(ইসলাম শিক্ষা) ৬ষ্ঠ: আখলাক – সমাধান

আখলাক হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা বই এর ৪র্থ অধ্যায়। আখলাক অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

আখলাক

১. কাজ-১৩: তুমি গতকাল সারাদিন কী কী ভালো কাজ করেছ?
কাজের ধরন: একক।
কাজের নির্দেশনা:
এ কাজটি করার জন্য কিছুক্ষণ গভীরভাবে চিন্তা করি। গতকাল সারাদিন কী কী কাজ করেছি তা মনে করার চেষ্টা করি। এবার এখান থেকে ভালো কাজগুলো কী ছিল তা বের করি এবং খাতায় লিখে শ্রেণিশিক্ষককে দেখাই।

নমুনা সমাধান: তালিকাটি এ রকম হতে পারে, যা তোমার সাথে নাও মিলতে পারে।

গতকাল সারাদিনের ভালো কাজ
১. ফজরের আজানের পর ঘুম থেকে উঠে ওযু করে সালাত আদায় করেছি।
২. মাকে সকালের নাস্তা তৈরির কাজে সাহায্য করেছি।
৩. স্কুল ব্যাগ, পানির বোতল, টিফিন বক্স নিজেই গুছিয়ে স্কুলে গিয়েছি।
৪. স্কুলে যাওয়ার পথে আব্বুকে বলে একজন অসহায় বয়স্ক লোককে কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করেছি।
৫. পথে যেতে যেতে অনেককে সালাম দিয়েছি।
৬. শ্রেণিতে মনোযোগী হয়ে শিক্ষকের কথা শুনেছি।

৭. শ্রেণির বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে টিফিন খেয়েছি।
৮. শ্রেণিতে কয়েকজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী রয়েছে তাদেরকে পড়াশোনা এবং অন্য কাজে সাহায্য করেছি।
৯. স্কুল থেকে বাসায় ফিরে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছি।
১০. বাসায় ছোট বোনকে নিয়ে খেলাধুলা করেছি।
১১. বাসায় দেওয়া শিক্ষকের কাজগুলো আম্মুর সহায়তায় শেষ করেছি।
১২. ওস্তাদজির কাছে কুরআন পড়েছি।
১৩. এশার নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে ব্রাশ করে ঘুমিয়ে পড়েছি।

২. কাজ-১৪: গতকাল তুমি এমন কোনো কাজ করেছো, যেটি ভালো কোনো কাজ হয়নি?
কাজের ধরন:
একক।

কাজের নির্দেশনা:
গতকালের কাজগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করো। মনে করে দেখো এমন কোনো কাজ কি করেছো, যাতে অন্য কেউ কষ্ট পেয়েছে বা কারও ক্ষতি হয়েছে? আব্বু-আম্মু শুনলে বকা দিতে পারেন এমন কোনো কাজও হতে পারে। চিন্তা করে সুন্দর করে খাতায় লিখে ফেলো, শিক্ষককে দেখাও এবং এ সম্পর্কে শিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলো।

নমুনা সমাধান: ভালো কাজ নয়, এখানে এমন একটি কাজের উদাহরণ দেওয়া হলো-
আমি ইশমাম জানান। আমার ছোট বোন ইবনাত জামান। আমি আমার বোনকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু প্রায়ই আমার কাজে ও অনেক কষ্ট পায় এবং কান্না করে। ও কান্না করলে আমি মজা পাই। আমি মনে করি এটা দুষ্টামি। যেমন গতকাল স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আসরের নামাযের পর ওকে নিয়ে খেলছিলাম। আম্মু এসে আমাদের দুজনকে দুটি কিটক্যাট চকলেট খেতে দিলেন।

এটা আমার খুব পছন্দের। আমি আমারটা খেয়ে ওরটাও নিতে চাইলাম। ও দিতে চাচ্ছিল না। কান্না করছিল। তারপরও আমি জোর করে ওর কাছ থেকে চকলেটটি কেড়ে নিই। ও খুব মন খারাপ করে। এক সময় আমার সাথে না পেরে বলে, ভাইয়া তুমি এটা খাও। আর আম্মুকে গিয়ে বলে ভাইয়াকে দিয়ে দিয়েছি। এটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগে। আম্মুও আমার এ কাজে কষ্ট পেয়েছেন।

৩. জোড়ায় কাজ: উত্তম চরিত্র গঠনে আমরা আর কী কী করতে পারি?
১………..
২………..
৩………..
৪………..

কাজের ধরন: দলীয়।

কাজের নির্দেশনা:
এ কাজটি করার জন্য আখলাকে হামিদাহ বা উত্তম চরিত্র পাঠটি সুন্দর করে পড়ো। পাশের বন্ধুর সাথে আলোচনা করো। বইয়ে দেওয়া বিষয়গুলো ছাড়াও উত্তম চরিত্র গঠনে আরও কী কী করা যায় তা ভাবো। এবার দুজনের মতের ভিত্তিতে ছকে কাজগুলো লিখে ফেলো।

নমুনা সমাধান: এখানে কিছু উদাহরণ দিয়ে ছকটি পূরণ করা হলো-

উত্তম চরিত্র গঠনে আমরা কী কী করতে পারি?
১. আব্বু-আম্মুর কথা শোনা ও তাদের সেবা করা।
২. নিয়মিত আপ্তাহর ইবাদতগুলো আদায় করা
৩. গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা।
৪. পশু-পাখির যত্ন নেওয়া প্রয়োজনে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
৫. কেউ ভুল করলে তাকে বুঝিয়ে বলা এবং ক্ষমা করে দেওয়া।

৪. দলগত কাজ: সত্য কথা বলার সুফল
কাজের ধরন:
দলীয়

কাজের নির্দেশনা:
কাজটি করার জন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও।
দলে পাঁচ জন করে শিক্ষার্থী থাকবে। ছেলে-মেয়ের সংমিশ্রণ থাকতে পারে। দলগুলো হতে পারে আম, কাঁঠাল এবং লিচু নামে। প্রতিটি দল আলাদা আলাদাভাবে ‘সত্যবাদিতা’ পাঠটি পড়ো এবং ‘সত্য কথা বলার সুফল’ নিয়ে আলোচনা করো।

নমুনা সমাধান: আলোচনার ধরনটি নিম্নরূপ হতে পারে—
আম দল: সত্য কথা বলা আখলাকে হামিদাহ বা উত্তম চরিত্রের একটি অন্যতম গুণ। বলা হয়ে থাকে এটি মানবজীবনের অন্যতম সেরা গুণ। সত্য কথা বললে পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ সব জায়গায় সম্মান পাওয়া যায়। সত্যবাদীকে সবাই ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। সত্য কথা মানুষকে সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে মুক্ত রাখে। এ কারণেই বলা হয় সত্য মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ডেকে আনে ধ্বংস। রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা অবশ্যই সত্য কথা বলবে। কারণ সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জন্নাতের পথ দেখায়। (মুসলিম) তাই দুনিয়ায় শান্তি ও পরকালে মুক্তির জন্য আমরা সবসময় সত্য কথা বলব।

কাঁঠাল দল: মানুষের ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির জন্য সত্য কথা বলা অপরিহার্য। এটি একটি মহৎ গুণ। সত্যবাদী সবসময় ন্যায়নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। তার মধ্যে মানবতাবোধ কাজ করে। তাই সে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। সত্য কথা বললে সবার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা যায়। মহানবি (সা.) বলেন, ‘সত্য হলো প্রশান্তি আর মিথ্যা হলো সংশয়। (তিরমিযি) সত্যবাদিতার কারণেই আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (সা.) মক্কার কুরাইশদের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। উপাধি পেয়েছিলেন ‘আল আমিন’ বা বিশ্বাসী। তাই সত্য কথা বলা এবং সৎ পথে চলা একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য।

লিচু দল: একজন মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য হলো সত্য কথা বলা। মুমিন যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন সত্য কথা বলবে। কারণ আল্লাহ এবং রাসুল (সা.) সত্যবাদীকে ভালোবাসেন। সত্যবাদীরা সমাজেও সম্মানজনক স্থান লাভ করেন। অন্যদিকে মিথ্যা বললে প্রতি পদে পদে অপদস্ত হতে হয়। একটি মিথ্যা অন্য হাজারটি অপরাধের জন্ম দেয়। তাই মিথ্যা হলো সকল পাপের মূল। এ কারণে সত্য কথা বললে সমাজ থেকে অন্যায় দূরীভূত হয় “এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানবি (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সত্য বলো, যদিও তা তিন্তু। (বায়হাকি) তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ পালন এবং তাঁদের প্রিয়পাত্র হতে আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্য বলার চেষ্টা করব এবং মিথ্যা পরিত্যাগ করে অনুষমুক্ত সমাজ গড়ে তুলব।

