বাংলা নববর্ষ হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর শামসুজ্জামান খান এর প্রবন্ধ। বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধ থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
বাংলা নববর্ষ গল্পের সৃজনশীল
১. নদীর ধারের বটতলায় আজ অনেক লোকের ভিড়,
সারি সারি দোকান সেখায় পণ্যসামগ্রীর।
খেলনা, পুতুল বেলুন বাঁশি আরও কত কী!
মুড়ি মুড়কি খই-বাতাসা মিষ্টি জিলাপি।
কেনাবেচা চলছে ভারি চলছে কোলাহল নাগরদোলায় ভিড় করেছে ছেলেমেয়ের দল।
নদীর ধারের বটতলা আজ যেন খুশির হাট
ছোট-বড় কত মানুষ কত দোকানপাট।
ক. ছায়ানট কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. এখন আর আগের মতো বাকিতে বিকিকিনি হয় না কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের যে অনুষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি মাত্র -মন্তব্যটির যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাও।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ছায়ানট ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ. মানুষের হাতে নগদ টাকা-পয়সা আছে বলে এখন আর আগের মতো বাকিতে বিকিকিনি ব্যাপক আকারে হয় না।
বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ‘হালখাতা’। এ অনুষ্ঠানটি ব্যবসায়ীরা করতেন। একটা সময় ছিল যখন ফসল বিক্রির টাকা হাতে না এলে কৃষকসহ প্রায় কেউই নগদ টাকার মুখ খুব একটা দেখতে পেত না। তাই সারা বছর বাকিতে কেনাকাটা না করে উপায় ছিল না। নববর্ষের ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানে তারা দোকানিদের বাকি টাকা মিটিয়ে দিতেন। দোকানিরা মিষ্টিমুখ করাতেন খরিদ্দারদের। এখন আর ‘হালখাতা’ তেমন সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয় না। কারণ, মানুষের হাতে নগদ টাকা-পয়সা থাকায় বাকিতে বিকিকিনি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
গ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের বৈশাখী মেলার ইঙ্গিত করে, কেননা তাতে উক্ত মেলার কিছু বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণময় উৎসবের দিন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপিত হয়। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম বৈশাখী মেলা- যা সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, নদীর ধারের বটতলায় অনেক লোকের ভিড় জমেছে। সেখানে সারি সারি দোকানপাটে রয়েছে নানা পণ্য-সামগ্রী। খেলনা, পুতুল, বেলুন, বাঁশি প্রভৃতির দোকানসহ আরও রয়েছে মুড়িমুড়কি, খই-বাতাসা ও নানারকম মিষ্টির দোকান। বেচাকেনা ও কোলাহল সমানে চলছে। ছেলেমেয়েরা ভিড় করেছে নাগরদোলায়। সব মিলিয়ে বটতলায় যেন আজ খুশির হাট বসেছে। উদ্দীপকের এরূপ বর্ণনায় ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বৈশাখী মেলার স্বরূপ ফুটে উঠেছে। উক্ত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখের প্রথম দিনে বার্ষিক মেলা বসে। একসময় এসব মেলা অঞ্চলবিশেষের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হতো। মানুষ মেলা থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনত। আবার বাৎসরিক বিনোদনের জায়গাও ছিল এই মেলা। মেলায় থাকত পুতুল নাচ, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে নদীর ধারের বটতলার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বৈশাখী মেলাকেই ইঙ্গিত করে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি মাত্র, কেননা তাতে উক্ত প্রবন্ধে উল্লিখিত একটি অনুষ্ঠানের বর্ণনা ছাড়া অন্যান্য দিক প্রতিফলিত হয়নি।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সূচনার পর থেকে বাংলা নববর্ষের উৎসবে নানা মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। পাকিস্তান আমলে সরকারি পর্যায় থেকে বাধার সম্মুখীন হলেও বর্তমানে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষের উৎসব সাড়ম্বরে পালন করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, নদীর ধারের বটতলায় অনেক লোকের ভিড় জমেছে। সেখানে সারি সারি দোকানপাটে নানা রকম পণ্য- সামগ্রীর পসরা সাজানো হয়েছে। এসবের বেচাকেনা চলছে, আবার সাথে চলছে কোলাহল। ছেলেমেয়েরা নাগরদোলায় ভিড় জমিয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে নদীর ধারের বটতলা খুশির হাটে পরিণত হয়েছে। বস্তুত, উদ্দীপকের এরূপ বর্ণনায় বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে এ অনুষ্ঠানটি ছাড়াও পুণ্যাহ, হালখাতা, ঘোড়দৌড়, জব্বারের বলী খেলা, হাডুডু খেলা, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই প্রভৃতি সর্বজনীন ও আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের উল্লেখ রয়েছে। লেখক তাঁর এ প্রবন্ধে বাঙালি গৃহিণীদের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান আমানিসহ পাহাড়িদের বৈসাবী’ উৎসবের কথাও উল্লেখ করেছেন। এছাড়া উক্ত প্রবন্ধে পাকিস্তান আমলে নববর্ষ পালনে বাধা, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রভৃতি বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। অথচ উদ্দীপকে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই।
কাজেই, উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, “উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি মাত্র”- মন্তব্যটি যথার্থ ও যৌক্তিক।
২. সুসান জন্মের পর থেকে মা-বাবার সাথে বিদেশে থাকে। এবার বাংলাদেশে এসে একদিন সে দেখতে পায় নদীর ধারে। বিশাল বটগাছের নিচে নানা বয়সী অনেক লোকের ভিড়। সেখানে দোকানিরা মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি প্রভৃতির দোকান সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া রয়েছে ঘুড়ি, বাঁশি, হাতপাখা, খেলনা প্রভৃতির দোকান। একপাশে রয়েছে নাগরদোলায় চড়ার এবং বায়স্কোপ দেখার ব্যবস্থা। এসব দেখে সুসানের খুব ভালো লাগল।
ক. কত হিজরিতে বাংলা সন চালু হয়?
খ. ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান লুপ্ত হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ‘ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. “সুসানের দেখা অনুষ্ঠানটি বাংলা নববর্ষের একমাত্র অনুষ্ঠান নয়”- মন্তব্যটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু হয়।
খ. জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান লুপ্ত হয়।
জমিদারি প্রথা চালু থাকাকালে নবাব ও জমিদারগণ পয়লা বৈশাখে তাদের বাড়িতে প্রজাদের দাওয়াত করতেন। প্রজাদের মিষ্টিমুখ করানো হতো। পান-সুপারিরও আয়োজন থাকত। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। মুর্শিদাবাদের নবাবেরা ও বাংলার জমিদারেরা এ অনুষ্ঠান করতেন। জমিদারি উঠে যাওয়ায় এ অনুষ্ঠান এখন লুপ্ত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের বৈশাখী মেলার দিকটি ফুটে উঠেছে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এ উৎসবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানারকম অনুষ্ঠান। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, বিভিন্ন লোকমেলা প্রভৃতির আয়োজন করে সাধারণ মানুষ দিনটিকে আনন্দমুখর করে তোলে।
উদ্দীপকের সুসান জন্মের পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে বিদেশে থাকে। এবার বাংলাদেশে এসে একদিন সে গ্রামের পথে ঘুরতে বেরিয়ে দেখতে পায় নদীর ধারে বিশাল বটগাছের নিচে নানাবয়সী অনেক লোকের ভিড়। সেখানে দোকানিরা মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি প্রভৃতির দোকান সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া রয়েছে ঘুড়ি, বাঁশি, হাতপাখা, পুতুল প্রভৃতির দোকান। একপাশে রয়েছে নাগরদোলায় চড়ার ও বায়স্কোপ দেখার ব্যবস্থা। সুসানের দেখা এ বিষয়টির সঙ্গে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের বৈশাখী মেলার মিল রয়েছে। কেননা, উক্ত প্রবন্ধে বর্ণিত বৈশাখী মেলায়ও নানা ধরনের পণ্যের দোকান ও বিভিন্ন আয়োজনের বর্ণনা রয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের বৈশাখী মেলার দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ. সুসানের দেখা অনুষ্ঠানটি বাংলা নববর্ষের একমাত্র অনুষ্ঠান নয় – মন্তব্যটি ‘বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের আলোকে যথার্থ ও যৌক্তিক।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলা সনের প্রথম দিনটিকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারাদেশে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, জন্মের পর থেকে বিদেশে থাকা সুসাসন এবার বাংলাদেশে এসে গ্রামের পথে ঘুরতে বেরিয়ে দেখতে পায়, নদীর ধারে বিশাল বটগাছের নিচে নানা বয়সী অনেক লোকের ভিড়। সেখানে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের দোকান সাজিয়ে বসেছে এবং একপাশে নাগরদোলায় চড়ার ও বায়স্কোপ দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধ অনুসারে সুসানের দেখা বিষয়টি বৈশাখী মেলা। তবে উক্ত প্রবন্ধে বৈশাখী মেলা ছাড়াও নববর্ষের অন্যান্য অনুষ্ঠানের বর্ণনা পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে হালখাতা, ঘোড়দৌড়, চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত বলী খেলা, হাডুডু খেলা, মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াইসহ ছোট-বড় নানা অনুষ্ঠান। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুসানের দেখা অনুষ্ঠানটি বাংলা নববর্ষের একমাত্র অনুষ্ঠান নয়, কেননা বাংলা নববর্ষে অন্যান্য অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ো → আমাদের লোকশিল্প গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো → সুখী মানুষ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
৩. আজ মিতার দিনটা আনন্দেই কাটলো। প্রতিবারের মতো এবারেও দাওয়াত পেয়ে আত্মীয়-স্বজন অনেকেই তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সবার সাথে সকালে পান্তা ইলিশ, দুপুরে পিঠা-পুলি আর পায়েস খেয়ে দিন কেটেছে তার। মেলায় গিয়ে পুতুল, গহনাসহ শখের অনেক জিনিস কিনেছে সে। নাগরদোলায় চড়েছে আর পুতুল নাচ দেখেছে। শেষ বিকেলে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে হঠাৎ আসা ঝড়ের কবলে পড়লেও সে আজ খুব খুশি।
ক. বাংলা সন চালু করা হয় কত খ্রিষ্টাব্দে?
খ. ‘হালখাতা’ বলতে কী বোঝায়? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে মিতার আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসার সাথে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন দিকটার মিল রয়েছে। ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুরটিই যেন ফুটে উঠেছে।- বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সন চালু করা হয়।
খ. হালখাতা বলতে পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠানকে বোঝায়।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা তাদের বকেয়া টাকা আদায় করতে প্রতি বছরের প্রথম দিন হালখাতা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এদিন দোকানিরা বকেয়া টাকা আদায় করতে দেনাদারদের আমন্ত্রণ জানায়। আর দেনাদাররাও দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পুরোপুরি পরিশোধ করতে না পারলেও আংশিক পরিশোধ করে নতুন বছরের খাতা খোলে। হালখাতা উপলক্ষ্যে দোকানিরা রং-বেরঙের কাগজ দিয়ে দোকানকে সাজিয়ে রাখে এবং গ্রাহক ও খরিদ্দারকে মিষ্টিমুখ করায়। হালখাতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের সেতুবন্ধ তৈরি হয়।
গ. উদ্দীপকে মিতার আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসার সাথে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হওয়ার দিকটির মিল রয়েছে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালিদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। নববর্ষের দিনটি বাঙালি জাতির জন্য এক অনাবিল আনন্দের দিন। এদিন তারা দেশব্যাপী নানা উৎসব-আনন্দের আয়োজনে মেতে ওঠে। দিনটি উদ্যাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতাও যুক্ত হয়। বৈশাখী মেলা, হালখাতা এবং বৈসাবী অনুষ্ঠান তাদের মধ্যে অন্যতম।
নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতি নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে। উদ্দীপকের মিতার আত্মীয়-স্বজনও নববর্ষ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এতে দেখা যায় যে, মিতা সকালে পান্তা ইলিশ, দুপুরে পিঠা-পুলি আর পায়েস খেয়ে মেলায় যায়। সেখানে গিয়ে মিতা পুতুল, গহনাসহ শখের অনেক জিনিস কিনেছে, নাগর দোলায় চড়েছে, পুতুল নাচও দেখেছে। বিকেলে ঘোড়দৌড় দেখে খুব খুশি হয় সে। “নববর্ষ” প্রবন্ধেও লক্ষ করা যায় যে, নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে পয়লা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের আমন্ত্রণ করে, মিষ্টি মুখ করায়, পান-সুপারির আয়োজন করে, বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। মেলায় গিয়ে ছোট-বড় হরেক রকম খেলনা কিনে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে। এছাড়াও মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, যাত্রা, কবিগান, প্রভৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের মিতার আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসার সাথে ‘বাংলা নববর্ষ” প্রবন্ধের নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হওয়ার দিকটির মিল রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে মিতার আত্মীয়-স্বজনের সাথে আনন্দে-উৎসবে সারাদিন বেড়িয়ে সময় কাটানোর দৃশ্যটি যেন ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধেরই মূলসুর।
‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে নববর্ষের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ এ উৎসবকে প্রাণে ধারণ করেছে। এই উৎসব বাঙালির জীবনে এক গৌরবময় অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে।
উদ্দীপকে মিতা তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে সারাদিন বেড়ানো, পান্তা-ইলিশ ও পিঠা-পুলি খাওয়া, মেলায় গিয়ে পুতুল গহনাসহ শখের জিনিস কেনা, নাগরদোলায় চড়া, পুতুল নাচ দেখা, সর্বোপরি ঘোড়দৌড় দেখে আনন্দিত হওয়া যেন পুরোনো দিনকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করার আনন্দে মেতে ওঠার প্রতিচ্ছবি। ‘বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধে পয়লা বৈশাখকে এদেশের সব শ্রেণির মানুষের আনন্দ উৎসবের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদেশের মানুষ পুরোনো জরাজীর্ণ দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নববর্ষ উদযাপন করে। উৎসব-আনন্দ ও সকলের সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি কামনার মধ্য দিয়ে বাঙালির এ উৎসবের মূলসুর ধ্বনিত হয়।
উদ্দীপকে মিতা ও তার আত্মীয় স্বজনের দাওয়াতের আমন্ত্রণে সারাদিন আনন্দ-উৎসবে কাটানো যেন বাংলা নববর্ষের সেই সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তাই বলা যায় যে, “উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুরটিই ফুটে উঠেছে”- মন্তব্যটি যথার্থ।
৪. নিশি অবসান ঐ পুরাতন বর্ষ হও গত
বন্ধু হও শত্রু হও যেখানে যে রহ
ক্ষমা করিও আজিকার মতো
পুরাতন বর্ষের সাথে পুরাতন অপরাধ যতো।
ক. বাংলা নববর্ষের প্রধান অনুষ্ঠানের নাম কী?
খ. ‘বাংলা নববর্ষ’ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব – কেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবার্থ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্র ভাব ধারণ করে না।- বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলা নববর্ষের প্রধান অনুষ্ঠানের নাম ‘বৈশাখী মেলা’।
খ. ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বলেই ‘বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব।
স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ করে আমাদের মননে ও সংস্কৃতিতে চরমভাবে আঘাত হানে। তারা এ উৎসবকে নস্যাৎ করতে সব ধরনের অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু বাঙালি জাতি তা নীরবে সহ্য না করে এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কারণ নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। এ কারণেই বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব।
গ. উদ্দীপকের ভাবার্থ ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বর্ণিত পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নব উদ্যমে, নব চেতনায় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিকটি নির্দেশ করে।
বাঙালি জীবনে ‘বাংলা নববর্ষ’ এক ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন উৎসব।। অত্যন্ত আনন্দের সাথে এ দিনে সারা দেশব্যাপী ‘নববর্ষ’ উৎসব উদযাপিত হয়। বিগত বছরের সব ঝগড়া-বিবাদ, শত্রুতা, ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ‘নববর্ষ’ নিয়ে আসে এক নতুন সুর ও নতুন উন্মাদনা। পুরোনো অতীতকে বিসর্জন দিয়ে ‘বাংলা নববর্ষ’ জীবনকে এক নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কবি রাতের সমাপ্তির পর পুরাতন বছর শেষে নতুন বছরের আগমনের বার্তা দেন। নতুন বছরের আগমনে তিনি সব বন্ধু-শত্রুর নিকট প্রার্থনা করেন যেন পুরোনো বছরের সাথে পুরোনো সব অপরাধ ক্ষমা করে দেয়। অতীতের সব বেদনাদায়ক স্মৃতি মুছে, ব্যথা ভুলে আবার নতুন চেতনায় সামনের পথকে স্বাগত জানায়। ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধেও দেখা যায়, ‘পয়লা বৈশাখ’ বাঙালির অন্যতম উৎসব। ‘নববর্ষ’কে কেন্দ্র করেই উদ্যাপিত হয় পয়লা বৈশাখ। এ অনুষ্ঠানে সব মানুষের কল্যাণ কামনা করা হয়। সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা করে উদ্যাপিত হয় নববর্ষ অনুষ্ঠান। সুতরাং উদ্দীপকের ভাবার্থ “বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে ‘পয়লা বৈশাখ’ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের দিকটি নির্দেশ করে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্রভাব ধারণ করে না- উক্তিটি যথার্থ।
‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে বাঙালির নববর্ষ পালনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও প্রবন্ধটিতে নববর্ষের বিভিন্ন উৎসবের কথাও বর্ণিত হয়েছে। হালখাতা, পুণ্যাহ, বৈশাখী মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপিত হয়। তাছাড়া নববর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সেসব থেকে উত্তরণের কথাও প্রবন্ধটিতে বর্ণিত হয়েছে।
উদ্দীপকের ভাবে ফুটে উঠেছে যে, কবি পুরোনো বছরকে ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আহ্বান করেছেন। তিনি তার বন্ধুদের পুরোনো বছরের সাথে তার পুরোনো অপরাধগুলো ভুলে নতুন বছরকে স্মরণ করে ক্ষমা করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা পৃথিবীর এই ক্রমাগত রাগ ক্ষণস্থায়ী, তাই তিনি আজকের মতো ক্ষমা করার আকুতি ব্যক্ত করেছেন- যা ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের ‘পয়লা বৈশাখ’ উদযাপনের ভাবগত দিকটিই ধারণ করেছে। পক্ষান্তরে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধে এ ভাবটি ছাড়াও নববর্ষকে কেন্দ্র করে নানা বিষয়ের ভাব ধারণ করেছে। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, পুণ্যাহ, জব্বারের বলী খেলা, হাডুডু খেলা, ষাঁড়ের লড়াই প্রভৃতি সর্বজনীন ও আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের উল্লেখ রয়েছে। আরও রয়েছে বাঙালি গৃহিণীদের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, আমানি, পাহাড়িদের বৈসাবী উৎসবসহ বাংলা সন প্রচলনের ইতিহাস। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সরকারিভাবে নববর্ষ উদযাপনে বাধা প্রদানের ইতিহাসও প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন।
তাই আলোচনার সমাপ্তিতে বলতে পারি যে, “উদ্দীপকটি ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের সমগ্রভাব ধারণ করে না”- উক্তিটি যথার্থ।
৫. পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ খেলেই নববর্ষ পালন করা হলো? তা নয়। বাঙালির ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা। বৈশাখের প্রথম দিনে শহর ও গ্রামে চলে এই মেলা। এই মেলার সাথে জুড়ে আছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
ক. বাংলা সন কার সময়ে গণনা আরম্ভ হয়?
খ. হালখাতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের যে দিকটি খুঁজে পাওয়া যায়- তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ফুটে উঠেছে আলোচনা কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলা সন চালু করেন মুঘল সম্রাট আকবর।
খ. হালখাতা বলতে পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠানকে বোঝায়।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা তাদের বকেয়া টাকা আদায় করতে প্রতি বছরের প্রথম দিন হালখাতা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এ দিনে দোকানিরা বকেয়া টাকা আদায় করতে দেনাদারদের আমন্ত্রণ জানায়। আর দেনাদাররা দোকানিদের বাকির টাকা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পুরাপুরি পরিশোধ করতে না পারলেও আংশিক পরিশোধ করে নতুন বছরের খাতা খুলে। হালখাতা উপলক্ষে দোকানিরা রং- বেরঙের কাগজ দিয়ে দোকানকে সাজিয়ে রাখে এবং গ্রাহক ও খরিদ্দারকে মিষ্টিমুখ করায়। হালখাতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রেতা- বিক্রেতার মাঝে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।
গ. পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। আর বাঙালির ঐতিহ্য হলো বৈশাখী মেলা। এই মেলার সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এই দিকটি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন হলো পয়লা বৈশাখ। আর নববর্ষ হলো সকল দেশের, সকল জাতির আনন্দ উৎসবের দিন। অতীতের সকল গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে নতুন করে বরণ করে নেওয়ার জন্যই নববর্ষ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে। বাঙালি জাতি নববর্ষের প্রথম দিনে অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে মেলার আয়োজন করে আসছে আদিকাল থেকে। বৈশাখী মেলা বাঙালি জাতির মিলন মেলা। এ মেলা শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্রই অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলায় থাকে হরেক দ্রব্য সামগ্রী, ঘর-গৃহস্থালির জিনিসপত্র, মিঠাই- মণ্ডা। এ মেলায় গান-বাজনা, খেলাধুলা, নৌকা বাইচ, নাগরদোলা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। পরস্পরের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
উদ্দীপকে নববর্ষ পালনের গুরুত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে লক্ষ করা যায়, বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ঢাকার রমনার বটমূলে পান্তা ভাত ইলিশ সহযোগে খেতে পারাকে নববর্ষ পালনের উদ্দেশ্য বলে মনে করা হয়। আসলে পান্তা ভাতে ইলিশ মাছ খাওয়াই নববর্ষ পালনের উদ্দেশ্য নয়। নববর্ষ হলো বাঙালির জাতীয়তাবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পয়লা বৈশাখের মধ্যে লুক্কায়িত -আছে বাঙালির ঐতিহ্য ইতিহাস। তাই নিছক কিছু উৎসব করে পয়লা বৈশাখের দিন পালন করা সঠিক নয়। পয়লা বৈশাখ ব্যাপক অর্থে বাঙালি জাতির মিলন মেলা- এ মেলায় হাজারো মানুষের আগমন সেই বার্তাই বহন করে।
ঘ. উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ফুটে উঠেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
বাঙালির পরিচয় পয়লা বৈশাখে পাওয়া যায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদ্যাপন করে আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে। বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক হলো বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাঙালি জাতি নানাভাবে উদ্যাপন করে।
পয়লা বৈশাখে বৈশাখী মেলা বসে। নানা রকম সামগ্রী বেচাকেনা হয় সেখানে। নাচ, গান, নাগরদোলা, বিভিন্ন রকম গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টায় মশগুল থাকে মানুষ। ব্যবসায়ীরা হালখাতা অনুষ্ঠান করে।
উদ্দীপকে বাংলা নববর্ষের মূল উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে, যা ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল উপজীব্য বিষয়। নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস বহু পুরোনো। বহুকাল পূর্ব হতেই বাংলা নববর্ষ মহানন্দে উদযাপন করে আসছে বাঙালিরা। এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকার রমনা বটমূলে পান্তাভাতে ইলিশ মাছ খাওয়ার মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। শুধু পান্তাভাত আর ইলিশ মাছই হাজার বছরের বাঙালির ঐতিহ্য বহন করে না। বাঙালির খাদ্য, পোশাক ও জীবনযাত্রার বিচিত্র দিকেই পরিচয় পাওয়া যায় বৈশাখী মেলায়। এ বিষয়টি উদ্দীপকে বলার প্রয়াস লক্ষণীয়।
বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষ্ঠান হলো বৈশাখী মেলা। বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয় পয়লা বৈশাখে। এ মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়। তখন এটি মিলনমেলায় পরিণত এটি হয়। এখানে দোকানিরা নানা জাতের নানা সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজায়। ঘর-গৃহস্থালির সকল পণ্য এ মেলায় পাওয়া যায়। এছাড়া নাচ, গান, যাত্রা, পালাগান, নাগরদোলা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এ মেলায়। নানা রকম মিষ্টি দ্রব্য এ মেলার অন্যতম উপাদান। মোটকথা, বৈশাখী মেলা এক আনন্দ-উৎসবের মেলা। বাঙালি জীবনে তাই বৈশাখী মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ মেলা বাঙালি জাতীয়তাবাদের মেলা। বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়বাহী এ মেলা। তাই পরিশেষে আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে ‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধের মূল বিষয়বস্তু ফুটে উঠেছে।