জেনে বুঝে আলোচনা করি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৭ম অধ্যায়। জেনে বুঝে আলোচনা করি অধ্যায়ের ২য় পরিচ্ছেদ আলোচনা করতে শেখা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
আলোচনা
নিচের ঘটনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ি—
রাতুল, মিতুল, প্রভা ও সুস্মিতা মাঠে খেলতে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে তারা খেয়াল করল, রাস্তার দুপাশের বড়ো বড়ো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গাছ কাটার এই আয়োজন দেখে রাতুল বলল, ‘রাস্তার পাশের এসব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে কেন?’
প্রভা বলল, ‘তুই জানিস না? এই রাস্তাটা আরও চওড়া করা হবে।’ প্রভার কথা শুনে মিতুল বলল, ‘কিন্তু রাস্তা চওড়া করার জন্য গাছ কাটতে হবে কেন? গাছ আমাদের কত উপকার করে জানিস?’
সুস্মিতা বলল, ‘গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই, খাবার পাই, জ্বালানি পাই । এভাবে গাছ কেটে ফেলা ঠিক হচ্ছে না মোটেও।’ প্রভা বলল, ‘রাস্তা চওড়া করলেও তো আমাদের উপকার। তখন স্কুলে যাওয়ার পথে আর যানজটে পড়তে হবে না।’ রাতুল বলল, ‘সেটাও ঠিক। কিন্তু গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করা মোটেও ঠিক নয়।’
ওপরের ঘটনাটিতে দেখা যায় রাতুল, মিতুল, প্রভা ও সুস্মিতা একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। সেই বিষয় নিয়ে তারা পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছে। এ রকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতামত প্রদানই আলোচনা।
কোনো বিষয় বা ঘটনার
প্রয়োজনীয়তা-অপ্রয়োজনীয়তা, ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, যৌক্তিকতা ইত্যাদি নিয়ে মত-দ্বিমত, পক্ষে- বিপক্ষে মতামতই হচ্ছে আলোচনা। যেকোনো বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়েই সে বিষয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
আলোচনার উদ্দেশ্য
আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করা যায়।
পরস্পরের মতামত সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে।
নির্দিষ্ট বিষয়ে একে অপরের মনোভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।
বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথোপকথনের সুযোগ তৈরি হয়।
প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারে।
কোনো ভ্রান্ত ধারণা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক জ্ঞান লাভ করা যায়।
আলোচনার মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্রে আদর্শগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।
সমস্যার ফলপ্রসূ সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।
আলোচনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে করণীয়
অন্যের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনা।
অন্যের বক্তব্যের মাঝখানে কথা না বলা।
অনুমতি নিয়ে নিজের কথাগুলো বলা।
নিজের কথাগুলো গুছিয়ে সংক্ষেপে বলা।
বক্তব্য দেওয়ার সময় আক্রমণাত্মক বক্তব্য পরিহার করা।
কথা বলার সময় প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা।
আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া।
সমালোচনা
বিভিন্ন সাহিত্য বা শিল্পকর্মের দোষ-গুণ আলোচনা করাছে সমালোচনা বলে।
যুক্তিখণ্ডন
কোনো বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে কারণ বা হেতু তুলে ধরাই হলো যুক্তিখণ্ডন। বিতর্কে সব বক্তার শেষে দলনেতা নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে- বিপক্ষে ন্যাসংগত বক্তব্য তুলে ধরেন। একেই যুক্তিখণ্ডন বলে।
ভিন্নমত
কোনো বিষয় সম্পর্কে অন্যের মতের বিপক্ষে মতামতই হলো ভিন্নমত। আমাদের সমাজে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়। বিপক্ষে তুলে ধরা মতকেই ভিন্নমত বলে।
বিতর্ক
বিতর্ক হচ্ছে যুক্তি-তর্ক ও তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করা। কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সে বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, তত্ত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাদানুবাদকে বিতর্ক বলা হয়। একটি নির্ধারিত বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরার মাধ্যমে নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই বিতর্কের মূল উদ্দেশ্য। বিতর্কের মাধ্যমে ব্যক্তির জ্ঞানের পরিসীমা এবং বলতে পারার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
বিতর্কের শ্রেণিবিভাগ
বিতর্ককে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় বিতর্ক হলো- প্রচলিত বা সনাতনী বিতর্ক, সংসদীয় বিতর্ক, বারোয়ারি বিতর্ক, জাতিসংঘ মডেল বিতর্ক প্রভৃতি।
প্রচলিত বা সনাতনী বিতর্ক : বিতর্কের সবচেয়ে প্রাচীন ধারা হচ্ছে সনাতনী বিতর্ক। সাধারণত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের বিতর্ক হয়ে থাকে। এ ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে দুটি দল থাকে। সাধারণত প্রতি দলে তিনজন সদস্য থাকে। বিতর্ক পরিচালনার জন্য থাকেন একজন সভাপতি। মূল্যায়ন করার জন্য থাকেন তিন বা ততোধিক সদস্যের বিচারকমণ্ডলী। প্রত্যেক বক্তা সাধারণত পাঁচ মিনিট কথা বলার সময় পান। দুই দলনেতা যুক্তি খণ্ডনের জন্য অতিরিক্ত দুই মিনিট করে সময় পান।
সংসদীয় বিতর্ক : সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত বিতর্ককে সংসদীয় বিতর্ক বলা হয়। সংসদীয় বিতর্ক ধারা বর্তমানে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে সরকারি দলে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সরকারি দলের সাংসদ এবং বিরোধী দলে থাকেন নেতা, উপনেতা ও বিরোধীদলীয় সাংসদ। সংসদীয় বিতর্ক যিনি পরিচালনা করেন, তাঁকে বলে স্পিকার।
বারোয়ারি বিতর্ক : এ ধরনের বিতর্কে কোনো পক্ষ বিপক্ষ দল থাকে না। এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এখানে ব্যক্তি ক্ষুরধার বক্তব্য, চিন্তার নতুনত্ব, বিষয়ের গভীরতা, নাটকীয়তা, আবেগঘন ও সাবলীল অনবদ্য শৈল্পিক উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষের সমর্থন আদায় করেন।
আরো পড়ো → সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ
আরো পড়ো → জেনে বুঝে আলোচনা করি ১ম পরিচ্ছেদ
বিতর্কে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে করণীয় :
বিতর্কের বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা।
নিজের কথা ও যুক্তিগুলো কাগজে টুকে রাখা।
অন্যের বক্তব্যের দুর্বল অংশগুলো চিহ্নিত করা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বক্তব্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করা।
নিজ দলের উপস্থাপিত বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন বক্তব্য পরিহারে সতর্ক থাকা।
বিতর্কের বিধিমালা মেনে বক্তব্য উপস্থাপন করা।
প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে কোনো আক্রমণাত্মক বক্তব্য থেকে বিরত থাকা।
প্রতিপক্ষ, সভাপতি বা মডারেটর, বিচারক, দর্শকসহ উপস্থিত সকলের দৃষ্টি যাতে বিতার্কিকের প্রতি নিবদ্ধ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা।
চেহারা বা অবয়বে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস রাখা।
আলোচনা করতে শেখা
১. যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান গ্রহণ করি
আর সব দিনের মতো সেদিনও মিলি, রাতুলরা খেলতে গিয়েছিল। মাঠে এসে দেখতে পেল, কয়েকজন লোক ফিতা নিয়ে মাপজোখ করছেন। একজনের হাতে আবার মোটা একটা খাতা। সেখানে কলম দিয়ে কীসব টুকে রাখছেন। মিলি অবাক হয়ে বলল, ‘আচ্ছা লোকগুলো এখানে কী করছেন?”
রাতুল বলল, “কী করছেন, তা তো জানি না!”
অন্যরাও এ-ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগল।
শিমু বলল, “কাল সন্ধ্যায় বাবা বলছিলেন, এখানে নাকি একটা শিশুপার্ক হবে। নতুন নতুন খেলার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। তবে তো দারুণ হয়। কয়েকজন একসঙ্গে বলে ওঠে।
মিলি খানিক ভেবে গালে হাত দিয়ে বলে, ‘তার মানে, বদলে যাচ্ছে আমাদের খেলার মাঠটা। তাই না?’
রাতুল বলে, ‘হ্যাঁ, বদলেই তো যাচ্ছে! তখন হয়তো টিকিট কেটে আমাদের ভিতরে ঢুকতে হবে সুনীল এতক্ষণ চুপ করে ছিল। সে বলল, “শিশুপার্ক করতে হলে এখানকার অনেক গাছ কাটতে হবে। আর গাছ কাটলে তো পরিবেশের ক্ষতি হবে। “আরে তাই তো! এভাবে তো ভেবে দেখিনি!’ শিমু বলল।
চিন্তায় পড়ে গেছে সবাই।
প্রশ্ন : উপরের ঘটনা পড়ার পর তোমার কী মনে হচ্ছে? কোনটা হলে ভালো হয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত শিশুপার্ক, নাকি গাছপালায় ভরা খেলার মাঠ? তোমার মতের সমর্থনে যুক্তিগুলো লেখো।
নির্দেশনা :
ঘটনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। নতুন শিশুপার্ক এবং পুরোনো খেলার মাঠের উপকারিতা ও অপকারিতা চিন্তা করো। পক্ষে-বিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগুলো খাতায় টুকে রাখো।
নমুনা উত্তর : ঘটনাটি পড়ে আমার মনে হচ্ছে গাছপালায় ভরা খেলার মাঠ থাকলেই ভালো হয়। নিচে আমার মতের সমর্থনে যুক্তিগুলো দেওয়া হলো-
যুক্তি ১
নতুন শিশুপার্ক – নতুন শিশুপার্ক হলে সেখানে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে।
পুরোনো খেলার মাঠ – খেলার মাঠে কোনো ধরনের টিকিটের দরকার হয় না।
যুক্তি ২
নতুন শিশুপার্ক – নতুন করে শিশুপার্ক করতে হলে মাঠের গাছপালা কাটতে হবে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে।
পুরোনো খেলার মাঠ – কিন্তু গাছপালায় ভরা খেলার মাঠ হলে শিশুরা প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলা করতে পারবে। এতে শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থতা অটুট থাকবে।
যুক্তি ৩
নতুন শিশুপার্ক – শিশুপার্ক নিয়মতান্ত্রিক বা সুশৃঙ্খল থাকলেও সেখানে শিশুরা নিজেদের ইচ্ছেমতো খেলাধুলা করতে পারে না।
পুরোনো খেলার মাঠ – খেলার মাঠে শিশুরা নিজেদের পছন্দমতো খেলাধুলা করতে পারে।