শীত-প্রকৃতির রূপ

(শিল্প ও সংস্কৃতি) ৬ষ্ঠ: শীত-প্রকৃতির রূপ – সমাধান

Posted on

শীত-প্রকৃতির রূপ হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বই এর শিখন অভিজ্ঞতা। শীত-প্রকৃতির রূপ অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

শীত-প্রকৃতির রূপ

কাজ-১: আনন্দধারা অধ্যায়ে নির্বাচিত গাছটির পূর্বের অবস্থার সাথে শীতের সময়ের পার্থক্যগুলোর একটি তালিকা তৈরি করো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান
আমরা ‘আনন্দধারা’ অধ্যায়ে যে গাছটি নির্বাচন করেছিলাম তা ছিলো একটি আমগাছ। গাছটির পূর্বের অবস্থার সাথে শীতের সময়ে অবস্থার পার্থক্যের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো-

CamScanner 01 26 2024 15.06 1

কাজ-২: শুকনো পাতার উপর দিয়ে হাঁটা বা চলার অভিজ্ঞতা নিয়ে শুকনো পাতার যে সময় শব্দ হয় তা বড়দের সাহায্যে মোবাইলে ধারণ করো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান
আশেপাশে কোন গাছ থাকলে লক্ষ করলে দেখা যাবে তার নিচে শুকনো পাতা পড়ে আছে। মোবাইলে গাছের ছবি দেখতে পারি এবং গাছটির ছবি তুলতে পারি।
এখানে নমুনা ছবি দেয়া হলো।

CamScanner 01 26 2024 15.06 2

চিত্র: শীতকালের ছবি

কাজ-৩: গাছটি আঁক। গাছটি সম্পর্কে লেখো/গাছের শুকনো পাতা, ছোট ডালপালা, রঙিন কাগজ কেটে/ছিড়ে তা দিয়ে কোলাজ তৈরি করে বন্ধুখাতায় আঠা দিয়ে লাগিয়ে শীতের রূপকে তুলে ধরো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান
ক. নিচে একটি শীতকালের আমগাছের অবস্থার ছবি আঁকা হলো-

খ. শীতকালে আমগাছ: আমগাছ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ হওয়ায় শীতকালে বেশ জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় থাকে। এর ডাল, পাতা সব শুকিয়ে মলিন হয়ে যায়। পাতা খয়েরী-বাদামী রঙ ধারণ করে। পুরনো পাতা ঝরে যায়। এ সময়ে ফুল বা আমের মুকুল কিছুই হয় না।

গ. বন্ধুখাতায় একটি কোলজ চিত্র বানাতে হবে। প্রয়োজনীয় উপকরণ: i) শুকনো পাতা, ii) শুকনো ডাল, iii) রঙিন কাগজ (পছন্দমতো), iv) কাঁচি, ⅳ) আঠা, vi) আর্ট পেপার/বন্ধুখাতার পৃষ্ঠা।

CamScanner 01 26 2024 15.06 3

চিত্র: শীতকালে আমগাছের অবস্থা

ধাপ-১: আর্ট পেপার/ বন্ধুখাতার পৃষ্ঠায় শুকনো পাতা এবং ডালপালা গুলো বসিয়ে পছন্দের নকশায় সাজাই।
ধাপ-২: নকশার সৌন্দর্যের জন্য রঙিন কাগজ ব্যবহার করবো।
ধাপ-৩: পছন্দমতো তৈরি করা নকশাটি আঠা দিয়ে কাগজে লাগিয়ে কোলাজ সম্পন্ন করবো।

উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই কোলাজচিত্র তৈরি করতে পারি।

কাজ-৪: শীতের সময়ের বিভিন্ন রঙের ঝরাপাতা, শুকনো ডাল ইত্যাদি আঠা দিয়ে কাগজে লাগিয়ে গাছ/প্রকৃতি/পাখি ইত্যাদি বিষয়ে পছন্দমতো কোলাজচিত্র তৈরি করো অথবা মনের মতো নকশা তৈরি করো।
কাজের ধরন: দলগত কাজ।

নমুনা সমাধান
এই কাজটি কাজ-৩ এর মতোই তবে আম গাছের বা নির্বাচিত গাছের পাশাপাশি অন্য গাছের শুকনো পাতা ও ডালপালা সংগ্রহ করে নকশা করা যাবে। বাকি ধাপগুলোর জন্য কাজ-৩ অনুসরণ করব।

কাজ-৫: বিভিন্ন রকমের গাছের শুকনো পাতা, ফুল, শিকড়, ডালপালা, মাটি, বালি সহ নানা উপকরণ মিলিয়ে মনের মতো আকৃতি বানাও।
কাজের ধরন: দলগত কাজ।

নমুনা সমাধান
প্রয়োজনীয় উপকরণ: i. মাটি/ বালি, ii. শুকনো ফুল, পাতা, ডাল, iii. রং, iv. পানি, v. কাঁচি/কাটার

ধাপ-১: মাটি/পানি/বালি একত্রে মিশিয়ে পছন্দমতো একটি আকৃতি দেই। উদাহরণস্বরূপ শীতের যেকোন অতিথি পাখির ন্যায় আকার দিতে পারি।
ধাপ-২: শুকনো পাতাগুলো বসিয়ে পাখিটির মাটির আকারের দুই পাশের পাখনা এবং পেছনে লেজের অংশে গুঁজে দেয়া যায়।
ধাপ-৩: শুকনো ডাল কেটে উপযুক্ত আকৃতি দিয়ে পাখির ঠোঁট, চোখ, পা ইত্যাদি বানাতে পারি।
ধাপ-৪: সম্পূর্ণ আকৃতি দেয়া সম্পন্ন হলে ১/২ দিন শুকাতে দেই।
ধাপ-৫: পছন্দমতো রং দিয়ে সাজিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবো। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই বিভিন্ন আকার-আকৃতি বানাতে পারবো।

কাজ-৬: শীত নিয়ে পছন্দের গান, কবিতা আবৃত্তি ও শীত নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো লেখো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান
ক. শীত নিয়ে পছন্দের গান: শীত নিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারি- যেমন:

শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে।
পাতাগুলো শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।।
উড়িয়ে দেবার মাতন এসে কাঙাল তারে করল শেষে,
তখন তাহার ফলের বাহার রইল না আর
অন্তরালে।।

পর্যায়: প্রকৃতি
তাল: দাদরা

খ. শীত নিয়ে পছন্দের কবিতা: জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘শীত রাত’ কবিতাটি পরিবেশন করতে পারি।

শীত রাত
জীবনানন্দ দাশ
এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো,
হলুদ পাতার মতো।
শহর ও গ্রামের দূর মোহনায় সিংহের হুঙ্কার
শোনা যাচ্ছে-
সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।

গ. শীতের প্রকৃতি: শীত মানেই পাতা ঝরার গান। শীত আসার পূর্বে গাছে গাছে সবুজ পাতায় ভরা থাকে কিন্তু শীতের আগমনে পাতাগুলো হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। এটি প্রকৃতিতে শীতের একটি রূপ। শীত তার চরম শুষ্কতার রূপ নিয়ে প্রকৃতির ওপরে যেন জেঁকে বসে। রুক্ষতা, তিক্ততা ও বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে শীত আসে। শীতের তাণ্ডবে প্রকৃতিও হয় বিবর্ণ। গাছে থাকে না ফুল, ফল বা পাতা; মাঠেও থাকে না ফসল। কুয়াশাচ্ছন্ন সমগ্র প্রকৃতি, শিশির সিক্ত রাস্তাঘাট কিংবা হিমেল বাতাস, মিষ্টি মধুর আমেজে শীতকাল একটি ভিন্ন রূপ নিয়ে আসে প্রকৃতিতে।

আরো পড়োআনন্দধারা
আরো পড়ো বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে

কাজ-৭: ‘শীত প্রকৃতির রূপ’ অধ্যায়ে যা যা করেছ তা লেখো এবং অনুভূতি বর্ণনা করো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান
ক. এই অধ্যায়ে আমি যা যা করেছি:

  • পূর্বের অধ্যায় ‘আনন্দধারা’য় আমার পছন্দের আম গাছের পূর্বের অবস্থার সাথে শীতের সময়ের পার্থক্য জেনেছি।
  • পার্থক্যগুলোর মধ্যে জেনেছি শীতের পূর্বে গাছের পাতা সবুজ থাকে, শীতের সময় পাতার রং বাদামী-খয়েরী রং ধারণ করে। শীতের পূর্বে কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু শীতের সময় শুকনো পাতা ঝরে যায়।
  • বাড়ির পাশে ঝরে পড়া শুকনো পাতার উপর দিয়ে হাঁটার সময় যে ছন্দময় শব্দ তৈরি হয়েছে তা আমার বাবার মোবাইলের মাধ্যমে অডিও/ভিডিও রেকর্ড করেছি।
  • আম গাছের শুকনো পাতা, ডালপালা ও রঙবেরঙয়ের কাগজ কেটে আঠা দিয়ে একটি কোলাজ তৈরি করেছি। কোলাজটি গাছের শীতের সময়ের রূপকে তুলে ধরেছে। কোলাজটি বন্ধুখাতায় আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছি।
  • বন্ধুখাতায় শীতের সময়ে ঝরে পড়া পাতা, শুকনো ডালপালা দিয়ে গাছ, পাখি, প্রকৃতি ইত্যাদির নকশা/ চিত্র তৈরি করেছি।
  • গাছের পাতা, ফুল, শিকড়, ডালপালা, মাটি ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন আকৃতি বানানো হয়েছে। যেমন- পাখি, মাছ, ঘর ইত্যাদি।
  • শীতের সময় আমাদের দেশে যে বিদেশ থেকে রঙবেরঙের অতিথি পাখি আসে সেগুলো সম্পর্কে জেনেছি।
  • আমি আমার বন্ধুখাতায় শীতের সময়ে গাছের অবস্থা লিখে রেখেছি। যে কোলাজগুলো তৈরি করেছি সেগুলো আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছি। আমার পছন্দের কবিতা, গান লিখে রেখেছি।

খ. আমার অনুভূতি: আমরা সহপাঠীরা মিলে একসাথে শীতের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। দলে দলে বিভক্ত হয়ে শীতের সময়ে ঝরে পড়া শুকনো পাতা, ডালপালা, শিকড়, রঙিন কাগজ ইত্যাদি দিয়ে কোলাজ বানিয়েছি। সবাই মিলে শ্রেণি শিক্ষকের সাহায্যে যার যার বন্ধুখাতায় কোলাজগুলো আঠা দিয়ে লাগিয়েছি। শীত সম্পর্কে যার যার পছন্দের গান গেয়েছি, কবিতা আবৃত্তি করেছি, গানের তালে অনেকে নেচে দেখিয়েছে। সর্বপরি, এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে শীতের প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা সামগ্রিক ধারণা পেয়েছি।

Gravatar Image
StudyOurs: Your Gateway to Collaborative Learning and Growth.