বাঁচবে নদী, তাতে জীবন থাকে যদি হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান বই এর ১৭তম শিখন অভিজ্ঞতা। বাঁচবে নদী, তাতে জীবন থাকে যদি অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
বাঁচবে নদী, তাতে জীবন থাকে যদি
প্রথম সেশন
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: কাগজ, কলম, অনুশীলন বই।
ধাপ-১
কাজের ধারা:
- ক্লাসের বন্ধুদের নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাই।
- এখন বন্ধু বা সহপাঠীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখি নদী নিয়ে কার কোন কবিতা বা গান প্রিয়।
- এবার নিজেরা নদী নিয়ে কবিতা, ছড়া বা গান লিখি।
- ক্লাসের সব দল থেকে একজন করে কবিতা, ছড়া বা গান আবৃত্তি করে বা গেয়ে অন্যদেরকে শোনাও।
নমুনা কবিতা:
নদী নিয়ে আমার লেখা কবিতা
শীতের সকালে দূর্বাঘাসে শিশির ভেজা পায়ে
কুয়াশার চাদর ঘেরা নদীর ঢেউয়ে নায়ে
অরুণ রবি চোখ উঠালো আমার পানে চেয়ে
ভর খুশিতে নাচল এ মন মাঝির সাথে গেয়ে।
ধাপ-২
নদীর ছবি আঁকি
কাজের ধারা
- ভেবে দেখি আমাদের আশেপাশে কোনো নদী/বিল/হাওড় / বাওড় কী আছে।
- নদী থাকলে নদীর ছবি কল্পনা করে খাতায় একে ফেলি।
- নদী না থাকলে বিল/হাওড়/বাওড় যেটা আছে তার ছবি এঁকে ফেলি।
নমুনা ছবি: আমার দেখা নদীর ছবি….
ধাপ-৩
নদীকে জীবন্ত সত্তার সঙ্গে তুলনা দেওয়ার কারণ কী হতে পারে চিন্তা করে লিখি-
………………………………………………………………………………………………………………..
কাজের ধারা:
- আমাদের দেশে যেসব নদ-নদী আছে সেগুলো কোথায় কোন জেলার আশেপাশে আছে এবং সেগুলোর এখন কী অবস্থা তা জেনে নিই।
- ক্লাসের সহপাঠী এবং শিক্ষকের সাথে নিজের জেনে নেওয়া তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং মিলিয়ে নিই।
- এবার জানা তথ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে নদীকে কেন জীবন্ত সত্তার সাথে তুলনা করা হয়েছে তার খুঁজে বের করে লিখে ফেলি।
নমুনা উত্তর:
বিষয়: নদীকে জীবন্ত সত্তার সাথে তুলনা করার কারণ
বাংলাদেশের নানা প্রান্তের অনেক বড় বড় নদী মৃত্যুর মুখে পড়েছে। এর ফলে বদলে যাচ্ছে নদীর তীরে মানুষের জীবনযাত্রা। প্রাকৃতিক কারণ এবং মনুষ্য সৃষ্ট কারণে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নদ-নদী। যেমন— ব্রহ্মপুত্র নদ তার নাব্যতা হারিয়েছে। পলি জমে চর জেগে নদের এই অবস্থা পলি জমে শুকিয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। যমুনায় সেতু নির্মাণের জন্য বাঁধ তৈরির কারণে ধলেশ্বরীর প্রধান চ্যানেল বন্ধ করা হয়, ফলে শুকিয়ে গেছে প্রমত্তা নদী ধলেশ্বরী। অন্যদিকে মানুষের অবৈধ দখলের কারণে সৌন্দর্য হারিয়েছে চিত্রা নদী। অবৈধ দখল, দুই পাড়ে ঘনবসতি, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের দূষণে প্রায় মরেই গেছে তুরাগ নদী। অবাধ ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে বুড়িগঙ্গার দুই পাড় মানুষের দখলে। দিন দিন বুড়িগঙ্গায় বেড়ে চলেছে দূষণ। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় সব নদী হুমকির মুখে। আর তাই নদীকে জীবন্ত প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যাতে নদী কিছু আইনি অধিকার পায়। যাতে করে নদী ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে। কারণ নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না।
ধাপ-৪
কাজের ধারা:
- বাংলাদেশের কিছু নদ-নদী যেমন- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা ইত্যাদির জন্ম ইতিহাস, উৎপত্তিস্থল, গতিপথ, এদের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নিই।
- ক্লাসের সহপাঠি এবং শিক্ষকের সাথে নিজের জেনে নেওয়া তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং মিলিয়ে নিই।
- এবার জানা তথ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে নদীর কি মৃত্যু থাকতে পারে কিনা চিন্তা করে লিখি।
নমুনা লিখা:
বিষয়: নদীর কি মৃত্যু থাকতে পারে?
প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিকভাবে নদীর মৃত্যু হয় না, তবে অবস্থার পরিবর্তন হয়। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডে এখন অনেক নদীতে পানি নেই, তা শুকিয়ে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে। নদীর জীবন্ত সত্তা শুধু রূপক অর্থে নয় বরং নদীর উপর নির্ভর করে মানুষসহ অসংখ্য জীব বেঁচে থাকে। প্রাচীন সভ্যতাগুলো নদী তীরেই গড়ে উঠেছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই নদীর উপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশেও পদ্মা, মেঘনায় জেলেদের জীবিকা নির্বাহের এটিই একমাত্র মাধ্যম। আর আমাদের দেশের মানুষের জীবনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নদী আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বলেই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ।
ধাপ-৫
কাজের ধারা:
- পরের সেশনের পূর্বে আমরা দলগতভাবে আমাদের আশেপাশের বা কাছাকাছি থাকা নদী পর্যবেক্ষণের জন্য একদিন পুরে আসি এবং কিছু তথ্য সংগ্রহ করে আনি।
- স্থানীয় মানুষ, এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞোস করে নদীটি কত বড়, কত পুরোনো, নদীটির ইতিহাস বা নদীটি সম্পর্কে কোনো গল্প ইত্যাদি জেনে নিই।
- নদীর আশেপাশের এলাকাটি খুটিয়ে দেখি এবং নদীটিতে ও এর আশেপাশে কী কী উদ্ভিদ জন্মে, কী ধরণের পোকামাকড়, পশু-পাখি দেখা যায় সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করি।
- নদীটির আশেপাশে বসবাসরত মানুষের সাথে কথা বলে জেনে নিই নদীটিতে কী ধরনের মাছ পাওয়া যায় এবং মাছ ছাড়া অন্য কী ধরনের জলচর জীব নদীটিতে বাস করে।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১. তোমায় জানা পাঁচটি নদীর নাম লেখো।
উত্তর: পাঁচটি নদীর নাম- মেঘনা, তিতাস, আড়িয়াল খাঁ, সুরমা, গোমতী।
প্রশ্ন-২. আমরা কখনো একই নদীকে একবারের বেশি দেখি না কেন?
উত্তর: পর্বতশীর্ষে উৎপত্তি লাভ করে নদীর পানির স্রোত হ্রদ বা সাগরে গিয়ে মিশে শেষ হয়। যে পানির স্রোত একবার আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল। তা আর ফিরে আসে না। আর এ প্রেক্ষিতেই বলা চলে, আমরা কখনো একই নদীকে দুইবার দেখি না।
প্রশ্ন-৩. প্রাচীনকালে কীভাবে নদীর তীর ঘেঁষে সভ্যতা গড়ে উঠত?
উত্তর: প্রাচীনকালে মানুষের সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌপথ। ভারী মালামাল নিয়ে চলাচলের জন্য নদীপথের বিকল্প ছিল না। উপরন্তু কৃষি জমিগুলোও ছিল নদীর তীরে ঊর্বর পলল ভূমিতে। কৃষিতে সেচ কাজের উৎস ছিল নদীর পানি। মানুষ নদীর পানিই পান করত। এসব কারণে প্রাচীনকালে নদীর তীরে যেমন বসতি গড়ে উঠত তেমনি হাট-বাজারও নদীর তীরে কোনো সুবিধাজনক স্থানে গড়ে উঠত। আর কালক্রমে এভাবে গড়ে উঠত সভ্যতা।
প্রশ্ন-৪. মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে নদী কীভাবে জড়িয়ে আছে?
