স্বাধীনতা তুমি

(শিল্প ও সংস্কৃতি) ৬ষ্ঠ: স্বাধীনতা তুমি – সমাধান

Posted on

স্বাধীনতা তুমি হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বই এর শিখন অভিজ্ঞতা। স্বাধীনতা তুমি অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

স্বাধীনতা তুমি

কাজ-১: মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তালিকা করে বন্ধুখাতায় জমা করে রাখো।

কাজের ধরন: দলীয় কাজ।

নমুনা সমাধান:
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু তথ্য-

  • ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান যাদের শিল্প, সংস্কৃতি ও ভাষাগত ভিন্নতা শুরু থেকেই লক্ষণীয় ছিল। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়।
  • পশ্চিম পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় যার নাম দেয় অপারেশন সার্চলাইট।
  • ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। •মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।
  • ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়।
  • মুক্তিযুদ্ধ নয়মাস ধরে চলে এবং প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করা হয়।
  • বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়।
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ছাত্র সমাজ, কৃষক, নারীসহ সকল পেশার মানুষ।
  • ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী মিলে ‘যৌথ কমান্ড’ গঠন করে।
  • ভুটান ও ভারত ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।
  • ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর এদেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
  • ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ৯৩ হাজার সৈন্যসহ পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

কাজ-২. (ক) মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা দিবসের সম্পর্কে নিজেদের চিন্তামতো ছবি এঁকে তাতে মনের মতো রং করবে।

কাজের ধরন: দলীয় কাজ।

নমুনা সমাধান

CamScanner 02 21 2024 16.43 1

কাজ-২. (খ) বিভিন্ন রঙের কাগজ, পত্রিকা, ছবি কেটে আঠা দিয়ে কাগজে লাগিয়ে পছন্দমতো কোলাজ তৈরি করো।

কাজের ধরন: দলীয় কাজ।

নমুনা সমাধান:
বাংলাদেশের প্রথম পতাকা সবুজ রঙের মাঝে সোনালি মানচিত্র খচিত লাল বৃত্তের কোলাজ তৈরি করতে প্রয়োজন হবে- সবুজ, লাল, সোনালি/ হলুদ রঙের কাগজ।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: রঙিন কাগজ (সবুজ, হলুদ, লাল), কাঁচি, আঠা, পেন্সিল, কম্পাস, স্কেল।
ধাপ-১: মানচিত্র খচিত পতাকার কোলাজ তৈরির আগে হলুদ কাগজে পুরো মানচিত্রের আকৃতি এঁকে নেই।
ধাপ-২: মানচিত্রে কম্পাস দিয়ে লাল বৃত্ত আকৃতি অনুযায়ী কেটে নেই।
ধাপ-৩: সবুজ রঙের কাগজ মাপ মেনে (১০:৬) কেটে তাতে মানচিত্র ও লাল বৃত্তটি বসিয়ে দেখি।
ধাপ-৪: সবকিছু মাপমতো হলে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেই।

IMG 20240221 164301

চিত্র: বাংলাদেশের প্রথম পতাকার কোলাজ চিত্র

কাজ-৩: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গান, নাচ, ছড়া/কবিতা বা গল্প লিখে প্রকাশ করো।

কাজের ধরন: একক ও দলগত কাজ।

নমুনা সমাধান:
ক. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত গল্প:

দশটি বুলেটে গাঁথা বীরত্ব

একাত্তরের কোন এক বিকালে আমি সহ গ্রামের আরও কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে হেমায়েতপুরকে শত্রুমুক্ত করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন হেমায়েতপুর পাক আর্মির ক্যাম্পে আক্রমণ করলাম। গোলাগুলির এক পর্যায়ে আমাদের বুলেট শেষ হয়ে এলো। পিছপা হচ্ছি এমন সময় গ্রেনেড হাতে ক্যাম্পের মধ্যখানে আমাদের সাহসী সহযোগী শওকত গেলো। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ক্যাম্পে প্রচন্ড আওয়াজে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হলো। ঠিক পরমুহূর্তেই শত্রুপক্ষের কয়েকটা বুলেট এসে শওকতের বুক ঝাঁঝরা করে দিল। আমরা কোনোমতে গিয়ে তাকে ক্যাম্পের বাইরে নিয়ে আসি।

গুলি লাগা সত্ত্বেও শওকতের মুখে হাসি। মারা যাওয়ার আগে সে আমাদের বলল, বলেছিলাম না, শত্রুপক্ষের কয়েকটা বুলেট কমাবো? এই দেখ, আমার এই চওড়া বুকে ওদের ১০টা বুলেট রয়েছে। আমি ওদের ১০ টা বুলেট কমাতে পেরেছি। আমার বুকটা আরেকটু চওড়া হলে ভালো হতো রে। তখন ১০ টার জায়গায় ১৫টা বুলেট কমাতে পারতাম ওদের। এ কথা বলেই সে মারা গেল। সেদিনের পর থেকে প্রায়ই শওকতের কথাগুলো আমাদের কানে বাজে। এরপর অনেক অপারেশনে গিয়েছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখে পড়েছি কিন্তু সামান্যতম পিছপা হইনি। শওকত আমাদের মাঝে যে সাহসের বীজ বপন করে দিয়েছিল সেটাই শেষ পর্যন্ত আমাদের লড়তে উৎসাহ যুগিয়েছে।

খ. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত গান: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গানের মাধ্যমে প্রকাশের জন্য গোবিন্দ হালদারের লেখা নিম্নোক্ত গানটি দলগতভাবে পরিবেশন করতে পারি। যেমন:

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল
জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।।
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল,
হয়েছে কাল, হয়েছে কাল।।

কথা: গোবিন্দ হালদার
সুর: সমর দাস
তাল: দাদরা

গ. মুক্তিম্বের ইতিহাস সম্পর্কিত কবিতা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কবিতায় প্রকাশের জন্য কবি শামসুর রাহমানের লেখা কবিতা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি পরিবেশন করতে পারি। যেমন:

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
শামসুর রাহমান

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা;
তোমাকে পাওয়ার জন্য
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিথির সিঁদুর গেল হরদাসীর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে বলে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতা-মাতার লাশের উপর।
………………………………………………………
………………………………………………………
………………………………………………………
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

কাজ-৪: প্রত্যেক দল মাটি, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের কাঠামো গড়ে তুলবে। স্বাধীনতা দিবসের সাথে সম্পর্কিত অন্য যেকোনো কিছু গড়ে উপস্থাপন করতে পারো।

কাজের ধরন: দলীয় কাজ।

নমুনা সমাধান: মাটি, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের কাঠামো-
উপকরণ: কাঠের টুকরো, ককশিট, মাটি, বেত, রং, আঠা, কাটার। প্রত্যেক দল মাটি, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের কাঠামো গড়ে তুলতে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে পারি।

CamScanner 02 21 2024 16.43 2

চিত্র: স্মৃতিসৌধ তৈরির ধাপ

ধাপ-১: প্রথমে জাতীয় স্মৃতিসৌধের কাঠামো সম্পর্কে ধারণা নিব। চিত্র, ভিডিও বা সম্ভব হলে সরাসরি পরিদর্শনের চেষ্টা করব।
ধাপ-২: দলের প্রতিটি সদস্য নিজেদের মধ্যে কাজ/দায়িত্ব ভাগ করে নিব।

ধাপ-৩: মাটির দেয়াল তৈরি করতে প্রথমে তিনটি কাঠের টুকরা বা ডালকে একসাথে করে ত্রিভুজাকৃতির মডেল/ছাঁচ তৈরি করব। সেই মডেল অনুযায়ী মাটির দ্বারা দেয়াল তৈরি করব। মাটির বদলে ফ্রেম অনুযায়ী অথবা মাটি দিয়ে ভরাট করব। শক্ত কাগজ/ককশিট ব্যবহার করা যেতে পারে। এইভাবে মোট ৭টি ছোট থেকে বড় আকৃতির মাটির দেয়াল তৈরি করব। বেতগুলোকে ৩টি সমান করে টুকরো করবো এবং পরবর্তীতে আরো ৩টি করে মোট ২১টি টুকরো করবো। প্রত্যেকটির বিজোড়ের অনুপাত ১:২:৩:৪:৫:৬:৭ আকারে হবে। বেতের মাঝে ককশিট আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিব।

ধাপ-৪: কাঠামোটিকে ধূসর/সাদা রং করি।
ধাপ-৫: সারিবদ্ধভাবে বড় থেকে ছোট আকারে সাজাই। ত্রিভুজ আকৃতিগুলো অবশ্যই চিত্রে দেখানো কাঠামোগুলোর ন্যায় হবে এবং কোনাগুলো সূক্ষ্ম এবং ধারগুলো যেন খানিকটা বক্র হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবো।

আরো পড়ো → শীত-প্রকৃতির রূপ
আরো পড়ো → পলাশের রঙে রঙিন ভাষা

কাজ-৫: ‘স্বাধীনতা তুমি’ অধ্যায়ে যা যা করেছো তা লেখো এবং অনুভূতি বর্ণনা করো।

কাজের ধরন: একক কাজ।
নমুনা সমাধান:
ক. এই অধ্যায়ে আমি যা যা করেছি:

  • ১১টি দলে বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা/ মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত তথ্য- উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।
  • আরো তথ্য জানার জন্য আমরা পরিবার বা এলাকায় যারা বয়স্ক আছেন উনাদের থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি।
  • মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, পত্রিকা ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা/ত্য কেটে তা আমার বন্ধুখাতায় আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছি।
  • প্রত্যেকটি দল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস জানার পর নিজেদের মত করে যুদ্ধের মিলিটারিদের, হত্যাকাণ্ডের, মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি এঁকেছি।
  • আমরা রঙিন কাগজ, পত্রিকা, ছবি কেটে আঠা দিয়ে কাগজে লাগিয়ে পছন্দমতো কোলাজচিত্র তৈরি করেছি।
  • মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত গান/ নাচ/ ছড়া/ কবিতা/গল্প লিখেছি।
  • মাটি, কাঠ, রং ইত্যাদি ব্যবহার করে ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধের’ প্রতীকী কাঠামো তৈরি করেছি।

খ. আমার অনুভূতি: জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে শ্রেণিশিক্ষক আমাদের ধারণা দিয়েছেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধের যে ৭টি দেয়াল আছে, প্রত্যেকটি দেয়াল ‘৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়েছে তা বিস্তারিত জেনেছি। সর্বোপরি, সবগুলো কাজ শেষ করে আমি স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। বন্ধুখাতায় যে সব তথ্য লিখে রেখেছি তা পরবর্তীতে আরো জানতে সাহায্য করবে। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ও লাখো মানুষের ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা বার বার স্মরণ করায় আমাদের সোনালি ও বীরত্বগাঁথা ইতিহাস।

Gravatar Image
StudyOurs: Your Gateway to Collaborative Learning and Growth.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *