বিবরণমূলক লেখা

(বাংলা) ৬ষ্ঠ: বুঝে পড়ি লিখতে শিখি (২য় পরিচ্ছেদ: বিবরণমূলক লেখা) – সমাধান

বুঝে পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৫ম অধ্যায়। বুঝে পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ২য় পরিচ্ছেদ বিবরণমূলক লেখা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
ক. উৎস সম্পর্কিত তথ্য : বিবরণমূলক এই লেখাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে চীনের একটি সম্মোলনে যোগ দিতে চীন সফরে গিয়েছিলেন। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি লেখেন ১৯৫৪ সালে। এটি ছাপা হয় ২০২০ সালে।

খ. লেখক-সম্পর্কিত তথ্য : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির পিতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

গ. সারসংক্ষেপ : লেখাটিতে নয়াচীন ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতার বর্ণনা এসেছে। মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, নদী, মাঠ এবং বাজারের বর্ণনা এসেছে। সর্বোপরি চীনের স্বদেশপ্রেমী জনগণের কথা এসেছে যারা বেশি দাম দিয়ে হলেও স্বদেশি জিনিস কেনে এবং যারা বেশি দামে জিনিস বিক্রি করে, তাদের ধরিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে চীন সরকার কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের কঠোর হস্তে দমন করে, সে কথাও বলা হয়েছে।

ঘ. নামকরণ : লেখাটি যেহেতু নয়াচীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে বিবরণমূলক লেখা, তাই বলা যায়, রচনাটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে।

ঙ. ভাষা : প্রমিতরীতিতে স্বচ্ছ ভাষায় রচনাটি লেখা হয়েছে।

বিবরণমূলক লেখা
যেকোনো বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিস্তারিত উপস্থাপনকেই বিবরণমূলক লেখা বলা যায়। বিবরণমূলক লেখাকে বিবৃতিমূলক বা বর্ণনামূলক লেখাও বলা যায়। এ ধরনের লেখায় তথ্য-উপাত্তের চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বর্ণনা করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের লেখাকে ইংরেজিতে ‘Narrative’ বলা হয়।

বিবরণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য
১. এ ধরনের লেখায় ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি প্রধান হয়ে ওঠে।
২. বিবরণমূলক লেখায় অন্তর্গত অর্থের চেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩. লেখার ভাষা প্রাঞ্জল হতে হয়।
৪. ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা ও অনুভূতির প্রকাশে বিশ্লেষণের চেয়ে বর্ণনার দিকে অধিক মনোযোগ থাকে।

বিবরণমূলক লেখা প্রস্তুতে করণীয়
বিবরণমূলক লেখা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১. প্রথমেই বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
২. বিষয়টির কোন কোন দিক লেখায় প্রাধান্য পাবে তা ভাবতে হবে।
৩. লেখাকে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনের জন্য নানা ধরনের প্রশ্ন করে তার জবাব খুঁজতে হবে। প্রশ্নগুলো সাধারণত কী, কেন, কীভাবে, কখন, কোথায় ইত্যাদি ধরনের হবে।
৪. লেখায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
৫. আবেগবর্জিত ভাষাবিন্যাস করতে হবে।
৬. বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে লেখাটির সুন্দর ও অর্থবহ শিরোনাম দিতে হবে।

বিবরণমূলক লেখার ধরন
সাধারণত ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে বিবরণধর্মী লেখা হয়। এছাড়া যে কোনো বিষয় ও ঘটনার আলোকে বিবরণধর্মী লেখার প্রয়াস দেখা যায়। কোনো ব্যক্তি, বস্তু, উপকরণ, স্থান, ছবি, চিত্র, দৃশ্য বা ইভেন্টকে বর্ণনার ভেতর দিয়ে বোধগম্য করে তোলা যায়।

আরো পড়ো →চারপাশের লেখার সাথে পরিচিত হই
আরো পড়ো →১ম পরিচ্ছেদ: প্রায়োগিক লেখা

২য় পরিচ্ছেদ : বিবরণমূলক লেখা

১. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনাটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?
খ. বিবরণটি কোন সময়ের ও কোন দেশের?
গ. এই বিবরণে বাংলাদেশের সাথে কী কী মিল-অমিল আছে?
ঘ. লেখাটিতে চীনের মানুষের দেশপ্রেমের কোন নমুনা পাওয়া যায়?
ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?

নমুনা উত্তর :
ক. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনায় লেখক ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন।

খ. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনার বিবরণটি ১৯৫২ সালের। এতে চীন দেশের বর্ণনা রয়েছে।

গ. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনার বিবরণের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল ও অমিল দুই-ই পরিলক্ষিত হয়। চীন দেশে নদীতে নৌকা ও লঞ্চ চলে। এটি আমাদের দেশের মতোই। চীনারা নিজেদের দেশের মালামাল কেনে। দোকানে দেশি পণ্য থাকলে তারা বিদেশি পণ্য কেনে না। বিষয়টি আমাদের দেশের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনায় চীনদেশের মানুষের দেশপ্রেমের নমুনা দেখা যায়। তারা নিজেদের দেশের পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী। দোকানে নিজের দেশের পণ্য থাকলে তারা বিদেশি পণ্য কেনে না। এ বিষয়টি তাদের দেশপ্রেমের পরিচায়ক।

ঙ. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনা থেকে নতুন অনেক বিষয় জানতে পারলাম। চীনাদের বাজার ব্যবস্থা, তাদের বিরাট লাইব্রেরি, মিউজিয়াম সম্পর্কে জানতে পারলাম। এছাড়া চীনাদের অপরূপ দেশপ্রেম সম্পর্কেও জানতে পারলাম।

২. ‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনায় লেখক যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এটি বিবরণমূলক লেখার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। এখানে বঙ্গবন্ধু চীন ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন। ১৯৫২ সালে তিনি চীন দেশে গিয়ে যা কিছু দেখেছেন এবং অনুভব করেছেন তার বিবরণ এখানে পাওয়া যাবে। তিনি মিউজিয়াম দেখেছেন, লাইব্রেরি দেখেছেন, অ্যাকজিবিশন দেখেছেন। স্থানীয় বাজার দেখার কথাও লিখতে ভোলেননি। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে চীন দেশের মিল খুঁজে পেয়েছেন। সেখানে বাদাম তোলা নৌকা ও লঞ্চ নদীতে ভেসে চলে। তারা স্বদেশি পণ্যকে অধিক গুরুত্ব দেয়। চীনাদের দেশপ্রেম বঙ্গবন্ধুকে মুগ্ধ করেছে। খেলার মাঠে পড়ার ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনি ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে সুসম্পর্ক দেখে বঙ্গবন্ধু আপ্লুত হয়েছেন। এটি বঙ্গবন্ধুর বিবরণধর্মী অসাধারণ একটি লেখা।

৩. তোমার চারপাশে দেখা যেকোনো বিষয় নিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ লেখো।
নমুনা উত্তর :
আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটি ছোট্ট নদী বয়ে চলেছে। নদীটির নাম হিসনা। বর্ষাকালে নদীটি পানিতে ভরা থাকে। তখন নদীতে তীব্র স্রোত বয়ে যায়। এ সময় নদীর তীরের মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বয়ে চলে। বর্ষার জলে ভিজে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর এপারের মানুষ নৌকায় করে ওপারে যায়। আবার ওপারের মানুষ নৌকায় চড়ে এপারে আসে। আবার শীতকালে নদীতে হাঁটুজল থাকে। তখন নদীর ওপারে হেঁটেই পার হওয়া যায়। নদীর ঘাটে তীরের মানুষজন গোসল করে, জামাকাপড় ধোয়, গোরু- মহিষের গা ধোয়ায়। মাঝখানে নদী হলেও দুই তীরের মানুষের সম্পর্ক ও সৌহার্দ চোখে পড়ার মতো। নানারকম সম্বন্ধ করে দুই তীরের মানুষ আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। দুই তীরের মানুষের নদীর সঙ্গে যেন গভীর মিতালি। তাদের সুখ-দুঃখে সাথি হয় নদী।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *