গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ১০টি উপায় (ঘরোয়া উপায়ে)
গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ১০টি উপায় (ঘরোয়া উপায়ে) দেখুন এখান হতে।গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখতে আমরা ফ্যানের আমরা ফ্যানের উপর নির্ভরশীলব হয়। আবার কেউ কেউ এসি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এসি বা ফ্যান ছাড়াও বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখা যায়। স্টাডি আওয়ার’এ আজ গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ১০টি উপায় (ঘরোয়া উপায়ে)
১. বিছানা যেন মেঝের কাছাকাছি হয়
সাধারণত আমাদের অনেকের খাট বড় হওয়ায় মেঝে থেকে বিছানার বেশ দূরত্ব থাকে। তবে গরমে গরমের হাত থেকে বাঁচতে হলে বিছানা যতটুকু সম্ভব মেঝের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করুন। আবার মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়ে থাকার অভ্যাস থাকলে আরো ভালো।
২. লাইট বন্ধ রাখুন
লাইট জ্বলার ফলে ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘরের মধ্যে স্বাভাবিক এর থেকে বেশি গরম পরিলক্ষিত হয়। তাই খুব বেশি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের লাইট জ্বালানো থেকে বিরত থাকবো। যার ফলে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
৩. ঘরে রান্না করবেন না
ঘরে বা বাড়ির মধ্যে রান্নাবান্না করা থেকে বিরত থাকুন। বাড়ির মধ্যে রান্নার ফেলে বাড়ির তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এজন্য বাড়ির বাইরে রান্না করার চেষ্টা করুন।
৪. সূর্যের আলোর প্রতিফলন
সূর্যের আলো সরাসরি এলে ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই আলোর প্রতিফল হয় এমন জানালা ব্যবহার করুন। এতে সূর্যের আলো কম আসবে।
৫. হালকা রঙের ব্যবহার
গরমের সময় হালকা রঙের ব্যবহার চোখকে প্রশান্তি দেয়। তাই চাদর, পর্দা, বালিশের কভার ইত্যাদির ক্ষেত্রে গাঢ় রং ব্যবহার না করে হালকা রঙের ব্যবহার করুন। এতে ঘরে একটি ঠাণ্ডাভাব আসবে।
৬. বাড়িতে গাছ লাগান
গাছ ছায়া দেয়। বাড়িতে গাছ থাকলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে। এক্ষেত্রে সূর্যমুখি, কলা, মিমিসা ইত্যাদি গাছ বাড়িতে লাগাতে পারেন। পাশাপাশি ঘরেও গাছ লাগান।
6. জানালা, দেয়াল ও ছাদে প্রলেপ
জানালায় যদি হিট প্রোটেক্টিভ উইন্ডো ফিল্ম লাগানো হয় তাহলে সেটা ৭৮ শতাংশ সৌর তাপ এবং ৯৯ শতাংশ ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি আটকে দিতে পারে। যার ফলে ঘর গরম হওয়া অনেকটা ঠেকানো যায়।
উইন্ডো ফিল্ম হলো রঙিন স্টিকারের মতো আবরণ যেটা জানালার কাঁচের উপর বসানো হয়। এটা বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে পাওয়া যায়।
তবে উইন্ডো ফিল্ম না পেলে জানালার বাইরের কাঁচ সাদা রঙ করে বা সাদা কাগজ লাগিয়ে দিলেও হবে।
এছাড়া দু’টি স্তর বিশিষ্ট কাঁচের জানালা সাধারণ জানালার চেয়ে অনেক ভালো তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে।
এসব কাঁচ তিন থেকে ১০ মিলিমিটার পুরু হয়, যা প্রচন্ড তাপ থেকে রক্ষা করে।
অন্যদিকে, ঘরের ছাদে ও দেয়ালে ইনসুলেশন করলে গরমকালে ঘর ঠান্ডা থাকে আবার শীতকালে ঘর গরম থাকে। এই ইনসুলেশন হলো এক ধরনের মোটা প্রলেপ।
এক্ষেত্রে কন্সট্রাকশন বা ইন্টেরিয়র নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সেবা ক্রয় করতে পারেন।
আপনার ঘরে কোন ইন্সুলেশন সবচেয়ে ভালো কাজ করবে সেটা তারাই বলে দেবেন।
7. ছাদ
কারও ছাদ যদি গাঢ় রঙের হয় তাহলে ওই বাড়ির তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়।
অন্যদিকে, বাড়ির ছাদ যদি সাদা রঙে ছেয়ে দেয়া যায় সেটা টিনের ছাদ হোক বা কংক্রিটের, সূর্যের আলোর বেশিরভাগই প্রতিফলিত হবে। এতে বাড়ি ঠান্ডা থাকবে।
দেখা গিয়েছে সাদা রঙ ৮৫ শতাংশ আলো প্রতিফলিত করতে পারে যেখানে গাঢ় রঙ প্রতিফলন করে মাত্র ২০ শতাংশ।
সাদা রঙ করা ছাদের বাড়িগুলো দ্বিগুণেরও বেশি ঠান্ডা থাকে।
অনেকে আছেন বাড়ির ছাদে ও আশেপাশে কংক্রিট পেভমেন্ট ব্লক বসান। কিন্তু এই ব্লকগুলো গরম ধরে রাখে।
এতে দিন ও রাত দুই সময়ে পরিবেশ প্রচণ্ড গরম থাকে। এক্ষেত্রে সাদা টাইলস বিকল্প সমাধান হতে পারে।
৮. ঠান্ডা বাতাস
ঘরের ফ্যান থেকে এয়ার কুলারের মতো ঠান্ডা বাতাস পেতে একটি প্লেটের উপর বড় বেশ খানিকটা বরফ রেখে সেই বরাবর টেবিল ফ্যান ছেড়ে দিন।
সিলিং ফ্যানের সরাসরি নীচে রাখলেও হবে। এতে ঘরের বাতাস দ্রুত ঠান্ডা হয়ে আসবে। তবে বরফ রাখার পাত্রটি অগভীর হলেই ভালো।
বরফ না থাকলে ফ্যানের সরাসরি নীচে ঠান্ডা পানির বালতি রাখলেও কাজে দেবে।
এছাড়া ঘর ঝাড়ু দেয়ার পর দিনে কয়েকবার বরফ ঠান্ডা পানিতে ঘর ভেজা ভেজা করে ঘর মুছে নিলে তা ঘর ঠান্ডা রাখতে বেশ কার্যকর উপায়।
৯. এক্সস্ট ফ্যান
ঘর ঠান্ডা রাখতে বিশেষ করে ঘরের ভেতরের তাপ বাইরে বের করে দিয়ে এবং বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভেতরে টেনে আনতে এক্সস্ট ফ্যান একটি ভালো সমাধান।
এটি মূলত দেয়ালের উপরের দিকে বসানো বৈদ্যুতিক পাখা।
এটি রান্নাঘর ও টয়লেটসহ যেকোনও ঘরেই বসানো যেতে পারে।
রান্নাঘরে যতক্ষণ রান্না করবেন ততোক্ষণ ফ্যানটি চালিয়ে রাখতে হবে।
এই পদ্ধতিটি তখনই ভালো কাজ করে যখন ভিতরের তাপমাত্রা বাইরের থেকে বেশি হয়।
১০. বিছানা তোশক বালিশ
বিছানা, বালিশ, তোষকের জন্য ১০০ শতাংশ পাতলা সুতির কাপড়ের বিকল্প নেই। কারণ সিল্ক বা পলেস্টার জাতীয় কাপড় তাপ ধরে রাখে, যেটা সুতিতে হয় না।
বিছানার চাদরের ক্ষেত্রে হালকা রঙ বিশেষ করে সাদা একরঙা চাদর বেছে নেয়া যেতে পারে। বেশি রঙিন ও নকশাদার চাদর তাপ শোষণ করে থাকে।
এছাড়া আমরা সচরাচর বিছানায় যেমন তুলার তোশক, জাজিম ব্যবহার করি বা সোফায় যেসব গদি বসাই তা শরীর এবং আশেপাশের থেকে প্রচুর তাপ শোষণ করে।
এক্ষেত্রে বাঁশ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক ফাইবারের তোশক, জাজিম ও গদি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো উপায়।
সেটা সম্ভব না হলে বিছানা বা সোফায় সুতি চাদর বিছিয়ে দিলেও কিছুটা কাজে দেবে।
এছাড়া বালিশের ক্ষেত্রে চিলো নামের বালিশগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে যা গরমের সময়েও মাথা ঠান্ডা রাখে।
এছাড়া বরফ জমানো পানির বোতল বিছানার পায়ের কাছে রাখলেও ঠান্ডার অনুভূতি পাবেন, তবে এতে বিছানা ভিজে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
আপনি যদি দোতলা বাসায় থাকেন, তাহলে খেয়াল করে দেখবেন, নিচতলা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা। তাই মেঝেতে যদি মাদুর, চাটাই বা শীতলপাটি বিছিয়ে ঘুমান তাহলে বিছানার চাইতে আরাম লাগতে পারে।