উত্তর: মানুষ নদীকে ঘিরে তার জীবন গড়ে তোলে। যেমন- নদীর তীরে। উর্বর ভূমিতে মানুষ কৃষিকাজ করে। নদীর পানি সেচের কাজে লাগায় জেলেরা নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর তীরে বাজার- গড়ে ওঠে; নদীপথে মালামাল পরিবহন করা হয় বাণিজ্যের প্রসার ঘটে, এভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে নদী জড়িয়ে আছে।
প্রশ্ন-৫. নদীর উপর নির্ভরশীল পাঁচটি জীবের একটি তালিকা তৈরি করো।
উত্তর: নদীর উপর নির্ভরশীল পাঁচটি জীব-
i. মাছ
ii. সাপ
iii. কুমির
iv. কাঁকড়া
v. গুইসাপ
দ্বিতীয় সেশন
প্রয়োজনীয় শিখন সামগ্রী: কাগজ, কলম, অনুশীলন বই ইত্যাদি।
ধাপ-১
কাজের ধারা:
- পূর্বের সেশনের ৫নং ধাপে যা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে নদীর গল্প, নদীতে এবং নদীর তীর ঘেঁষে কী ধরনের জীবের দেখা মেলে, নদী এবং নদীর আশেপাশের পরিবেশে সময়ের সঙ্গে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটছে সেসব উল্লেখ করে একটি ছক পূরণ করি।
নমুনা ছক:
ধাপ-২
কাজের ধারা:
- আমাদের বাড়ির আশেপাশের নদী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে যেসব মাছ, পাখি বা অন্য কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বা হারিয়ে গিয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করি।
- এসকল জীব কোনটি কী কারণে বিলুপ্ত হয়েছে তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে শিক্ষক, এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, নদীর আশেপাশে বসবাসরত লোকদের সহায়তা নিই।
- নদীর যেসব পরিবর্তনের কারণে নদীর জীববৈচিত্র্যে পরিবর্তন এসেছে তার কারণসমুহ চিন্তা করে লিখি।
- যে কারণগুলো লিখলাম তার ফলে পরিবেশের কোন কোন উপাদান সরাসরি প্রভাবিত হয় তাও লিপিবদ্ধ করি।
- এবার অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের পঞ্চদশ অধ্যায় ‘পরিবেশ ও ভূমিরূপ’ থেকে পরিবেশ ও পরিবেশের মূল যে চারটি উপাদান রয়েছে তা সম্পর্কে ভালো করে পড়ে নিই।
- পড়া হয়ে গেলে নদী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন ও এর যেসব কারণ খুঁজে পেয়েছি তার আলোকে অনুশীলন বইয়ের ছকটি পূরণ করি।
নমুনা ছক:
ধাপ-৩
কাজের ধারা:
- অনুশীলন বইটির ১৭৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া মানচিত্রে যেসব নদীর নাম লিখা আছে সেগুলো খাতায় লিপিবদ্ধ করি।
- মানচিত্রের যে নদীটি আমাদের বাড়ির সবচেয়ে কাছে অবস্থিত তা চিহ্নিত করি এবং শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে নদীটির জন্ম কোথায় এবং কোথায় গিয়ে মিশেছে তা জেনে নিই।
- এবার সবাই মিলে মানচিত্রে দেওয়া সবগুলো নদীর নাম চিরকুটে লিখে ভাঁজ করে লটারি করি। যার হাতে যে নদীর নাম উঠবে তাকে সেই নদীটি মানচিত্রে খুঁজে বের করতে হবে।
নমুনা উত্তর: মানচিত্রের নদীগুলোর নাম চিরকুটে লিখার পর লটারি করার পর লটারিতে করতোয়া, ভৈরব, সাঞ্জু, তুরাগ ও ডাকাতিয়া নদীর নাম, উঠলো। মানচিত্রে নদীগুলো চিহ্নিত করা হলো।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১, নদীর পরিবর্তনে আশেপাশের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে কেন?
উত্তর: নদীর যখন পরিবর্তন ঘটে তখন প্রকৃতি স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবর্তিত হয়। কেননা প্রকৃতির সকল উপাদান পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন- নদী শুকিয়ে গেলে মাছ সহ সকল প্রাণী মারা যাবে। এতে করে নদীর বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যাবে। আাশেপাশের এলাকা মরুময় হবে। পর্যায়ক্রমে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, ভূমিকূপের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
প্রশ্ন-২. নদীর আশেপাশের পরিবেশের পরিবর্তনে তিনটি প্রাকৃতিক ও তিনটি মানবসৃষ্ট কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: নদীর আশেপাশের পরিবেশের পরিবর্তনের কারণ-
প্রাকৃতিক কারণ
১. নদীর বুকে চর পড়ায় পানি প্রবাহ ক্ষীণ হয়ে যায়।
২. নদীতে পলি জমে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়।
