(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

বঙ্গভূমির প্রতি হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর কবিতা। বঙ্গভূমির প্রতি কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সৃজনশীল

১. সুহাস উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে আমেরিকায় যায়। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে জন্মভূমি বাংলাদেশে। তার মন চায় দেশের জন্য এমন কিছু করতে, যা তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। তাই সে মায়ের কাছে ফোন করে বলে, “দোয়া করো মা, আমি যেন লেখাপড়া শেষ করে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারি।”
ক. ‘কোকনদ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কবি দেশমাতৃকার কাছে কী মিনতি জানিয়েছেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুহাসের আকাঙ্ক্ষা ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি‘ কবিতার কবির আকাঙ্ক্ষা অভিন্ন। – মন্তব্যটি যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘কোকনদ’ শব্দের অর্থ লাল পদ্ম।

খ. কবি দেশমাতৃকার স্মৃতিতে তাঁকে অমর করে রাখার জন্য দেশমাতৃকার কাছে মিনতি জানিয়েছেন।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রবাসে অবস্থানকালে জন্মভূমিকে মা হিসেবে কল্পনা করে নিজেকে ভেবেছেন তার সন্তান। কবির মনের আশা, তিনি স্বদেশের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবেন। কিন্তু তাঁর ধারণা, স্বদেশে স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো কোনো গুণ তাঁর নেই। তাই কবি বিনয়ের সাথে দেশমাতৃকার কাছে মিনতি করেছেন, তিনি যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকেন।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো জন্মভূমির প্রতি অনুরাগ ও গভীর ভালোবাসা।
জন্মভূমিকে ভালোবাসা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাই মানুষ যত দূরেই অবস্থান করুক না কেন তার মনটা পড়ে থাকে স্বদেশের সীমানায়। জন্মভূমির স্মৃতি তাকে ব্যাকুল করে রাখে। মানুষ জন্মভূমিকে কখনো ভুলতে পারে না।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, সুহাস উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে আমেরিকায় গেলেও তার মন পড়ে থাকে জন্মভূমি বাংলাদেশে। তার মন চায় দেশের জন্য এমন একটা কিছু করতে যা তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। তাই সে যেন লেখাপড়া শেষ করে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারে, সেজন্য মাকে ফোন করে দোয়া চায়। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায়ও স্বদেশের প্রতি কবির গভীর ভালোবাসার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। দেশকে কবি মা হিসেবে কল্পনা করে নিজেকে ভেবেছেন তার সন্তান। তাই তিনি দেশমাতৃকার কাছে এই বলে প্রণতি জানিয়েছেন, তিনি যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকতে পারেন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের সাথে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ। দিকটি হলো দেশপ্রেম তথা স্বদেশপ্রীতি।

ঘ. “উদ্দীপকের সুহাসের আকাঙ্ক্ষা ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির আকাঙ্ক্ষা অভিন্ন।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষ স্বদেশকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাই মানুষ দেশের জন্য এমন কিছু করতে চায়, যা তাকে অমরত্ব দান করবে, তথা দেশের স্মৃতিতে অম্লান করে রাখবে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সুহাস উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য আমেরিকায় গেলেও তার মন পড়ে থাকে জন্মভূমি বাংলাদেশে। সে দেশের জন্য এমন কিছু করতে চায়, যা তাকে স্মরণীয় করে রাখবে।
তাই সে মাকে ফোন করে বলে, “দোয়া করো মা, আমি যেন লেখাপড়া শেষ করে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারি।” তার এরূপ আকাঙ্ক্ষার মূলে রয়েছে গভীর দেশপ্রেম এবং দেশপ্রেমের কারণেই সে দেশের জন্য কিছু করে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চায়। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির মধ্যেও অনুরূপ আকাঙ্ক্ষা লক্ষ করা যায়। কবি দেশমাতৃকার কাছে এই বলে প্রণতি জানিয়েছেন, তিনি যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকেন। তাঁর এরূপ প্রণতির মূলে রয়েছে দেশপ্রেম এবং দেশের স্মৃতিতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের সুহাসের আকাঙ্ক্ষা ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির আকাঙ্ক্ষা অভিন্ন।

২. সুমন ব্যবসার কাজে বিদেশে পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কিন্তু প্রবাসজীবনে সে সুখী হতে পারে না। কেননা সে কিছুতেই দেশের স্মৃতি ভুলতে পারে না। তার মনটা পড়ে থাকে দেশের মাটিতে। মাতৃভূমির মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, সবুজ ধানের খেত— এসবই তাকে আকুল করে টানে। তখন সে মাতৃভূমির সাথে তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন অনুভব করতে পারে।
ক. ‘যাচিব’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কবি জন্মভূমিকে মা হিসেবে কল্পনা করেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের সুমনের মধ্যে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুমন ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির প্রতিনিধিত্ব করে’- উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘যাচিব’ শব্দের অর্থ প্রার্থনা করব।

খ. জন্মভূমি কবিকে অপার স্নেহে লালন করেছে বলে কবি জন্মভূমিকে মা হিসেবে কল্পনা করেছেন।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি জন্মভূমিকে মা বলেছেন। মা যেমন সন্তানকে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে বুকে জড়িয়ে রাখেন, মাতৃভূমিও তেমনি কবিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। মা যেমন সন্তানের কোনো দোষ মনে রাখেন না, মাতৃভূমিও তেমনি কবির কোনো দোষ মীম রাখেনি। তাই কবি স্বদেশকে মা হিসেবে কল্পনা করেছেন।

গ. উদ্দীপকের সুমনের মধ্যে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার মাতৃভূমির প্রতি কবির শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা ফুটে উঠেছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি বলেছেন, মাতৃভূমিকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসেন। প্রবাসী কবি ভেবেছেন, দেশমাতৃকা তার সব দোষ ক্ষমা করে দেবেন। তাই কবি বার বার দেশমাতৃকার কাছে প্রার্থনা করেছেন। তার সব দোষ ক্ষমা করার জন্য। তিনি দেশমাতৃকার কাছে তাকে মনে রাখার জন্য গভীর আকুতি জানিয়েছেন।
উদ্দীপকের সুমনও কবির মতো প্রবাসী। সুমন বিদেশে বসবাস করে শান্তি পায় না। তার মন পড়ে থাকে জন্মভূমির মাটিতে। সে জন্মভূমির প্রতি গভীর টান অনুভব করে। এদেশের মাঠ-ঘাট তাকে আকুল করে টানে। সুমন প্রবাসে থেকেও মাতৃভূমির সাথে নিজের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন অনুভব করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুমন ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির মাতৃভূমির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকের সুমন ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির প্রতিনিধিত্ব করে”- উক্তিটি যথার্থ।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি মাতৃভূমির প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কবি দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসেন।
মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসায় কবির হৃদয় এত সিক্ত যে, তিনি সারাজীবন মাতৃভূমির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান। এ কারণেই তিনি মাতৃভূমির প্রতি মিনতি জানিয়েছেন তাকে মনে রাখার জন্য।
উদ্দীপকের সুমন ব্যবসার খাতিরে বিদেশে পাড়ি দিলেও সে মাতৃভূমিকে ভুলে থাকতে পারেনি। বিদেশে থেকেও সুমন জন্মভূমির প্রতি গভীর টান অনুভব করেছে। এদেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, সবুজ ধানের খেত তাকে আকুল করে টানে। সে প্রবাসী হয়েও এদেশের সাথে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন অনুভব করেছে।
বঙ্গভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসার প্রকাশই ‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার মূলভাব। এ কবিতায় কবি দেশের প্রতি যে অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন সেই ভালোবাসাই যেন উদ্দীপকের সুমনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সুমনও কবির মতো প্রবাস জীবনে দেশমাতৃকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও টান অনুভব করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুমন ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির সার্থক প্রতিনিধি।

আরো পড়োসুখী মানুষ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োতৈলচিত্রের ভূত গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. মতি মিয়া বিদেশে লেখাপড়া করতে গিয়ে বিদেশের চাকচিক্য দেখে নিজের দেশের কথা ভুলে যায়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশে কেউ তাকে সাহায্য না করায় দেশের কথা মনে পড়ে। দেশে ফিরে আসার জন্য তার মন ছটফট করতে থাকে। আর মনে মনে। বিবেকের তাড়নায় ভাবতে থাকে, দেশ কি তাকে ক্ষমা করবে? সে তার ভুল বুঝতে পেরে দেশে ফিরে এসে দেশের কল্যাণে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও এতিমখানা তৈরি করে।
ক. কবি দেশকে কার সাথে তুলনা করেছেন?
খ. দেশ হলো জননীর মতো’ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের মতি মিয়ার সাথে “বঙ্গভূমির প্রতি” কবিতার কবির যে মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানুষের মনে বেঁচে থাকার জন্য কবি ও মতি মিয়ার যে আকৃতি প্রকাশ পেয়েছে তা বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কবি দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করেছেন।

খ. ‘দেশ হলো জননীর মতো’- বলতে মায়ের মতোই দেশকে ভালোবাসার কথা বোঝানো হয়েছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি স্বদেশকে মায়ের সাথে তুলনা করেছেন। দেশ হলো আসলে জননীর মতো। কেননা মা যেমন স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আমাদেরকে আগলে রাখেন, দেশও তেমনি তার আলো, বাতাস, সম্পদ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। মাকে আমরা যেমন ভালোবাসি দেশকেও তেমনই ভালোবাসতে হবে। দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সার্থক হয়ে উঠবে আমাদের জীবন।

গ. উদ্দীপকের মতি মিয়ার সাথে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির অনুশোচনায় স্বদেশপ্রেম-চেতনার মিল রয়েছে।
স্বদেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। মানুষ নিজ দেশ থেকে পরবাসে থাকলেও স্বদেশকে ভুলে থাকতে পারে না। দেশ আমাদের মায়ের মতোই। মায়ের প্রতি আমরা যেমন ভালোবাসা ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করি, তেমনি দেশের প্রতিও আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতায় দেশমাতৃকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। কবি জানেন এ পৃথিবী থেকে প্রত্যেক মানুষকে চিরবিদায় নিতে হবে।
কিন্তু কবি দেশমাতৃকার বুকে চির অমর হতে চান। আবার কবি এটাও উপলব্ধি করেন যে, তিনি এমন কোনো মহৎ কর্ম করেননি যার জন্য দেশমাতৃকার স্মৃতিতে অমর হবেন। তবে কবির বিশ্বাস জননী তাঁর সব অপরাধ, সব ভুল ক্ষমা করবেন। শেষে কবি এই বলে বিনীত প্রার্থনা জানিয়েছেন যে, তিনি যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকেন। উদ্দীপকের মতি মিয়ার মাঝেও এখন অনুশোচনায় স্বদেশপ্রেম জেগে উঠেছে। বিদেশের চাকচিক্য দেখে নিজের দেশের কথা সে ভুলে যায়। অসুস্থ হলে কেউ তাকে সাহায্য করতে আসে না। এখন দেশের কথা মনে পড়ে গেলে তার অনুশোচনার অন্ত থাকে না। এমন মানসিকতার মিল রয়েছে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির মানসচেতনার।

ঘ. স্বদেশপ্রেম চেতনার দিক থেকে মানুষের মনে বেঁচে থাকার জন্য ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবি ও মতি মিয়ার যথার্থ আকৃতি প্রকাশ পেয়েছে।
দেশপ্রেম প্রতিটি মানুষের আত্মার অনুভূতি। মায়ের মতো মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। তাই মানুষ যেমন মাকে ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকতে পারে না, তেমনি স্বদেশ ছেড়ে থাকতেও মানুষের কষ্ট হয়।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবির স্বদেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কবি প্রথম জীবনে বিদেশের ঐশ্বর্যে আগ্রহী হলেও পরবর্তীতে স্বদেশপ্রেম অনুভব করেছেন। তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি এদেশকে মা সম্বোধন করে নিজেকে ভেবেছেন সেই মায়ের সন্তান। তাই কবি মনে করেন, মা যেমন তার সন্তানের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন, তেমনিভাবে দেশও তাঁকে ক্ষমা করে দিবেন। কবি তাঁর স্বদেশের কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন তিনি চিরকাল স্বদেশের মাঝে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকতে পারেন।
উদ্দীপকের মতি মিয়ার জীবনাচরণে কবির মতোই অনুশোচনার আড়ালে স্বদেশপ্রেম চেতনা ফুটে উঠেছে। প্রথমে মতি মিয়া বিদেশের চাকচিক্য দেখে স্বদেশকে ভুলে গেলেও পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাঝে জন্মভূমি-চেতনা নাড়া দেয়। বিবেকের তাড়নায় স্বদেশে ফিরে এসে সে নিজ দেশকে ভুলে গিয়ে যে অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা চায়। আর স্বদেশের কল্যাণে সে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও এতিমখানা তৈরি করে। এভাবে সে মানুষের মনে বেঁচে থাকতে চায়। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির মাঝেও এমন অনুভূতি বিদ্যমান। সুতরাং মানুষের মনে বেঁচে থাকার জন্য কবি ও মতি মিয়ার এক বাস্তবিক আকুতি প্রকাশ পেয়েছে।

৪. প্রায় ত্রিশ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাহের তার এলাকায় মসজিদ, মন্দির এবং এতিমখানা তৈরি করেছে। তাহের এখন বলে, আমি যদি মরে যাই, তবে কোনো আফসোস নেই, কারণ মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না। তবে আমি যেন আমার এই সামাজিক অবদানের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারি।
ক. ‘কোকনদ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ঘটে যদি পরমাদ’ – কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. আকরাম ও মধুসুদনের মধ্যে মৃত্যুর ব্যাপারে একই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. প্রত্যাশা করার ক্ষেত্রে আকরাম ও মধুসুদন দত্তের মধ্যে সামান্য বিদ্যমান- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কোকনদ শব্দের অর্থ লালপদ্ম।

খ. ‘ঘটে যদি পরমাদ’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে কবির কোনো ভুলত্রুটিকে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি কবির দেশপ্রেমের কবিতা। কবি দেশকে মা হিসেবে কল্পনা করেছেন। তিনি যেন দেশমাতৃকার সন্তান। মা যেমন সন্তানের কোনো দোষ মনে রাখেন না, দেশমাতৃকাও যেন তার সব দোষ ক্ষমা করে দেয়। তার মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি প্রবাসে চলে যাচ্ছেন, এতে তার কোনো ভুল হয়ে থাকলে সেজন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

গ. আকরাম ও মধুসুদনের মধ্যে মৃত্যুর ব্যাপারে একই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে মন্তব্যটি যথার্থ।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। দেশকে কবি মা হিসেবে কল্পনা করে নিজেকে তার সন্তান ভেবেছেন। প্রবাসী মধুসূদন ভেবেছেন, মা যেমন সন্তানের কোনো দোষ মনে রাখেন না, দেশমাতৃকাও তার সব দোষ ক্ষমা করে দেবেন। কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত লেখাপড়ার জন্য যখন বিদেশে চলে যায়, তখন তিনি দেশকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য কবিতাটি লেখেন। কবি লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে আসতে চান। যদি তিনি দেশের নিকট অপরাধী হয়ে থাকেন দেশ যেন তাকে ক্ষমা করে। দেশের সেবা করার মাধ্যমে তিনি অমর হয়ে থাকতে চান।
আলোচ্য উদ্দীপকে দেখা যায়, ত্রিশ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাহের তার এলাকায় মসজিদ, মন্দির এবং এতিমখানা তৈরি করেছে। তাহের এখন উপলব্ধি করছে, যদি সে মরে যায়, তবে কোনো আফসোস নেই, কারণ মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না। তবে সে যেন তার এই সামাজিক অবদানের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারে। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায়ও কবির উক্ত মনোভাব স্পষ্ট।

ঘ. প্রত্যাশা করার ক্ষেত্রে আকরাম ও মধুসূদন দত্তের মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান মন্তব্যটি যথার্থ।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় মাইকেল মধুসুদন দত্তের দেশপ্রেমের তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। কর্তব্যের খাতিরে তিনি প্রবাস জীবনযাপন করলেও তার মন পড়ে আছে দেশের প্রতি। তিনি দেশকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি।
আলোচ্য উদ্দীপকে দেখা যায়, ত্রিশ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাহের তার এলাকায় মসজিদ, মন্দির এবং এতিমখানা তৈরি করেছে। তাহের এখন বলে, সে মরে গেলেও কোনো আফসোস নেই, কারণ মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না। তবে সে যেন তার এই সামাজিক অবদানের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় মধুসূদন দত্তের ক্ষেত্রে আকরামের উক্ত মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। কেননা, আলোচ্য কবিতার কবি দেশকে মা হিসেবে কল্পনা করেছেন। তিনি যেন দেশমাতৃকার সন্তান। মা যেমন সন্তানের কোনো দোষ মনে রাখেন না, দেশমাতৃকাও যেন তার সব দোষ ক্ষমা করে দেয়। কবি তার মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রবাসে চলে যাচ্ছেন, এতে তার কোনো ভুল হয়ে থাকলে তিনি ক্ষমা চান। অতএব বলা যায়, প্রত্যাশা করার ক্ষেত্রে আকরাম ও দন দত্তের মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান মন্তব্যটি যথার্থ।

৫. আফজাল একজন বড় ব্যবসায়ী, ব্যবসাক্ষেত্রে ভার সুনাম দিন দিন ছড়িয়ে পড়লে তিনি ভাবতে থাকেন এই সুনাম চিরদিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই চিন্তা থেকে তিনি দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
ক. ‘তামরস’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কহ গো শ্যামা জন্ম দে’ কথাটির তাৎপর্য কী?
গ. কবি মধুসূদনের প্রত্যাশার সাথে আফজালের প্রত্যাশার সাদৃশ্যটি বিশ্লেষণ কর।
ঘ. আফজালের চেয়ে মধুসূদনের চরিত্রটি যে কারণে অনন্য তা তুলে ধর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘তামরস’ শব্দের অর্থ পদ্ম।

খ. চরণটির দ্বারা কবি স্বদেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা প্রকাশ করেছেন। কবি মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধায় স্মরণীয় হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।
কবি বিনয়ীর মতো বলেছেন, তার এমন মহৎ গুণ নেই, যে কারণে তিনি স্মরণীয় হতে পারেন। তবুও তিনি মাতৃসম শ্যামল জন্মভূমির সুবর চেয়েছেন। মাতৃভূমি যেন তার সব দোষ ক্ষমা করে এই আশীর্বাদ দেয়, যাতে কবি অমর ও স্মরণীয় হতে পারেন জন্মভূমির স্মৃতিতে।

গ. উদ্দীপকে আফজালের প্রত্যাশার সাথে কবি মধুসূদনের প্রত্যাশার সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকটি থেকে জানা যায়, আফজাল একজন বড় ব্যবসায়ী ধনসম্পদ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। কিন্তু তিনি অনুধাবন করেন, এগুলো কখনো তাকে মানুষের হৃদয়ে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে না। এই চিন্তা থেকেই তিনি নিজেকে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
উদ্দীপকের মতোই কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বঙ্গভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রকাশ করেছেন। জীবনে যশ ও খ্যাতি অর্জনের জন্য কবি প্রবাসকে বরণ করে নিলেও কিছুদিনের মধ্যে তার স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। তিনি স্বদেশের প্রতি প্রবল টান অনুভব করেন। তাই তিনি স্বদেশকে মা এবং নিজেকে স্বদেশের সন্তান হিসেবে কল্পনা করেছেন। মাতৃভূমি যেন তার সব দোষ ক্ষমা করে দিয়ে তাকে অমর হওয়ার আশীর্বাদ প্রদান করেন। এভাবেই কবির প্রত্যাশা উদ্দীপকের আফজালের মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ফুটে উঠেছে।

ঘ. দেশপ্রেমের দিক থেকে কবি মধুসূদনের চরিত্রটি আফজালের চেয়ে অনন্য।
উদ্দীপকের আফজাল একজন বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসাক্ষেত্রে তার সুনাম দিন দিন বাড়তে থাকে। তিনি তার এই সুনাম চিরদিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে চান। আর তার এই সুনাম চিরদিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখার নিমিত্ত নিজেকে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
পক্ষান্তরে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় স্বদেশের প্রতি কবি মধুসূদন দত্তের গভীর শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। স্বদেশকে কবি জন্মদাত্রী মা-রূপে স্থান দিয়েছেন। মা যেমন তার সন্তানের দোষ- ত্রুটি মনে রাখেন না, তেমনি প্রবাসী কবিও ভেবেছেন, দেশমাতা যেন তার সব দোষ ক্ষমা করে দেন। জলে ফোটা পদ্মফুলের ন্যায় যশ, খ্যাতি ও গুণহীন কবিও দেশ জননীর স্মৃতিতে ফুটে থাকতে চান।
উদ্দীপকে বর্ণিত আফজাল চরিত্র এবং ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কবি মাইকেল মধুসূদনের চরিত্রটিই অনন্য। কারণ, বিনয়ী কবি নিঃস্বার্থভাবে দেশমাতৃকার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন; যা আফজাল চরিত্রের মধ্যে অনুপস্থিত। এ দিকটিই কবিকে অনন্য করে তুলেছে।

Leave a Comment