(পৌরনীতি) SSC: নাগরিক ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

নাগরিক ও নাগরিকতা হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র পৌরনীতি বই এর ২য় অধ্যায়। নাগরিক ও নাগরিকতা অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

নাগরিক ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. পিযুশ চক্রবর্তী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কানাডা চলে যান। তিনি কানাডার ভাষা শিখে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে সততার পরিচয় দেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কানাডার সরকার তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে। বাংলাদেশ থেকে কানাডায় বিমানে যাওয়ার পথে কানাডার আকাশসীমার মধ্যে তার স্ত্রীর রাহুল নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
ক. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত তথ্য অধিকার আইনটি কত তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে?
খ. নাগরিকের অধিকার বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. রাহুল কোন দেশের নাগরিক হবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পিযুশ চক্রবর্তী কি শুধু কানাডারই নাগরিক? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত তথ্য অধিকার আইনটি ৫ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে।

খ. অধিকার হলো সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতকগুলো সুযোগ- সুবিধা, যা ভোগের মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। অধিকারের মূল লক্ষ্য ব্যক্তির সার্বজনীন কল্যাণ সাধন। অধিকার সকল নাগরিকের মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদান করা হয়। একজন নাগরিক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যবোধ স্বীকার করে রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য অধিকার ভোগের যে সুযোগ পায় তাই নাগরিক অধিকার নামে পরিচিত। যেমন— শিক্ষার অধিকার, পরিবার গঠনের অধিকার, ভোটাধিকার ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাহুল দ্বৈত নাগরিক অর্থাৎ বাংলাদেশ ও কানাডার উভয় দেশের নাগরিক হবে। জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে দুটি নীতি অনুসরণ করা হয়। যেমন-
১. জন্মনীতি এ নীতি অনুযায়ী পিতামাতার নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে শিশু যে দেশে বা যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন পিতামাতার নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়। উদ্দীপকে পিযুশ চক্রবর্তী যেহেতু বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ছিলেন এবং এখানে থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কানাডার উদ্দেশে রওনা করেছেন, যেহেতু এক্ষেত্রে জন্মনীতি অনুসরণ করা হয়। তাই এ নীতি অনুযায়ী রাহুল বাংলাদেশের নাগরিক।
২. জন্মস্থান নীতি : এ নীতি অনুসারে পিতামাতা যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন সন্তান যে রাষ্ট্রে বা রাষ্ট্রের জাহাজে, বিমানে বা দূতাবাসে জন্মগ্রহণ করবে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। এক্ষেত্রে রাহুল কানাডার আকাশ সীমার মধ্যে জন্মগ্রহণ করে। এ নীতি অনুযায়ী সে কানাডার নাগরিক। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, এক্ষেত্রে রাহুলের দ্বৈত নাগরিকতা হবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সে যেকোনো একটি দেশের নাগরিকত্ব বেছে নিতে পারবে।

ঘ. না, পিযুশ চক্রবর্তী শুধু কানাডার নাগরিকই নন, তিনি বাংলাদেশেরও নাগরিক। নাগরিকতা অর্জনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা-
১. জন্মসূত্র : জন্মসূত্রে নাগরিকতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি নীতি অনুসরণ করা হয়। যথা- ক. জন্মনীতি ও খ. জন্মস্থান নীতি।
ক. জন্মনীতি : জন্মনীতিতে পিতামাতার নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে পিযুশ চক্রবর্তী বাংলাদেশের কোনো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তাছাড়া পিযুশ চক্রবর্তীর পিতামাতাও বাংলাদেশে থাকেন। তা না হলে তিনি বাইরের দেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করতেন।
খ. জন্মস্থান নীতি : জন্মস্থান নীতি অনুযায়ী সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। উল্লিখিত বিষয় থেকে স্পষ্ট যে, পিযুশ চক্রবর্তী বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করেছেন।
২. অনুমোদনসূত্রে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে কতকগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন-
ক. সেই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা।
খ. সরকারি চাকরি করা।
গ. সেনাবাহিনীতে যোগদান করা।
ঘ. সততার পরিচয় দেওয়া।
ঙ. সে দেশের ভাষা জানা।
চ. সম্পত্তি ক্রয় করা।
ছ. দীর্ঘদিন বসবাস করা ইত্যাদি।
কোনো ব্যক্তি যদি এসব শর্তের এক বা একাধিক শর্ত পূরণ করে, ওই রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করে এবং রাষ্ট্র যদি তার আবেদন গ্রহণ করে। তবে সে অনুমোদনসূত্রে ওই দেশের নাগরিক। এক্ষেত্রে পিযুশ চক্রবর্তী উপরিউক্ত শর্তের একাধিক শর্ত পূরণ করে এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন এবং উক্ত রাষ্ট্র সেটি মঞ্জুর করে। এ নীতি অনুযায়ী তিনি কানাডার নাগরিক।
এক্ষেত্রে পিযুশ চক্রবর্তী অনুমোদনসূত্রে কানাডার নাগরিক; কিন্তু জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু তিনি কোন রাষ্ট্রকে বেছে নিয়েে সেটা অস্পষ্ট। তাই এখানে তার দ্বৈত নাগরিকতার সৃষ্টি হয়েছে।

২. রফিক ও শফিক দুই বন্ধু। তারা দুজনই মানবিক বিভাগের ছাত্র। রফিক মনে করে, নাগরিকতা অর্জনের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকতা লাভ করা একটি চিরন্তন পদ্ধতি।
ক. জন্মস্থান নীতি কী?
খ. তথ্য বলতে কী বোঝায়?
গ. শফিক অনুমোদনসূত্রে কীভাবে নাগরিকতা লাভ করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মানবিক ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব প্রদান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সম্ভব নয় – তোমার মতামত দাও।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. জন্মস্থান নীতি হলো নাগরিকতা অর্জনের এমন এক নীতি, যে নীতি অনুযায়ী পিতামাতা যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে ওই রাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করবে।

খ. তথ্য হচ্ছে কোনো কর্তৃপক্ষের গঠন, কাঠামো ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডসংক্রান্ত স্মারক, বইসহ যেকোনো তথ্যবহুল বন্ধু বা প্রতিলিপি বোঝায়। তথ্যের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- নকশা, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, লগবহি, আদেশ, বিজ্ঞপ্তি, দলিল, নমুনা, পত্র, প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, প্রকল্প প্রস্তাব, আলোকচিত্র, অডিও, ভিডিও, অঙ্কিত চিত্র, ফিল্ম, ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত যেকোনো ইনট্রুমেন্ট ইত্যাদি। তবে শর্ত থাকে যে দাপ্তরিক নোটশিট বা নোটশিটের প্রতিলিপি তথ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

গ. উদ্দীপকের শফিক নির্দিষ্ট কতকগুলো শর্ত পালনের মাধ্যমে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা লাভ করতে পারবে।
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি যে মর্যাদা ও সম্মান পায় তাকে নাগরিকতা বলে। নাগরিকতা অর্জনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা- জন্মসূত্র ও অনুমোদনসূত্র। কতকগুলো নির্দিষ্ট শর্ত পালনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করতে পারে। একে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জন বলা হয়। অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা পেতে হলে সাধারণত যেসব শর্ত পালন করতে হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা, ‘দীর্ঘদিন বসবাস করা, সে দেশে সরকারি চাকরি করা, সম্পত্তি কেনা ও কর দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা ও সদাচরণ করা ইত্যাদি। রাষ্ট্রভেদে এসব শর্ত ভিন্ন হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি এক বা একাধিক শর্ত পূরণ করে তবে সে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদন ওই রাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক গৃহীত হলে সে অনুমোদনসূত্রে নাগরিকে পরিণত হয়। উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, প্রয়োজনীয় শর্তাবলির মধ্যে রাষ্ট্রভেদে এক বা একাধিক শর্ত পূরণের মাধ্যমে শফিক অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জন করতে পারবে।

ঘ. ‘মানবিক ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব প্রদান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সম্ভব নয়’- উক্তিটি যথার্থ।
নাগরিকতা অর্জনের দুটি মূল পদ্ধতি জন্মসূত্র ও অনুমোদনসূত্র ছাড়াও মানবিক কারণে নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ আছে। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ভিন্নমত কিংবা জাতিগত কারণে বিপন্ন হয়ে কোনো ব্যক্তি যদি অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয় তবে সেই রাষ্ট্র আবেদনের ভিত্তিতে তাকে প্রথমত বসবাসের সুযোগ এবং এক পর্যায়ে নাগরিকত্ব দিতে পারে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে মানবিক কারণে নাগরিকত্ব প্রদান সবসময় সম্ভব নয়। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশ। এ দেশ স্বল্প আয়তন, সীমিত অবকাঠামো ও নিম্ন মাথাপিছু আয়সহ অনেক সমস্যায় জর্জরিত। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মানবিক কারণে বেশিসংখ্যক বিদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু লোককে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে তা বাংলাদেশের চেয়ে অনগ্রসর দেশের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে। সে বোঝা সামলানো বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ আটকেপড়া পাকিস্তানি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ বহন করছে। নতুন করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এসে সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। অর্থনৈতিক ছাড়াও এ সমস্যার একটি নিরাপত্তাগত দিকও রয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক জঙ্গি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু লোকের মধ্যে প্রাণঘাতী এইচআইভি ভাইরাসও ধরা পড়েছে। এছাড়া দেখা গেছে, অনেকদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অনেকে এলাকায় মাদক, সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং মানবিক কারণে বিদেশিদের নাগরিকতা দেওয়া হলে জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। কাজেই সার্বিক আর্থসামাজিক ও নিরাপত্তাসহ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষে মানবিক কারণে ঢালাও নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয়।

আরো পড়ো → পৌরনীতি ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. ইমতিয়াজ উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। শিক্ষা শেষ করে তিনি সে দেশের এক নাগরিককে বিবাহ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা শুরু করেন এবং নিয়মিত ও সময়মতো কর প্রদান করেন।
ক. নাগরিকতা অর্জনের কয়টি পদ্ধতি রয়েছে?
খ. দ্বৈত নাগরিকতা বলতে কী বোঝায়?
গ. ইমতিয়াজ কোন সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ইমতিয়াজের সময়মতো কর প্রদান সুনাগরিকের একটি বিশেষ গুণকে নির্দেশ করে”- উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. নাগরিকতা অর্জনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা- জন্মনীতি ও জন্মস্থান নীতি।

খ. কোনো ব্যক্তির একই সাথে দুটি রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়াকে তৈ নাগরিকতা বলে। জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের দুটি নীতি থাকায় “কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকতার সৃষ্টি হয়। যেমন- বাংলাদেশে নাগরিকতা নির্ধারণে জন্মনীতি অনুসরণ করে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মনীতি ও জন্মস্থান নীতি উভয়ই অনুসরণ করে। কাজেই বাংলাদেশি পিতামাতার সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে সেই সন্তান জন্মস্থান নীতি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হবে। আবার জন্মনীতি অনুযায়ী সে বাংলাদেশের নাগরিক হবে। এক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকতার সৃষ্টি হয়। তবে পূর্ণবয়স্ক হলে তাকে যেকোনো একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে।

গ. ইমতিয়াজ অনুমোদনসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করেছেন।
কতকগুলো শর্ত পালনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করলে তাকে অনুমোদনসূত্রে নাগরিক বলা হয়। এ অর্থে ইমতিয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনসূত্রে নাগরিক। সাধারণত অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পালন করতে হয় সেগুলো হলো- ১. সেই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা, ২. সরকারি চাকরি করা, ৩. সততার পরিচয় দেওয়া, ৪. সে দেশের ভাষা জানা । ৫. সম্পত্তি ক্রয় করা, ৬. দীর্ঘদিন বসবাস করা ও ৭. সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। রাষ্ট্রভেদে এসব শর্ত ভিন্ন হতে পারে। ইমতিয়াজ উপরিউক্ত শর্তগুলোর একাধিক শর্ত পূরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ওই রাষ্ট্রে বসবাস করছেন, ওই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিবাহ করেছেন এবং সময়মতো কর দিয়ে সততারও পরিচয় দিয়েছেন। তার আবেদনের ভিত্তিতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। সুতরাং তিনি অনুমোদনসূত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করেছেন।

ঘ. “ইমতিয়াজের সময়মতো কর প্রদান সুনাগরিকের একটি বিশেষ গুণকে নির্দেশ করে।” -এ উক্তিটি যথার্থ।
রাষ্ট্রের সব নাগরিক সুনাগরিক নয়। আমাদের মধ্যে যে বুদ্ধিমান, যে সব সমস্যা অতি সহজে সমাধান করে, যার বিবেক আছে, যে ন্যায়- “অন্যায়, সৎ-অসৎ বুঝতে পারে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে, আর যে আত্মসংযমী এবং বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে সেসব গুণসম্পন্ন নাগরিকদের বলা হয় সুনাগরিক। পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী একজন নাগরিকের তিনটি গুণ থাকলে তাকে সুনাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যথা— বুদ্ধি, বিবেক ও আত্মসংযম । বিবেক সুনাগরিকের একটি বিশেষ গুণ। রাষ্ট্রের নাগরিকদের হতে হবে বিবেকবোধসম্পন্ন। এ গুণের মাধ্যমে নাগরিক ন্যায়-অন্যায়, সৎ- অসৎ, ভালো-মন্দ অনুধাবন করতে পারে। বিবেকবান নাগরিক একদিকে যেমন রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভোগ করে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকে। যেমন- বিবেকসম্পন্ন নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে আইন মান্য করে, যথাসময়ে কর প্রদান করে, নির্বাচনে যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিকে ভোট দেয়।
উদ্দীপকের ইমতিয়াজ বিবেকসম্পন্ন নাগরিক এবং তিনি সময়মতো কর প্রদান করেন, যা সুনাগরিকের এ বিশেষ গুণটির সাথে মিলে যায়। সুতরাং ইমতিয়াজের সময়মতো কর প্রদান সুনাগরিকের বিবেক নামক বিশেষ গুণের সাথে মিলে যায়। অতএব, উক্তিটি যথার্থ।

৪. নাগরিক ও নাগরিকতা বিষয়টি পড়ানোর শুরুতে হাসান স্যার বোর্ডে কয়েকটি বিষয় লিখলেন। যথা- ১. রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা; ২. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার; ৩. রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ; ৪. প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদান।
ক. দ্বৈত নাগরিকতা কী?
খ. জন্মস্থান নীতিতে কীভাবে একজন নাগরিকতা লাভ করে?
গ. আবুল হাসান স্যারের লিখিত বিষয়গুলোতে কীসের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আবুল হাসান স্যারের লিখিত বিষয়টি দ্বারা যেটি বোঝা যায় তা কীভাবে অর্জন করতে হয়? বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. একজন ব্যক্তির একই সঙ্গে দুটি রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জনকে দ্বৈত নাগরিকতা বলে।

খ. জন্মস্থান নীতি অনুসারে পিতামাতা যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। যেমন- বাংলাদেশের কোনো পিতামাতার সন্তান যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অথবা মার্কিন জাহাজে কিংবা মার্কিন দূতাবাসে ভূমিষ্ঠ হয় তবে সে সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে গণ্য হবে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আবুল হাসান স্যারের লিখিত বিষয়গুলোতে নাগরিকের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
যে ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করে, তাকে ঐ রাষ্ট্রের নাগরিক বলা হয়। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এদেশে আমরা স্থায়ীভাবে বসবাস করি, রাষ্ট্রপ্রদত্ত সকল প্রকার অধিকার ভোগ করি এবং রাষ্ট্রের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করি। আবুল হাসান স্যার বোর্ডে যে বিষয়গুলো লিখেছেন তা পাঠ্যবইয়ের উল্লিখিত নাগরিকের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অতএব বলা যায়, আবুল হাসান স্যারের লিখিত বিষয়গুলোতে নাগরিকের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে আবুল হাসান স্যারের লিখিত বিষয়গুলো দ্বারা নাগরিকতার বিষয়টি বোঝা যায়। নাগরিকতা অর্জন করতে হলে কিছু পদ্ধতি ও এর নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয়। নাগরিকতা অর্জনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- ১. জন্মসূত্র ও ২. অনুমোদনসূত্র।
১. জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতি: জন্মসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে দুটি নীতি অনুসরণ করা হয়। যথা—
ক. জন্মনীতি : এ নীতি অনুযায়ী পিতা-মাতার নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে শিশু যে দেশে বা যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন পিতা-মাতার নাগরিকতা দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারিত হয়।
খ. জন্মস্থান নীতি : এ নীতি অনুযায়ী পিতা-মাতা যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে ঐ রাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করবে।
২. অনুমোদন সূত্রে নাগরিকত্ব অর্জনের পদ্ধতি : কতকগুলো শর্ত পালনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করলে তাকে অনুমোদন সূত্রে নাগরিক বলা হয়। সাধারণত অনুমোদন সূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পালন করতে হয় সেগুলো হলো- ক. সেই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা, খ. সরকারি চাকরি করা, গ. সততার পরিচয় দেওয়া, ঘ. সেদেশের ভাষা জানা, ৫. সম্পত্তি ক্রয় করা, চ. দীর্ঘদিন বসবাস করা, ছ. সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। তবে রাষ্ট্রভেদে এসব শর্ত ভিন্ন হতে পারে।

৫. আবিদ ও আরমান দুই বন্ধু। আরমান যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা শেষ করে সে দেশের নাগরিক জেসিকে বিয়ে করেন। সেখানে তিনি ব্যবসায় করছেন। দীর্ঘ সময় থাকার ফলে ভালোভাবে ভাষা রপ্ত করেছেন। তিনি সেই দেশের নিয়মিত কর প্রদান করেন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার বন্ধু আবিদ সাবিনাকে বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে যান পড়ালেখা করার জন্য। সেখানে গিয়ে তাদের একটি পুত্র সন্তান কায়সারের জন্ম হয়। শিক্ষা শেষ করে আবিদ ও সাবিনা দম্পতি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং নাগরিকতা লাভের চেষ্টা করছেন।
ক. দ্বৈত নাগরিকতা কাকে বলে?
খ. অধিকার ও কর্তব্য একে অপরের পরিপূরক ব্যাখ্যা কর।
গ. আরমান কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আবিদ ও কায়সারের নাগরিকত্ব লাভের পদ্ধতি কি একই? তোমার উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. একজন ব্যক্তির একই সঙ্গে দুটি রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জনকে দ্বৈত নাগরিকতা বলে।

খ. অধিকার ও কর্তব্য উভয়ের উৎপত্তি মানুষের সমাজবোধ থেকে। আমরা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত কিছু অধিকার ভোগ করি। এ অধিকার ভোগের বিনিময়ে আমরা সমাজের কল্যাণের জন্য কিছু কর্তব্য পালন করি। সমাজের বাইরে অধিকার ও কর্তব্যের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। অধিকারের সৃষ্টি হয় সামাজিক কল্যাণবোধের চেতনা থেকে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে কোনো (রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক) অধিকার ভোগ করতে গিয়ে তাকে যথাযথ কর্তব্য পালন করতে হয়। পক্ষান্তরে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে অধিকার ফিরে আসে। তাই বলা যায়, অধিকার ও কর্তব্য একে অপরের পরিপূরক।

গ. আরমান অনুমোদনসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করেছেন।
কতকগুলো শর্ত পালনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করলে তাকে অনুমোদনসূত্রে নাগরিক বলা হয়। এ .অর্থে আরমান যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনসূত্রে নাগরিক। সাধারণত অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পালন করতে হয় সেগুলো হলো- ১. সেই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা, ২. সরকারি চাকরি করা, ৩. সততার পরিচয় দেওয়া, ৪. সে দেশের ভাষা জানা। ৫. সম্পত্তি ক্রয় করা, ৬. দীর্ঘদিন বসবাস করা ও ৭. সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। রাষ্ট্রভেদে এসব শর্ত ভিন্ন হতে পারে। আরমান উপরিউক্ত শর্তগুলোর একাধিক শর্ত পূরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, ওই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিবাহ করেছেন এবং সময়মতো কর দিয়ে সততারও পরিচয় দিয়েছেন, সে দেশের ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করেছেন। তার আবেদনের ভিত্তিতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। সুতরাং তিনি অনুমোদনসূত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করেছেন।

ঘ. না, আবিদ ও কায়সারের নাগরিকত্ব লাভের পদ্ধতি একই নয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত আবিদ সাবিনাকে বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে যান পড়ালেখা করার জন্য। সেখানে গিয়ে তাদের একটি পুত্র সন্তান কায়সারের জন্ম হয়। অর্থাৎ কায়সারের নাগরিকত্ব জন্মসূত্রে নির্ধারিত হবে। জন্মসূত্রে নাগরিকতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি নীতি মানা হয়। যথা— জন্মনীতি ও জন্মস্থান নীতি। জন্মনীতি অনুযায়ী পিতামাতার নাগরিকতার দ্বারা সন্তানের নাগরিকতা নির্ধারণ করা হয়। সন্তান যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তার পিতামাতা যে দেশের সেও সে দেশের নাগরিক হবে। এ নীতি অনুযায়ী কায়সার বাংলাদেশের নাগরিক হবে। কেননা তার বাবা-মা এ দেশেরই নাগরিক। আবার জন্মস্থান নীতি অনুযায়ী সন্তান যে রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে সে সেই ..রাষ্ট্রের নাগরিক হবে। অর্থাৎ কায়সারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায় সে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা লাভ করবে। এক্ষেত্রে তার দ্বৈত নাগরিকতার সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে আবিদকে অনুমোদনসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করতে হবে। কতকগুলো শর্ত পালনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জন করলে তাকে অনুমোদন নাগরিক বলা হয়। সাধারণত অনুমোদনসূত্রে নাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পালন করতে হয় সেগুলো হলো- ক. সেই রাষ্ট্রের নাগরিককে বিয়ে করা, খ. সরকারি চাকরি করা, গ. সততার পরিচয় দেওয়া, ঘ. সেদেশের ভাষা জানা, ঙ. সম্পত্তি ক্রয় করা, চ. দীর্ঘদিন বসবাস করা, ছ. সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। তবে রাষ্ট্রভেদে এসব শর্ত ভিন্ন হতে পারে।
অতএব আমরা বলতে পারি, আবিদ ও কায়সারের নাগরিকত্ব লাভের পদ্ধতি একই নয়।

Leave a Comment