চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জেনে নিন (ঘরোয়া পদ্ধতিতে)

Posted on

আমাদের সকলেরই কম-বেশি চুল পড়ে। তবে অধিক মাত্রায় চুল পড়া মোটেও কাম্য নয়। অতিরিক্ত টেনশন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার কারণেও চুল পড়তে পারে। তাই নিয়মিত প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৮ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
প্রথমে খুজে বের করতে হবে কেনো চুল পড়ছে, তাহলে চুল পড়া বন্ধের সমাধান পাওয়া যাবে। চুল পড়া বন্ধের জন্য চুলের গোড়া মজবুত এবং চুলের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জেনে সে বিষয়গুলো মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। তাই এবারের আলোচনার বিষয়বস্তু ঘরে বসেই চুল পড়া বন্ধ করার উপায় বের করা।

কেনো চুল পড়ে?
চুল বিভিন্ন কারণে পড়তে পারে। তার মধ্যে পরিবেশ দূষণ, বয়স বৃদ্ধি, স্ট্রেস, ধুমপান, জেনেটিক কারণ, হেয়ার প্রোডাক্টের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তবে ঘনঘন চুল পড়া দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুল পড়া রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো সব চুল উঠে শেষ হয়ে যাবে।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

মেথি :
চুল পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে বিভিন্নভাবে চুল পড়া রোধ করা যেতে পারে। তারমধ্যে মেথি অন্যতম। রাতে ঘুমানোর আগে মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সেই মেথি মিশ্রিত পানি পেস্ট করে পুরো মাথায় এবং চুলে লাগিয়ে নিন। এভাবে ১ঘণ্টা মতো রেখে যখন মিশ্রণটি শুকিয়ে আসবে তখন শ্যাম্পু-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অধিক কার্যকরিতা পেতে মাসে দুইবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করার চেষ্টা করুন। আশাকরি ভালো ফল পাবেন।

অ্যালোভেরা :
চুল ভালো রাখতে অ্যালোভেরার রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। চুল ঝলমলে রাখার পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত রাখতে সপ্তাহে ২/৩দিন চুলের গোড়া থেকে সম্পুর্ণ চুলে অ্যালোভেরার রস সংগ্রহ করে লাগিয়ে নিন। এভাবে লাগিয়ে প্রায় ২০-২৫মিনিট রাখুন তারপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

মেহেদি ও সরিষার তেল :
প্রাচীন কাল থেকেই চুলে মেহেদি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। মূলত পাকা চুলের জন্য মেহেদি দিয়ে থাকে। তবে চুল পড়া রোধেও মেহেদির রয়েছে অনেক উপকারিতা।
২৫০ মি.লি. সরিষার তেলের সাথে ২০/২৫টি মেহেদি পাতা একসাথে রেখে ফুটিয়ে নিন। এরপর হালকা ঠান্ডা হলে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে প্রায় ২০মিনিটের মতো রাখুন। তারপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সপ্তাহে একবার করে দিতে থাকুন।

পেঁয়াজের রস :
চুল পড়া বন্ধ রাখতে পেঁয়াজের রস অধিকতর কার্যকরী। পেঁয়াজের রস সরাসরি চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। তারপর প্রায় ২৫-৩০মিনিটের মতো রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে অল্পদিনের মধ্যেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ডিমের কুসুম ও মধু :
ডিমের কুসুমের সাথে মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। এরপর আধা ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আমলকি :
চুল পড়া রোধের পাশাপাশি চুল মজবুত ও চুল বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে আমলকি। চুলের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ভিটামিন-সি। আর আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন-সি। তাই চুল পুষ্টি জোগাতে ও ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরণে আমলকির ভূমিকা ব্যাপক। তবে যারা আমলকি খেতে পছন্দ করেন না তারা ১চা চামচ আমলকির রসের সাথে ১চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে রাত্রে ঘুমানোর আগে চুলের গোড়ায় দিয়ে শুয়ে যাবেন। এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে চুল ধুয়ে নিবেন।

নিম পাতার রস :
নিম পাতা হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাপ্ত মহাঔষুধ। নিম গাছের প্রতিটি অঙ্গে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দিক রয়েছে। নিম গাছ থেকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ইত্যাদি বিদ্যমান।
চুল পড়া রোধে কয়েকটি টাটকা নিম পাতা হালকা পানিতে সিদ্ধ করে রস বের করে নিন। সেই রস ঠান্ডা করে মাথার ত্বক এবং চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এই পদ্ধতি ১/২ বার অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

চুল পড়া রোধে করণীয় :
১. চুল ভেজা অবস্থায় দুর্বল হয়ে থাকে। তাই ভেজা চুলে চিরুনী করা থেকে বিরত থাকুন। তবে চুরুনী করার অধিক প্রয়োজন হলে ফাঁকা ফাঁকা দাগযুক্ত চুরুনী ব্যাবহার করুন। ঘন ঘন চুল আঁচড়ানো চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই বেশি বেশি চুল না আঁচড়ানোই ভালো।
২. শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ সচল রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০মিনিটের মতো হাঁটুন। নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে, মানসিক চাপের মাত্রা কম থাকে। যার ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
৩. ধূমপানের ফলে মাথায় রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা তুলনামূলক হারে কমে যায়। যার ফল চুল বৃদ্ধি হওয়াতে বাধা পায়। তাই ধূমপান পরিহার করতে হবে।
৪. গবেষণায় দেখা গেছে, চুল পড়ার সাথে মানসিক চাপ ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। অর্থাৎ, যারা বেশি বেশি দুশ্চিন্তা করেন তদের মাথার চুল পড়ার হারও বেশি। তাই সবসময় চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। চিন্তামুক্ত থাকার একমাত্র উপায় ধ্যান করা। ধ্যান ও যোগ শুধু মানসিক চাপ হ্রাস করে না বরং শরীরের হরমোনিয় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
৫. অধিকতর চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে মানব শরীরে পানির ঘাটতি থাকা। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির চাহিদা পূরণ করের চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব।
৬. মাথায় নতুন চুল গোজাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে কালোজিরা। বাজারে এখন সহজেই কালোজিরার তেল পাওয়া যায়। কালোজিরা খেয়ে অথবা কালোজিরার তেল মাথায় ব্যবহার করে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায়।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়গুলো জেনে সেই পদ্ধতিগুল অনুসরণ করলে যেমন চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব, তেমনি চুল হবে ঝলমলে এবং অধিকতর মজবুত।

Gravatar Image
StudyOurs: Your Gateway to Collaborative Learning and Growth.

2 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *