সমাজ ও সম্পদের কথা

(ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) ৬ষ্ঠ: সমাজ ও সম্পদের কথা – সমাধান

সমাজ ও সম্পদের কথা হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই এর ১১শ শিখন অভিজ্ঞতা। সমাজ ও সম্পদের কথা অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সমাজ ও সম্পদের কথা

কাজ-১: সম্পদের ধারণা।
কাজের উদ্দেশ্য: প্রাকৃতিক, মানব ও রূপান্তরিত সম্পদ এবং এগুলো কোথায় রয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা অর্জন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ডায়েরি, বুকলেট, ছবি আঁকার পেন্সিল, কাগজ, কলম, বই, ইন্টারনেট।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষক প্রথমে ক্লাসে প্রাকৃতিক, মানব ও রূপান্তরিত সম্পদ সম্বন্ধে ধারণা দিবেন।
  • শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে চারপাশে কোন ধরনের প্রাকৃতিক, মানব ও রূপান্তরিত সম্পদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা নিয়ে আলোচনা করবে।
  • এরপর পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিয়ে ছক তৈরি করবে এবং তা পূরণ করবে।

নমুনা সমাধান:
চারপাশে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদের উদাহরণ খুঁজে ছক পূরণ:

CamScanner 11 10 2023 00.11 1

আমাদের চারপাশের মানবসম্পদ ও তাদের থেকে পাওয়া সেবা খুঁজে ছক পূরণ:

CamScanner 11 10 2023 00.11 2

রূপান্তরিত সম্পদের উদাহরণ খুঁজে ছক পূরণ:

CamScanner 11 10 2023 00.11 3

কাজ-২: প্রাকৃতিক সম্পদ, পণ্য, দ্রব্য ও বাজারের ধারণা।
কাজের উদ্দেশ্য: নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্য এবং এগুলো কোথায় তৈরি হয় সে সম্পর্কে ধারণা অর্জন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: পাঠ্যবই, কাগজ, কলম, স্কেল।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষক ক্লাসে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত দ্রব্য, পণ্য ও সেবা সম্পর্কে ধারণা দিবেন।
  • শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিয়ে দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন ব্যবহৃত দ্রব্য/পণ্যের তালিকা তৈরির পাশাপাশি এগুলো কোথায় পাওয়া যায় তা লিখবে।

নমুনা সমাধান

CamScanner 11 10 2023 00.11 4

কাজ-৩: সম্পদের উৎপাদন সম্পর্কিত কার্যক্রম।
কাজের উদ্দেশ্য: কারখানা পরিদর্শনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সারণিতে লিপিবদ্ধ করা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ডায়েরি, কাগজ, কলম, পেন্সিল।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষকের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা প্রথমে কারখানা পরিদর্শনের জন্য নিজ এলাকা অনুযায়ী দলে বিভক্ত হবে।
  • কারখানা পরিদর্শনের আগে শিক্ষার্থীরা অনুসন্ধানের প্রশ্ন, পরিকল্পনা, তথ্য সংগ্রহের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রশ্নমালা তৈরি করবে।
  • এরপর প্রতিটি দল একজন শিক্ষকসহ কারখানা পরিদর্শন করে প্রাপ্ত তথ্য সারণিতে উপস্থাপন করবে।

নমুনা সমাধান

CamScanner 11 10 2023 00.11 5
CamScanner 11 10 2023 00.11 6 1

কাজ-৪: অতীতের মানুষের উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি দলের প্রতিবেদন।
কাজের উদ্দেশ্য: অতীতের মানুষের জীবনব্যবস্থা অনুসন্ধান করে তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ডায়েরি, কাগজ, কলম, পেন্সিল, মোবাইল ফোন/কম্পিউটার।

কাজের নির্দেশনা:

  • শিক্ষক প্রথমে ৫/৬ জন করে কয়েকটি দল গঠন করে দিবেন।
  • প্রত্যেক দল অনুসন্ধানের পরিকল্পনা তৈরি করবে।
  • পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেকে অনুসন্ধানী বই, ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে।
  • প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ফলাফল একটি প্রতিবেদন আকারে শিক্ষকের নিকট জমা দেবে।

নমুনা সমাধান

অতীতের মানুষ কীভাবে উৎপাদন করতো

অতীতে মানুষ খাদ্য সংগ্রহের জন্য যাযাবরের মতো এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ঘুরে বেড়াত। মানুষ পাথর ভেঙে, ঘষে, ছোট ছোট টুকরা করে হাতিয়ার তৈরি করত এবং তা দিয়ে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে শিকার করতো। শিকারের পাশাপাশি তারা গাছ থেকে ফলমূল সংগ্রহ করতো। মধ্যপ্রস্তর যুগে এসে মানুষ আগুন জ্বালাতে ও আগুন ব্যবহার করতে শেখে। এর মাধ্যমে তারা খাবার রান্না করা কিংবা কোনো কিছু পোড়ানো বা গরম করার প্রক্রিয়া জানতে পারে। প্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ কৃষিকাজ আয়ত্ত করে। এর আগে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছ, শস্য ও ফলমূলের উপরেই নির্ভর করতো ও উদ্ভিদ বা শস্য থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতো। কিন্তু এ যুগে এসে মানুষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন শস্য বাছাইয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিতভাবে চাষাবাদ শুরু করে।

এরপর আসে নব্যপ্রস্তর যুগ। এ যুগে মানুষ এমন কিছু আবিষ্কার করে যা মানুষের জীবনে, সমাজে ও চিন্তায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ সময় কাঠ ও বেত দিয়ে মানুষ ছোট আকৃতির লাঙল তৈরি করে। এর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিতভাবে পছন্দমতো শস্য ও উদ্ভিদের চাষাবাদ শুরু করে। পাশাপাশি তারা পশু পালনও রপ্ত করে। তারা গবাদি পশু থেকে শুরু করে বন্য প্রাণী শিকারে সহযোগিতা করার জন্য কুকুরের মতো প্রাণী বা ঘোড়াকেও পোষ মানায়। কৃষিকাজের কারণে নানা স্থানে ও গুহায় স্থায়ী গ্রামীণ বসতি গড়ে ওঠে। তারা গম, যব, বার্লির চাষাবাদও শুরু করে। পাশাপাশি ধানের চাষাবাদও করতো বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এভাবে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ মাছ, মাংস, শাক-সবজি, ফলমূল খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়।

নমুনা প্রশ্নমালা এবং এর ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য:

CamScanner 11 10 2023 00.11 7 1

আরো পড়োসামাজিক পরিচয়
আরো পড়োপ্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো

কাল-৫: অতীতের উৎপাদন পদ্ধতির ওপর ভূমিকাভিনয়।
কাজের উদ্দেশ্য: প্রাচীন মানুষের উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে অনুসন্ধান করা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: মাটি, কাগজ, শন্ত বোর্ড, কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি হাতিয়ার, প্রাচীনকালের উপযোগী পোশাক।

কাজের নির্দেশনা:-

  • শিক্ষকের সহায়তায় প্রাচীন মানুষের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ওপর তৈরিকৃত রিপোর্টের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ের ও ভৌগোলিক স্থানের উৎপাদনে ব্যবহৃত হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতির মডেল তৈরি করা।
  • এবার শিক্ষকদের সহায়তায় প্রাচীনকালে উৎপাদন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কোনো কল্পিত ঘটনার ওপর অভিনয় করবে।

নমুনা সমাধান
শিক্ষক পুরো ক্লাস থেকে ছয়জনকে বাছাই করবেন।

নাটকের চরিত্রগুলো হলো:
১. ভাঁট (ভূ-স্বামী); ২. লিলি (ভট্টর স্ত্রী); ৩. নীলান্ত (বর্গাচাষী); ৪. রামোস (দাস মালিক) ও ৫. শমু ও ইমা (ভূমিদাস)।
প্রথম দৃশ্য: বর্গাচাষী নীলান্ত এবং ভূস্বামী ভট্টর মাঝে কথোপকথন । কী ব্যাপার, নীলান্ত? এত সকালে কেন এসেছো?
নীলান্ত: আমার জমি পানিতে তলিয়ে আছে। যদি চাষ করার মতো কিছু জমি দিতেন।
ভট্ট: তাহলে তুমি আমার নদীপাড়ের জমিটাতে চাষ করতে পারো।
নীলান্ত: আপনার অশেষ দয়া।

[নীলান্তের প্রস্থান ও ভট্টর বাড়ির অভ্যন্তরে গমন]

নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য: রামোস তার দাসদের হুকুম প্রদান করছেন।
রামোস: (শমু ও ইমাকে উদ্দেশ্য করে) তোমরা দু’জন পশ্চিম টিলার পাশে আমার সমস্ত জমি চাষ করে রাখবে।
শামু: কিন্তু জনাব এত জমি কি আমরা চাষ করতে পারবো?
রামোস : তোমাদের দু’জনকেই করতে হবে। প্রয়োজনে দিনরাত পরিশ্রম করবে।
ইমা : কিন্তু মনিব কী দিয়ে আমরা জমি চাষ করব?
রামোস: (গুদাম ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে) ওখানে, কোদাল, কাস্তে, লাঙল, হাতুড়ি ও গোশালা থেকে গরু নিয়ে যাও। হুকুমমতো শমু ও ইমার প্রস্থান।

নাটকের তৃতীয় দৃশ্য: বেশকিছু দিন পর ভট্টর বাড়িতে ফসলের ভাগ নিয়ে নীলান্তের আগমন।
নীলান্ত : (ভট্টকে উদ্দেশ্য করে) আপনার জমিতে চাষ করে যে ফসল পেয়েছিলাম তার কিছু অংশ নিয়ে এসেছি।
ভট্ট: কতটুকু এনেছো?
নীলান্ত : যা ফসল পেয়েছিলাম তার চারভাগের একভাগ।
লিলি: মাত্র এক ভাগ কেন? জমি আমাদের, তাহলে তিন ভাগ আমাদের দিবে।
নীলান্ত : তাহলে যে আমার কিছুই থাকবে না। জমি চাষ করার ও ফসল ফলানোর সমস্ত হাতিয়ারই আমার।
ভট্ট: (নীলান্তের দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা শোনো, তুমি উৎপাদিত ফসল সমান ভাগ করে অর্ধেক দিয়ে যাবে।

[আদেশ মেনে নীলান্তের প্রস্থান]

নাটকের চতুর্থ দৃশ্য: রামোসের গুদাম ঘরে শমু ও ইমা ফসল তুলছে।
শমু: মনিব, এবার ভালো ফসল হয়েছে।
ইমা : মনিব, আমরা ফসলের কোনো ভাগ পাবো না? রামোস : (রাগের সাথে) না, তোমরা কোনো ভাগ পাবে না।
শমু: (ভয়ে ভয়ে) কেন মনিব?
রামোস: আমি তোমাদের দশ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনেছি। উৎপাদনের সমস্ত হাতিয়ার এবং যন্ত্রপাতিও আমরা। তোমরা সবাই আমার সম্পদ। তাই চুপচাপ কাজ করো।

[রামোসের প্রস্থান ও নাটকের শেষ]