(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

বাবুরের মহত্ত্ব হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর কালিদাস রায় এর কবিতা। বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল

১. “বাঁচিতে চাই না আর
জীবন আমার সঁপিলাম, পীর, পুত পদে আপনার।
ইব্রাহীমের গুপ্তঘাতক আমি ছাড়া কেউ নয়,
ঐ অসিখানা এ বুকে হানুন সত্যের হোক জয়।”
ক. বাবুর-এর আসল নাম কী?
খ. ‘সঁপিনু জীবন, করুন এখন দণ্ডবিধান মোর।’ উক্তিটি কার, কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ইব্রাহীমের গুপ্তঘাতকের সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় বর্ণিত রাজপুত বীরের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশে কতটুকু সক্ষম তা যুক্তি সহকারে বুঝিয়ে বল।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাবুরের আসল নাম জহিরুদ্দিন মুহম্মদ।

খ. প্রতিহিংসার কারণে খুনের মতো জঘন্য অপরাধ হতে নিজেকে বিরত রেখে বাবুরের মহত্ত্বের কাছে মাথা নত করে গুপ্তঘাতক এ কথা বলে।
সম্রাট বাবুরের বিজয় পরশ্রীকাতর রাজপুতরা মেনে নিতে পারেনি। তাই বাবুরকে হত্যা করার জন্য রণবীর চৌহান নামে রাজপুত জাতির এক যুবক গোপনে কৃপাণ হাতে দিল্লির পথে ঘুরে ফিরছে বাবুরকে হত্যা করার জন্য। দিল্লির রাস্তায় হঠাৎ পাগলা হাতির আক্রমণে সবাই যখন দিশেহারা তখন একটি লোক একটি মেথরের ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। সবাই তার সাহস ও মানবিকতা দেখে অবাক হয়ে যায়। আর সে লোকটি হলেন মহামতি বাবুর। বাবুরের এ মহত্ত্ব দেখে গুপ্তঘাতক বাবুরের কাছে নিজের শান্তি কামনা করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ইব্রাহীমের গুপ্তঘাতকের সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত রাজপুত বীরের অপরাধ স্বীকার করার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
মুঘল প্রমাট বাবুর পাঠান সম্রাট ইব্রাহীম লোদিকে পরাজিত করে রাজ্য দখল করলে রাজপুতগণ কিছুতেই বাবুরকে মেনে নিতে পারছিল না। রাজপুত বীর রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজপথে বের হয়। এমন সময় বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে এক মেথর শিশুকে উদ্ধার করেন।
বাবুরের এ মহানুভবতা রণবীর চৌহানকে মুগ্ধ করে। চৌহান নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে বাবুরের কাছে শান্তি প্রার্থনা করে। রাজপুত চৌহানের অপরাধবোধ স্বীকারের দিকটি উদ্দীপকের ইব্রাহীমের গুপ্তঘাতকের মাঝে ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে ইব্রাহীমের গুপ্তঘাতক নিজের অপরাধবোধ স্বীকার করে শান্তি কামনা করেছে। অপরাধকে ঘৃণা করা উচিত, অপরাধীকে নয়। বরং অপরাধীকে শান্তি না দিয়ে ভালোবাসলে, সাহায্য করলে সেও মন্দ কাজ থেকে বিরত হতে পারে। ক্ষমার সৌন্দর্যে আপ্লুত হয়ে সে হয়ে ওঠতে পারে আদর্শ একজন মানুষ। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার রণবীর চৌহান সম্রাট বাবুরের মহানুভবতা দেখে তার প্রতি অন্যায় আচরণের জন্য অনুশোচনা করে অপরাধের শান্তি কামনা করে। উদ্দীপকের ঘাতকও নিজের অপরাধ স্বীকার করে শান্তি প্রার্থনা করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত ইব্রাহীমের গুপ্তঘাতকের সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত রাজপুত বীরের অপরাধ স্বীকার করার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সময় ভাব নয়; আংশিক ভাব প্রকাশে সক্ষম বলে আমি মনে করি।
সম্রাট বাবুর প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে সমগ্র উত্তর ভারত করতলগত করলে রাজপুত চৌহান রাজ্যের অপমান ভেবে সম্রাটকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু রাজপথে এক মেঘর শিশুর প্রাণ রক্ষায় বাবুরের মহানুভবতা দেখে চৌহান বিগলিত হয়ে গেল। চৌহান বাবুরের কাছে আত্মসমর্পণ করে মৃত্যুদণ্ড কামনা করে। সম্রাট বাবুর যুবকের অনুশোচনায় মুগ্ধ হয়ে রাজপথ থেকে তাকে উঠিয়ে এনে বললেন- একটা জীবন নেওয়া যতটা সহজ, সে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া ততটাই দুরূহ। কারণ সৃষ্টিকর্তা এ অসীম ক্ষমতা কাউকে দেননি।
উদ্দীপকের গুপ্তঘাতক ইব্রাহীমকে হত্যা করে। হত্যার পর পলায়নপর অবস্থায় আশ্রয় নেয় ইব্রাহীমের বাবা ইউসুফের ঘরে। ইউসুফ ঘাতকের পরিচয় পেয়েও ক্ষমা করে দেন। অন্যদিকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় ঘাতক বাবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাবুরের মহানুভবতা দেখে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে। বাবুরও তাকে ক্ষমা করেন। ক্ষমা প্রদর্শনের দিক থেকে মিল থাকলেও হত্যা সংঘটিত করার দিক থেকে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
ক্ষমা একটি মহৎগুণ। এ গুণের পরিচয় পাওয়া যায় উদ্দীপকের ইব্রাহীমের বাবা ইউসুফের মধ্যে। পুত্র হন্তারককে কাছে পেয়েও ক্ষমা করে দেন। অন্যদিকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বাবুরও তাকে হত্যা করতে আসা ঘাতককে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু উদ্দীপকের ঘাতক ইব্রাহীমকে হত্যা করে যা ‘বাবুর মহত্ত্ব’ কবিতার ঘাতকের বিপরীত অবস্থান, এজন্য উদ্দীপকটি বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সাভাব নয়; আংশিক ভাব ধারণ করেছে।

২. যুদ্ধ করে রাজ্য জয় বড় কথা নয়
প্রজা যদি রাজ্য মাঝে তুষ্ট নাহি রয়।
প্রজাহিতে ব্যস্ত সদা থাকে যে রাজন
চিনতে পারে খুব সহজে প্রজাগণের মন।
জনগণের জন্য কাঁদে যে রাজার পরান
সে যে অতি মহামতি রাজা মহীয়ান।
ক. সংগ্রাম সিংহ কোন রাজ্যের রাজা ছিলেন?
খ. ‘রণবীর চৌহান’ দিল্লীর রাজপথে ঘুরছিল কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার যে দিকটিকে ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটিই ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার একমাত্র দিক নয়”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সংগ্রাম সিংহ মেবার রাজ্যের রাজা ছিলেন।

খ. ‘রণবীর চৌহান’ বাবুরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দিল্লীর রাজপথে ঘুরছিল।
ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবুর দিল্লী অধিকার করার পর মেবারের রাজা সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করেন। ফলে মেবার রাজ্য তাঁর করায়ত্ত হয়। মেবার রাজ্যের রাজধানী চিতোরের এক স্বদেশপ্রেমিক যুবক ‘রণবীর চৌহান’ নিজ রাজ্যের এ পরাজয় মেনে নিতে পারছিল না। সে বাবুরকে হত্যা করে এর প্রতিশোধ নিতে চায়। তাই সে জামার নিচে কৃপাণ লুকিয়ে বাবুরকে হত্যা করার জন্য দিল্লীর রাজপথে ঘুরছিল।

গ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব‘ কবিতার সম্রাট বাবুরের রাজ্য বিজয়ের পর প্রজাদের হৃদয়জয়ে মনোযোগী হওয়ার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
রাজার কাজ কেবল রাজ্য-শাসন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রজাসাধারণের মনের রাজা হতে না পারলে রাজার কোনো সার্থকতা থাকে না। তাই রাজাকে রাজ্যের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে সর্বাগ্রে প্রজাদের মনোরঞ্জনের প্রতি মনোনিবেশ করতে হয়।
উদ্দীপকের কবিতাংশে আদর্শ রাজার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রজাসাধারণ অসন্তুষ্ট থাকলে যুদ্ধ করে রাজ্যজয় অর্থহীন হয়ে পড়ে। প্রজাহিতৈষী রাজা সহজেই প্রজাদের মনজয় করতে পারেন। জনগণের জন্য যে রাজার প্রাণ কাঁদে তিনিই মহান রাজা । উদ্দীপকে বর্ণিত রাজার এ বৈশিষ্ট্য ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সম্রাট বাবুরের মধ্যে লক্ষ করা যায়। বাবুর ছিলেন মানবিক বোধসম্পন্ন একজন মহান সম্রাট। তিনি যুদ্ধ করে রাজ্য জয়ের মাধ্যমে ভারতে বিশাল মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, “মাটির দখলই খাঁটি জয় নয়।” তাই তিনি রাজ্য বিজয়ের পর প্রথমেই প্রজাদের মনজয়ে মনোনিবেশ করেন। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার বাবুরের প্রজাসাধারণের মনজয়ের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটি ছাড়াও ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় আরও কতিপয় দিক রয়েছে যা খুবই উল্লেখযোগ্য।
রাজ্যজয়ে যেমন মানুষের বীরত্ব প্রয়োজন, তেমনি মানুষের মনজয়ের জন্য প্রয়োজন মহানুভবতা। মহানুভব রাজাই অতি সহজে প্রজাসাধারণকে আপন করে নিতে পারেন। মুঘল সম্রাট বাবুরের চরিত্রে বীরত্ব ও মহানুভবতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।
উদ্দীপকে রাজ্যজয়ের চেয়ে প্রজাসাধারণের মনজয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রজাদের সন্তুষ্ট করা না গেলে রাজ্যজয়ের তাৎপর্য থাকে না। প্রজাহিতৈষী রাজা সহজেই প্রজাদের মন জয় করতে পারেন। যে রাজা প্রজাদের প্রতি সহানুভূতিশীল তিনিই মহান রাজা। উদ্দীপকে মহান রাজার যে বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে তা ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সম্রাট বাবুরের মধ্যে লক্ষ করা যায়। বাবুর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর প্রজাসাধারণের মনজয়ে মনোনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু উক্ত কবিতায় এ দিকটি ছাড়াও বাবুরের বীরত্ব, বিচক্ষণতা, ‘রণবীর চৌহান’ কর্তৃক বাবুরকে হত্যার চেষ্টা, মত্ত হাতির কবল থেকে মেঘরের শিশুকে রক্ষা প্রভৃতি দিকের উল্লেখ রয়েছে। এসব ঘটনায় বাবুরের যে মানবিক আদর্শ, সাম্যভাব, উদারপ্রাণতা ও ক্ষমশীলতার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে- উদ্দীপকে তার প্রতিফলন নেই।
উদ্দীপকটি কেবল উক্ত কবিতার বাবুরের রাজ্যজয়ের পর প্রজারঞ্জনের দিকটিকেই প্রতিফলিত করে। কাজেই, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটিই ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার একমাত্র দিক নয়-মন্তব্যটি যথার্থ ও যৌক্তিক।

আরো পড়ো এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োতৈলচিত্রের ভূত গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. শহরের এ গলিটির সবাই রাধিকাচরণ মুচিকে চেনে। সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায় ছটফট করছে। নিম্নস্তরের মানুষ বলে কেউ তাকে দেখতে আসে না, তার প্রতি কেউ সহানুভূতি দেখায় না। কিন্তু এলাকার কমিশনার খবরটি জেনে তাড়াতাড়ি ছুটে আসেন এবং তিনি নিজে রাধিকাচরণকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ক. কালিদাস রায় কোন উপাধিতে ভূষিত হন?
খ. সম্রাট বাবুর ছদ্মবেশে পথে বের হয়েছিলেন কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহৎ কবিতার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি – মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কালিদাস রায় ‘কবিশেখর’ উপাধিতে ভূষিত হন।

খ. প্রজাসাধারণের কোথায় কী দুঃখ-ক্লেশ তা খুঁজে বের করার জন্য সম্রাট বাবুর ছদ্মবেশে পথে বের হয়েছিলেন।
দিল্লির সম্রাট বাবুর বুঝতে পারলেন যে রাজ্য জয় করলেই হয় না, প্রজাদের মনও জয় করতে হয়। তাই তিনি প্রজাদের হৃদয় জয় করার জন্য সুশাসন পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি ছদ্মবেশে পথে বের হন প্রজাদের কোথায় কী দুঃখ- কষ্ট আছে তা জানার জন্য।

গ. উদ্দীপকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সম্রাট বাবুরের মহানুভবতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
মানুষকে ভালোবাসা ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত। পরের জন্য যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন তিনিই প্রকৃত মানুষ। মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা মানুষের সেবা করেন তারাই মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকেন।
উদ্দীপকের কমিশনার একজন মহৎ মানুষ। শহরের গলিটির সকলের চেনা রাধিকাচরণ মুচি যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু-শয্যায় ছটফট করছিল, তখন কেউ তাকে দেখতে আসেনি এবং কোনো সহানুভূতি দেখায়নি। কিন্তু এ খবর জানামাত্র এলাকার কমিশনার ছুটে আসেন এবং রাধিকাচরণ মুচিকে নিজে হাসপাতালে নিয়ে যান। অনুরূপ মহানুভবতার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায়। সম্রাট বাবুর তার নিজের জীবন বাজি রেখে মেথরের সন্তানকে মত্ত হাতির কবল থেকে উদ্ধার করে পরম মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এতে বোঝা যায়, উদ্দীপকে “বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত সম্রাট বাবুরের মানুষের প্রতি মহানুভবতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি নয়, কেননা এতে উক্ত কবিতার একটি বিশেষ ঘটনা ছাড়া অন্যসব বিষয় প্রতিফলিত হয়নি।
ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবুর বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত ছিলেন। বীরত্ব, মহত্ত্ব ও ক্ষমাশীলতার অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় সম্রাট বাবুরের বিভিন্ন গুণের পরিচয় ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, শহরের এ গলিটির সবাই রাধিকাচরণ মুচিকে চেনে। কিন্তু সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে যখন মৃত্যুশয্যায় ছটফট করছিল তখন কেউ তাকে দেখতে যায় না এবং তার প্রতি কেউ সহানুভূতি দেখায় না। তবে এলাকার কমিশনার এ খবর জানামাত্র ছুটে আসেন এবং নিজে রাধিকাচরণকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে তার মহত্ত্বের পরিচয় ফুটে উঠেছে। “বাবুরের মহত্ত্ব” কবিতায়ও সম্রাট বাবুর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মত্ত হাতির কবল থেকে মেঘরের সন্তানকে রক্ষা করে অনুরূপ মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তবে উদ্দীপকে উক্ত কবিতায় বর্ণিত বাবুরের যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে দিল্লির মসনদ দখল করা, প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, রাজপুত-বীর রণবীর চৌহানকে ক্ষমা করে উদারতা প্রদর্শন ইত্যাদি বিষয়ের কোনো প্রতিফলন নেই।
তাই উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, “উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি নয়”- মন্তব্যটি যথার্থ।

৪. নির্বাচনে পরাজিত তরু মিয়া তার বিজয়ী প্রতিপক্ষ সগীর আলীকে জব্দ করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। একদিন স্থানীয় বাজারের দিকে যাওয়ার সময় তিনি দেখলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী সগীর আলী একজন অসুস্থ বৃদ্ধকে কাঁধে করে বাঁশের সাঁকো পার করে দিচ্ছেন। প্রতিবন্দীর এরূপ মহানুভবতার তরু মিয়া তার ভুল বুঝতে পারেন এবং সগীর আলীর কাছে ক্ষমা চান। সগীর আলীও তরু মিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং এলাকার উন্নয়নে তার সহযোগিতা চান।
ক. বাবুর খানুয়ার প্রান্তরে কাকে পরাজিত করেন?
খ. ‘কৃতঘ্ন দৌলত’— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের তরু মিয়ার সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে কি?” উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাবুর খানুয়ার প্রান্তরে সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করেন।

খ. ‘কৃতঘ্ন দৌলত’ বলতে বিশ্বাসঘাতক দৌলত খাঁ লোদিকে বোঝানো হয়েছে।
বাবুরের ভারত আক্রমণকালে দৌলত খাঁ লোদি পাঞ্জাবের শাসক ছিলেন। তিনি দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বাবুরকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান করেন। পরে তিনি বাবুরের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তার এরূপ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাকে ‘কৃতঘ্ন দৌলত’ বলা হয়েছে।

গ উদ্দীপকের তরুমিয়ার সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র হলো রণবীর চৌহান।
মানব-চরিত্রের অন্যতম গুণ মহানুভবতা। ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুরের মধ্যে এ গুণটি ছিল। তিনি নিজের মায়া ত্যাগ করে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ফলে তাঁর চরম শত্রুও মিত্রে পরিণত হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তরু মিয়া তার বিজয়ী প্রতিপক্ষ সগীর আলীকে জব্দ করার সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন সগীর আলী নিজের কাঁধে করে একজন বৃদ্ধকে বাঁশের সাঁকো পাড় করে দিচ্ছেন, তখন তার ভুল ভাঙে। তিনি সগীর আলীর মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে তার কাছে ক্ষমা চান। সগীর আলীও তাকে ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং এলাকার উন্নয়নে তার সহযোগিতা চান। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায়ও অনুরূপ ঘটনা লক্ষ করা যায়। বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে এক মেঘরের সন্তানকে রক্ষা করেন। বাবুরের এরূপ মহানুভবতা দেখে তাঁর চরম শত্রু রণবীর চৌহান বাবুরের পায়ে পড়ে ক্ষমা চান। মহৎপ্রাণ বাবুর তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং নিজের দেহরক্ষী নিয়োগ করেন। রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যা করতে এসে হয়ে গেলেন তার পরম মিত্র। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকের তরু মিয়া ও ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার রণবীর চৌধান সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে, কেননা এতে কবিতায় বর্ণিত বাবুরের মহৎ আদর্শের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার মূল বিষয় সম্রাট বাবুরের মহৎ আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধ। তিনি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে রাজপথে পড়ে থাকা একটি মেঘর শিশুকে উদ্ধার করেন। তাঁর এরূপ মহানুভবতা দেখে চরম শত্রু রণবীর চৌহান বাবুরের পায়ে পড়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। মহৎপ্রাণ বাবুর, তাকে ক্ষমা করেন এবং তাকে নিজের দেহরক্ষী নিয়োগ করেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, তরু মিয়া নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তার বিজয়ী প্রতিপক্ষ সগীর আলীকে জব্দ করার সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু তিনি একদিন দেখলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী সগীর আলী একজন বৃদ্ধকে কাঁধে নিয়ে বাঁশের সাঁকো পাড় করে দিচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীর এমন মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে তরু মিয়া সগীর আলীর কাছে ক্ষমা চান এবং সগীর আলীও তাকে ক্ষমা করে এলাকার উন্নয়নে তার সহযোগিতা কামনা করেন। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায়ও সম্রাট বাবুরের মহানুভবতা দেখে তার চরম শত্রু রণবীর চৌহান বাবুরের পায়ে পড়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। বাবুরও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং নিজের দেহরক্ষী নিয়োগ করেন। বাবুর মত্ত হাতির কবল থেকে একটি মেথর শিশুকে উদ্ধার করে এবং তাঁর ঘাতকরূপী শত্রুকে ক্ষমা করে যে মহৎ মানবিক আদর্শ দেখিয়েছেন, তা-ই ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার মূল বিষয়। উক্ত কবিতার প্রাসঙ্গিক দিকগুলো মূল বিষয়ের পরিপুরক রূপেই উপস্থাপিত হয়েছে।
সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার মূলভাব ধারণ করেছে।

৫. সেদিন সন্ধ্যায় এক বখাটে যুবক এক তরুণীকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাই দেখে অনেকে ভিড় জমায়। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না তরুণীটিকে বাঁচাতে। এমন সময় বখাটে যুবক তাকেও কোপাতে থাকে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে কামরুল মারা যায়। কামরুল নামে এক যুবক তরুণীটিকে বাঁচাতে চেষ্টা করে।
ক. বাবুর এর আসল নাম কী?
খ. সঁপিনু জীবন, করুন এখন দণ্ডবিধান মোর- উক্তিটির তাৎপর্য কী?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার কোন দিকটির সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করে- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাবুর এর আসল নাম জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ।

খ. চিতোরের তরুণ যোদ্ধা রণবীর চৌহান এ উক্তিটি করেছেন।
চিতোরের তরুণ যোদ্ধা রণবীর চৌহান সম্রাট বাবুরকে হত্যার জন্য পথে পথে ঘুরছিলেন। একদিন একটি মত্ত হাতি একটি শিশুকে পায়ে পিষে মারার অবস্থা হয়েছিল। সবাই ভয় পেলেও ছদ্মবেশী বাবুর শিশুকে রক্ষা করেন। চৌহান এই দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে যান। তিনি তার তরবারি বাবুরের পদতলে রেখে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে দণ্ডবিধানের কথা বলেন।

গ. উদ্দীপকটিতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে অন্যকে বাঁচাবার বিষয়টির সঙ্গে কবিতার মিল লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকটিতে দেখা যায়, এক বখাটে যুবক এক তরুণীকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। কেউ এগিয়ে না এলেও কামরুল নামের যুবক নিজের জীবন বিপন্ন করে মেয়েটিকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বখাটের চাপাতির আঘাতে কামরুল মৃত্যুবরণ করে।
‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায়ও দেখা যায়, এক মেথরের সন্তান মত্ত হাতির পায়ে পড়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হলে কেউ এগিয়ে না এলেও ছদ্মবেশী বাবুর ছেলেটিকে উদ্ধার করেন। এতে বাবুরের জীবন বিপন্ন হতে পারত। কিন্তু তিনি সেটা জেনেও এ কাজটি করেছেন। এই দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করে- কথাটি সত্য।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, এক বখাটে যুবক এক তরুণীকে চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। এ অবস্থায় অনেক লোকের ভিড় জমে যায়। তবে কেউ মেয়েটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। কামরুল নামে এক যুবক মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই মারা যায়।
‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় দেখা যায়, বাবুর মেথরের ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে এগিয়ে এসেছেন নিজের জীবন বিপন্ন করে। সেখানে অনেক লোকের ভিড় ছিল। কিন্তু কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। বাবুর এগিয়ে এসেছেন মত্ত হাতির কবল থেকে ছেলেটিকে বাঁচাতে এইটুকু মিল খুঁজে পাওয়া যায় উদ্দীপক ও কবিতায়।
কবিতার বিষয়বস্তু আরো ব্যাপক। বাবুরের প্রজাদের কল্যাণের প্রতি নজর দেওয়া, চৌহানের বাবুরকে হত্যা চেষ্টা, বাবুরের রাজ্য জয়— এসবের কোনো বর্ণনা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করেছে— সম্পূর্ণ ভাব নয়।

Leave a Comment