(ইতিহাস) SSC: ইতিহাস পরিচিতি অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

ইতিহাস পরিচিতি হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বই এর প্রথম অধ্যায়। ইতিহাস পরিচিতি অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ইতিহাস পরিচিতি অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. দশম শ্রেণির ছাত্র মামুন তার বাবার সাথে বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখতে গেল। জাদুঘরে সংরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, পোশাক ও অনেকগুলো দুর্লভ ছবি দেখে সে হতবাক হয়ে যায় এবং তার মনে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নানা রকমের প্রশ্ন জাগে। বাবা ছেলের এত আগ্রহ দেখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে রচিত কয়েকটি বই কিনে দেন এবং বইগুলো ভালো করে পড়তে বলেন।
ক. ই.এইচ. কার-এর ভাষায় ইতিহাস কী?
খ. ইতিহাসকে শিক্ষণীয় দর্শন বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে মামুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান দেখতে পায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বাবার কথা অনুযায়ী শুধু বইগুলো পড়লেই কি মামুন মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারবে? মূল্যায়ন কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ই.এইচ. কার-এর ভাষায় ‘ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।

খ. ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিহাসকে শিক্ষণীয় দর্শন বলা হয়। ইতিহাসের মাধ্যমে একটি সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তির রীতিনীতি, ব্যবহার, আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ইতিহাস না থাকলে আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের জানতাম না এবং আমাদের পরবর্তীরাও আমাদের সম্পর্কে জানবে না। তাই ইতিহাস হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম উৎস। এজন্য ইতিহাসকে শিক্ষণীয় দর্শন বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের মামুন বাবার সাথে বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়ে ইতিহাসের অলিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান দেখতে পায়।
যেসব বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই, সে বস্তু বা উপাদানই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ মূলত অলিখিত উপাদানভুক্ত। যেমন— মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি, ইমারত ইত্যাদি। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ করলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
উপরিউক্ত ধারণার আলোকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, পোশাক, গাড়ি, দুর্লভ ছবি মামুন দেখেছিল, তা মূলত ইতিহাসের অলিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছিল।

ঘ. উদ্দীপকে বাবার কথা অনুযায়ী শুধু বইগুলো পড়লেই মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারবে না।
মামুনের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে তার বাবা ঐ বিষয়ে রচিত কয়েকটি বই কিনে দিলেন এবং তাকে বইগুলো পড়তে বললেন। কিন্তু শুধু এই বইগুলো পড়লেই সে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারবে না। কারণ তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এ কারণেই ইতিহাসের উপাদানকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা— লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান। ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মেও তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সবসময়ই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে অলিখিত উপাদান যেমন- মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি, ইমারত ইত্যাদি। এসব নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের ফলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
অতএব বলা যায়, শুধু বইগুলো অর্থাৎ লিখিত উপাদান পড়লেই মামুন মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারবে না। বরং তাকে অলিখিত উপাদান সম্পর্কেও প্রভৃত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

২. তাহমিদ বিজ্ঞানের ছাত্র। ইতিহাস পড়তে তার খুবই ভালো লাগে। সে তার শিক্ষক বাবা-মার সাথে বইমেলায় গিয়ে ইতিহাসের কয়েকটি বই কিনে এনে পড়লো। সে আরও জানার জন্য কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘর দেখতে গেল । সেখানে সে অতীতকালের রাজা-বাদশাহদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পোড়ামাটির মূর্তি, মৃৎপাত্র, কাঁচা পয়সা ও কাঁসার পাত্র দেখে মুগ্ধ হলো।
ক. ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে ইতিহাসকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
খ. “মানব সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহই ইতিহাস” – ব্যাখ্যা কর।
গ. তাহমিদের পঠিত বইগুলো ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তাহমিদের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব যুক্তিসহ উপস্থাপন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে ইতিহাসকে তিন ভাগে করা যায়।

খ. “মানব সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহই হলো ইতিহাস।”- উক্তিটি ঐতিহাসিক টয়েনবির। মানুষ সামাজিক জীব।
“সমাজের অতীত জীবনই হলো ইতিহাস।” সমাজে বসবাসকারী মানুষ তাদের যে ঐতিহ্যকে লালন করে তা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর কাজটি করে ইতিহাস। সুতরাং পৃথিবীতে মানবসভ্যতার বিকাশের সাথে সম্পর্কিত সকল প্রকার কর্মকান্ডের ধারাবাহিক সত্যনিষ্ঠ এবং ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই হলো ইতিহাস।

গ. উদ্দীপকে তাহমিদের পঠিত বইগুলো ইতিহাসের লিখিত উপাদান।
বস্তুত যেসব তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যতাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়, লিখিত উপাদান তার মধ্যে একটি। এ লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র, পর্যটকদের বিবরণ প্রভৃতি। এছাড়া তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কিত লিখিত বিভিন্ন উৎস ও লিখিত উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ উৎসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এরূপ একটি লিখিত উপাদানই হলো উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় তাহমিদের পঠিত ইতিহাস বইগুলো। এ ধরনের বই বা লিখিত উৎস থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক অনুমান বা সিদ্ধান্তগুলো সক্ষম হয় সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসের মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অবতীর্ণ হতে। ইতিহাসে তাই লিখিত উপাদানের গুরুত্ব অনেক। একটি সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস ও জ্ঞান অর্জনে এ লিখিত উপাদানসমূহের কোনো বিকল্প নেই।
সুতরাং আলোচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত তাহমিদের পঠিত বইগুলো ইতিহাসের লিখিত উপাদানেরই উদাহরণ।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে প্রণীত তাহমিদের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব।
ইতিহাস রচনার দুটি প্রধান উপাদান হলো লিখিত উপাদান এবং অলিখিত উপাদান। লিখিত উপাদান উক্ত বিষয় সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা নিরেট সত্য সংবলিত গুরুত্বপূর্ণ দলিলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অলিখিত উপাদানসমূহ যেমন- প্রত্নতত্ত্ব, মুদ্রা, লিপিমালা, স্তম্ভলিপি, ইমারত, কৃষি উপকরণ, নগরায়ণ প্রভৃতি উত্ত তথ্যের সত্যতা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে একটি সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের স্বীকৃতি অর্জন করে। যেমন— উদ্দীপকের তাহমিদ বইমেলা থেকে ইতিহাস বই কেনার পাশাপাশি সে উক্ত পুস্তক সংবলিত তথ্যের সত্যতা প্রমাণ অথবা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘর দেখতে যায়। এখানে সে অতীতকালের রাজা-বাদশাহর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মাটির পাত্র, কাঁসার পাত্র ও অন্যান্য জিনিস দেখে। যা তাকে একটি সত্যনিষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।
সুতরাং আলোচনার আলোকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উদ্দীপকের তাহমিদের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে নিঃসন্দেহে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব।

৩. আবু হুরায়রা ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য অনেক বই পড়ে। সে আরও জানার জন্য কুমিল্লার জাদুঘর দেখতে পেল। সেখানে সে অতীতকালের রাজা-বাদশাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পোড়ামাটির মূর্তি, মাটির পাত্র, কাঁচা পয়সা ও কাঁসার পাত্র দেখে মুগ্ধ হলো।
ক. সাম্প্রতিক ইতিহাস কাকে বলে?
খ. মানব সমাজের অন্য ঘটনা প্রবাহই হলো ইতিহাস ব্যাখ্যা কর।
গ. আবু হুরায়রার পঠিত বইটি ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আবু হুরায়রার পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব ব্যাখ্যা দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বর্তমান সময়কালের পক্ষে প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলির ঐতিহাসিক বিবরণকে সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে।

খ. “মানব সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহই হলো ইতিহাস।”- উক্তিটি ঐতিহাসিক টয়েনবির। মানুষ সামাজিক জীব। “সমাজের অতীত জীবনই হলো ইতিহাস।” সমাজে বসবাসকারী মানুষেরা তাদের যে ঐতিহ্যকে লালন করে তা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌছানোর কাজটি করে ইতিহাস। সুতরাং পৃথিবীতে মানবসভ্যতার বিকাশের সাথে সম্পর্কিত সকল প্রকার কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক সত্যনিষ্ঠ এবং ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই হলো ইতিহাস।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আবু হুরায়রার পঠিত বইটি ইতিহাসের লিখিত উপাদান।
বস্তুত যেসব তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়, লিখিত উপাদান তার মধ্যে একটি। এ লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র, পর্যটকদের বিবরণ প্রভৃতি। এছাড়া তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কিত লিখিত বিভিন্ন উৎস ও লিখিত উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ উৎসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এরূপ একটি লিখিত উপাদানই হলো উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় আবু হুরায়রার পঠিত ইতিহাস বইটি। এ ধরনের বই বা লিখিত উৎস থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক অনুমান বা সিদ্ধান্তগুলো সক্ষম হয় সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসের মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অবতীর্ণ হতে। ইতিহাসে তাই লিখিত উপাদানের গুরুত্ব অনেক। একটি সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস ও জ্ঞান অর্জনে এ লিখিত উপাদানসমূহের কোনো বিকল্প নেই।
সুতরাং আলোচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত আবু হুরায়রার পঠিত বইটি ইতিহাসের লিখিত উপাদানেরই উদাহরণ।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে প্রণীত আবু হুরায়রার পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব।
ইতিহাস রচনার দুটি প্রধান উপাদান হলো লিখিত উপাদান এবং অলিখিত উপাদান। লিখিত উপাদান উক্ত বিষয় সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা নিরেট সত্য সংবলিত গুরুত্বপূর্ণ দলিলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অলিখিত উপাদানসমূহ যেমন- প্রত্নতত্ত্ব, মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, ইমারত, কৃষি উপকরণ, নগরায়ণ প্রভৃতি উক্ত তথ্যের সত্যতা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে একটি সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের স্বীকৃতি অর্জন করে। যেমন— উদ্দীপকের আবু হুরায়রা বইমেলা থেকে ইতিহাস বই কেনার পাশাপাশি সে উক্ত পুস্তক সংবলিত তথ্যের সত্যতা প্রমাণ অথবা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘর দেখতে যায়। এখানে সে অতীতকালের রাজা-বাদশাহর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মাটির পাত্র, কাঁসার পাত্র ও অন্যান্য জিনিস দেখে। যা তাকে একটি সত্যনিষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।
আবু হুরায়রার আলোচনার আলোকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উদ্দীপকের সুমনের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে নিঃসন্দেহে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব।

৪. মিরাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র। কিন্তু ইতিহাস, পড়তে তার খুব ভালো লাগে। এবারের একুশের বইমেলায় গিয়ে সে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি কেনে এবং মনোযোগ সহকারে পড়ে। সে আরও ইতিহাস জানার জন্য শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে যায়। সেখানে সে অতীত কালের রাজা-বাদশাহদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, তামার মুদ্রা, পোড়ামাটির মূর্তি ও তরবারি দেখতে পায়। এগুলো দেখে সে মুগ্ধ হয়।
ক. ইতিহাসের উপাদান কত প্রকার?
খ. ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা লেখ।
গ. মিরাজের পঠিত বইটি ইতিহাসের কোন ধরনের উপাদান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিরাজের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব—যুক্তি দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ইতিহাসের উপাদান দুই প্রকার।

খ. মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের গবেষণালব্ধ সত্যের উপস্থাপনই ইতিহাস। ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করতে সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা মানবসমাজের ক্রমবিকাশ ও সভ্যতার বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানতে পারি। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তির প্রয়োজনে ইতিহাস পাঠ সকলের জন্য প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিরাজের পঠিত বইটি ইতিহাসের লিখিত উপাদান।
বস্তুত যেসব তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়, লিখিত উপাদান তার মধ্যে একটি। এ লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র, পর্যটকদের বিবরণ প্রভৃতি। এছাড়া তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কিত লিখিত বিভিন্ন উৎস ও লিখিত উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ উৎসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এরূপ একটি লিখিত উপাদানই হলো উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় মিরাজের পঠিত ইতিহাস বইটি। এ ধরনের বই বা লিখিত উৎস থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক অনুমান বা সিদ্ধান্তগুলো সক্ষম হয় সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসের মর্যাদাপূর্ণ। স্থানে অবতীর্ণ হতে। ইতিহাসে তাই লিখিত উপাদানের গুরুত্ব অনেক। একটি সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস ও জ্ঞান অর্জনে এ লিখিত উপাদানসমূহের কোনো বিকল্প নেই।
সুতরাং আলোচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত মিরাজের পঠিত বইটি ইতিহাসের লিখিত উপাদানেরই উদাহরণ।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে প্রণীত মিরাজের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব।
ইতিহাস রচনার দুটি প্রধান উপাদান হলো লিখিত উপাদান এবং অলিখিত উপাদান। লিখিত উপাদান উক্ত বিষয় সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা নিরেট সত্য সংবলিত গুরুত্বপূর্ণ দলিলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অলিখিত উপাদানসমূহ যেমন— প্রত্নতত্ত্ব, মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, ইমারত, কৃষি উপকরণ, নগরায়ণ প্রভৃতি। উত্ত তথ্যের সত্যতা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে একটি সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের স্বীকৃতি অর্জন করে। যেমন— উদ্দীপকের মিরাজ বইমেলা থেকে ইতিহাস বই কেনার পাশাপাশি সে উক্ত পুস্তক সংবলিত তথ্যের সত্যতা প্রমাণ অথবা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর দেখতে যায়। এখানে সে অতীতকালের রাজা-বাদশাহর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মাটির পাত্র, তামার মুদ্রা ও পোড়ামাটির মূর্তি ও অন্যান্য জিনিস দেখে। যা তাকে একটি সত্যনিষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং আলোচনার আলোকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উদ্দীপকের মিরাজের পঠিত বই ও দর্শনীয় উপাদানগুলোর সমন্বয়ে নিঃসন্দেহে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব।

৫. বিকাশ তার বন্ধু তমালের সাথে একটি বইয়ের দোকানে বই কিনতে যায়। বন্ধুর বই কেনার সময় সে লক্ষ করে যে দোকানে থরে থরে বই সাজানো আছে। একটি বইয়ের উপর তার চোখ যায়। তমাল সেই বইটি দেখাতে বলল দোকানিকে। দোকানি সেই বই দেখালো। বইটি ছিল ইতিহাসের বই। তমালের ভালো লাগে বইটি। বইটির মূল্য তমালের কাছে না থাকায় সে তার বন্ধু বিকাশের কাছে কিছু টাকা নিয়ে বইটি কিনে নেয়। আত্ম অনুসন্ধানের অনেক কিছুই সে বইটিতে খুঁজে পায়। সে বইয়ের মধ্যে এক প্রকার লুকানো আনন্দ খুঁজে পায়।
ক. আধুনিক ইতিহাসের জনক কে?
খ. ইতিহাসের অলিখিত উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
গ. তমালের বন্ধু কেন বইটিতে আনন্দ পায় বর্ণনা কর।
ঘ. তমালের পছন্দকৃত বইটির উপাদান আলোচনা কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. আধুনিক ইতিহাসের জনক জার্মান ঐতিহাসিক লিওপোল্ড ফন র‍্যাংকে।

খ. ইতিহাসের অলিখিত উপাদান মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। যার মধ্যে আছে- লিপিমালা, মুদ্রা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ, প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ প্রভৃতি। এছাড়াও প্রচলিত বিশ্বাস বা প্রথা যেমন— অতিকথন এবং পুঁথি ইতিহাসের অলিখিত উপাদানের অন্তর্ভুক্ত।

গ. উদ্দীপকে তমালের পাঠকৃত বইটি ছিল ইতিহাসের বই। যা তাকে আত্মগৌরবময় অতীতের জ্ঞানের দ্বারা আনন্দ দেয় ৷
ইতিহাসের অন্যতম একটি লিখিত উপাদান হলো বই। যা মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের গবেষণালব্ধ সত্যের প্রকাশ ঘটায়। মানুষ স্বভাবজাতভাবেই আত্ম অনুসন্ধানে বিশ্বাস করে। নিজ জাতিমত্তার পরিচয় জেনে গৌরবোধ করে। নিজ দেশ-জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের তাকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। ব্যক্তিকে আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। উদ্দীপকে তমাল দোকানি থেকে পাওয়া বইটির মধ্যে আত্ম-অনুসন্ধানের অনেক কিছু খুঁজে পায়। যা তাকে আনন্দ দেয়। কেননা সকলের মতো তমালও নিজের গৌরবপূর্ণ ইতিহাস জেনে আত্মপ্রত্যয়ী হবে এবং গৌরববোধ করবে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে তমালের পাঠকৃত বইয়ের গৌরবময় ঐতিহাসিক বর্ণনা তাকে আনন্দ দেয়।

ঘ. উদ্দীপকে তমালের পছন্দকৃত বইটি হলো ইতিহাসের লিখিত উপাদান বা ইতিহাসের বই।
ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য গ্রন্থ বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মের মধ্যে আছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী, মিনহাজ- উসা সিরাজের ‘তবকাত-ই-নাসিরী আবুল ফজলের আইন-ই আকবরী ইত্যাদি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণের মধ্যে মেগান্থিনিসের ইন্ডিকা” ফা-হিয়েনের ‘ফো-কুয়ো-কি’, হিউয়েন সাং-এর সি-ইউ-কি ইত্যাদি। ঐতিহাসিক জীবনী গ্রন্থের মধ্যে আছে- সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ইত্যাদি। এছাড়াও প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ, মহাভারত এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও সন্ধি চুক্তি ইত্যাদি যেমন কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ইতিহাসের লিখিত উপাদানের অন্তর্গত।
উপর্যুক্ত সকল উপাদানই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। উদ্দীপকের তমালের পছন্দকৃত বইতে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি প্রকাশ পায়। তাই এটা ইতিহাসের লিখিত উপাদান বইয়ের অন্তর্গত।

Leave a Comment