বিজয়ের আলোয় সুন্দর আগামী হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বই এর ১১শ অধ্যায়। বিজয়ের আলোয় সুন্দর আগামী অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে বেছে নেয় নতুন ষড়যন্ত্রের পথ। বাঙালি ও তাদের স্বপ্নের বাংলা যেন কখনোই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তার জন্যই তারা বৈছে নেয় এক বিধ্বংসী পথ। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ও সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের তালিকা তৈরি করে তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৪ই ডিসেম্বর এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয় বাংলাদেশের। সেই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির সম্মানে ঢাকার রায়েরবাজারে নির্মিত হয়েছে ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’। প্রতি বছর আমাদের দেশে পালিত হয় ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’।
মহান বিজয় দিবস
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, শিশু-কিশোর ও নারীর আত্মত্যাগ-আত্মদানের ভেতর দিয়ে অর্জিত আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। এই দিনটিকে আমরা অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের সঙ্গে পালন করি আমাদের মহান বিজয় দিবস হিসেবে। প্রতিবছর এই দিনে আমরা শপথ করি এক সুন্দর নতুন আগামী গড়ার।
বিজয়ের আলোয় সুন্দর আগামী
কাজ-১. (ক) বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে জেনে তা উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করব।
কাজের ধরন: একক কাজ।
নমুনা সমাধান
নিচে একটি উপস্থাপনের খসড়া দেয়া হলো। বারবার চর্চার মাধ্যমে এটি উপস্থাপন করতে পারো।
বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি বিশেষ দিবস। প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর দিনটিকে সারা বাংলাদেশে যথাযথ মর্যাদার সাথে ‘বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বুদ্ধিজীবী হলেন একজন ব্যক্তি যিনি বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ যেমন- সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ সম্পর্কিত জটিল চিন্তা গবেষণা ও প্রভাব বিস্তারে জড়িত থাকেন।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর যখন মুক্তিবাহিনী বিপুল বিক্রমে এগিয়ে চলছিল বিজয়ের পথে তখন হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে বেছে নেয় বাংলাদেশকে একেবারে মেধাশূন্য করে দেওয়ার পরিকল্পনা। স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিল্প, রাষ্ট্র, রাজনীতি, শিক্ষা প্রতিটি জায়গায় দরকার সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। এজন্য বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, জ্ঞানী-গুণী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, শিল্পী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ইত্যাদি বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের তালিকা করে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাবিদ ৯১১ জন, চিকিৎসক ৪৯ জন, আইনজীবী ৪২ জন, সাংবাদিক ১৩ জন, সাহিত্যিক ৯ জন এবং প্রকৌশলী ৫ জন। কয়েকজন বুদ্ধিজীবী হলেন— গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনির চৌধুরী, আনোয়ার পাশা প্রমুখ। বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিতে ঢাকার রায়েরবাজারে নির্মিত হয়েছে ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’।
কাজ-১: (খ) যে কোনো শহিদ বুদ্ধিজীবীর কাজ সম্পর্কে লিখো।
কাজের ধরন: একক কাজ।
নমুনা সমাধান
১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে সারশূন্য করে দিতে পাকিস্তানি বাহিনী যে নীল নকশা তৈরি করেছিলো তার প্রথম সারিতে ছিলেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী।
অধ্যাপক মুনির চৌধুরী ১৯৫২ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন। এছাড়াও রাজনীতি ও সাহিত্য চর্চায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড ও পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বক্তৃতা দেওয়ার কারণে তাঁকে পাকিস্তান সরকার কারাবন্দি করে। তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক ‘কবর’ রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত আরও কিছু নাটক হলো- রক্তাক্ত প্রান্তর, দণ্ডকারণ্য, চিঠি ইত্যাদি।
এছাড়াও তিনি কিছু অনুবাদ নাটকও লিখেছেন, যেমন— কেউ কিছু বলতে পারে না, রূপার কৌটা, মুখরা রমনী বশীকরণ (অনুবাদ) ইত্যাদি। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রগতিশীল মানুষ হওয়ার কারণে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর নজরে পড়েন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দুদিন আগে অর্থাৎ ১৪ই ডিসেম্বর তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত ও নিহত হন।
আরো পড়ো → শরৎ আসে মেঘের ভেলায়
আরো পড়ো → হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে
কাজ-২: ‘বিজয়ের আলোয় সুন্দর আগামী’ অধ্যায়ে তোমার অনুভূতি লেখো।
কাজের ধরন: একক কাজ।
নমুনা সমাধান
আমার অনুভূতি: এই অধ্যায়ে শ্রেণিশিক্ষক আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। একজন বুদ্ধিজীবীর কাজ সম্পর্কে জেনে তা সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। বছর শেষে বিদ্যালয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। আনন্দের সাথে সেখানে অংশগ্রহণ করেছি। বিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বন্ধুখাতায় যে কোলাজগুলো সংরক্ষণ করেছিলাম, সে ছবি এঁকেছি।
গান ও কবিতা লিখেছি। সেগুলো উপস্থাপন করেছি। বিদ্যালয় থেকে এই বিষয়গুলোর ওপর পুরস্কৃত করা হয়। বন্ধুদের সাথে আমার অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময় করে আনন্দ পেয়েছি। সর্বোপরি বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছি। বন্ধুখাতা আমাদের এই অনুষ্ঠানে সহায়ক হয়েছে। পুরো বছরে আমাদের সকলের নতুন বিষয় শিখা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা প্রদর্শনী শেষ করি।