সংকল্প হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর কবিতা। সংকল্প কবিতার অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
সংকল্প
কাজী নজরুল ইসলাম
থাকব না কো বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে,
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ছুটছে তারা কেমন করে,
কিসের নেশায় কেমন করে
মরছে যে বীর লাখে লাখে,
কিসের আশায় করছে তারা
বরণ মরণ-যন্ত্রণাকে।।
হাউই চড়ে চায় যেতে কে
চন্দ্রলোকের অচিনপুরে;
শুনব আমি, ইঙ্গিত কোন্
মঙ্গল হতে আসছে উড়ে৷৷
পাতাল ফেড়ে নামব নিচে
উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে;
বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি
আপন হাতের মুঠোয় পুরে।৷
(সংক্ষেপিত)
লেখক পরিচিতি :-
নাম : কাজী নজরুল ইসলাম
জন্ম পরিচয় :-
জন্ম তারিখ : ২৫ মে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ (১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ সন)
জন্মস্থান : পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রাম
পিতার নাম : কাজী ফকির আহমদ
মাতার নাম : জাহেদা খাতুন
শিক্ষাজীবন :-
গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষালাভ। তারপর রানীগঞ্জের সিয়ারসোল স্কুল এবং ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন/ পেশা :-
সেনাবাহিনীতে যোগদান, পত্রিকা সম্পাদনা, গ্রামোফোন কোম্পানিতে সংগীত সম্পাদনা ও সাহিত্য সাধনা।
সাহিত্যকর্ম :-
কাব্যগ্রন্থ : অগ্নি-বীণা, দোলনচাপা, বিষের বাঁশী, ঝিঙে ফুল, প্রলয় শিখা, চক্রবাক ইত্যাদি
উপন্যাস : বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিক
গল্প : ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা
নাটক : ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে
পুরস্কার/সম্মাননা :-
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ (১৯৪৫), ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৬০), রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডি-লিট’ (১৯৬৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডি-লিট’ (১৯৭৪), বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক’ (১৯৭৬) এবং জাতীয় কবির মর্যাদা।
জীবনাবসান : ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ (১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ সন)
এক নজরে এ কবিতার মূলকথাটি জেনে নিই :
কবিতার কিশোরটি বন্ধ ঘরে থাকতে চায় না। সে জগৎটাকে দেখতে চায়। কেমন করে যুগের পরিবর্তন ঘটেছে, কেমন করে মানুষ দেশ দেশান্তরে ছুটে চলছে, কিসের নেশায় লাখে লাখে বীর মরণ-যন্ত্রণা হাসিমুখে বরণ করছে। কেমন করে মানুষ চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যেতে চায়— কিশোর এসব রহস্য জানতে চায়। সে আর ঘরে বসে থাকবে না। সে নিজের সীমার বাঁধন কাটিয়ে বিশ্বজগৎ ঘুরে ঘুরে দেখবে, দশ দিকে ছুটে বেড়াবে, ভূগর্ভে প্রবেশ করবে, আবার মহাদেশ পাড়ি দেবে। কিশোর সমগ্র পৃথিবী হাতের মুঠোয় নিয়ে দেখতে চায়।
বানান সতর্কতা :
সংকল্প, বদ্ধ, জগৎ, যুগান্তর, ঘূর্ণিপাক, দেশান্তর, বীর, মরণ, যন্ত্রণা, হাউই, চন্দ্রলোক, ইঙ্গিত, মঙ্গল, ফুঁড়ে, বিশ্ব ।
১. সংকল্প কবিতার মূলভাব :
অসীম বিশ্বকে জানার এক অদম্য কৌতূহল মানুষের। কিশোরেরও তাই । সে জানতে চায় বিশ্বের সকল কিছুকে। আবিষ্কার করতে চায় অসীম আকাশের সকল অজানা রহস্যকে। সে বুঝতে চায় কেন মানুষ ছুটছে অসীমে, অতলে, অন্তরীক্ষে। বীর কেন জীবনকে অনায়াসে বিপন্ন করে, কেন বরণ করে মৃত্যুকে। সে জানতে চায় দুঃসাহসী কেন উড়ছে। তাই কিশোর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে— সে বদ্ধ ঘরে বসে থাকবে না। পৃথিবীটাকে সেও ঘুরে ঘুরে দেখবে।
২. শব্দগুলো থেকে অর্থ ও বাক্য নিম্নরূপ :
সংকল্প, বদ্ধ, যুগান্তর, দেশান্তর, বরণ, মরণ-যন্ত্রণা, দুঃসাহসী, চন্দ্রলোক, অচিনপুর, ফেরে
• এই দেশ এই মানুষ গদ্যের প্রশ্নোত্তর
৩. একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ ও বাক্য নিম্নরূপ :
৪. প্রশ্নগুলোর উত্তর নিম্নরূপ :
প্রশ্ন ক. কবি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না কেন?
উত্তর : কবি জগৎটাকে দেখতে চান। এ জগতের মানুষ কীভাবে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরছে, দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছে। কবি এসব দেখতে চান। তাছাড়া মঙ্গলগ্রহ, চন্দ্রলোকের অচিনপুর, আকাশ, পাতাল এসবের রহস্য তিনি জানতে চান। এ কারণে তিনি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না।
প্রশ্ন খ. যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানুষ ঘুরছে বলতে কী বোঝ? লেখ।
উত্তর : যুগ বলতে অনেক বছরের সমষ্টি বোঝায়। আর যুগান্তর বলতে বোঝায় এক যুগ থেকে অন্য যুগ। অর্থাৎ মানুষ কীভাবে বছরের পর বছর বিভিন্ন দেশ ও স্থানে ঘুরছে সেটি বোঝাতেই যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন গ. চন্দ্রলোকের অচিনপুরে কারা যেতে চায়?
উত্তর : দুঃসাহসী বিজ্ঞানী ও পর্যটকেরা চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যেতে চায়। তারা সেখানকার অবস্থা ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চায়, জ্ঞান অর্জন করতে চায়।
প্রশ্ন ঘ. কিসের আশায় বীর মরণকে বরণ করছে?
উত্তর : বীর বলতে বোঝায় যারা কোনোকিছুতে ভয় পায় না, দুঃসাহসী। তারা অজানাকে জানার জন্য এবং অজেয়কে জয় করার জন্য দুর্গম পথে এগিয়ে যায়। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করে মানুষের কল্যাণের জন্য আবিষ্কার করে নানা বিষয়। মূলকথা, অজানা রহসা জানার আশায় বীর মরণকে বরণ করছে।
প্রশ্ন ঙ. কবি হাতের মুঠোয় পুরে কী এবং কেন দেখতে চান?
উত্তর : এই বিশ্বজগতে রয়েছে নানা রকম অজানা রহস্য। এখানে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরছে, দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটছে নতুন নতুন বিষয় জানার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করছে, চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহ থেকে উড়ে আসা কোনো সংকেত- এ সবই কবি জানতে চান। এসব অজানা রহস্য জানার কৌতূহল। মেটানোর জন্যই কবি হাতের মুঠোয় পুরে বিশ্বজগৎ দেখতে চান।
৫. ক্রিয়াপদের সাধু ও চলিত রূপ নিম্নরূপ :
৬. ক্রিয়ার কাল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. আমি কাজটি করি।
আমি কাজটি করেছিলাম।
আমি কাজটি করব।
উপরের বাক্যগুলোতে ব্যবহৃত করি, করেছিলাম ও করব এগুলো ‘করা’ ক্রিয়াপদটির বিভিন্ন রূপ। যে সময়ে ক্রিয়া বা কাজটি সম্পন্ন হয় সেই সময়টিকেই ক্রিয়ার কাল বোঝানো হয়েছে । যেমন বর্তমান কাল, অতীত কাল, ভবিষ্যৎ কাল।
খ. নিচের বাক্যের ক্রিয়াবাচক শব্দগুলোর নিচে দাগ দিই।
আমি বড় হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
কিশোর বর্ষাকালে তার গ্রামে গাছ লাগাবে।
আমি আমার দক্ষতা অন্যের উপকারে ব্যবহার করি।
তরুণ চিকিৎসক হবে। মানুষের চিকিৎসা করবে।
গ. নিচের ভবিষ্যৎ কালবাচক ক্রিয়াপদগুলোকে বর্তমান ও অতীত কালবাচক ক্রিয়াপদে রূপান্তর করি।
থাকব, দেখব, শুনব, খাব, বেড়াব, ঘুরব, পড়ব, খেলব, চড়ব, নামব, ধরব, হাসব।
৭. শব্দগুলোর বানান নিম্নরূপ :
বরণ, মরণ, যন্ত্রণা (র-এর পরে ‘ণ’ বসে), বদ্ধ, যুগান্তর, দেশান্তর, বিশ্বজগৎ, ইঙ্গিত।
৮. কবির সংকল্পগুলো নিম্নরূপ :
উত্তর : ‘সংকল্প’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিচের সংকল্পগুলো করেছেন-
ক. কবি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না।
খ. তিনি জগৎটাকে দেখতে চান।
গ. যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানুষ কীভাবে ঘুরছে তা তিনি জানতে চান।
ঘ. মানুষ দেশ-দেশান্তরে কীভাবে ছুটছে তা তিনি জানতে চান।
ঙ. কিসের আশায় লক্ষ লক্ষ বীর মরছে ও মরণ-যন্ত্রণা ভোগ করছে তা তিনি জানতে চান।
চ. চন্দ্রলোকের অচিনপুরে কে যেতে চায় তা তিনি জানতে চান।
ছ. তিনি মঙ্গলগ্রহের ইঙ্গিত শুনতে চান।
জ. কবি পাতাল ফেড়ে নামতে চান।
ঝ. তিনি আকাশ ফুঁড়ে উঠতে চান।
ঞ. কবি বিশ্বজগৎকে আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখবেন।
৯. আমার সংকল্পগুলো নিম্নরূপ :
উত্তর : আমার সংকল্পগুলো হলো-
• আমি ভালোভাবে লেখাপড়া করব।
• মা-বাবার কথা শুনব।
• বড়দের সম্মান করব।
• অজানাকে জানব।
• নতুন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করব।
• মানুষের সেবা করব।
• দেশকে ভালোবাসব।
• একজন ভালো মানুষ হব।