৫. একক কাজ: তোমার মা-বাবার সঙ্গে তুমি প্রতিদিন কী কী ভালো কাজ করো এবং আরও কী কী করতে চাও তার তালিকা তৈরি করো।

CamScanner 07 05 2023 14.52

কাজের ধরন: একক।

কাজের নির্দেশনা:
তোমার বাবা-মার সঙ্গে তুমি প্রতিদিন কী কী ভালো কাজ করো এবং আরও কী কী করতে চাও পাঠ্যবইয়ে দেওয়া এ সম্পর্কিত ছকটি পূরণের জন্য মাতাপিতার প্রতি সদাচার অংশটুকু ভালো করে পড়ো। এবার নিজের সাথে মিলিয়ে নাও পাঠে অন্তর্ভুক্ত কাজগুলো তুমি করো কি না। যা যা করো এবং আরও কী কাজ করতে ইচ্ছা হয় সে সব লিখে ছকটি নিজের মতো করে পূরণ করে ফেলো।

নমুনা সমাধান: এখানে কিছু কাজ দিয়ে ছকটি পূরণ করা হলো, যা তোমার সাথে মিলতে পারে, আবার নাও মিলতে পারে।

CamScanner 07 05 2023 14.36 1

৬. দলগত কাজ: আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা কী কা করতে পারি? একটি তালিকা তৈরি করো।
কাজের ধরন:
দলীয়।

কাজের নির্দেশনা:
এ কাজটি করার জন্য শিক্ষার্থীরা দোয়েল, টিয়া, মাছরাঙ্গা ও কোকিল নামে চারটি দলে ভাগ হয়ে যাও। প্রতিটি দল পাঠ্যবইয়ের আত্মীয়- স্বজনদের প্রতি সদাচার’ অংশটুকু ভালো করে পড়ো। এবার প্রতিটি দলের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করো তালিকায় কোন কোন বিষয় লিখবে। সবার পরামর্শের ভিত্তিতে তোমরা প্রত্যেক দল আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করো।

নমুনা সমাধান: এখানে উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি তালিকা তৈরি করা হলো-

‘দোয়েল’ দলের তালিকা

আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা যা যা করতে পারি
১. আত্মীয়স্বজনদের সাথে সদাচার করা, দেখা হলে সালাম দেওয়া।
২. আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া।
৩. আত্মীয়স্বজন বাড়িতে আসলে তাদের যত্ন নেওয়া, খাবার-দাবারের সুব্যবস্থা করা।
৪. আত্মীয়স্বজনদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা।
৫. আত্মীয়স্বজনেরা দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা।

‘টিয়া’ দলের তালিকা

আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা যা যা করতে পারি
১. আত্মীয়স্বজনের কেউ অভাবগ্রস্থ হলে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা।
২. আমাদের কাছে তাদের কোনো ন্যায্য দাবি থাকলে পূরণ করা।
৩. সবসময় তাদের খোঁজ-খবর রাখা।
৪. তারা বিপদে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
৫. আত্মীয়স্বজনদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ না করা।

‘মাছরাঙ্গা’ দলের তালিকা

আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা যা যা করতে পারি
১. আত্মীয়দের প্রতি সবসময় সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার মনোভাব রাখা।
২. তাদেরকে কখনও দূরে ঠেলে না দেওয়া, সবসময় কল্যাণ কামনা করা।
৩. আত্মীয়দের নিয়মিত উপহার-উপঢৌকন দেওয়া।
৪. তাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া।
৫. আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কেউ ভুল পথে থাকলে তাকে সঠিক পথে আসার পরামর্শ দেওয়া।

‘কোকিল’ দলের তালিকা

আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা যা যা করতে পারি
১. আত্মীয়দের কোনো প্রয়োজনে সাহায্যের দরকার হলে তা করার চেষ্টা করা।
২. আত্মীয়স্বজন অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, প্রয়োজনে সেবাযত্ন করা।
৩. আত্মীয়দের বিপদে সমবেদনা জানানো এবং সান্ত্বনা দেওয়া।
৪. আত্মীয়ের ভালো অর্জনে খুশি হওয়া, শুভ কামনা জানানো।
৫. আত্মীয়ের সাথে কোনো ব্যাপারে মতবিরোধ হলে নিজে থেকেই মিটিয়ে নেওয়া এবং নমনীয়তা দেখানো।

৭. মাথা খাটিয়ে লিখি: যে সকল কাজ করে আমরা উত্তম প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য হতে পারি—
১……….
২……….
৩……….
৪……….
৫……….

কাজের ধরন: একক।

কাজের নির্দেশনা:
তোমাদের আশেপাশে যারা বসবাস করছেন তাদের প্রতি তোমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে পালন করেই তোমরা উত্তম প্রতিবেশী হতে পারো। পাঠ্যবই থেকে ‘প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার’ পাঠটি পড়ে এ বিষয়ে ধারণা নিতে পারো। এবার মাথা খাটিয়ে নিজে নিজেই পূরণ করে ফেলো ছকটি।

নমুনা সমাধান: এখানে তোমাদের সুবিধার্থে ছকটি পূরণ করে দেখানো হলো, যা তোমাদের মতামতের সাথে নাও মিলতে পারে।

যে সকল কাজ করে আমরা উত্তম প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য হতে পারি—
১. প্রতিবেশীর সাথে মিলেমিশে থাকা।
২. প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে যাওয়া।
৩. প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক না কেন সবার সাথে সদাচারণ করা।
৪. প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে খাবারের ব্যবস্থা করা, অভাবগ্রস্থ হলে অভাব পূরণ করা।
৫. প্রতিবেশীর কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ না করা। যেমন: তার ঘরের সামনে ডাস্টবিন রাখা, নিজ ঘরে জোরে আওয়াজ করা ইত্যাদি।

৮. একক কাজ: তোমার মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে তুমি প্রতিদিন কী কী করতে চাও তার তালিকা তৈরি করো।

CamScanner 07 05 2023 14.52 1

কাজের ধরন: একক।

কাজের নির্দেশনা: তোমার পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন এবং বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকে রয়েছেন। তাদের সাথে নিশ্চয়ই তুমি অনেক ভালো ব্যবহার করছ? কারণ তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা ইসলামের নির্দেশ। আর এ নির্দেশ পালনের অনেক উপায়ও রয়েছে। এবার তুমি চিন্তা করে দেখো তাদের সাথে প্রতিদিন তুমি কী কী উত্তম আচরণ করছ এবং আরও কী কী করতে চাও। এবার তোমার চিন্তাগুলো দিয়েই পূরণ করো ফেলো পাঠ্যবইয়ে দেওয়া ছকটি।

নমুনা সমাধান: নিচে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি একজন শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের উত্তম আচরণ সম্পর্কিত ছকটি পূরণ করা হলো-

CamScanner 07 05 2023 14.36 2

৯. বাড়ির কাজ: ভিন্ন ধর্মের অনুসারী বন্ধু বা প্রতিবেশীর সঙ্গে তোমার ভালো সম্পর্কের বিষয়ে একটি গল্প লেখো।
কাজের ধরন:
একক।

কাজের নির্দেশনা:
তোমার শ্রেণিতে নিশ্চয়ই ভিন্ন ধর্মের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সাথে তোমার সম্পর্কটাও নিশ্চয়ই সুন্দর। কারণ ইসলাম ধর্ম অন্য ধর্মের মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এদের মধ্যে কারও সাথে হয়তো তোমার সম্পর্ক অনেক গভীর। তার সাথে তোমার-আচার ব্যবহার, মেলামেশা, সুখ-দুঃখের নানা ঘটনা নিয়ে লিখে ফেলো একটি মজার গল্প অথবা, তোমার বাসার আশেপাশে ভিন্নধর্মের যেসব প্রতিবেশী বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে হয়তো কারও সাথে তোমার সম্পর্ক অনেক ভালো। এ সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে একটি মজার গল্প লেখো।

নমুনা সমাধান: এখানে উদাহরণ হিসেবে একজন শিক্ষার্থীর ভিন্ন ধর্মের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে একটি গল্প লেখা হলো। আমি শাহনূর। আমাদের বাসার পাশেই হিন্দুধর্মের বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। এদের মধ্যে নমিতাদের পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালো। এ সম্পর্কের নানা দিক নিয়েই আমি একটি গল্প লিখছি। নমিতার বয়স ১০ বছর। আমার থেকে একটু ছোট। ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ওর পরিবারে, বাবা-মা, বড় ভাই, আর ছোট একটি বোন রয়েছে। ওদের ঠাকুরমা ওদের সাথেই থাকে।

ওর বাবা একজন পান বিক্রেতা। নমিতা সবসময়ই আমাদের বাসায় আসা-যাওয়া করে, সুখ-দুঃখের কথা বলে। বয়সে ছোট হলেও ওর সাথে আমার বেশ সখ্য। আমার বাবা-মা, ভাইয়া সবাই ওদের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল। ভালো কিছু রান্না হলে মা ওদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। ওরাও ওদের পূজা-পার্বণে তৈরি করা নাছ, নানা মিষ্টান্ন আমাদের খেতে দেয়। আমি সবসময়ই ওদের খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করি। করোনা মহামারির সময় একদিন নমিতা এসে বলল, দিদি আমার বাবার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে, ওদিকে ঠাকুরমাও অসুস্থ, ডাক্তার দেখাতে হবে।

কোথায় পাব টাকা বলো তো? আমি ওকে বললাম, চিন্তা করিস না, তোর ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখ। আর আমি আল্লাহর কাছে তোদের জন্য প্রার্থনা করছি। দেখি ভালো কিছু করতে পারি কি না? বাবা-মাকে গিয়ে ওদের কথা বললাম। আমার বাবা সাংবাদিক। ওই সময়ে বাবা নানা সংগঠন, ধনী মানুষের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী, টাকা- পয়সা সংগ্রহ করে অসহায়দের বিতরণ করতেন। সব শুনে তিনি নমিতার বাবাকে ডাকলেন এবং বাবার কাজে সহায়তার জন্য তাকেও সাথে নিলেন। হয়ে গেল নমিতার বাবার কাজের ব্যবস্থা।

আর ভাইয়াকে কিছু টাকা দিয়ে নমিতার ভাইকে সাথে নিয়ে ওর ঠাকুরমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করালেন। শুধু আমরাই ওদের সহায়তা করছি তা নয়। আমাদের যেকোনো প্রয়োজনে ওরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই তো কয়েকদিন আগে আমার বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানের নানা আয়োজনে ওরা কতটা কষ্টই না করেছে। নমিতা আর ওর মা আমাদের সব কাজে খুশি মনে সাহায্য করেছে। এভাবেই আমরা সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে পাশাপাশি বসবাস করছি।

১০. সম্মিলিত কাজ: ষষ্ঠ শ্রেণির সকল বন্ধু মিলে তোমাদের শ্রেণিকক্ষ এবং এর আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার করো।
কাজের ধরন:
সম্মিলিত কাজ।

কাজের নির্দেশনা:
এ কাজটি করার জন্য শ্রেণির সব শিক্ষার্থী একত্র হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আলোচনা করো। শ্রেণিশিক্ষককে বলে তোমরা তোমাদের শ্রেণি কক্ষ এবং আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নাও। সবার মতামতের ভিত্তিতে তোমরা তোমাদের মধ্যে একজন দলনেতা নির্বাচন করো। শিক্ষকের নির্দেশনায় এবং দলনেতার পরিচালনায় তোমরা সবাই মিলে কাজগুলো সম্পা করবে। এক্ষেত্রে তোমরা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করো। কে কোন কাজ করবে তাও ভাগ করে নাও। তোমরা চেষ্টা করবে যার দায়িতে যে কাজটি পড়ে তা সুন্দরভাবে শেষ করার।

কাজের উপকরণ: এ কাজটি করার জন্য তোমাদের যেসব সামগ্ৰী লাগবে সেগুলো আগে থেকেই শ্রেণিশিক্ষক এবং দলনেতার সাহায্যে সংগ্রহ করো। এসব সামগ্রীর মধ্যে থাকবে— মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ঝুড়ি, ঝাড়ু, পানি, ডিটারজেন্ট, পরিষ্কার কাপড় প্রভৃতি।

নমুনা সমাধান: এখানে ‘ক’ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ও তার আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার সংক্রান্ত কাজ বর্ণনা করা হলো। আমরা শ্রেণিতে ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছি। ৫ জন করে আমরা ছয়টি দলে ভাগ হয়ে যাব। এবার তিনটি দল শ্রেণির ভেতরে কাজ করব। আর দুটি দল শ্রেণির বাইরে কাজ করব। কাজগুলো করার সময় আমরা অবশ্যই মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে নেব। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে যারা কাজ করব তাদের একটি দল শ্রেণির ভেতরে পড়ে থাকা নষ্ট কাগজ, পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট বা অন্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে ডাস্টবিনে বা ঝুড়িতে রাখি এবং অন্য দল বেশ, ব্লাক বোর্ড, পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলি এবং একদিকে সরিয়ে রাখি।

অন্য দলটি শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিই। শ্রেণিকক্ষ যদি পাকা হয় তাহলে ডিটারজেন্ট ও পানি দিয়ে ফ্লোর মুছে ফেলি। এবার তিন দলের সবাই মিলে বেঞ্চগুলো আবার সুন্দর করে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখি। এবার শ্রেণির বাইরে যে দুটি দল কাজ করব তাদের একটি দল আশেপাশে পড়ে থাকা নোংরা জিনিসপত্র যেমন— পড়ে থাকা খালি বোতল, খাবারের প্যাকেট, কাগজের খোসা ইত্যাদি তুলে ডাস্টবিনে বা নির্ধারিত ঝুড়িতে ফেলি। এবার অন্য দল ঝাড়ু দিয়ে আশেপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার করি। পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে আমরা সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফেলি। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রেখে সুন্দর ও নির্মল পরিবেশে পড়াশোনা করি।

১১. গল্প বলার আসর
কাজের ধরন:
দলীয়।

কাজের নির্দেশনা:
ক্লাসের সব বন্ধুরা মিলে গল্প বলার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন এবং সময় ঠিক করে শিক্ষককে জানাও। তিনি মত দিলে নির্ধারিত দিনে শিক্ষকের পরিচালনায় তোমরা গল্প বলার আসর আয়োজন করো। আখলাক’ অধ্যায়টিতে যে যা পড়েছ বা শিখেছ তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করো। এবার আখলাকে হামিদাহ অর্জন এবং আখলাকে যামিমাহ বর্জনে তোমরা কে কী করেছ তা শিক্ষকের নির্দেশনায় এক এক করে গল্পের মতো করে বলতে শুরু করো। প্রত্যেকে অন্যের গল্প মন দিয়ে শোনো এবং গল্প শেষে তাকে বাহবা দাও।

নমুনা সমাধান: এখানে উদাহরণ হিসেবে এ সম্পর্কিত কয়েকটি গল্প উপস্থাপন করা হলো-

শিক্ষক: সায়মা, তোমার থেকে শুরু করা যাক।

সায়মা: একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখি আম্মুর ভীষণ শরীর খারাপ। আমাকে দেখে তিনি শোয়া থেকে উঠে আসলেন এবং আমাকে ফ্রেশ হতে বললেন। আমি দেখলাম আম্মু ঠিক হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। তাও আমার জন্য খাবার টেবিলে খাবার দিচ্ছেন। আমি দ্রুত আম্মুর কাছে গেলাম। গায়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আমি দ্রুত তাকে ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিই। এবার নিজে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর মাথায় পানি দিই। রুমাল ভিজিয়ে তার কপাল, হাত, মুখ মুছে দিই। এরপর নিজে নিজেই খাবার বেড়ে খেয়ে নিই। আব্বুকে ফোন করে আম্মুর শরীর খারাপের কথা জানাই। এরপর আমি আম্মুর কাছে গিয়ে বসি এবং তাঁর সুস্থতার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি।

শিক্ষার্থীবৃন্দ : বাহ! খুব সুন্দর, তুমি খুবই ভালো কাজ করেছ। আমাদের সবার আব্বু-আম্মুর প্রতি এ রকম যত্নশীল হতে হবে।

শিক্ষক: সায়মা অসাধারণ একটি কাজ করেছে। এবার আমরা ফাহিমের কাছ থেকে শুনব।

ফাহিম: প্রতিদিনের মতো গতকালও রাস্তা পার হয়ে আমি স্কুলে আসছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একজন অন্ধ লোক দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুতেই রাস্তা পার হতে পারছিলেন না। কতজনকে বললেন, কিন্তু কেউ ওনাকে রাস্তা পার করে দিলেন না। এদিকে আমার স্কুলের সময় হয়ে গেছে তারপরও ওনার প্রতি আমার খুব মায়া হলো। আমি তার হাত ধরে রাস্তার এপারে নিয়ে আসলাম। তিনি আমাকে অনেক দোয়া করলেন। আমিও তার জন্য দোয়া করলাম। এ কাজটি করে আমার খুবই ভালো লেগেছে।

শিক্ষার্থীবৃন্দ: চমৎকার! তুমি তো আখলাকে হামিদার খুব ভালো চর্চা করেছ। আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।

শিক্ষক: হ্যাঁ, ফাহিম অসাধারণ একটি ভালো কাজ করেছে। আমাদের আশেপাশের যারা অসহায়, প্রতিবন্ধী রয়েছে আমরা সবাই তাদেরকে যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করব। এবার মুশফিকা বলবে।

মুশফিকা: টিফিন পিরিয়ডে আমি ও আমার একজন বন্ধু শ্রেণিতে বসে ছিলাম। অন্যরা বাইরে খেলছিল। হঠাৎ ও আমাকে বলল, চল! আমরা অন্যদের খাবারগুলো খেয়ে ফেলি। আমি ওকে বললাম, ওরা এসে জিজ্ঞাসা করলে কী বলব? ও বলল, বলব, আমরা জানি না। এরপর আমি ওকে বললাম, এটা ঠিক নয়।

কারণ অন্যের জিনিস না বলে ধরা বা খাওয়া চুরি করার মতো। ইসলামে একে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যদিকে জানিনা বলে মিথ্যা বলা হবে। এটি মহাপাপ! সকল পাপের জননী। আমার কথাগুলো শুনে ও ওর ভুল বুঝতে পারল। ও বলল, আমিও এগুলো পড়েছি, কিন্তু কাজে লাগাইনি। এখন থেকে আমরা কেউই এ ধরনের কাজ আর করব না; কাউকে করতেও দেবো না। আমরা দুজনই দুজনকে কৃতজ্ঞতা জানাই এবং অন্যায় না করার প্রতিজ্ঞা করি।

শিক্ষার্থীবৃন্দ: তোমার কাজটি সুন্দর হয়েছে। আমরা প্রত্যেকে অন্যদের অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করব।

শিক্ষক: মুশফিকা তুমি একদম ঠিক কাজটি করেছে। এভাবেই আমরা অন্যায় থেকে বিরত থাকব। এবার রায়হান বলো।

রায়হান: আব্বুর কাজে সহায়তা করার জন্য গত সপ্তাহে একদিন তার সাথে আমি বাজারে গিয়েছিলাম। আব্বু আমাকে সবজির দোকানে দাঁড় করিয়ে বিক্রেতাকে দেখিয়ে বললেন, আমার ছেলে, পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, পাঁচ কেজি আলু ও দুই কেজি পটল মেপে রাখো। আমি আসছি। তারা আমাকে রেখে মাছ কিনতে গেলেন। বিক্রেতা আলু, পেঁয়াজ ওজন করছিলেন। আমি দেখলাম তিনি ওজনে কম দিচ্ছেন। আমি বিক্রেতাকে বললাম, চাচা আপনার মাপ একটু এলোমেলো হচ্ছে। আমার মনে হয় ওজনে কিছুটা কম হয়েছে।

চাচা বুঝতে পারেননি আমি তার মাপ খেয়াল করছি। তিনি বললেন, হ বাবা, হতে পারে। আমি তাকে বললাম, একটু খেয়াল করে ওজন দিতে হবে। কারণ, ওজনে কম দেওয়া, পচা জিনিস মিলিয়ে দেওয়া প্রতারণার শামিল। আর এটি জঘন্য অন্যায়। ব্যবসার কাজে প্রতারণা থাকলে সৎ ব্যবসার সব সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন। আপনার আয় হালাল হবে না। চাচা ভুল বুঝতে পারলেন। বললেন, এভাবে কেউ কোনোদিন বলেনি তো বাবা, তোমার কথা মনে রাখব।

শিক্ষার্থীবৃন্দ: তোমার কাজটি বেশ হয়েছে। এভাবেই আমরা আমাদের সমাজকে কলুষমুক্ত করব ইনশাল্লাহ।

শিক্ষক: রায়হান খুবই ভালো কাজ করেছ। তোমাদের সবার গল্প অনেক সুন্দর হয়েছে। আমরা সবাই দৈনন্দিন জীবনে আখলাকে হামিদাহ অর্জনের চেষ্টা করব এবং আখলাকে যামিমাহ বর্জন করব। আর এভাবেই গড়ে তুলৰ সুস্থ, সুন্দর, শান্তিময় পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র। তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ।