হাঁটার উপকারিতা কখন বেশি? সকাল নাকি রাত?

আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে কম-বেশি হাঁটাহাঁটি করে থাকি। অনেকে আবার অল্প রাস্তা হলেও হাঁটতে চান না। কিন্তু হাঁটার রয়েছে নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা। যার ফলে আমরা সুস্থ্য জীবন পেতে পারি নিমিষেই। জীবনধারায় এবার আলোচনা করবো হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে। সকাল কিংবা রাত, উভয় সময়েই হাঁটার রয়েছে কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। আমরা আমাদের সুবিধা মাফিক একটা সময় নির্ধারণ করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।

সকালে হাঁটার উপকারিতা

হাঁটার আগে করনীয় :
সকালে হাঁটার উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোর বেলা। বেশি ভালো হয় ফজর নামাজ পড়ার পর হাঁটা। সেসময় যানবাহন তেমন চলাচল করে না। পরিবেশের বাতাস থাকে নির্মল। হাঁটার জন্য অবশ্যই উপযুক্ত স্থান বের করতে হবে। সমতল ভূমি, নিরিবিলি সুন্দর দূষণমুক্ত পরিবেশ এসব জায়গায় হাঁটা বেশ কার্যকারী। সেক্ষেত্রে ফাঁকা রাস্তা, বাড়ির আঙ্গিনা, পার্ক ইত্যাদি নির্বাচন করা যেতে পারে। হাঁটার সময় অবশ্যই ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।
প্রতিদিন হাঁটলে তো খুবই ভালো। তবে প্রতিদিন হাঁটার সুযোগ না হলে সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন হাঁটতে হবে। প্রতিদিন ৩০-৪০মিনিট হাঁটতে হবে। দ্রুত হাঁটতে হবে যেন শরীরে ঘাম ঝরে। সাথে পানির বোতল রাখতে পারেন। ১৫ মিনিট পরপর পানি খাওয়া যেতে পারে। হাঁটার একঘেয়েমি দূর করতে মিউজিক, গান, কুরআন তেলওয়াত ইত্যাদি শুনতে পারেন। মাঝেমধ্যে হাঁটার স্থান পরিবর্তন করতে পারেন।

আয়ু বাড়ে :
প্রতিদিন সকালে হাঁটার সময় সুন্দর পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ বাতাস হৃদপিণ্ড এবং মনের কর্মক্ষমতা বাড়িতে তোলে। এমনকি হাঁটার সময় হৃদপিণ্ড শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। যার ফলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গে বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশ করায় শরীর সুস্থ্য থাকে এবং দীর্ঘজীবী হয়।

স্মৃতিশক্তি উন্নীত হয় :
আমরা জানি সকালে বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়। সকালে হাঁটার ফলে সেই বিশুদ্ধ বাতাস আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। সেই বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ড রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং সেই বিশুদ্ধ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে পৌছে দেই।
যার ফলে মস্তিষ্ক সচল ও সতেজ থাকে এবং স্মৃতিশক্তির উন্নীত হয়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয় :
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। হাঁটার ফলে রক্তে ইনসুলিন এবং গ্লুকোজ ক্ষয় হয়। এইজন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় :
সকালে হাঁটার ফলে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়। যার ফলে শরীরের লোমকূপগুলো খুলে যায় এবং ঘামের সাথে দূষিত তরল বের হয়ে যায়। যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের লাবণ্যময় চেহেরা ফুটে উঠে।

মেদ কমে :
সকালে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে মেদ কমে, ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটলে ক্যালরি খরচ হয় পক্ষান্তরে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমে।
যার ফলে ওজন এবং মেদ দুইটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে :
প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনে আমরা দিনকে দিন মোবাইল / কম্পিউটার এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। এগুলোর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই চোখকে কিছুক্ষণ আরাম দিতে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হাঁটাহাঁটি কার্যকারি ভূমিকা রাখে। গবেষণায় জানা গেছে, সকালে খালি পা এ ঘাসের উপর হাঁটাহাঁটি করলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।

মানসিক চাপ কমে :
সকালে যানবাহন তেমন চলাচল না করার ফলে গাছের বিশুদ্ধ বাতাস এবং নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করা যায়। যা তাৎক্ষনিক মন ভালো করে দিতে পারে৷ সকালে কিছুক্ষণ হাঁটার ফলে কাজের প্রতি মনযোগ বৃদ্ধি পায়, মন প্রফুল্ল হয় এবং মানসিক চাপ কমে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :
প্রতিদিন সকালে হাঁটার ফলে পরিবেশের বিশুদ্ধ বাতাস এবং অক্সিজেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রবেশ করে। যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

রাতে খাবারের পর হাঁটার উপকারিতা

আমরা সাধারণত রাতে খাবারের পর মোবাইল অথবা কম্পিউটার নিয়ে বসে পরি। অনেকে আবার টিভি সামনে বসে পরেন। আবার কেউ কেউ খাবারের পরপরই সুয়ে যান। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
রাতে খাবারের পর সেটা হজম করা অত্যন্ত জরুরি। সেটার জন্য রাতে খাবারের পর হাঁটাহাঁটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে খাবারের পর অন্তত ২০-৩০মিনিট হাঁটাহাঁটি করে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি সুস্থ্য থাকে।
রাতে হাঁটাহাঁটির ফলে শুধু ব্যায়ামই না, হজমশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া রাতে হাঁটাহাঁটির ফলে বাড়তি ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে থাকে। খারাপ কলেস্টেরল দূরীভূত হয় পক্ষান্তরে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।

হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে :
প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটার ফলে হৃদয় স্পন্দন ভালো থাকবে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয় এবং ভালো কোলেস্টেরল গঠিত হয়। হার্টও ভালো থাকে।

হজমে সহায়তা করে :
খাবারের পর প্রতিদিন নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে খাবার সঠিকভাবে হজম হয়। তাছাড়া যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন তারা রাতে খাবারের পর হাঁটাহাঁটি করলে ভালো ফল পাবেন।

হাড় ক্ষয় রোধ করে :
হাড় ঠিক রাখতে এবং হাড়ের ক্ষয় কমাতে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত হাঁটার ফলে জয়েন্টের শুষ্কতা এবং আরথ্রাইটিস প্রতিরোধ হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় :
প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটার ফলে রক্তে শ্বেত কণিকা গঠিত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। ডায়বেটিস সমস্যার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের রাতে খাবারের পর হাঁটাহাঁটি করলে উপকৃত হবে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ওজন নিয়ন্ত্রিত হবে :
প্রতিদিন রাতে নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের চর্বি কমতে থাকে। যার ফলে অতিরিক্ত মেদ কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়মিত হাঁটার ফলে ওজনও কমতে থাকে।

Leave a Comment