নিমগাছ হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর বনফুল এর একটি প্রতীকী গল্প। নিমগাছ গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
নিমগাছ গল্পের সৃজনশীল
১. স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ‘জমিলার’ বড় সংসার। প্রতি মুহূর্তেই সংসারে তাকে প্রয়োজন। কঠিন দায়িত্বের জালে আবদ্ধ সে। এভাবেই জীবনের সত্তরটি বছর কেটে গেল। এখন তার পরিশ্রম করার সামর্থ্য নেই। সংসারে সে এখন বোঝা। তার ঠাঁই এখন বৃদ্ধাশ্রমে।
ক. বনফুলের প্রকৃত নাম কী?
খ. নতুন লোকটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।
খ. নিমগাছের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে নতুন লোকটা মুগ্ধদৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল।
নতুন লোকটি একজন কবি। কবির কাছে প্রয়োজনের চেয়ে সৌন্দর্যই মুখ্য। অন্য সবাই নিমগাছকে প্রয়োজনের দিক থেকে বিচার করলেও তিনি দেখেছেন শৈল্পিক দৃষ্টি দিয়ে। তাই নিমগাছের সবুজ পাতা আর থোকা থোকা সাদা ফুল তাকে মুগ্ধ করেছে। সেই মুগ্ধতা এতটাই গভীর যে, ফুলগুলোকে তাঁর একঝাঁক নক্ষত্র মনে হয়েছে।
গ. গৃহবধূর জীবন আলেখ্য উপস্থাপনে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিমগাছ’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিটি সংসারেই নারী অসামান্য অবদান রাখেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাদের অবদানের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। তিনি সংসারে সবার প্রয়োজন মিটালেও তার নিজ কাজের স্বীকৃতি মেলে না প্রায় সময়ই।
‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের রূপকে মূলত এক গৃহবধূর জীবন চিত্রিত হয়েছে। নিমগাছকে সবাই রোগ সারাতে ব্যবহার করলেও তার যত্ন কেউ করে না। তেমনি বাড়ির গৃহকর্মনিপুণা লক্ষ্মীবউটার সেবা সবাই গ্রহণ করলেও তার কথা কেউ ভাবে না। উদ্দীপকের গৃহবধূ জমিলা সংসারের কঠিন দায়িত্বের আলে আবদ্ধ। প্রতি মুহূর্তে সে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েছে। কিন্তু তার এ অবদান সংসারে স্বীকৃতি পায়নি। উপরন্তু অবহেলিত জমিলার স্থান হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। এই উপেক্ষিত, অবহেলিত এবং অস্বীকৃত জীবনচিত্রে উদ্দীপকের সাথে নিমগাছ’ গল্পের গৃহবধূর সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকটি নিমগাছ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না।”-মন্তব্যটি যথার্থ।
কবির কাছে জীবন সৌন্দর্যমণ্ডিত। তাই খুব নগণ্য জিনিসও তাঁর কাছে মহিমময় হয়ে ওঠে। কিন্তু সাধারণের কাছে ক্ষেত্রবিশেষে মহৎ জিনিসও মূল্যহীন মনে হয়।
‘নিমগাছ’ গল্পে গৃহবধূর জীবনের সব সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে প্রয়োজনের কঠিন বেড়াজালে। প্রয়োজনের গণ্ডিতে তার জীবন উপেক্ষিত, অথচ তাকে ছাড়া সংসারের অন্যরা অচল। একদিন এক কবি তার সৌন্দর্য আবিষ্কার করে, যার সঙ্গে প্রয়োজন সম্পর্কহীন। কিন্তু সংসারের সঙ্গে তার শেকড় এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, কবির ডাকে তার সাড়া দেওয়ার উপায় নেই। অনুরূপভাবে উদ্দীপকের গৃহবধূও সংসারের প্রয়োজনে সর্বদা নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তার প্রতিদানে সে পেয়েছে অবহেলা। শেষ জীবনে তার স্থান হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে।
‘নিমগাছ’ গল্পে একজন কবি নিমগাছের সাধারণ উপকারী দিকের বাইরে গিয়ে নিমগাছের সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু উদ্দীপকের জমিলার ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। ‘নিমগাছ’ গল্পে গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউয়ের যে জীবন উপস্থাপন করা হয়েছে তা উদ্দীপকের জমিলার মধ্যে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। আজীবন উপেক্ষিত হয়ে বৃদ্ধাশ্রমই হয়েছে জমিলার শেষ আশ্রয়। তাই মিল থাকলেও উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না।
২. ষাট বছরের বৃদ্ধ মকবুলের সাথে বিয়ে হয় তেরো বছরের টুনির। ধানভানা থেকে শুরু করে জমির কাজ সবই মকবুল টুনির দ্বারা করায়। টুনির কর্মদক্ষতার জন্য মকবুলের চাচাতো ভাই মন্তু টুনির রূপে ও গুণে মুগ্ধ। টুনি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে মন্তুর সাথে চলে যাওয়ার। কিন্তু সে যেতে পারে না।
ক. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে কারা খুশি হয়?
খ. নিমগাছটার লোকটার সাথে চলে যেতে ইচ্ছে করে কেন?
গ. উদ্দীপকের মকবুল ‘নিমগাছ’ গল্পের কার প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “টুনি যেন “নিমগাছ’ গল্পের লক্ষ্মী বউ”- তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে বিজ্ঞরা খুশি হয়।
খ. অনাদর ও অবহেলা থেকে মুক্তি পেতে কবির মতো একজন সৌন্দর্যপিয়াসী লোকের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে নিমগাছটির তার সাথে চলে যেতে ইচ্ছে করে।
‘নিমগাছ’ গল্পে সাধারণ অর্থে নিমগাছ ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি গাছ। এর ছাল, পাতা, ডাল নানাভাবে মানুষের রোগের উপশম হিসেবে কাজ করে। অথচ কেউ এই গাছের সামান্যতম যত্ন নেয় না। একজন কবি একদিন নিমগাছের রূপ ও গুণের প্রশংসা করেন। এই সৌন্দর্যপিয়াসী কবির প্রশংসায় নিমগাছটি মুগ্ধ হয় এবং তার সাথে চলে যেতে চায়। লোকটির সাথে নিমগাছটির চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণের মধ্য দিয়ে লেখক গৃহকর্ম-নিপুণা একজন গৃহবধূর নিগৃহীত ও অবহেলিত জীবনের মুক্তির বাসনা প্রকাশ করেছেন।
গ. উদ্দীপকের মকবুল নিমগাছ গল্পের উল্লিখিত বিজ্ঞজনদের প্রতিনিধি।
এ সংসারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। অথচ নারীর অবদানের কথা, কর্মগুণের কথা পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় কেউ মনে রাখে না। তারা চায় নারীদের চিরদিন তাদের সেবাদাসী করে রাখতে। তাদের এই হীন মানসিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সমাজ আজ এতটা পিছিয়ে রয়েছে।
‘নিমগাছ’ গল্পে দেখা যায়, নিমগাছের রয়েছে নানা গুণ। এর ঔষধি গুণের কথা বিজ্ঞরা উপলব্ধি করেন। এজন্য বাড়ির পাশে নিমগাছ গজালে তারা খুশি হন। তাঁরা বলেন নিমের হাওয়া ভালো, থাক্, কেটো না।’ উপকারটুকু গ্রহণ করলেও কেউ তার যত্ন করে না। এ যেন উদ্দীপকের মকবুলের মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি। মকবুল স্ত্রী টুনিকে দিয়ে ধানভানা থেকে শুরু করে জমির কাজ সবই করায় । কিন্তু তাকে যতটা খাটায় ততটা মূল্যায়ন করে না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মকবুল নিমগাছ গল্পের বিজ্ঞজনদের প্রতিনিধি।
ঘ. “টুনি যেন নিমগাছ গল্পের লক্ষ্মীবউ”— মন্তব্যটির সাথে আমি একমত।
সৃষ্টির আদি থেকে এই বিশ্বসভ্যতাকে পূর্ণতা দান করার ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও সমান অবদান রয়েছে। অথচ সেই নারীকে তার অবদানের স্বীকৃতি না দিয়ে করা হয়েছে অবহেলা। তাদের বিভিন্ন সংস্কারের নাগপাশে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্যায়ন না করে পুরুষের ছায়াসঙ্গী করে রাখা হয়েছে, যেটা চরম অমানবিক।
উদ্দীপকে একজন অল্পবয়সী নারীর কথা বলা হয়েছে, যে বৃদ্ধ মকবুলের স্ত্রী। তাকে দিয়ে ধানভানা থেকে শুরু করে জমির কাজ পর্যন্ত করানো হয়। তবে সে যতটা পরিশ্রম করে ততটা মূল্যায়ন পায় না। টুনি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে তারই রূপ ও গুণমুগ্ধ মন্তুর সাথে সংসারের অমানবিক আবেষ্টনী ভেঙে কোথাও চলে যাওয়ার, অথচ যেতে পারে না। এই টুনি যেন নিমগাছ গল্পের নিমগাছের রূপকের আড়ালে বর্ণিত ওদের বাড়ির লক্ষ্মীবউটি।
‘নিমগাছ’ গল্পে প্রতীকী অর্থে নিমগাছকে ব্যবহার করেছেন গল্পকার। আসলে গৃহকর্মের নাগপাশে আবদ্ধ আমাদের সমাজের গৃহবধূদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। এখানে গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটির অবদানের কথা উঠে এসেছে নিমগাছের রূপকের অন্তরালে। নিমগাছের ছাল, পাতা, ডাল মানুষের নানা উপকারে আসে কিন্তু কেউ তার যত্ন করে না। তেমনি ‘নিমগাছ’ গল্পের ওদের বাড়ির লক্ষ্মীবউটিও সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম করলেও সঠিক মূল্যায়ন পায় না। তার ইচ্ছে করে সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে লোকটার সাথে বনে গিয়ে নিগৃহীত ও অবহেলিত জীবনের ইতি টানতে। কিন্তু সংসারের জাল সে ছিন্ন করতে পারে না, যেমন পারেনি উদ্দীপকের টুনি। তাই উদ্দীপকের টুনি যেন গল্পের ওদের বাড়ির লক্ষ্মীবউটি। ফলে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের সাথে আমি একমত।
পড়ুন →
পড়ুন →
৩. i…….. পরীর মতন মেয়ে
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালোবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
~ জসীমউদ্দীন
ii. তোমার যেখানে সাধ চলে যাও— আমি এই বাংলার ‘পরে রয়ে যাব;
দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
~ জীবনানন্দ দাশ
ক. ‘বিদ্যাসাগর’ বনফুলের কোন জাতীয় রচনা?
খ. ‘নিমগাছ’কে কেন প্রতীকী গল্প বলা হয়েছে?
