নদীর শেষ বা নিচে থাকবে। বাকি অংশগুলো নিজেদের মতো সমাধান করবে।
  • শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বানানো নদী একটি পোস্টার পেপারে টেপ দিয়ে আটকে দিবে।
  • সবশেষে শিক্ষার্থীরা পাজলের টুকরোগুলোর সাহায্যে নদী পাড়ের ভূমি কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তা দলীয় আলোচনার মাধ্যমে একটি পোস্টার পেপারে লিখবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: পোস্টার পেপার, হাতে আঁকা রিভার পাজালের ছবি, কাঁচি, স্কচ টেপ।

নমুনা সমাধান
রিভার পাজল সমাধান:

CamScanner 08 19 2023 00.41 6 1

পোস্টার পেপার:

CamScanner 08 19 2023 00.41 7
CamScanner 08 19 2023 00.41 8

কাজ-৬: নদীর পরিবর্তনের উপর মানুষের জীবনের প্রভাব অনুসন্ধান।

কাজের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থী এ কাজের মাধ্যমে নদীর সাথে মানুষ এবং পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক অনুধাবন করতে পারবে।
কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষার্থীরা প্রথমে শ্রেণিশিক্ষকের দেওয়া কয়েকটি ছবি মনোযোগ দিয়ে দেখবে।
  • তারপর তারা শিক্ষকের সহায়তায় দলে ভাগ হবে।
  • এরপর তারা নদীভাঙন, নদীর শুকিয়ে যাওয়া এবং গতিপথ পরিবর্তন বিষয়ে দলীয় আলোচনা করবে। সামাজিক জীবনে এ বিষয়গুলোর প্রভাব পোস্টার পেপারে লিখবে এবং উপস্থাপন করবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: অনুসন্ধানের তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য ছক।

নমুনা সমাধান:

CamScanner 08 19 2023 00.41 9

কাজ-৭: নদী তীরবর্তী সভ্যতা নিয়ে অনুসন্ধানমূলক কাজ।
কাজের উদ্দেশ্য: প্রাচীন মানুষের জীবনে নদ-নদীর প্রভাব অনুধাবন করতে পারবে।
কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষর্থীরা প্রথমে প্রাচীন থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত নদীর তীরে গড়ে ওঠা সভ্যতাগুলো কীভাবে নদী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল তা খুঁজে বের করবে।
  • অনুসন্ধানের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে তারা সহায়ক বই, ইন্টারনেট এবং বুকলেট থেকে সাহায্য নেবে।
  • অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করবে।
  • সবশেষে শ্রেণিশিক্ষকের কাছে উপস্থাপন করবে।

নমুনা সমাধান।
১. অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু (Topic): প্রাচীনকালের নদী তীরবর্তী সভ্যতা।
২. অনুসন্ধানের জন্য বিষয়বস্তু সংক্রান্ত প্রশ্ন: নদী তীরবর্তী সভ্যতাগুলো কীভাবে নদ-নদী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল?
৩. প্রশ্নের ভেতরকার মূল বিষয়গুলো (Key Concept): নদী তীরবর্তী সভ্যতাগুলোতে নদ-নদীর অবদান।
৪. তথ্যের উৎস নির্বাচন: সহায়ক বই, ইন্টারনেট এবং বুকলেট।
৫. তথ্য সংগ্রহের উপকরণ নির্বাচন বা তৈরি: লিখিত প্রশ্নমালা।
লিখিত প্রশ্নমালা:
ক. প্রাচীন থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত নদীর তীরে কোন কোন সভ্যতা গড়ে উঠেছে?
খ. কোন কোন নদীর তীরে সভ্যতা গড়ে উঠেছে?
গ. সভ্যতাগুলোতে নদীর প্রভাব কীরূপ ছিল? ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক?

৬. তথ্য সংগ্ৰহ:
ক. প্রাচীনকালে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। নদীর তীরে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য সভ্যতাগুলো হলো— সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধু সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, টাইবার নদীর তীরে রোমান সভ্যতা প্রভৃতি।
খ. নদীর তীরবর্তী সমভূমি অঞ্চল বসবাস ও গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে আদর্শ হওয়ায় ধীরে ধীরে এসব স্থানে জনবসতি গড়ে ওঠে। কেননা এখানে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পরিমিত পরিমাণে ছিল। তাই নদীর তীরে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

গ. সভ্যতাগুলোতে নদীর ব্যাপক প্রভাব ছিল। যেমন— নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলো প্রতি বছর বন্যায় পলিমাটি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে, যা কৃষিকাজের জন্য খুবই উপযোগী। এতে নানা রকম ফসল সহজেই উৎপাদিত হতো। এছাড়া নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহার করা হতো। মাছ শিকারের সুবিধা ছিল। পানীয় জলের সুবিধা ছিল।
ঘ. নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রচুর ঘাস জন্মায়, যা তৃণভোজী পশুদের প্রধান খাদ্য। তাই পশুপালন ও পশুচারণের সুবিধা ছিল।
ঙ. প্রাচীনকালে ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকাংশ হতো নদীপথে। তাই আন্তঃ ও বহির্বাণিজ্যের সুবিধার জন্য নদী তীরে বসতির বিকাশ ঘটেছিল।

৭. তথ্য বিশ্লেষণ:

  • নদীর তীরে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য সভ্যতা সিন্ধু, মিশরীয়, মেসোপটেমিয়া, রোমান।
  • সভ্যতাগুলোতে নদীর প্রভাব; উর্বর কৃষিজমি, জল সেচের সুবিধা, পশুপালনের সুবিধা, মাছ শিকারের সুবিধা, পানীয় জলের সুবিধা, অনুকূল আবহাওয়া, পণ্য পরিবহনে যাতায়াতের সুবিধা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা।
    ৮. সিদ্ধান্ত: নদ-নদীকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকালে সিন্ধু, মিশরীয়, মেসোপটেমিয়া, রোমান ইত্যাদি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এ সভ্যতাগুলো গড়ে ওঠা ও বিকাশের পেছনে নদ-নদীর ভূমিকাই ছিল প্রধান।

কাজ-৮: পৃথিবীর মানচিত্রে নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা চিহ্নিতকরণ।
কাজের উদ্দেশ্য: কাজটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য জানতে পারবে, যা নদী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষার্থীরা একটি মানচিত্র সংগ্রহ করে তাতে নদী দ্বারা প্রভাবিত দুটি প্রাচীন সভ্যতা চিহ্নিত করবে।
  • নদীকেন্দ্রিক সভ্যতাগুলোর দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লিখবে, যা নদী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
  • কাজটি করার পর শ্রেণিশিক্ষকের কাছে উপস্থাপন করবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: পৃথিবীর মানচিত্র, বুকলেট।

নমুনা সমাধান
মানচিত্রে নদীকেন্দ্রিক মিশরীয় ও সিন্ধু সভ্যতার অবস্থান। পৃথিবীর নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম দু’টি সভ্যতা হলো মিশরীয় সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা। এ সভ্যতাগুলো নানাভাবে নদ-নদী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। সভ্যতাগুলোর উপর নদ-নদীর প্রভাবের দুটি করে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—

CamScanner 08 19 2023 00.41 10

মিসরীয় সভ্যতা: (নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল)
১. কৃষি: প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। মিসরের এই কৃষি অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল নীলনদকে কেন্দ্র করে। নীলনদের উভয় তীরের উর্বর ভূমিতে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হতো, যা মিসরীয় সভ্যতার বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। ঐতিহাসিক হেরোডোটাস। তাই মিসরকে বলেছেন ‘নীল নদের দান’।
২. ব্যবসা-বাণিজ্য: প্রাচীন মিসরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল নীলনদের। এ নদের তীরে গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় অনেকগুলো বন্দর ও শহর। মিসরীয়রা সিরিয়া, ক্রীট, ফিনিশীয়া, মেসোপটেমিয়া, প্যালেস্টাইনের সাথে ব্যবসা করতো। নানা ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং আন্তঃবাণিজ্যের জন্য নীলনদের জলপথ ছিল সুবিধাজনক।

সিন্ধু সভ্যতা: (সিন্ধু নদের তীরে গড়ে উঠেছিল)।
১. কৃষি : সিন্ধু সভ্যতার প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। এ কৃষিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে ওঠা ও বিকাশ লাভ করার পেছনে প্রধান অবদান ছিল সিন্ধু নদের। সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত হওয়া বৃহৎ শস্যাগার এ সভ্যতার কৃষি সমৃদ্ধির সাক্ষ্য দেয়।
২. ব্যবসা-বাণিজ্য: সিন্ধু নদের তীরের ভূমি ছিল উর্বর। এ বৈশিষ্ট্যটি সে অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে সহায়তা করেছিল। এছাড়া সিন্ধু নদ পণ্য পরিবহনেরও সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। ভারতের নানা রকম সম্পদ রপ্তানি এবং বহির্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সিন্ধুর বন্দরগুলো ব্যবহৃত হতো।

আরো পড়োসামাজিক বিজ্ঞান
আরো পড়ো প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো

কাজ-৯: নিজেদের এলাকাকে ভালো রাখার উপায় অনুসন্ধান এবং বাস্তবায়ন।
কাজের উদ্দেশ্য: কাজটির মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার চারপাশের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন হবে এবং এলাকার বসতিগুলো বসবাসের উপযুক্ত রাখার জন্য কী কী কাজ করতে হবে তা জানতে পারবে। সর্বোপরি সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে শিখবে।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাদের এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করবে।
  • দলীয় আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের এলাকা ভালো রাখার জন্য কাজের তালিকা বানাবে।

নমুনা সমাধান

এলাকাকে ভালো রাখার কাজের তালিকা
১. এলাকার রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা।
২. এলাকায় ডাস্টবিনের ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা।
৩. বেশি বেশি গাছ লাগানো।
৪. পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
৫. সামাজিক সম্পদ ব্যবহারে সচেতন হওয়া।
৬. বই পড়া ক্লাব গঠনের মাধ্যমে বই পড়ায় সচেতনতা তৈরি করা।
৭. খেলার মাঠ, জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
৮. এলাকার সার্বিক কল্যাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *