আমাদের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান বই এর ২য় শিখন অভিজ্ঞতা। আমাদের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
আমাদের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ধাপ-১
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: কাগজ, কলম, পেন্সিল, অনুসন্ধানী পাঠ বই, অনুশীলন বই।
কাজের ধারা
- ক্লাসের সবাই নিজ নিজ কল্পনার বিজ্ঞানীর ছবি খাতায় আঁকি।
নমুনা ছবি:
ছবি: আমার চোখে বিজ্ঞানী
ধাপ-২
কাজের ধারা
- ক্লাসের বন্ধুদের আঁকা ছবি দেখি এবং বিজ্ঞানীদের চেহারা ও পোশাকে আশাকে ফুটে ওঠা বৈশিষ্ট্য পর্যাবেক্ষণ করি।
- অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে পড়া বিজ্ঞানীদের সাথে কল্পনার বিজ্ঞানীর মিল খুঁজে বের করি।
নমুনা উত্তর:
ধাপ-৩
ধাপ-৪
কাজের ধারা
- বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং হরিপদ কাপালীর অনুসন্ধানের ধাপগুলো সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে লিখি।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১. সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা কীভাবে কাজ করেন?
উত্তর: সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা সাধারণত কৌতূহলপ্রবণ হয়। এ কারণে কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বা কোনো সমস্যা সমাধান করতে বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান বা গবেষণা করে থাকেন। অনুসন্ধানের ছয়টি ধাপ আছে, ধাপগুলো এরকম-
i. একটি সমস্যা বা প্রশ্ন ঠিক করা যার সমাধান বা উত্তর বের করতে হবে।
ii. এ সম্পর্কে যা কিছু গবেষণা হয়েছে তা জেনে নেওয়া।
iii. প্রশ্নটির একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানো।
iv. সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি সত্যি কি না সেটি পরীক্ষা করে দেখা।
v. পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া।
vi. সবাইকে ধারণাটি জানিয়ে দেয়া।
প্রশ্ন-২. গবেষণা করতে সবসময় অনেক আধুনিক ল্যাবরেটরি বা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই- একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গবেষণা করতে সবসময় অনেক আধুনিক ল্যাবরেটরি বা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের যশোর এলাকার হরিপদ কাপালীই এর বাস্তব উদাহরণ। তার আবিষ্কৃত “হরি ধান” দেশব্যাপী সমাদৃত। কিন্তু কোনো আধুনিক ল্যাবরেটরি ছাড়াই তিনি এই ধান আবিষ্কার করেন।
নিজের ক্ষেতের ধান পরীক্ষা করতে করতে হঠাৎ করে দেখলেন- কিছু গাছ তুলনামূলকভাবে বড় এবং সেখানে ধানের ফলন বেশি হয়েছে। হরিপদ কাপালী বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার কারণে তিনি সেই ধানগুলো অন্য ধানের সাথে মিশিয়ে না ফেলে সেগুলো আলাদা করে ফেললেন এবং উচ্চফলনশীল কি না পরীক্ষা করে দেখলেন। এভাবেই তিনি নিজের ক্ষেতেই উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে ফেলেন এবং এই আবিষ্কারের জন্য তার কোনো আধুনিক ল্যাবরেটরি বা যন্ত্রপাতি কিছুরই প্রয়োজন হয় নি।
তৃতীয় সেশন
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: কাগজ, কলম, পেন্সিল, অনুসন্ধানী পাঠ বই, অনুশীলন বই।
ধাপ-১
কাজের ধারা
- বিজ্ঞান আমাদের জীবনে সরাসরি কীভাবে কাজে লাগে তা সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
- বিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি আমরা প্রয়োজন মেটাই তা অনুশীলন বইয়ের নির্ধারিত স্থানে লিখি।
নমুনা উত্তর:
বিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা সরাসরি আমাদের প্রয়োজন মেটাই?
উত্তর : বিজ্ঞানের জ্ঞন আমরা আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবহার করি। যেমন- কৃষিক্ষেত্রে ট্রাক্টর, সেচ পাম্প, বপনযন্ত্র ইত্যাদি ব্যবষ্যর করে অল্প সময়ে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। যাতায়াত ক্ষেত্রে বাস, গাড়ি, প্লেন ইত্যাদি ব্যবহার করে অল্প সময়ে দ্রুত গন্তব্যে যাওয়া যায়। যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন, টেলিফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি ব্যবহার করে দূর-দূরান্তের মানুষের সাথে সহজেই দেখে কথা বলা যায়, যোগাযোগ করা যায়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক মেশিন ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ফলে অতি দ্রুত রোগ নির্ণয় ও রোগমুক্তি সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ল্যাপটপ, পেন্সিল ইত্যাদি ব্যবহার করার ফলে শিক্ষা গ্রহণ হয়ে উঠেছে আনন্দময়। এসবই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে ব্যবহার করি।
ধাপ-২
কাজের ধারা
- ক্লাসে পাশের বন্ধুর সাথে নিজের লেখা প্রযুক্তিগুলো মিলিয়ে দেখি।
- দুজনের তালিকাতেই আছে এমন একটি প্রযুক্তি নির্বাচন করি এবং এর পিছনে বিজ্ঞানের ভূমিকা কী অর্থাৎ বিজ্ঞানের কোন বিশেষ ক্ষেত্র জড়িত তা খুঁজে বের করি এবং খাতায় লিখি।
নমুনা উত্তর:
ধাপ-৩
বাড়ির কাজ
কাজের ধারা
- আমার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কী কী প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার তালিকা অনুশীলন বইয়ের নির্ধারিত হকে লিখি। এই প্রযুক্তি তারা কী কাজে লাগায় তা নোট করি।
নমুনা উত্তর:
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১. কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমরা কোন কোন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছি এবং এইসব প্রযুক্তির পিছনে বিজ্ঞানের কোন ক্ষেত্রের জ্ঞান কাজে লাগানো হয়েছে?
উত্তর: কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যেসব প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছি-
১. মাস্ক: কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সবথেকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিটি ছিল মাস্ক। সূক্ষ্ম ভাইরাস যেন আমাদের নাক ও মুখের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ না করতে পারে এজন্য মাস্ক তৈরিতে রসায়ন বিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগানো হয়েছে।
২. অক্সিজেন সিলিন্ডার; কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ভূমিকা অপরিহার্য। এ প্রযুক্তি তৈরিতে পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগানো হয়েছে।
৩. ভ্যাক্সিন: কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিটি ছিল ভ্যাক্সিন। এটি তৈরিতে জৈব রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের মিলিত জ্ঞান কাজে লাগানো হয়েছে।
প্রশ্ন-২. পূর্বে ব্যবহূত হতো কিন্তু বর্তমানে আর প্রয়োজন পড়ে না এমন ৩টি প্রযুক্তি ও তার ব্যবহার লেখো।
উত্তর: পূর্বে ব্যবহূত হতো কিন্তু বর্তমানে প্রয়োজন পড়ে না এমন ৩টি প্রযুক্তির নাম-
১. হারিকেন: পূর্বে আলো জ্বালানোর জন্য হারিকেন ব্যবহূত হতো।
২. হাতপাখা; বাতাস খাওয়ার জন্য হাতপাখা ব্যবহৃত হতো।
৩. ঢেঁকি; ধান ভাঙানোর জন্য ঢেঁকির প্রচলন ছিল।
চতুর্থ সেশন
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: কাগজ/খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কেল, সহায়ক বই।
ধাপ-১
কাজের ধারা
- দৈনন্দিন জীবন ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং উদাহরণ নিয়ে সহপাঠীদের সাথে দল বানিয়ে আলোচনা করি এবং অনুশীলন বই এর নির্ধারিত ছকে লিখি।
নমুনা উত্তর:
ধাপ-২
কাজের ধারা
- ক্লাসের সকলের লেখা প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে কোনগুলো সত্যি সত্যি আমাদের প্রয়োজন, কোনগুলো অপ্রয়োজনীয়, কোনগুলো ভালো কাজে, কোনগুলো খারাপ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তা সকলের সাথে আলোচনা করে নিশ্চিত করি।
- সকলের মতামত নিয়ে এবং অনুশীলন বইয়ের সাহায্য নিয়ে প্রযুক্তিগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করে অনুশীলন বইয়ের নির্ধারিত ছকে লিখি।
নমুনা উত্তর:
ধাপ-৩:
কাজের ধারা
- বাড়ি ফিরে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের কিছু করার আছে কিনা সে সম্পর্কে বাসার অন্যদের মতামত নিই।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহূত হয় না তবুও প্রয়োজনীয় এমন ৩টি প্রযুক্তি এবং তার ব্যবহার লেখো।
উত্তর: দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় না তবুও প্রয়োজনীয় এমন ৩টি প্রযুক্তি-
১. রক্ত চাপ নির্ণয় মিশন: এটির ব্যবহার দৈনন্দিন না তবে অসুস্থ হলে রোগ নির্ণয় করতে এই প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে।
২. রোলার কোস্টার: এটি দৈনন্দিন আমাদের প্রয়োজন পড়ে না। তবে ছুটির দিনে বিনোদনের জন্য এই প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে।
৩. আতশবাজি: এটির দৈনন্দিন ব্যবহার নেই। তবে উৎসবের সময় আমরা এটি ব্যবহার করি।
প্রশ্ন-২. একটি অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তির নাম বলো এবং কেন এটিকে অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি বলা হয়? এটির বিকল্প হিসেবে কী ব্যবহার করা যেতে পারে?
উত্তর: পলিথিনের ব্যাগ একটি অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি। কারণ এই ব্যাগগুলো আমরা একবার ব্যবহার করে ফেলে দিই এবং এইগুলো অপচনশীল বলে আবর্জনার সাথে সাথে শেষ পর্যন্ত নদীর তলদেশ বা প্রকৃতিতে আশ্রয় নিয়ে প্রথমে দেশের, তারপর পৃথিবীর পরিবেশের মহা বিপর্যয় ঘটাতে থাকে। এজন্য এটিকে অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি বলা হয়। পলিথিনের ব্যাগের বিকল্প হিসেবে | কাপড়ের বা চটের ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
পঞ্চম সেশন
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: কাগজ, কলম, পেন্সিল, পোস্টার কাগজ, রঙ পেন্সিল ইত্যাদি স্টেশনারি সামগ্রী। এছাড়া অনুসন্ধানী পাঠ বই, অনুশীলন বই, অন্য যা যা প্রয়োজন হয়।
ধাপ-১
কাজের ধারা
- প্রযুক্তির নানা ধরনের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি এবং তাদের ভাবনা সম্পর্কে জানি।
- প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে কীভাবে সচেতন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করি এবং আইডিয়াগুলো লিখি।
নমুনা উত্তর:
ধাপ-২
কাজের ধারা
- ক্লাসের সবাইকে নিয়ে শিক্ষকের সহায়তায় পোস্টার বানানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করি।
- প্রযুক্তির ব্যবহারে জনসচেতনতার বিষয়টি পোস্টার বানিয়ে উপস্থাপন করি। নিচে একটি নমুনা পোস্টার দেয়া হলো-
নমুনা পোস্টার:
আরো পড়ো → আকাশ কত বড়?
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
প্রশ্ন-১. অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হচ্ছে এমন একটা প্রযুক্তি যেটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখে না বরং ক্ষতি বয়ে আনে। পারমাণবিক বোমা এমন একটি অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এটির কোনো ভূমিকাই নাই।
সুতরাং এটি একটি অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি। অন্যদিকে কিছু প্রযুক্তি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে তবে অপ্রয়োজনে ব্যবহারে মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে, এরূপ ব্যবহারই হচ্ছে প্রযুক্তির অপবাহার। যেমন স্মার্ট ফোন খুবই প্রয়োজনীয় একটি প্রযুক্তি। স্মার্ট হোনের ব্যবহার এতোই বিস্তৃত যে এটির ব্যবহার উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে এই স্মার্ট ফোন বিনা কারণে ব্যবহারের ফলে তরুণ-তরুণী মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হচ্ছে। এটিই হচ্ছে প্রযুক্তির অপব্যবহার।
প্রশ্ন-২. প্রযুক্তির অপব্যবহার কমাতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে?
উত্তর: প্রযুক্তির অপব্যবহার কমাতে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। এ উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে পোস্টার বানিয়ে সেটি দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বড় ব্যানারে করে শহর বা গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞান মেলায় প্রযুক্তির অপব্যবহারের কুফল নিয়ে একটি স্টলও দেওয়া যেতে পারে।