গ. পাঠ্য ছোটগল্প ‘নিমগাছ’-এর ম্যাজিক বাক্যের সার্থক রূপায়ণ উদ্দীপকের কোন অংশে কীভাবে ঘটেছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দুটি অংশ i ও ii অবলম্বনে পাঠ্য গল্পের বিষয় ও ভাবগত সার্থকতা নিরূপণ করা যায়। – উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘বিদ্যাসাগর’ বনফুলের একটি জীবনী নাটক।
খ. নিমগাছের প্রতীকাশ্রয়ে গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটির জীবনবাস্তবতা বর্ণিত হয়েছে— তাই ‘নিমগাছ’ গল্পটিকে প্রতীকী গল্প বলা হয়েছে।
গল্পকার সমস্ত গল্পজুড়ে নিমগাছের ঔষধি গুণ, উপকারিতা ও সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি তুলে ধরেছেন নিমগাছের প্রতি মানুষের অবহেলার চিত্র। তবে গল্পের শেষ বাক্যটিতে এসে গল্পকার নিমগাছের সঙ্গে বাড়ির লক্ষ্মীবউটির তুলনা করে প্রতীকী তাৎপর্য সৃষ্টি করেছেন। নিমগাছের গুণাগুণ বর্ণনার মধ্য দিয়ে মূলত তিনি বাড়ির বউটির গুণাগুণ উপস্থাপন করেছেন। এমনকি নিমগাছের শেকড় মাটির গভীরে চারদিকে বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে বাড়ির বউটির সংসার জালে আবদ্ধ হওয়াকেও বুঝিয়েছেন। তাই ‘নিমগাছ’ গল্পটিকে প্রতীকী গল্প বলা হয়েছে।
গ. পাঠ্য ছোটগল্প ‘নিমগাছ’-এর ম্যাজিক বাক্যের সার্থক রূপায়ণ উদ্দীপকের (i) নং অংশে বাড়ির বউয়ের প্রতি পরিবারের সদস্যদের অবহেলা প্রকাশের মাধ্যমে ঘটেছে।
নারীরা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত নানা রকম অমর্যাদা ও অবহেলার শিকার হয়। পরিবারের সার্বিক উন্নয়নে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। অথচ কেউ তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে না।
উদ্দীপকে দুটি কবিতাংশ রয়েছে। (i) নং উদ্দীপকে দেখা যায়, পরীর মতো মেয়েটির বিয়ে হয় কাজিদের বাড়িতে। বনেদি ঘর হলেও তারা বাড়ির বউকে আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত রাখত। সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার পরিবর্তে তারা উঠতে- চ-বসতে তাকে নানা রকম কথা শোনাত, যা শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও বেদনাদায়ক। ‘নিমগাছ’ গল্পে লেখক প্রাত্যহিক জীবনে নিমগাছের অনবরত ব্যবহৃত হওয়ার চিত্র তুলে ধরেছেন । কবিরাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত নিমগাছ দ্বারা উপকৃত হয় । অথচ এই নিমগাছের সামান্য যত্নও কেউ করে না। শেষ বাক্যে লেখক বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটির সঙ্গে নিমগাছের তুলনার মধ্য দিয়ে সমাজে গৃহবধূর অবস্থান তুলে ধরেছেন, যা উদ্দীপকের মেয়েটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, ‘নিমগাছ’ গল্পের ম্যাজিক বাক্যের সার্থক রূপায়ণ উদ্দীপকের (i) নং অংশে ঘটেছে।
ঘ. উদ্দীপকের দুটি অংশ (i) ও (ii) অবলম্বনে পাঠ্য গল্পের বিষয় ও ভাবগত সার্থকতা নিরূপণ করা যায়।’- উক্তিটি যথার্থ।
নারীরা আমাদের সমাজবাস্তবতায় যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না। সংসারের বেড়াজালে তারা আবদ্ধ। চাইলেই তারা সেখান থেকে কখনই বের হতে পারে না। নিজে কষ্ট করে সবার প্রয়োজন মেটালেও কেউ তাকে মনে রাখে না।
উদ্দীপক (i)-এ একটি পরীর মতো মেয়ের কথা বলা হয়েছে, যাকে বনেদি ঘর দেখে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে সে কোনো আদর-যত্ন পায়নি। শ্বশুরবাড়ির লোকদের আচরণে তার প্রতি অবহেলা ও অনাদরের দিকটি ফুটে উঠেছে। উদ্দীপক (ii)-এর কবিতাংশে বলা হয়েছে, যার যেখানে ইচ্ছা চলে গেলেও কবি কোথাও যাবেন না। তিনি এই বাংলায়, বাংলার প্রকৃতিতেই থেকে যাবেন। কারণ এই প্রকৃতির সঙ্গেই মিশে আছে তার অস্তিত্ব। ‘নিমগাছ’ গল্পেও লেখক নিমগাছের রূপকে এক গৃহকর্মী নিপুণা লক্ষ্মীবউয়ের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরেছেন নিমগাছ একটি উপকারী গাছ হলেও কেউ তার যত্ন করে না। আবর্জনার পাশে অবহেলায় বেড়ে ওঠে। তার খুব ইচ্ছে করে সৌন্দর্যপ্রেমী কবির সঙ্গে দূরে কোথাও চলে যেতে। কিন্তু সে যেতে পারে না। কারণ তার শেকড় অনেক গভীরে। আমাদের সমাজের গৃহবধূদের অবস্থা ঠিক এমনই।
‘নিমগাছ’ গল্পে লেখক নিমগাছের প্রতীকে বাঙালি গৃহবধূর সামাজিক ও মানসিক যে অবস্থার কথা প্রকাশ করেছেন তা উদ্দীপক (i) ও (ii)-এ ফুটে উঠেছে। উভয় স্থানে প্রকাশ পেয়েছে একদিকে অবহেলা ও অযত্ন, অন্যদিকে শেকড়ের গভীরতার কারণে অন্য কোথাও যেতে না পারা। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
৪. নাশিদের বাগানে অনেক তুলসী গাছ আছে। তুলসী পাতার রস সর্দি- কাশির জন্য খুবই উপকারী। তাই আশেপাশের ছোট বাচ্চাদের সর্দি- কাশি হলে অনেক মা-ই নাশিদের বাগানের তুলসী পাতা নিয়ে যান।
ক. বনফুলের প্রকৃত নাম কী?
খ. নিমগাছের গোড়া কেউ কেউ শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নিমগাছ’ গল্পের কোন দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের অন্তর্নিহিত ভাবটি তুলে ধরতে পেরেছে কি? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বনফুলের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।
খ. নিমগাছের গোড়া কেউ কেউ শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয় নিমগাছের উপকারী দিক চিন্তা করে।
নিমগাছ গল্পে সাধারণ অর্থে নিমগাছ ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি গাছ। নিমগাছের ছাল, পাতা, ডাল ইত্যাদি নানাভাবে মানুষের রোগ উপশম করে। নিমগাছ নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করে। কেউ এ গাছের যত্ন না নিলেও এটি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে। নিমগাছ সর্বরোগের মহৌষধ বলে গ্রহণীয়। এ কারণে কেউ কেউ এই গাছের গোড়ার চারপাশ শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়। তাতে নিমগাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অনেকটা ব্যহত হয়। তাই বলা যায় যে, নিমগাছের ঔষধি গুণ থাকার কারণে কেউ কেউ নিমগাছের গোড়া শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়।
গ. উদ্দীপকে নিমগাছ গল্পের নিমগাছের সাধারণ উপকারী নিকটির প্রতিফলন ঘটেছে।
বৃক্ষ মানুষের নিঃস্বার্থ উপকারী বন্ধু। জগতে নানা প্রকার গাছপালা নানাভাবে মানুষের উপকার করে থাকে। মানুষ পাছপালা থেকে জীবন বাঁচানোর ওষুধ এবং জীবন সাজানোর উপকরণ সংগ্রহ করে থাকে।
উদ্দীপকে তুলসী গাছের ঔষধি গুণের কথা বলা হয়েছে। এখানে নাশিদের বাগানের তুলসী পাতা তাদের আশপাশের লোকদের কীভাবে উপকারে আসে তা তুলে ধরা হয়েছে। তুলসী পাতার রস সর্দি-কাশির জন্য বিশেষ উপকারী। তাই ছোট বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হলে নাশিদের মা তাদের জন্য বাগানের তুলসী পাতা নিয়ে যান। উদ্দীপকে বর্ণিত তুলসী পাতার এই উপকারী দিকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের সাধারণ অর্থে প্রতিফলিত নিমগাছের ঔষধি গুণের বর্ণনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিমগাছ গল্পে সাধারণ অর্থে নিমগাছের ভেষজ গুণের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। নিমগাছের পাতাও উপকারী। নিমগাছের ছাল, ডাল নানা রকম ভেষজ ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। নিমের ছাল পানিতে সিদ্ধ করলে যে রস বের হয় তা উদরাময়, আমাশয়, পিত্তশূল প্রভৃতি রোগের উপশম করে। এভাবে উদ্দীপকের তুলসী গাছ ও নিমগাছের ঔষধি গুণের দিকটি পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. না, উদ্দীপকটি নিমগাছ গল্পের অন্তর্নিহিত ভাবটি তুলে ধরতে পারেনি।
সংসারের সার্বিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান অবদান। তা সত্ত্বেও পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা নানাভাবে অবহেলিত হয়ে থাকে। তারা সারা দিন খেটে সংসারে সবার যত্ন নিলেও তাদের যত্ন কেউ নেয় না, যা অত্যন্ত অমানবিক।
নিমগাছ গল্পে লেখক ‘নিমগাছ’ প্রতীকে গৃহকর্মনিপুণা এক লক্ষ্মীবউয়ের জীবনযন্ত্রণার পরিচয় দিয়েছেন। এই গৃহবধূ সকাল-সন্ধ্যা বিরামহীন কাজ করে সবার যত্ন নিলেও তার প্রতি পরিবারের কেউ নজর দেয় না। সে তার সংসারে অবহেলিত থাকে। যেমন থাকে নিমগাছ। নিমগাছ তার ঔষধি গুণসম্পন্ন পাতা, ছাল, ফুল-ফল দিয়ে, ছায়া দিয়ে, সৌন্দর্য দিয়ে সবাইকে ভরিয়ে দিলেও কেউ তার যত্ন নেয় না। তার উপকারের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে কেউ স্মরণ করে না। নিমগাছ গল্পের নিমগাছের ঔষধি গুণের সঙ্গে উদ্দীপকের তুলসী গাছের ভেষজ পুণের মিল থাকলেও নিমগাছের প্রতীকী অর্থের মিল নেই।
নিমগাছ গল্পে মুক্তি চাইলেও নিমগাছটির মতো সংসার জাল ছিন্ন করতে পারে না গৃহলক্ষ্মী বউটি। ফলে তাকে তার বাড়িতেই থাকতে হয়েছে অনাদর-অবহেলায়। উদ্দীপকে এই দিকটি নেই। উদ্দীপকে বাচ্চাদের সর্দি-কাশি সারাতে তুলসী পাতা নিয়ে নাশিদের মায়ের যে কর্মতৎপরতা তা ‘নিমগাছ’ গল্পের বিষয়বস্তু থেকে ভিন্ন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের অন্তর্নিহিত ভাব তুলে ধরতে পারেনি।
৫. যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্পশকট চলে,
বাবু সাব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
ক. ‘নিমগাছ’ কোন ধরনের গল্প?
খ. নতুন লোকটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি নিমগাছ গল্পের যে দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ভাবনায় মিল থাকলেও উদ্দীপক ও পঠিত গল্পের মূল চেতনা ভিন্ন”— মূল্যায়ন কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নিমগাছ একটি প্রতীকী গল্প।
খ. নতুন লোকটা সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিমগাছের দিকে চেয়ে রইল।
নতুন লোকটি একজন কবি। কবির কাছে ব্যবহারিক প্রয়োজনের চেয়ে সৌন্দর্যই মুখ্য। অন্য সবাই নিমগাছকে প্রয়োজনের দিক থেকে বিচার করলেও তিনি দেখেছেন শৈল্পিক দৃষ্টি দিয়ে। তাই নিমগাছের সবুজ পাতা আর থোকা থোকা সাদা ফুল, তাকে মুগ্ধ করেছে। সেই মুগ্ধতা এতটাই গভীর যে, ফুলগুলোকে তার কাছে একঝাঁক নক্ষত্র মনে হয়েছে। তাই তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই দিকে চেয়ে রইলেন।
গ. উদ্দীপকটি নিমগাছ গল্পের পরোপকারে আত্মনিবেদনের দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে।
মানবসভ্যতা বিকাশে যুগে যুগে শোষিত-বঞ্চিতরাই এগিয়ে এসেছে। অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হয়েছে। তাদের শোষণ করেই এক শ্রেণির লোক গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ পৃথিবীর সব মানুষই সমান। তাই অর্থ-বিত্ত দিয়ে মানুষকে পার্থক্য করা উচিত নয়।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি সমাজের নিম্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-যন্ত্রণা তুলে ধরেছেন। নিম্নশ্রেণির মানুষেরা অবিরাম খেটে চলে। অথচ তারা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও মর্যাদা পায় না। উদ্দীপকে এই অবহেলার দিকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছ প্রতীকে বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটির প্রতি পরিবারের লোকদের অবহেলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকের কুলিদের পরোপকারে আত্মনিবেদনের বিষয়টি ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের নিজেকে পরের কল্যাণে নিবেদনের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। উদ্দীপকের কুলিরা যেমন বাবু সাবদের অবহেলার শিকার তেমনই নিমগাছের মতো উপকারী মনোভাব নিয়ে ‘নিমগাছ’ গল্পের গৃহবধূটিও অবহেলার শিকার। এদিক থেকে উদ্দীপকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. “ভাবনার মিল থাকলেও উদ্দীপক ও পঠিত গল্পের মূল চেতনা ভিন্ন”- মন্তব্যটি যথার্থ।
জগৎ সংসারে এমন অনেক মানুষ আছে যারা সবার কল্যাণে নিরন্তর কাজ করে চলে, অথচ তাদের শ্রমের মর্যাদা দেওয়া হয় না। তারা নানাভাবে ধনিক শ্রেণি তথা মালিক-মহাজনদের নির্যাতনের শিকার হয়। অন্যদিকে পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা নানাভাবে অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়।
উদ্দীপকে কুলি-মজুরদের প্রতি বাবু সাবদের অবহেলা ও নির্যাতনের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। তারা শ্রমজীবীদের শ্রমের মর্যাদা না দিয়ে শ্রম শোষণ করে। তাদের এই অমানবিকতার দিকটি ‘নিমগাছ’ গল্পের নিমগাছের উপকারের বিষয়টি স্বীকার না করা অকৃতজ্ঞদের মানসিকতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকে শ্রমজীবীদের শ্রমের মূল্য ও মর্যাদা না দিয়ে তাদেরকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে রাখার বিষয়টি এবং ‘নিমগাছ’ গল্পে নিমগাছের ঋণ স্বীকার না করে অকৃতজ্ঞ হওয়ার বিষয়টি একসূত্রে গাঁথা। কিন্তু গল্প ও উদ্দীপকে প্রতিফলিত মূল চেতনার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
নিমগাছ গল্পে লেখক নিমগাছের আড়ালে মূলত আমাদের সমাজের গৃহবধূদের অবস্থানটি তুলে ধলেছেন। তারা সংসারের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে অবহেলা ও অমর্যাদার শিকার হন। সংসারে তাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দেওয়া হয় না। অন্যদিকে উদ্দীপকে শ্রমজীবী ও শ্রমশোষণের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে নিম্নশ্রেণির মানুষের শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও মর্যাদা না দিয়ে তাদের শোষণ করে বাবু সাব তথা ধনিক শ্রেণি যে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয় সেই দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। এদিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
Great Post..I like it..! Thanks
Thanks dear. Stay with us. 😊