ইবাদাত

(ইসলাম শিক্ষা) ৬ষ্ঠ: ইবাদাত – সমাধান

Posted on

ইবাদাত হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা বই এর ২য় অধ্যায়। ইবাদাত অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ইবাদাত

১. কাজ-৯ (বাড়ির কাজ): তোমার আশেপাশে কে কীভাবে ইবাদাত করে তা জেনে এসে তোমার বন্ধুদের এবং শিক্ষককে জানাও।

কাজের ধরন: একক।

কাজের নির্দেশনা:
এ কাজটি করার জন্য তোমার বাড়িতে যারা রয়েছেন, তাদের সাথে আলোচনা করো। তারা কে কীভাবে ইবাদাত করছেন তা জানতে চাও।’ তাদের করা কাজগুলো খেয়াল করে দেখো। প্রয়োজনে প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও তথ্য নিতে পারো। চলাফেরার পথে অনেকের কাজ খেয়াল করো। এবার তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এবং তোমার দেখা বিষয়গুলোর আলোকে মনের মধ্যে ইবাদাত সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করো। ইচ্ছা করলে এগুলো তুমি কাগজেও লিখে রাখতে পারো। পরে এ বিষয়গুলোই বন্ধু এবং শিক্ষকের কাছে বলো।

নমুনা সমাধান: এতদিন ইবাদত সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা ছিল না। আমি মনে করতাম শুধু সালাত, সাওম যাকাত, হজ ইত্যাদিই শুধু ইবাদত। কিন্তু আমি এখন আমার পাঠ্যবই পড়ে জেনেছি প্রত্যেকটি কাজ ইসলামি বিধি-বিধান মেনে পালন করলে তা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। আমার আশেপাশে মনযোগ দিয়ে লক্ষ করেছি অনেকে অনেকভাবে ইবাদাত করেন। আমার দাদু মাঠে সবজি চাষ করেন, নিয়মিত সেগুলোর পরিচর্যা করেন।

তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে বের হন এবং ক্ষেতের কাজ শুরু করার সময়ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করেন। এজন্য আমার দাদু যতক্ষণ মাঠে কাজ করেন পুরো সময়টাই তিনি ইবাদাত করেন। আবার আমার আম্মু বাসার যত ছোট কাজই হোকনা কেন প্রতিটি কাজের আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলেন; এজন্য তার সব কাজই ইবাদাত হয়। আমি এবং আমার বড় বোন সাদিয়া একসাথে পড়াশোনা করি। আমি লক্ষ করেছি আমার বোন পড়া শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নেয়। এজন্য তার পড়ার পুরো সময়টা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হয়। এতদিন এ বিষয়টি আমি খেয়ালই করিনি।

স্কুলে আসার সময় দেখলাম একজন বৃদ্ধ মানুষ রাস্তা পার হতে পারছেন না। একজন এগিয়ে এসে তার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলেন। তার এ কাজটিও ইবাদাত হলো। আমার বন্ধু শাওন সুযোগ পেলেই গাছ লাগায়, বাগান করে, গাছের পরিচর্যা করে। এগুলো ভালো কাজ। তাই এগুলোও ইবাদাত। আমাদের পাড়ার রাহাত ভাই সবাইকে ভালো কাজ করার পরামর্শ দেন। তার এ কাজটিও ইবাদাত। আমাদের স্কুলের সামনে যিনি ফুচকা বিক্রি করেন তাকে আজ কৌতুহল বশে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, আপনি ফুচকা বানাতে বানাতে বিড়বিড় করেন কেন?’

তিনি বললেন, ‘আমি বার বার আল্লাহকে ডাকি। সবসময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আমার কাজ শুরু করি।’ কী আশ্চর্য। তার পুরো দিনের কাজ ইবাদাতের মধ্যে শামিল হয়ে গেল। এগুলো লক্ষ করে আমার মনে হলো কতভাবেই না মানুষ ইবাদাত করে। আমরা চাইলে আমাদের সারাজীবনের প্রতিটি সময় প্রতিটি কাজকেই ইবাদাতে পরিণত করতে পারি। এজন্য শুধু ভালো ভালো কাজ করতে হবে এবং আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে।

২. কাজ-১০ (বাড়ির কাজ): তোমাদের জেনে আসা ইবাদাতের ধরনগুলো শ্রেণিতে সকলের সামনে উপস্থাপন করো।

কাজের ধরন: একক।

কাজের নির্দেশনা: এ কাজটি করার জন্য পাঠ্যবইয়ের ‘ইবাদাতের ধরন’ অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ো এবং মনে রাখার চেষ্টা করো। এবার শ্রেণিতে সবার সামনে উপস্থাপনের জন্য শ্রেণির সামনে চলে যাও এবং তোমার জানা বিষয়গুলো সুন্দর ও সাবলীলভাবে সবাইকে বলো।

নমুনা সমাধান: ইবাদাতের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এগুলো হলো- সালাত, সাওম, যাকাত, হজ, বিভিন্ন নিয়ামত ভোগ করার পর আল্লাহর শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করা, যেকোনো ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা, বিভিন্ন কাজে অন্যদের সাহায্য করা, অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া, অন্যকে ভালো পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি।

৩. কাজ-১১ (বাড়ির কাজ): তোমাদের সকলের জেনে আসা ইবাদাতগুলোর কোনটি ইবাদাতের কোন প্রকারভেদের অন্তর্গত তা নির্ণয় করো।

কাজের ধরন: একক।

কাজের নির্দেশনা:
তোমরা এ অধ্যায়ে ইতোমধ্যে দুটি কাজ সম্পন্ন করেছ। এখানে ইবাদাতের ধরন এবং নানা জনের পালন করা বিভিন্ন ইবাদাত সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছ। এবার সেগুলোর আলোকেই এ কাজটির সমাধান করো। কোন কাজগুলো ইবাদাতের কোন প্রকারে পড়ে তা ছক আকারে লিখে ফেলো।

নমুনা সমাধান: আমাদের আশপাশের মানুষকে দেখে যেসব ইবাদাতের কথা জেনেছি- ১. একজন একমনে সালাত আদায় করছিলেন; ২. রানার দাদা সাওম পালন করেছেন; ৩. আমার এক প্রতিবেশী হজ পালন করে এসেছেন; ৪. রিফাতের মামা যাকাতের টাকা গরিবদের মাঝে বিতরণ করেছেন; ৫. আমার আম্মু ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার খাওয়া শুরু করেছেন; ৬. রানু তাদের বাগানের গাছগুলোতে পানি দেওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেছে; ৭. মাসুম স্কুলে আসার সময় একজন অন্ধ ব্যক্তিকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিয়েছে; ৮. একজন অসহায় মানুষকে দেখে আমার আব্বু তাকে কিছু টাকা দিয়েছেন।

এ ইবাদাতগুলো কোনটি ইবাদাতের কোন প্রকারের অন্তর্গত তা ছক আকারে দেওয়া হলো:

CamScanner 03 06 2024 18.48 1

৪. অনুশীলন: শিক্ষকের সহায়তায় নিয়ম মেনে ওযু করা অনুশীলন করো।

কাজের ধরন: অনুশীলনমূলক (একক)।

কাজের নির্দেশনা:
নির্দিষ্ট একটি ক্লাস শেষে, বিশেষ করে যে ক্লাসে শিক্ষক ওযুর নিয়ম পড়াবেন সে ক্লাস শেষে শিক্ষকের সহায়তায় ওষুর অনুশীলন করবে। অনুশীলন শেষে নিজের অভিজ্ঞতা লিখে ফেলবে।

নমুনা সমাধান: আজকে আমি আমার প্রিয় শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সহায়তায় ওযু করা শিখেছি। তিনি আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে ওযু করতে হবে। কোথাও কোনো ভুল হয়ে গেলে তিনি শুধরে দিয়েছেন। আমি যেভাবে ওযু করেছি-

শুরুতেই পবিত্রতার নিয়তে বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করেছি। এরপর দুই হাতে পানি নিয়ে কবজি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করেছি। এসময় এক হাতের আঙুল দিয়ে অন্য হাতের আঙুল খিলাল করে নিয়েছি। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়া করে কুলি করেছি। কুলি করার এটিই উত্তম পদ্ধতি। তবে রোযাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না। তারপর নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক পরিষ্কার করেছি। তারপর পুরো মুখমণ্ডল তিন বার এমনভাবে ধুয়েছি যাতে চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। এরপর ডান হাত কনুইসহ তিন বার এবং বাম হাত কনুইসহ তিন বার ধুয়েছি।

আমার হাতে ঘড়ি, আংটি ইত্যাদি কিছুই ছিল না; আমার স্যার বলেছেন, এগুলো থাকলে তা এমনভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে, যাতে সবখানে ভালোভাবে পানি পৌঁছে যায়। এরপর দুই হাত ভিজিয়ে মাথা মাসেহ করেছি। সবশেষে দুই পা টাখনুসহ এমনভাবে ধুয়েছি যাতে একটু জায়গাও শুকনো না থাকে। আমার ওযু করা দেখে আমার শিক্ষক খুব খুশি হলেন। তিনি শেষে আমাকে বললেন, ওষুর কাজগুলো পরপর করে যেতে হবে। অর্থাৎ এক অঙ্গের পর অন্য অঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে ধৌত করতে হবে। অনেকক্ষণ থেমে থেমে করা যাবে না।

৫. অনুশীলন: শিক্ষকের সহায়তায় তায়াম্মুম করার পদ্ধতি অনুশীলন করো।

কাজের ধরন: অনুশীলনমূলক (একক)

কাজের নির্দেশনা:
শিক্ষকের সহায়তায় তায়াম্মুম অনুশীলন করো। তোমার কোনো ভুল হলে শিক্ষক দেখিয়ে দেবেন। সঠিকভাবে তায়াম্মুমের পদ্ধতি শেখা পর্যন্ত বার বার অনুশীলন করো। সঠিকভাবে তায়াম্মুম করার অনুশীলন প্রতিটি লিখে ফেলো।

নমুনা সমাধান: আমি ক্লাস শেষে আমাদের স্কুল মাঠে গিয়ে তায়াম্মুম অনুশীলন করেছি। কারণ মাঠে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র মাটি রয়েছে। এ সময় আমার শিক্ষক শাখাওয়াত ইসলাম আমার দিকে গভীরভাবে লক্ষ রেখেছেন। তায়াম্মুম শেষে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তিনি বলেছেন আামি যেভাবে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি অনুশীলন করেছি তা খুব চমৎকার হয়েছে। শিক্ষকের সহায়তায় আমি যেভাবে তায়াম্মুম করেছি- প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়েছি। তারপর দুই হাতের তালু একটু প্রসারিত করে মাঠের যেখানে পবিত্র মাটি আছে তাতে দুই হাত লাগিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসেহ করেছি। এরপর আবার দুই হাত মাটিতে লাগিয়ে উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করেছি। এ সময় আমার হাতে থাকা ঘড়ি সরিয়ে তার নিচেও মাসেহ করে নিয়েছি।

৬. অনুশীলন: বন্ধুরা মিলে দলগতভাবে পবিত্র থাকার সুফলসমূহ আলোচনা করো।

কাজের ধরন: অনুশীলনমূলক (দলীয়)।

কাজের নির্দেশনা:
পাঠ্যবইয়ের ‘পবিত্র থাকার সুফল’ অংশটি ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়ো। পড়া শেষে কয়েকজন বন্ধু মিলে এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরো।

নমুনা সমাধান: আমি, সাইফ, সাদি, মারিয়াম ও যায়েদ মিলে পবিত্রতার সুফলসমূহ আলোচনা করেছি। আমাদের মধ্যকার আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো-

আমি : আমরা সকলে ভালো থাকতে চাই। ভালো থাকা মানে শুধু শারীরিকভাবে ভালো থাকা নয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুদ্ধ থাকাই হলো প্রকৃত ভালো থাকা। এজন্য আমাদের পবিত্র থাকতে হবে তাহলেই আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো ও সুস্থ থাকব।

মারিয়াম : তুমি ঠিক বলেছ। আমারও মনে হয় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পবিত্রতার ভূমিকা অপরিসীম। ইসলাম শারীরিক পবিত্রতার সাথে সাথে মানুষের আত্মিক পবিত্রতা, বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, পরিবেশের পবিত্রতা ইত্যাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করে। পবিত্রতা শরীরকে রাখে সতেজ ও সবল, মনকে রাখে প্রফুল্ল। ফলে সেই শরীর ও মন থাকে রোগ-জীবাণু থেকে সুরক্ষিত।

সাইফ : অপবিত্রতা থেকে নানারকম রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়। পোশাক-পরিচ্ছদ নোংরা’ থাকলে রোগ-জীবাণু ছড়ায়। পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। (যাবতীয়) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো।’ (সূরা আল- মুদ্দাছছির, আয়াত: ৪-৫) পবিত্র থাকার একটি বড় সুফল হিসেবে আমরা সবসময় রোগ-জীবাণু থেকে মুক্ত থাকতে পারব।

সাদি : উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মুখগহ্বর মানব শরীরে স্পর্শকাতর একটি স্থান। আমরা সারা দিন নানা রকম খাবার গ্রহণ করি। আমরা যদি সবসময় মুখ পরিষ্কার না রাখি তাহলে নানারকম রোগের পাশাপাশি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য মহানবি (সা.) নিয়মিত মিসওয়াক করার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে আমরা বড় বড় রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারব।

যায়েদ : তোমরা কেউই পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমগুলো নিয়ে কথা বলছ না। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইসলামে ওযু, গোসল ও তায়াম্মুমের বিধান রয়েছে। দৈনিক পাঁচবার, সালাত আদায়ের জন্য ওযু করতে হয়। ওযু করলে শরীর থেকে যেমন রোগ-জীবাণু ধুয়ে যায়, তেমনি গুনাহসমূহও বের হয়ে যায়। এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা অর্জিত হয়।

আমি : ওযুর কথা বলাতে আমার বার বার হাত ধোয়ার উপকারিতার কথা মনে পড়ল। আমরা যখন খাবার গ্রহণ করি তখন হাতের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু আমাদের মাঝে সংক্রমিত হয়। এজন্য হাত ধোয়ার উপকারিতা অনেক। খাবার গ্রহণের সময় ছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময় বার বার হাত ধুয়ে নেব। সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার পর এর প্রয়োজনীয়তা আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছি। এ সময় দেশের প্রায় সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

সাদি : একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা তুলে ধরার জন্য বর্তমানে ১৫ আক্টোবর তারিখটিতে আন্তর্জাতিকভাবে ‘বিশ্ব হাতধোয়া দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। : আমরা এতক্ষণের আলোচনায় বুঝতে পারলাম যে, পবিত্র আমি থাকার সুফল অনেক। আমরা সবসময় পাক-পবিত্র থাকব।

৭. অনুশীলন: শিক্ষকের সহায়তায় নিয়ম মেনে ওয়াক্ত অনুসারে সালাত আদায় অনুশীলন করো।

কাজের ধরন: অনুশীলনমূলক (একক)।

কাজের নির্দেশনা:
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। সালাত দুই, তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট হয় এবং এক্ষেত্রে সালাত আদায়ের নিয়মে কিছুটা তারতম্য আছে। শিক্ষকের সহায়তায় সালাতের এ ধরনগুলো সম্পন্ন করার অনুশীলন করবে। পরবর্তীতে সালাতের ওয়াক্ত অনুসারে এবং রাকআত অনুযায়ী নিয়মগুলো মেনে সালাত সম্পন্ন করবে। মনে রাখতে হবে, বিনীত ও একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করতে হয়। লোক দেখানো কিংবা উদাসীনভাবে আদায় করা সালাত আল্লাহ কবুল করেন না। সালাত আদায়কালে। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, সালাতের শর্তগুলোর কোনোটাই যেন বাদ না পড়ে। পবিত্র হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে দেখছেন।

নমুনা সমাধান: দুই, তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়মে কিছুটা তারতম্য আছে। নিচে তারতম্যসহ দুই, তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম বর্ণনা করা হলো-

দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম

কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করে ছেলে হলে দুই হাত কান বরাবর, আর মেয়ে হলে কাঁধ পর্যন্ত ওঠাবো এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ছেলে হলে নাভির নিচে, আর মেয়ে হলে বুকের ওপর হাত বাঁধবো। এরপর ‘সানা’ পড়ব। তারপর ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে সূরা ফাতিহা পড়ব। ফাতিহা পড়া শেষ হলে মনে মনে আমিন বলব। এরপর অন্য কোনো সূরার কমপক্ষে বড় এক আয়াত অথবা ছোট তিন আয়াত কিংবা একটি সূরা পড়ব। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে রুকু করব।

রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম’ বলব। তারপর ‘সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ্’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। দাঁড়ানো অবস্থায় ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলব। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদাহ করব। সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা বলব।’ প্রথম সিজদার পর সোজা হয়ে বসব। দু’টি সিজদাহ করার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। এভাবে প্রথম রাকআত শেষ হবে।

দ্বিতীয় রাকআতের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে সূরা ফাতিহা পড়ব। তারপর পূর্বের মতো সূরা মিলাব। তারপর প্রথম রাকআতের মতো রুকু ও সিজদাহ করে সোজা হয়ে বসব। তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে প্রথমে ডান ও পরে বামে মুখ ফিরিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলব। এইভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত শেষ হবে।

তিন রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম

তিন রাকআত বিশিষ্ট ফরয সালাতে দ্বিতীয় রাকআতের পর শুধু তাশাহহুদ পড়ব। তারপর তাকবির বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ব। অন্য কোনো সূরা পড়ব না। এরপর পূর্বের মতো রুকু, সিজদাহ করব। সিজদার পর সোজা হয়ে বসে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করব।

চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম

চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয সালাতে দ্বিতীয় রাকআতের পর ১ম বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়ব। পরে তৃতীয় রাকআতের জন্য তাকবির বলে উঠে দাঁড়াব। এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে শুধু সূরা ফাতিহ্য পড়ব। তারপর রুকু-সিজদাহ করে চতুর্থ রাকআতের জন্য উঠে দাঁড়াব। চতুর্থ রাকআতে তৃতীয় রাকআতের মতো সূরা ফাতিহা পড়ে বুকু, সিজদাহ করার পর ২য় বৈঠকে বসে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করব।

বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল সালাত হলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়ব।

৮. দলগত কাজ: বন্ধুরা মিলে সালাতের আহকাম এবং আরকান সংক্ষেপে পোস্টারে লিখে শ্রেণিকক্ষে সকলের উদ্দেশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবে।

কাজের ধরন: দলীয়।

কাজের নির্দেশনা:
কাজটি করার জন্য রঙিন পোস্টার, সাইন পেন সংগ্রহ করবে। এগুলো শ্রেণিশিক্ষকও তোমাদের সরবরাহ করতে পারেন। এবার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে একজন অথবা দুজনকে দিয়ে পোস্টার পেপারে সালাতের ৭টি আহকাম লিখে একটা এবং সালাতের ৭টি আরকান লিখে আরেকটা অর্থাৎ মোট দুটি পোস্টার লিখে ফেলো। পোস্টার লেখা শেষ হলে দুটি পোস্টার শ্রেণিকক্ষে প্রদর্শন করো। পোস্টার লেখার সময় বানানের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। একটি বানানও যাতে ভুল না হয়। হাতের লেখা স্পষ্ট হতে হবে যাতে সবাই পড়ে বুঝতে পারে।

নমুনা সমাধান: নিচে সালাতের আহকাম ও সালাতের আরকান নিয়ে দুটি পোস্টার উপস্থাপন করা হলো-

CamScanner 03 06 2024 18.48 2

৯. দলীয় কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং সূরার নাম ও আয়াত নম্বরসহ সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থানসমূহ ছক আকারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

কাজের ধরন: দলীয়।

কাজের নির্দেশনা:
ক্লাসের শিক্ষার্থীরা ৫ জন করে কয়েকটি দল গঠন করবে। দলগুলোর নাম হবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি। প্রত্যেক দল সূরার নাম ও আয়াত নম্বরসহ সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থানসমূহ ছক আকারে তৈরি করবে। এক্ষেত্রে তারা পোস্টার পেপার ব্যবহার করতে পারে। ছক তৈরি হয়ে গেলে প্রথমে তা শিক্ষককে দেখিয়ে নেবে। কোনো ভুল থাকলে শিক্ষক তা দেখিয়ে দেবেন এবং তোমরা তার পরামর্শ অনুসারে তা সংশোধন করে নেবে। সবশেষে প্রত্যেক দল তাদের সংশোধিত ছকটি শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

নমুনা সমাধান: সূরার নাম ও আয়াত নম্বরসহ সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থানসমূহের পদ্মা দলের তৈরি করা ছক-

CamScanner 03 06 2024 18.48 3
Gravatar Image
StudyOurs: Your Gateway to Collaborative Learning and Growth.