৩. কোনো কারণে নদীর গতিপথ বাঁধার মুখে পড়লে নদীর স্রোত ধারা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
মানবসৃষ্ট কারণ
১. অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকান-পাট তৈরি।
২. সময়মতো খনন কাজ না করা।
৩. কল-কারখানার বিষা বর্জ্য নদীতে ফেলা।
তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন
ধাপ-১
প্রয়োজনীয় শিখন সামগ্রী: কাগজ, কলম, অনুশীলন বই, অনুসন্ধানী বই ইত্যাদি।
কাজের ধারা:
- বাংলাদেশের ভূমিরূপ প্রধানত কয় ধরনের এবং এই ভূমিরূপ কীভাবে তৈরি হয়েছে, কীভাবে পরিবর্তিত হয় সেগুলো পড়ে দলগতভাবে নিজেরা আলোচনা করি এবং তথ্য সংগ্রহ করি।
- ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য’ অংশটা পড়ে আবার দলে আলোচনা করি এবং তথ্য সংগ্রহ করি।
- পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা সম্পর্কে ধারণাগুলো স্পর্ট করার জন্য এবং মানবসৃষ্ট কী কী কারণে অসময়ে বন্যা হচ্ছে ও নদী শুকিয়ে মারা যাচ্ছে তার কারণসমূহ অনুধাবন করার জন্য অনুসন্ধানী পাঠ বইটির ‘পরিবেশ ও ভূমিরূপ’ এবং ‘জীবের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং টেকসই পরিবেশ’ অধ্যায় দুটি ভালো করে পড়ি এবং নিজেরা আলোচনা করি।
- পড়া শেষ হলে বইয়ে যেসব তথ্য আছে তার সঙ্গে নিজদের সংগ্রহ করা তথ্যগুলো মিলিয়ে নিই।
- এবার দলগতভাবে সংগ্রহ করে আনা তথ্যগুলো আরেকবার দেখে নিই।
- যেহেতু সবাই মিলে চেষ্টা করা ছাড়া মানবসৃষ্ট কারণে নদীর স্বাভাবিক বয়ে চলা এবং মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব নয়, তাই ক্লাসের সহপাঠী এবং শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে নদীকে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং নদীকে বাচিয়ে রাখার জন্য কী কী করণীয় তা লিখে রাখি।
ধাপ-২
নমুনা চিত্র:
কাজের ধারা
- আমাদের আশেপাশের দেখা নদীর বাস্তুসংস্থানের একটি মডেল তৈরি করার জন্য ক্লাসের সহপাঠী এবং শিক্ষকের সাথে আলোচনা করি।
- মাটি, শোলা বা গামলা দিয়ে নদীর কাঠামো তৈরি করি।
- সত্যিকারের পানি ব্যবহার করে নদীর মডেল তৈরি করি।
- কাগজ দিয়ে নৌকা, গাছ এবং কাগজ ও কাঠি দিয়ে নদীর বিভিন্ন জীব যেমন- মাছ, কাঁকড়া, পাখি ইত্যাদি তৈরি করি।
ধাপ-৩
কাজের ধারা:
- নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং এর আশেপাশের প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে কিছু পরিকল্পনা করে সবাইকে সেটা বোঝানোর জন্য প্রচারণা চালাই।
- ‘নদী বাঁচাও’ বা দলের অন্যদের মতামতে পছন্দের অন্য কোনো শিরোনাম দিয়ে পোস্টার বা লিফলেট তৈরি করি।
নমুনা পোস্টার:
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১. নদী আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদ- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নদী আমাদের দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র; যা পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এবং দেশব্যাপী এই অনন্য বাস্তুতন্ত্র শত শত জলজ উদ্ভিদ, মাছ, পাখি কী? এবং অন্যান্য প্রাণীর আবাসম্বল। সব মিলিয়ে নদী এ দেশের জন্য আশীর্বাদ।
প্রশ্ন ২ : নদী কিভাবে নতুন ভূমিরূপের সৃষ্টি করে?
উত্তর: নদী পর্বতশীর্ষে উৎপত্তি লাভ করে। অতঃপর প্রবল স্রোত সৃষ্টি করে মাধ্যাকর্ষণের টানে যখন নিচে নেমে আসে, তখন স্রোতের আঘাতে শিলারাশি চূর্ণ হয়; ভূমিরূপ পরিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয় গভীর উপত্যকা। নদী সেগুলো বয়ে নিয়ে আসে। সমভূমিতে এসে নদী সেসব ক্ষয়িত শিলা, পলল সঞ্চয় করে। বন্যা হলে দুপাশের তীরভূমিতে নদীর বহনকৃত পলল সঞ্চিত হয়। এসময় নদীর তাঁর ভাঙে। আবার সমুদ্রের কাছাকাছি গিয়ে নদীর স্রোত শক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন বয়ে নিয়ে আসা ক্ষয়িত পদার্থ নদীর মোহনায় সঞ্চিত হয়। এভাবে নদী তার চলার পথে শুরু, শেষ ও মধ্যগতিতে নতুন নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন-৩: নদী ও তার আশেপাশের পরিবেশ রক্ষায় আমাদের করণীয় কি?
উত্তর : নদী ও তার আশেপাশের পরিবেশ রক্ষার আমাদের করণীয়। যেমন –
i. মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে পারি।
ii. নদী তীরবর্তী কারখানার মালিকদের আইন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি।
iii. নদী পাড়ের কৃষকদের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক করতে পারি।
iv. নদীর দখলদারদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সাহায্য করতে পারি।
v. আমরা নিজেরা প্লাস্টিক আবর্জনা ইত্যাদি নদীতে না ফেলে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। এ ব্যাপারে সভা, মিছিল আয়োজন করতে পারি।
পঞ্চম সেশন
প্রশ্ন-২, নদী কীভাবে নতুন ভূমিরূপের সৃষ্টি করে?
ধাপ-১
কাজের ধারা:
- সবার বানানো নদীর বাস্তুসংস্থানের মডেল ক্লাসের বাইরে বেশে সাজিয়ে রাখি যাতে বাকি শিক্ষার্থীরাও দেখতে পারে।
- ‘নদী বাঁচাও’ শিরোনামে বিভিন্ন দল যা যা পরিকল্পনা করেছি সেগুলো কীভাবে অন্যদের দেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে নিই।
প্রয়োজনীয় শিখন সামগ্রী: কাগজ, কলম, অনুশীলন বই, শিক্ষার্থীদের দলীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ইত্যাদি। ক্লাসের সবাই মিলে কোনো একদিন টিফিন পিরিয়ডে সবার মডেল এবং পোস্টারগুলো প্রদর্শনের আয়োজন করি।
ফিরে দেখা
কোন দলের কাজ সবচেয়ে ভালো লাগলো? কেন?
নমুনা উত্তর
যে দলের কাজ সবচেয়ে ভালো হয়েছে তাদের জন্য শুভেচ্ছা।
আমার এ দলের কাজ ভালো লেগেছে সুন্দর ছবি দিয়ে উপস্থাপনের জন্য।
তোমাদের দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছ? পরিকল্পনার কোনো কিছু পাল্টালে কি আরও ভালো হতে পারত?
নমুনা উত্তর :
আমার দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমার নদীর বাস্তুসংস্থানের মডেল এবং কাজ উপস্থাপনে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি। ভিডিও প্রজেক্টরে সবকিছু উপস্থাপন করতে পারলে তা আরও ভালো হতো।
কোন দলের কাজ থেকে এমন নতুন কিছু জানতে পেরেছ, যা তোমাদের দলের চোখ এড়িয়ে গেছে?
নমুনা উত্তর :
আমাদের একটি দল নদীর গল্প বলতে গিয়ে আশেপাশের মানুষের তৈরি স্থাপনা, গ্রাম ইত্যাদির বর্ণনা এনেছে। এটি আমাদের দলের চোখে এড়িয়ে গেছে। এ ধরনের উপস্থাপনা পরিবেশ সংরক্ষণে আরও অনেক বেশি কার্যকর।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১, নদীর বাস্তুসংস্থান কী?
উত্তর: নদীর বাস্তুসংস্থান একটি জলজ বাস্তুসংস্থান। নদীতে বনবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ভাসমান ও সঞ্চারমান ক্ষুদ্র জীব অর্থাৎ প্ল্যাঙ্কেটন। এছাড়া রয়েছে সবুজ শেওলা ও ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী। আর জড় উপাদানের মধ্যে রয়েছে পানি, মাটি ও সৌরশক্তি ইত্যাদি।
নদীর বাস্তুসংস্থানের উৎপাদক হচ্ছে সাধারণ ভাসমান ও অগভীর পানির বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ। যেমন- কচুরিপানা, শাপলা, হাইড্রিলা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রকার ভাসমান ক্ষুদ্র পোকা, বিভিন্ন প্রাণীর শূককীট প্রভৃতি প্রথম শ্রেণির খাদক। দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক হলো মাঝারি আকৃতির মাছ, ব্যাঙ, কচ্ছপ ইত্যাদি। আর তৃতীয় শ্রেণির খাদকের মধ্যে রয়েছে বড় মাছ, বক, গাঙচিল প্রভৃতি।
মৃত্যুর পর একই নিয়মে জীবাণু, মৃতজীবী ছত্রাক, কাদায় বসবাসকারী পোকা বিয়োজকের কাজ করে। বিয়োজিত অজৈব লবণ নদীর উৎপাদক সম্প্রদায় খাদ্য উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে।