(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: নারী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

নারী হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতা। নারী কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

নারী কবিতার সৃজনশীল

১. জনৈক সমালোচকের মতে- ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গীয় মুসলমান নারীসমাজ ছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ। নিরক্ষরতা, অশিক্ষা ও সামাজিক ভেদ-বুদ্ধিও ছিল তাদের জন্য নিয়তির মতো সত্য। অবরুদ্ধ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এক অসহায় জীবে তারা পরিণত হয়েছিলেন। এদেরকে আলোর জগতে আনার জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর বক্তব্য- ‘আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীভাবে? কোনো এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে- একই।’
ক. ‘বিজয়-লক্ষ্মী নারী’- অর্থ কী?
খ. ‘সাম্যের গান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. জনৈক সমালোচকের মতটি ‘নারী কবিতার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ— ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বেগম রোকেয়ার বক্তব্য যেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতারই প্রতিধ্বনি— উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যে নারীকে জয়ের নিয়ন্তা দেবী হিসেবে কল্পনা করা হয়।

খ. ‘সাম্যের গান’ বলতে কবি নরনারীর সমান অধিকারের চেতনাকে বুঝিয়েছেন।
পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। কবি নরনারী উভয়কে আলাদা করে বিবেচনা করেননি। তিনি তাদের উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তাই কবি নারী ও পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। নারী ও পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করলে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমাজ, দেশ ও সভ্যতাকে অগ্রযাত্রার পথে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন নারী ও পুরুষের সমঅধিকার বোধ। ‘নারী’ কবিতার কবি নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাশীল। তাই তিনি এই কবিতায় ‘সাম্যের গান’ গেয়েছেন।

গ. মানবসভ্যতার জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদানই সমান। অথচ একসময় নারীর প্রাপ্য তার এই সমঅধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
‘নারী’ কবিতায় বলা হয়েছে, এমন যুগ ছিল যখন পুরুষরা দাস ছিল না অথচ নারীদেরকে দাসী করা হয়েছিল। আবার উদ্দীপকেও ব্রিটিশ ভারতে মুসলমান নারী সমাজের বন্দী জীবনের কথা বলা হয়েছে।
‘নারী’ কবিতায় একসময় নারীদের দাসী করে রাখার কথা বলা হয়েছে। তেমনি উদ্দীপকের জনৈক সমালোচকের মতে, ব্রিটিশ- ভারতে বাংলার মুসলমান নারীসমাজ ছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দী। শিক্ষার অধিকার বলতে সেই সময়ের মুসলমান নারীদের কিছুই ছিল না। সমাজের নানা ভেদ- বুদ্ধি মেয়েদের জীবনযাপনের পথে বাধার সৃষ্টি করতো। অন্যায়-অবিচারকে সেই সময়ের নারীরা নিয়তি বলে মেনে নিত। সেই সময়ের নারীদের মুক্ত পৃথিবী থেকে দূরে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী জীবনযাপন করতে হতো। ফলে তাদের জীবন ছিল দাসীর মতো। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, জনৈক সমালোচকের মতো ‘নারী’ কবিতায় এক সময়ে নারীদের দাসী করে রাখার যে কথা বলা হয়েছে তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘নারী’ কবিতার আলোকে আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ। বেগম রোকেয়া বলেছেন, নারীরা সমাজের অর্ধাঙ্গ। একটা দেহের অর্ধাঙ্গ অসুস্থ হলে যেমন বাকি অর্ধাঙ্গ আর কাজ করে না। তেমনি সমাজের অর্ধেক নারী যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে সমাজও পিছিয়ে পড়বে। সমাজ সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে না। এই সমাজের এক পা যদি হয় পুরুষ, তবে অন্য পা নারী। এক পা বেঁধে রাখলে যেমন অন্য পা-ও এগুতে পারবে না তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই একই ধরনের স্বার্থ রয়েছে।
উদ্দীপকের বেগম রোকেয়ার এই বক্তব্যের সারকথা হলো, সমাজের উন্নয়নের স্বার্থে নারী ও পুরুষকে সমানভাবে অগ্রসর হতে হবে। নারীদের তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে সমাজের অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যাবে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নারী’ কবিতায়ও এই একই কথা বলেছেন। জগতের যত বড় বড় জয় ও বড় বড় অভিযান হয়েছে, নারীদের ত্যাগেই তা সম্ভব হয়েছে। নারীর প্রেরণা ছাড়া পুরুষের তরবারি কখনই জয়ী হতে পারেনি। নারীদের প্রেরণা, সেবা ও সাহসে সভ্যতার চাকা সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
সুতরাং আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, বেগম রোকেয়ার বক্তব্য যেন কাজী নজরুল ইসলামের কথারই প্রতিধ্বনি। অর্থাৎ ‘নারী’ কবিতা এবং বেগম রোকেয়ার বক্তব্যের মূল সুর একই।

২. নওয়াব ফয়জুননেসা সমাজ উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে আত্ম-নিয়োগ করেছিলেন। মেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি কুমিল্লায় স্থাপন করেন ‘ফয়জুননেসা বালিকা বিদ্যালয়। এছাড়া নিজ গ্রামে স্থাপন করেন। একটি সিনিয়র মাদরাসা- যা পরে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হয়। কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত ‘ফয়জুননেসা জেনারেল হাসপাতাল’ তাঁর অসামান্য কীর্তি। লাকসাম, দাতব্য চিকিৎসালয়’ তাঁর দানে প্রতিষ্ঠিত। শুধু দেশেই নয়, হজ্বব্রত পালন করতে গিয়ে তিনি মক্কায়ও একটি স্কুল ও বিশ্রামাগার প্রতিষ্ঠা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি প্রতিষ্ঠান দুটির জন্য অর্থ সাহায্য প্রেরণ করতেন। অথচ তাঁর এত অবদানের কথা আমরা অনেকেই জানি না।
ক. কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলি কোন চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত?
খ. কবি বর্তমান যুগকে সাম্যের যুগ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে ওঠেনি’- তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার বিষয়বস্তুর সকল দিক ফুটে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

খ. নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার দেওয়ার সময় এসেছে বলে কবি বর্তমান যুগকে সাম্যের যুগ বলেছেন।
সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম নর-নারী উভয়কে মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি নারী-পুরুষের সম মর্যাদা ও সমান অধিকারে আস্থাবান। তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল কল্যাণকর সৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের সমান অবদান থাকলেও নারীকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন দিন বদল হয়েছে। নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করে উভয়কে সমান সুযোগ দিতে হবে। তাই কবি বর্তমান যুগকে সাম্যের যুগ বলেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতায় উল্লিখিত কল্যাণকর সৃষ্টিতে নারীর অবদানের দিকটি ফুটে উঠেছে।
পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কিন্তু পুরুষ-শাসিত সমাজ নারীর অবদানের স্বীকৃতি দেয়নি। সমাজ কখনো নারীকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার দিতে চায়নি।
উদ্দীপকে সমাজ-উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে নওয়াব ফয়ফুননেসার অবদানের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে যেমন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন হাসপাতাল ও দাতব্য চিকিৎসালয়। কেবল দেশেই নয়, তিনি মক্কায় হজব্রত পালন করতে গিয়ে সেখানেও একটি স্কুল ও বিশ্রামাগার প্রতিষ্ঠা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি এ দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সাহায্য প্রেরণ করতেন। উদ্দীপকে বর্ণিত এ বিষয়টি ‘নারী’ কবিতায় উল্লিখিত মানবসভ্যতা নির্মাণে নারীর অবদানের দিকটিকে মনে করিয়ে দেয়। উক্ত কবিতার কবি বলেছেন যে, বিশ্বের সব কল্যাণকর সৃষ্টিতে নর-নারীর সমান অবদান রয়েছে। জগতের সব বড় বড় জয় ও অভিযানে রয়েছে মাতা-ভগ্নি ও বধূদের ত্যাগের মহিমা। উদ্দীপকের বর্ণনায় কবির এ বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে, সব দিক ফুটে ওঠেনি।
মানবসভ্যতার নির্মাণ ও বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও সমান অবদান রয়েছে। কিন্তু পুরুষ-শাসিত সমাজ নারীর অবদানের স্বীকৃতি দেয়নি। ইতিহাসেও লেখা হয়নি নারীর অবদানের কথা। তবে যুগ বদলেছে, নারীকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
উদ্দীপকে সমাজের উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে নওয়াব ফয়জুননেসার অবদানের কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি মেয়েদের শিক্ষার জন্য কুমিল্লায় ফয়জুননেসা বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন একটি সিনিয়র মাদরাসা যা বর্তমানে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। এছাড়া তিনি কুমিল্লায় একটি হাসপাতাল এবং লাকসামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখেন। তিনি মক্কায়ও একটি স্কুল ও বিশ্রামাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠান দুটির জন্য তিনি দেশে ফিরে এসেও অর্থ সাহায্য পাঠাতেন। উদ্দীপকে বর্ণিত এ বিষয়টি ‘নারী’ কবিতায় উল্লিখিত কল্যাণকর সৃষ্টিতে নারীর অবদানের দিকটিকে ইঙ্গিত করে। তবে উক্ত কবিতায় নারীর অবদানের দিকটি ছাড়াও নারীর মর্যাদা দানে পুরুষের অনীহা, ইতিহাসে নারীর অবদানের কথা না লেখা, অতীতে নারীকে দাসী করে রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আলোচ্য কবিতায় কবি নর- নারীর সাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, এখন সময় এসেছে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করার। তাই নারীকে আর অবহেলা করা যাবে না, নারীকে দিতে হবে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার। নারী ও পুরুষকে সম্মিলিতভাবে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনা করতে হবে। উক্ত কবিতার এসব দিকের কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকে দেখা যায় না।
তাই, উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ‘উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার বিষয়বস্তুর সকল দিক ফুটে ওঠেনি- মন্তব্যটি যথার্থ।

আরো পড়োপ্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োবাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. এক সময়ের খুদে ব্যবসায়ী সুলতান সাহেব এখন একাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিক। বাড়ি-গাড়ি সব করেছেন। ছেলে-মেয়ে দুজনও উচ্চশিক্ষিত। এলাকার লোকেরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু তিনি মনে করেন, তাঁর সাফল্যের পেছনে রয়েছে স্ত্রীর অবদান। স্ত্রীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা না পেলে এসবের কিছুই হতো না।
ক. আপনার রচা কারাগারে কে ভুগে মরবে?
খ. সে যুগ হয়েছে বাসি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার ফুটে ওঠা নিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার সম্প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. আপনার রচা কারাগারে পুরুষ ভুগে মরবে।

খ. ‘সে যুগ হয়েছে বাসি’ বলতে বোঝানো হয়েছে, যে যুগে বা সময়ে নারীদের অবহেলা করা হতো, সে যুগ বা সময় গত হয়ে গেছে।
আগে নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হতো না। তাদের প্রতি নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হতো। নারীরা প্রতিনিয়ত পুরুষের অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার হয়ে অন্তঃপুরের সীমিত পরিসরে দাসীর মতো জীবনযাপন করত। কবি মনে করেন, এখন আর সে যুগ নেই; এখন নারীদের সম অধিকারের ভিত্তিতে মানুষের মতো মর্যাদা দিতে হবে।

গ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত নারীর অবদানের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে পৃথিবীর বর্তমান সভ্যতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুরুষশাসিত সমাজে নারীর অবদানকে মূল্যায়ন করা হয় না। ইতিহাসের পাতায় পুরুষের অবদানের কথা স্থান পেলেও নারীর অবদানের কথা স্থান পায় না।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এক সময়ের খুদে ব্যবসায়ী সুলতান সাহেব এখন একাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি বাড়ি-গাড়ি সব করেছেন এবং তার ছেলে-মেয়ে দুজনও উচ্চশিক্ষিত। এজন্য সবাই তার প্রশংসা করে। কিন্তু সুলতান সাহেব মনে করেন, এসবের পেছনে রয়েছে তাঁর স্ত্রীর প্রেরণা ও সহযোগিতা। ‘নারী’ কবিতায়ও পৃথিবীর সভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের সমান অবদানের কথা বলা হয়েছে। কবির মতে, বিশ্বে যত মহৎ কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নারী ও পুরুষ সমান অবদান রেখেছে। পৃথিবীর বড় বড় জয় ও অভিযানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার নারীর অবদানের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার সমগ্রভাব প্রতিফলিত হয়নি, কেননা উক্ত কবিতার বিষয়বস্তু উদ্দীপকের চেয়ে আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত।
নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৃথিবীর সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে, নারীর অবদান ততটা লেখা হয়নি। পুরুষশাসিত সমাজে নারী কখনো তার যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার পায়নি।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এক সময়ের খুদে ব্যবসায়ী সুলতান সাহেব এখন একাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁর বাড়ি-গাড়ি সব হয়েছে এবং ছেলে-মেয়ে দুজনও উচ্চশিক্ষিত। তাই সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু সুলতান সাহেব মনে করেন, এসবের পেছনে রয়েছে তাঁর স্ত্রীর অবদান। ‘নারী’ কবিতায়ও মানবসভ্যতা নির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় আরও বলা হয়েছে, পৃথিবীর সকল মহান সৃষ্টির পেছনে নারীর অবদান থাকলেও ইতিহাসে শুধু পুরুষের অবদানের কথা লেখা আছে, নারীর অবদানের কথা লেখা নেই। কবি মনে করেন, এখন দিন এসেছে সম-অধিকারের। তাই নারীর ওপর নির্যাতন চলবে না, তার মর্যাদা ও অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। নারীকে পীড়ন করলে পুরুষকেও সে পীড়ন ভোগ করতে হবে। উদ্দীপকে শুধু নারীর অবদানের স্বীকৃতি রয়েছে, উক্ত কবিতার অন্যান্য দিকের প্রতিফলন ঘটেনি।
তাই উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, “উদ্দীপকে ‘নারী’ কবিতার সমগ্রভাব প্রতিফলিত হয়নি”- মন্তব্যটি যথার্থ।

৪. তিন তিনবার ব্যবসায়ে বড় ধরনের ধস নামলে আকমল বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তার স্ত্রী অনেক খোঁজাখুঁজির পর সংবাদ পায় তার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে ছুটে গিয়ে গ্রী জানতে পারে আকমল রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। স্বামীকে সুস্থ করে বাড়ি আনার পর আকমলের স্ত্রী বলে, বিপদে এইভাবে ধৈর্য হারালে কী চলে? আবার ব্যবসা শুরু কর। এবার আমি প্রতিদিনই তোমাকে পরামর্শ দিব, তোমার পাশে থাকব।
ক. ‘নারী’ কবিতায় নজরুল কীসের গান গেয়েছেন?
খ. ‘আপনারই রচা ঐ কারাগার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ‘নারী’ কবিতায় প্রকাশিত নারীর কোন গুণটি আকমলের স্ত্রীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আকমলের স্ত্রী ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত নারীদের অবদানগুলোকে যথাযথভাবে ধারণ করেছে কি না তা মূল্যায়ন কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘নারী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের গান গেয়েছেন।

খ. আপনারই রচা ঐ কারাগার’ বলতে কবি এখানে পুরুষের দ্বারা রচিত কারাগারের কথা বলেছেন।
মানব সভ্যতা নির্মাণে পুরুষের অবদান যতটুকু, নারীর অবদান ঠিক তার সমান। কিন্তু ইতিহাসে নারীদের অবদান ততটা লেখা হয়নি। পুরুষশাসিত এই সমাজ সর্বদা নারীকে ছোট করে দেখে। একদিন পুরুষরা তাদের রচিত কারাগারে নিজেরাই পতিত হবে।

গ. ‘নারী’ কবিতায় নারীদের যে অবদান ও যোগ্যতার কথা প্রকাশ পেয়েছে, উদ্দীপকের আকমলের স্ত্রীর মধ্যেও এই গুণগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
নারী ও পুরুষ লিঙ্গভেদে ভিন্ন। এটা মানব জাতি সৃষ্টির জন্য আবশ্যক। কিন্তু নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল বলে তাদেরকে অবহেলা করা হয়। অথচ নারীরা বিশ্ব ও সমাজ উন্নয়নে পুরুষের চেয়ে কম অবদান রাখেনি। একমাত্র নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৃথিবীকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
উদ্দীপকে আকমলের স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে সাহস জোগানো একজন নারীরূপে দেখা যায়। স্বামীর বিপদে সে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় এবং তাকে ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়। তাকে আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করার সাহস জোগায়। সাম্যবাদী চেতনার কবি কাজী ‘নজরুল ইসলাম রচিত ‘নারী’ কবিতার আলোকে এখানে আকমলের স্ত্রীকেও একজন প্রেরণা ও শক্তিপ্রদায়নী নারীরূপে দেখা যায়। যারা পুরুষের জয়ী হওয়ার পেছনে প্রচ্ছন্নভাবে অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহস জোগায়।

ঘ. উদ্দীপকের আকমলের স্ত্রী ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত নারীদের অবদানগুলোকে যথার্থভাবে ধারণ করেছে।
নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসেই পৃথিবী লাভ করেছে তার বর্তমান রূপ। তাই নারীর ভূমিকা মাথায় রেখে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শুধুমাত্র পুরুষের একা সমাজের উন্নয়নে অংশ নিলেই হবে না, অংশ নিতে হবে নারীদেরও।
উদ্দীপকের আলোকে আকমলের স্ত্রীকে একজন সাহসী নারীরূপে দেখা যায়। আকমল যখন ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তখন তার স্ত্রী তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তার সাহস জোগায় এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেয়। তেমনি ‘নারী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারীদের সমাজে বহুমুখী ভূমিকার কথা বলেছেন। এমনকি প্রত্যেক পুরুষের সফলতার পেছনে যে একজন নারীর অবদান রয়েছে তিনি সে কথাও উল্লেখ করেছেন।
সাম্যবাদী চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘নারী’ কবিতায় নারীদের প্রেরণাদাত্রীরূপে দেখা যায়। পুরুষের জয়ী হওয়ার পেছনে নারীরা প্রচ্ছন্নভাবে শক্তি ও সাহস জোগায়। তাই নারীর অবদানকে কখনো তুচ্ছ ভাবা উচিত নয়। এভাবে ‘নারী’ কবিতা বিশ্লেষণের আলোকে উদ্দীপকে বর্ণিত আকমলের স্ত্রী নারীদের অবদানগুলো যথাযথভাবে ধারণ করেছে।

৫. রাজা কহিলেন, রাজ্যের যত নারীরা থাকিবে ঘরে, পুরুষ মানুষ খাবে আগেভাগে নারীরা খাইবে পরে। শুনে নারীরা কহিল হাসিয়া, একি কন মহারাজ আপনার তরে সুন্দর করে প্রস্তাব দিব আজ পুরুষ বানাবে বাড়ি, নারীরা চালাবে গাড়ি এমনি করিয়া দু’দলে মিলিয়া চলিব পৃথিবী গড়ি। আর তা যদি না হয়, আপনার বানানো গর্ভে আপনি পড়িবেন নিশ্চয়।
ক. কোনটিতে পুরুষ ভুগে মরবে?
খ. ‘সাম্যের গান’ বলতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কী বুঝিয়েছেন ।
গ. ‘নারী’ কবিতায় নারীদের পশ্চাৎপদ করে রাখার যে পরিণতি তা উদ্দীপকের মধ্যেও প্রকাশ পেয়েছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘নারী’ কবিতায় নজরুলের নারী চেতনার মূল ভাবটি উদ্দীপকের নারীদের প্রভাবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. পুরুষ কারাগারে ভুগে মরবে।

খ. সাম্যের গান বলতে কাজী নজরুল ইসলাম নারী-পুরুষের সমতার কথা বুঝিয়েছেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের কবি। তিনি নর-নারী উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি জগতে নর-নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। তার মতে, জগৎ সভ্যতার নির্মাণে পৃথিবীতে নারী পুরুষের সমান অবদান রয়েছে।

গ. ‘নারী’ কবিতায় নারীদের পশ্চাৎপদ করে রাখার যে পরিণতি তা উদ্দীপকের মধ্যেও প্রকাশ পেয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি নর-নারী উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তিনি নর-নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। তার মতে, পৃথিবীতে মানব সভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান হলেও ইতিহাসে নারীর অবদান ততটা স্বীকার করা হয়নি।
কবির মতে, নারীর সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া কোনো কালে পুরুষের তরবারি জয়ী হতে পারেনি। বিশ্বের যত কিছু মহান সৃষ্টি সবকিছুর পেছনেই নারীর অবদান রয়েছে। তবুও পুরুষশাসিত সমাজ নারীদের অবদানকে স্বীকার না করে তাদের পশ্চাৎপদ করে রেখেছে। আলোচ্য উদ্দীপকের কবিতাংশেও এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। আলোচ্য উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজা তার দেশের নারীদের ঘরে থাকতে ও পুরুষদের পরে খাওয়ার জন্য বলেছেন। এতে নারীর প্রতি তার বৈষম্যনীতিই ফুটে উঠেছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

ঘ. ‘নারী’ কবিতায় নজরুলের নারী-চেতনার মূল ভাবটি উদ্দীপকের নারীদের প্রস্তাবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের কবি, মানবতার কবি। তিনি নর- নারী উভয়কেই মানুষ হিসেবে মনে করছেন। কবির মতে, নারী- পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নাই। বিশ্বসভ্যতায়ও নারীর অবদান অনেক। অথচ তা কখনো স্বীকার করা হয় না। এটা নারীর প্রতি অযাচিত বিদ্বেষ ছাড়া কিছুই নয়।
আলোচ্য উদ্দীপকে দেখা যায়, নারীরা রাজার নিকট প্রস্তাব দিয়েছে, পুরুষেরা বাড়ি বানাবে, নারীরা গাড়ি চালাবে, অর্থাৎ নারী-পুরুষ পাশাপাশি কাজ করবে। তাহলেই অতীতের মতো ভবিষ্যতেও নারী জগৎ সভ্যতায় তাদের অবদান রাখতে পারবে। কারণ, নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই বিশ্বসভ্যতা এগিয়ে যেতে পারে।
কবির মতে, বিশ্বের সকল সৃষ্টি ও কল্যাণকর বস্তুর মধ্যেই নারীর অবদান রয়েছে। কিন্তু নারীর অবদান কখনো সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। সমাজে সর্বদাই তাদের পশ্চাদপদ করে রাখা হয়েছে। তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগও দেওয়া হয়নি। অতএব বলা যায় যে, ‘নারী’ কবিতায় নজরুলের নারী-চেতনার মূল ভাবটি উদ্দীপকের নারীদের প্রস্তাবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।

Leave a Comment