(বাংলা)পঞ্চম: ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর

ঘাসফুল হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র এর কবিতা। ঘাসফুল কবিতাটির অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

IMG 20230614 130310

ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর

কবি পরিচিতি জেনে নিই
নাম- জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র।
জন্ম তারিখ : ১১ নভেম্বর, ১৯১১।
জন্ম পরিচয়-
জন্মস্থান : শীতলাই, পাবনা।
পিতার নাম : যোগেন্দ্রনাথ মৈত্র
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয়-
মাতার নাম : সরলা দেবী।
শিক্ষাজীবন : বিএসসি ও বিএ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা। এমএ, ইংরেজি।
কর্মজীবন : ক্লাসিক্যাল সংগীত বিশেষজ্ঞ, কমিউনিস্ট আন্দোলনের কর্মী। ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বিশিষ্ট সুরকার ও সংগীত শিক্ষক।
সাহিত্যকর্ম : রাজধানী ও মধুবংশীর গলি, নবজীবনের গান, বার্লিনের কবিতাগুচ্ছ, যে পথেই যাও।
জীবনাবসান : ২৬ অক্টোবর, ১৯৭৭।

এক নজরে এ কবিতার মূলকথাটি জেনে নিই—
পৃথিবীতে সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতির নিয়মে। প্রকৃতির এসব উপাদান নষ্ট বা ধ্বংস করার অধিকার কারও নেই। ঘাসফুল প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি, তাই এদের তুলে ফেলা, ছিড়ে ফেলা বা পায়ে পিষে মারা উচিত নয়। ফুলকে ছেঁড়া মানে তাকে মেরে ফেলা। ফুলের সৌন্দর্য গাছে থাকলেই বাড়ে, ছিঁড়ে ফেললে নয়। তাছাড়া ফুল গাছে গাছে ফুটে হাওয়ায় দুলতে থাকে, হেসে ওঠে সূর্যের কিরণে। পৃথিবীর বুকে স্নেহ-মায়া ঘাস হয়ে ফোটে। সেই ঘাসেরই হাসি হয়ে ফোটে ঘাসফুল। ঘাসফুলগুলো রূপকথার নীল আকাশের বাঁশি শুনে শান্ত হাওয়ায় দুলতে থাকে যখন আকাশে তারা ফোটে। তাই গাছের ফুল ছেঁড়া বা নষ্ট করা কারও উচিত নয়।

বানান সতর্কতা সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই
জ্যোতিরন্দ্র মৈত্র, ছিঁড়, সূর্য, কিরণ, স্নেহ, কণা, রূপকথা, বাঁশি, শান্ত।

১. কবিতার মূলভাব জেনে নিই
ঘাসফুল যে কী আনন্দে বেঁচে আছে, জীবনকে উপভোগ করছে সে কথাই এখানে তারা নিজেরা বলছে। ফুল ছিঁড়ে, পায়ের নিচে পিষে ফেলে মানুষ যেন তাদের কষ্ট না দেয় সেই মিনতি তারা করছে। গাছে ফুল ফুটলে তা দেখে আনন্দ পাওয়া চাই। ফুল ছেঁড়ার অর্থ ফুলকে মেরে ফেলা। গাছের যেমন প্রাণ আছে, ফুলেরও তেমনই প্রাণ আছে।

২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
দোলাই, কিরণ, ধরা, তারারা, ফোটে, স্নেহ-কণা, রূপকথা।
উত্তর :
দোলাই – নাড়াই।
কিরণ – আলো।
ধরা – পৃথিবী।
তারারা – আকাশের তারকারাজি।
ফোটে – প্রস্ফুটিত হয়, ফুটে ওঠে।
স্নেহ-কণা – ভালোবাসা, আদর।
রূপকথা – কাল্পনিক কাহিনি।

৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
দোলায়, কিরণ, ধরার, তারারা, স্নেহ-কণা, রূপকথার, ফোটে
ক. ছোট ছোট ফুল হাওয়াতে …… মাথা।
খ. সকালে সূর্যের …… ততটা তীব্র হয় না।
গ. ……. বুকের স্নেহ-কণাগুলি ঘাস হয়ে ফুটে ওঠে।
ঘ. আঁধার আকাশে ……. মিটিমিটি করে চায়।
ঙ. ফুল গাছে ফুল ……।
চ. …….. বই পড়তে অনেক ভালো লাগে।
ছ. মা ……. দিয়ে আমাদের ভরে রাখেন।
উত্তর :-
ক. ছোট ছোট ফুল হাওয়াতে দোলায় মাথা।
খ. সকালে সূর্যের কিরণ ততটা তীব্র হয় না।
গ. ধরার বুকের স্নেহ-কণাগুলি ঘাস হয়ে ফুট্র ওঠে।
ঘ. আঁধার আকাশে তারারা মিটিমিটি করে চায়।
ঙ. ফুল গাছে ফুল ফোটে।
চ. রূপকথার বই পড়তে অনেক ভালো লাগে।
ছ. মা স্নেহ-কণা দিয়ে আমাদের ভরে রাখেন।

৪. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. হাওয়াতে কারা মাথা দোলাচ্ছে?
উত্তর :
হাওয়াতে ঘাসফুল মাথা দোলাচ্ছে।

প্রশ্ন খ. ঘাসফুল আমাদের কাছে কী মিনতি করছে? কেন করছে?
উত্তর :
ফুল ছিঁড়ে, পায়ের নিচে পিষে আমরা যেন ঘাসফুলকে কষ্ট না দিই ঘাসফুল সেই মিনতি করছে।
ঘাসফুল ঘাসের ছোট ছোট ফুল। ঘাসের বুকে প্রকৃতির মাঝে পরম আনন্দে তারা বেঁচে আছে। কিন্তু মানুষ ফুল ছিঁড়ে হাঁটার সময় পা দিয়ে তাদের পিষে। এতে তারা কষ্ট পায়। কারণ ফুলেরও জীবন আছে। তাই ঘাসফুল এই মিনতি করছে, তাদের যেন মেরে ফেলা না হয়।

প্রশ্ন গ. ঘাসফুল কার সাথে নিজেকে তুলনা করেছে? কীভাবে তুলনা করেছে?
উত্তর :
ঘাসফুল পৃথিবীর বুকের স্নেহ-ভালোবাসার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেছে। ঘাসফুলের মতে পৃথিবীর বুকের স্নেহ-কণাগুলো ঘাস হয়ে ফুটে ওঠে। আর ঘাসফুল সেই স্নেহ-কণার লাল, নীল, সাদা হাসি। রূপকথা আর নীল আকাশের বাঁশি শুনে নিজেদের আনন্দে ভরিয়ে তোলে। মূলত ঘাসফুল নিজ সৌন্দর্য আর বিশেষত্ব তুলে ধরতে পৃথিবীর বুকের স্নেহ-কণার সাথে নিজেকে তুলনা করেছে।

প্রশ্ন ঘ. ফুল মানুষকে কীভাবে আনন্দ দেয়?
উত্তর :
ফুল সৃষ্টিকর্তার অনন্য সৃষ্টি। ফুল সৌন্দর্য, ভালোবাসা আর পবিত্রতার প্রতীক। ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। নল বর্ণের নানা গন্ধের ফুল মানুষকে মুগ্ধ করে। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে, সুবাস নিয়ে মানুষ আনন্দ পায়। এভাবেই ফুল মানুষকে আনন্দ দেয়।

৫. কবিতার অংশটি ব্যাখ্যা করি।
মোরা তারই লাল নীল সাদা হাসি
রূপকথা নীল আকাশের বাঁশি-
শুনি আর দুলি শান্ত বাতাসে
যখন তারারা ফোটে।
ব্যাখ্যা : ধরার বুকের স্নেহ-কণাগুলো ঘাস হয়ে ফুটে ওঠে। সেই ঘাসে লাল, নীল, সাদা রঙের ঘাসফুল ফোটে। ঘাসফুল পরম আনন্দে বেঁচে আছে। রাতে যখন আকাশে তারা ফোটে তখন রূপকথা শুনে আর নীল আকাশের বাঁশির সুরে শান্ত বাতাসে সে দুলে ওঠে।

৬. কবিতাটি আবৃত্তি করি ও না দেখে লিখি।
উত্তর :
কবিতাটি নিজে নিজে আবৃত্তি কর ও না দেখে লেখ।

আরো পড়ো কাঞ্চনমালা ও কাকনমালা গল্পের প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়োঅবাক জলপান নাটিকাটির প্রশ্ন উত্তর

৭. কর্ম-অনুশীলন।
আমার প্রিয় ফুল সম্পর্কে একটি রচনা লিখি।
ফুলের নাম :
ফুলের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা :
কোথায় হয় :
ব্যবহার :
কেন প্রিয় ফুল :
উত্তর :

আমার প্রিয় ফুল

ভূমিকা : আমাদের দেশে নানা রকম ফুল দেখা যায় এগুলো নানা আকারের, নানা রঙের, নানা নামের, নানা সুগন্ধের। সবাই ফুল পছন্দ করে।
ফুলের নাম : আমাদের দেশে নানা নামের ফুল পাওয়া যায়। এ নামগুলো যেমন সুন্দর, তেমনই বৈচিত্র্যপূর্ণ। ঋতুভেদে নানা রকম ফুল ফোটে এদেশে। সুগন্ধি ফুলগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলি, গন্ধরাজ, হাস্নাহেনা, রজনীগন্ধা, দোলনচাপা, জুঁই, গোলাপ, শিউলি ইত্যাদি। সুগন্ধ কম ব নেই এমন ফুলগুলো হলো জবা, গাদা, টগর, কলাবতী, অতসী, শাপলা, অপরাজিতা ইত্যাদি। আমার প্রিয় ফুল গোলাপ।
ফুলের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা : সাধারণত ফুলের পাঁচটি অংশ থাকে। এগুলো হলো— বৃত্ত, বৃত্তি, দল বা পাপড়ি, পুংকেশর ও গর্ভকেশর। গোলাপ কাঁটা জাতীয় গাছ। এর পাতাগুলো খুব সুন্দর। ছোট ছোট পাতাযুক্ত ডালে গোলাপ কলি ফোটে। সবুজ ডালের সাথে লেগে থাকে যে সবুজ সরু অংশ সেটা বৃন্ত বা বোঁটা। বোঁটার উপরের সবুজ প্রায় বৃত্তাকার অংশ বৃত্তি। বৃত্তির ভেতর থেকে কলি বেরিয়ে আসে এবং ধীরে ধীরে তা দল বা পাপড়িগুলো মেলে দেয়। পাপড়িগুলোর মাঝখানে থাকে ফুলের অন্যান্য অংশ। গোলাপের পাপড়িগুলো দেখতে খুবই চমৎকার।
কোথায় হয় : গোলাপের উৎপত্তিস্থল পারস্য বা ইরান। পারস্যের বসরার গোলাপ পৃথিবীবিখ্যাত। মোগল শাসকেরাই প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে গোলাপের বাগান করেছিলেন। ক্রমশ আমাদের দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তি, রাজা-জমিদার শ্রেণির মানুষের বাড়িতে গোলাপ বাগান গড়ে ওঠে। এখন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাগানে গোলাপ দেখা যায়। দেশের কিছু এলাকায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এখন নানা জাতের গোলাপের আবাদ হচ্ছে।
ব্যবহার : ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য গোলাপের জুড়ি নেই। গোলাপের রং, সুগন্ধ এবং পাপড়ির ধরন অনেকেরই পছন্দ। বহুকাল আগে থেকেই গোলাপের নির্যাস থেকে সুগন্ধি তৈরি হচ্ছে এবং তা ব্যবহৃত হচ্ছে।
কেন প্রিয় ফুল : আমার পছন্দের ফুলের মধ্যে রয়েছে বেলি, দোলনচাঁপা, গোলাপ। এর মধ্যে গোলাপ আমার প্রিয় ফুল । গোলাপি, লাল, সাদা, কালো— নানা রঙের গোলাপ রয়েছে। লাল গোলাপ আমার প্রিয়। এর আকার, এর পাপড়ির বিন্যাস এবং এর সুগন্ধ আমার খুবই পছন্দ। আমার কক্ষের পাশেই রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। জানালার পাশেই আমি কয়েকটি টবে লাল গোলাপের গাছ লাগিয়েছি। আমি প্রতিদিনই এগুলোর যত্ন করি। কলি ফুটতে শুরু করলেই গোলাপের প্রতি আমার আকর্ষণ বেড়ে যায়। পাপড়ি মেলে যখন সুগন্ধ ছড়ায় তখন আমি খুব আনন্দ অনুভব করি।
উপসংহার : বর্তমানে ফুলের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ফুলের বাগান ছিল। নানা কারণে তা হ্রাস পেয়েছে। তবে সুগন্ধি গোলাপের প্রতি আকর্ষণ কারও কম নয়। মনকে সুন্দর, উদার এবং মহৎ করে তোলে গোলাপ। কাজেই অন্তত একটি হলেও আমরা যেন গোলাপ গাছ লাগাই এবং যত্ন করি।

খ. পাঠ্যবইয়ের বাইরের কোনো কবিতা বা ছড়া পড়ে তা শ্রেণিতে আবৃত্তি করি।
উত্তর : পাঠ্যবইয়ের বাইরের তোমার কোনো প্রিয় কবিতা বা ছড়া মুখস্থ করে শ্রেণিকক্ষে আবৃত্তি কর।

Leave a Comment