মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গল্পের প্রশ্ন উত্তর : (বাংলা)পঞ্চম
(বাংলা) পঞ্চম: মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গল্পের প্রশ্ন উত্তর এখানে প্রদান করা হল। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর গল্প। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গল্পটির অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গল্পের প্রশ্ন উত্তর : (বাংলা)পঞ্চম



এক নজরে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গদ্যের মূলকথাটি জেনে নিই—
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুরের অত্যন্ত আপনজন। চিরকাল তিনি নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে ১৮৮০ সালে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পিতামাতাকে হারিয়ে তিনি তাঁর চাচার আশ্রয়ে বড় হন। ভারতের দেওবন্দ মাদরাসা থেকে পড়া শেষ করে তিনি টাঙ্গাইলে এক প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। তখন থেকেই তাঁর প্রতিবাদী সত্তার প্রকাশ ঘটে। তিনি বাঙালি কৃষকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। ভাসানচরের এক সমাবেশে তাই কৃষকরা তাঁকে ‘ভাসানচরের মওলানা’ নাম দেন। পরে তাঁর নাম দেওয়া হয় ভাসানী।
তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। যুক্তফ্রন্ট এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়। ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০ সালে তিনি পল্টন ময়দানে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি এই শোষণ- বঞ্চনার কথাই বারবার বলেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে চলে যান। তখন তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শত্রুবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। কোনো পদমর্যাদার মোহে তিনি আকৃষ্ট হননি। অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই মহান নেতা মৃত্যুবরণ করেন।
সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই-
নিপীড়িত, বাঁধ, স্নেহদৃষ্টি, দেশাত্মবোধ, উদ্বুদ্ধ, চিত্তরঞ্জন, অনুপ্রাণিত, কারারুদ্ধ, শোষণ, রাষ্ট্রভাষা, যুক্তফ্রন্ট, আন্তর্জাতিক, সাংস্কৃতিক, সম্মেলন, বঞ্চনা, স্বৈরাচারী, হত্যাযজ্ঞ, উপদেষ্টামণ্ডলী, আত্মসমর্পণ, প্রাতিষ্ঠানিক, অনাড়ম্বর, প্রাঙ্গণ।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
নির্যাতিত, নিপীড়িত, মজলুম, বিষ-নজর, কারারুদ্ধ, প্রতিবাদী, সমাবেশ, কাগমারি, সম্মেলন, প্রবাসী, আত্মসমর্পণ, মোহ, অনাড়ম্বর।
উত্তর :
নির্যাতিত – অন্যায়ের শিকার, নিপীড়িত।
নিপীড়িত – নির্যাতিত, নিপীড়ন করা হয়েছে এমন।
মজলুম – অত্যাচারিত, নির্যাতিত।
বিষ-নজর – হিংসাপূর্ণ দৃষ্টি, কুনজর।
কারারুদ্ধ – জেলে বন্দি।
প্রতিবাদী – যেকোনো উক্তির বিরুদ্ধে যারা আপত্তি জানায়।
সমাবেশ – একত্রে অবস্থান।
কাগমারি – টাঙ্গাইলের একটি স্থানের নাম।
সম্মেলন – সমাবেশ।
প্রবাসী – ভিন্ন দেশে বাস করে যে।
আত্মসমর্পণ – সম্পূর্ণরূপে অন্যের বশ্যতা স্বীকার।
মোহ – অজ্ঞান, মায়া, মূর্ছা।
অনাড়ম্বর – সাদাসিধা।
২৷ ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
প্রবাসী, আত্মসমর্পণ, মোহ, সরকার, প্রতিবাদী
ক. যুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ – হয়ে উঠেছিল।
খ. আজ প্রায় বিশ বছর ধরে আনিস সাহেব -।.
গ. – ছাড়া দেশ চালানো মুশকিল।
ঘ. সৎলোকের ধনসম্পত্তির উপরে – থাকে না।
ঙ. পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর – করে।
উত্তর :
ক. যুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল।
খ. আজ প্রায় বিশ বছর ধরে আনিস সাহেব প্রবাসী।
গ. সরকার ছাড়া দেশ চালানো মুশকিল।
ঘ. সৎলোকের ধনসম্পত্তির উপরে মোহ থাকে না।
ঙ. পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে।
৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. মজলুম জননেতা কে ছিলেন? কেন তাকে মজলুম জননেতা বলা হয়?
উত্তর : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মজলুম জননেতা ছিলেন। তিনি বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুরের অতি আপনজন। সারাজীবন তিনি নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মজলুম মানুষের সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের কথা বলেছেন । এজন্য তাঁকে মজলুম জননেতা বলা হয়।
প্রশ্ন খ. মওলানা ভাসানী কোথায় পড়াশোনা করেন?
উত্তর : মওলানা ভাসানী ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় পড়াশোনা করেন.।
প্রশ্ন গ. কেন তাকে কাগমারি ছাড়তে হয়েছিল?
উত্তর : মাদরাসার পড়াশোনা শেষ করে মওলানা ভাসানী কাগমারির এক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় তিনি কৃষকের ওপর জমিদারদের অত্যাচার-নির্যাতন দেখতে পান। এর বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন। এ কারণে তাঁকে জমিদারদের ক্ষুদ্ধ নজরে পড়ে কাগমারি ছাড়তে হয়।
প্রশ্ন ঘ. কীভাবে তাঁর নাম মওলানা ভাসানী হলো?
উত্তর : মওলানা ভাসানী ছিলেন নিপীড়িত-শোষিত মানুষের নেতা। ১৯২৪ সালে তিনি আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসানচর এলাকায় এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেন। এ সভায় তিনি বাঙালি কৃষকের ওপর জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এই সমাবেশেই কৃষকরা তাকে ‘ভাসানচরের মওলানা’ নাম দেয়। পরে তাঁকে ভাসানী নাম দেওয়া হয়। তখন থেকেই তাঁর নাম হলো মওলানা ভাসানী।
প্রশ্ন ঙ. পল্টন ময়দানের ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন তার বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: ১৯৭০ সালে মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, তার বিষয়বস্তু ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকারের শোষণ।
প্রশ্ন চ. শিক্ষার ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানী কী অবদান রেখেছেন?
উত্তর : মওলানা ভাসানী নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে এ দেশের মানুষের শিক্ষা প্রসারে তাঁর অবদান অনেক। শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি সন্তোষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মহীপুরে হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ, ঢাকায় আবুজর গিফারি কলেজ এবং টাঙ্গাইলে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রশ্ন ছ. মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে তুমি কী শিখতে পেরেছ?
উত্তর : মওলানা ভাসানী একজন মজলুম জননেতা। তিনি আমাদের গর্ব। তাঁর জীবন থেকে আমি যা শিখতে পেরেছি, তা নিচে তুলে ধরা হলো-
মওলানা ভাসানী আজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। তাই তাঁর জীবন থেকে আমি শিখেছি কীভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়। তিনি এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মজুরের পক্ষে কথা বলেছেন। এটি আমাকে এই শ্রেণির মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শিখিয়েছে।
আমি শিখেছি কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। এত বড় নেতা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সহজ, সরল, সাধারণ জীবনযাপন থেকে আমি বিলাসিতা, আরাম ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। শিক্ষার প্রতি তাঁর অনুরাগ আমাকে শিক্ষাবিস্তারে কাজ করায় অনুপ্রাণিত করেছে। সর্বোপরি তার জীবন থেকে আমি প্রগাঢ় দেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার শিক্ষা পাই।
৪. নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করি।
মজলুম, কারারুদ্ধ, প্রতিবাদ, অনাড়ম্বর, মোহ, আত্মসমর্পণ, নিপীড়িত
উত্তর :
মজলুম – মওলানা ভাসানী মজলুম জননেতা ছিলেন।
কারারুদ্ধ – পাকিস্তানি সরকার অনেকবার বক্তাবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারারুদ্ধ করে রেখেছিল।
প্রতিবাদ – সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত।
অনাড়ম্বর – মওলানা ভাষানী অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন।
মোহ – প্রকৃত দেশপ্রেমিক খ্যাতির মোহে আকৃষ্ট হন না।
আত্মসমর্পণ – ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
নিপীড়িত – কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন।
৫. জেনে নেই।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ- ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের একজন মহান নেতা। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১৮৭০ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার তেলিরবাগ গ্রামে। তিনি যেমন ছিলেন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, তেমনি ছিলেন একজন কবি ও সম্পাদক। এ দেশের হিন্দুও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলার সাধারণ মানুষের অতি প্রিয় নেতা। ১৯২৫ সালে তাঁর মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখে শ্রদ্ধা জানান।
৬. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. মওলানা ভাসানী চিরকাল কেমন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন?
√ ১. নির্যাতিত
২. অবহেলিত
৩. সুখী
৪. বড়লোক
খ. মওলানা ভাসানী কোন পীর সাহেবের স্নেহদৃষ্টি লাভ করেন?
√ ১. ইরাকের
২. বাংলাদেশের
৩. ভারতের
৪. পাকিস্তানের
গ. তাঁকে কাগমারি কেন ছাড়তে হয়?
১. গ্রামের মানুষের কারণে
√ ২. জমিদারদের কারণে
৩. ব্যবসায়ীদের কারণে
৪. রাজনৈতিক কারণে
ঘ. মওলানা ভাসানী তাঁর এক ভাষণে কী বলেছেন-
√১. আমি খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলি
২. আমি আরামপ্রিয় মানুষের কথা বলি
৩. আমি সুখী মানুষের কথা বলি
৪. আমি ভালো মানুষের কথা বলি
ঙ. মওলানা ভাসানী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে গঠন করেন—
√ ১. যুক্তফ্রন্ট
২. যুক্তদল
৩. যুবদল
৪. যুবফ্রন্ট
চ. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কী ছিলেন?
√ ১. সদস্য
২. প্রেসিডেন্ট
৩. সহকারী
৪. কেউ নন
ছ. তিনি কোন নেতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন?
১. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
√ ২. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ
৩. শেরে বাংলা ফজলুল হক
৪. শেখ মুজিবুর রহমান
৭. বাক্যর সাথে মিল করে ঠিক শব্দের উপর টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. মজলুম মানুষের সুখে দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের কথা বলেছেন- √ মওলানা ভাসানী / শেরে বাংলা / শহীদ সোহরাওয়ার্দী
খ. মওলানা ভাসানী কারারুদ্ধ হওয়ার পর মুক্তি পান- তেরো / পনেরো / √ সতেরো মাস পরে
গ. তাঁকে ভাসানী নাম দেয়- √ ভাসানচরের / কাগমারীর / ঢাকার সমাবেশের পর
ঘ. মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইলের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সৈন্যরা- √ পুড়িয়ে দেয় / পাহারা দেয় / তাদের দখলে নিয়ে নেয়