রচনা: তোমার জীবনের লক্ষ্য (সহজ ভাষায়)

তোমার জীবনের লক্ষ্য

উপস্থাপনা : আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন একটি লক্ষ্য নিয়ে। তাই প্রত্যেক মানুষকে জীবনের শুরু থেকেই লক্ষ্য স্থির করা দরকার। Life without an aim is like a boat without rudder, লক্ষ্যহীন জীবনের কোনো সার্থকতা নেই। এ কথা আমি জানি।

আমার ভাবনা : বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। দারিদ্র্য, অনাহার, রোগ-শোকে এ দেশ জর্জরিত। আমার কিশোর মনে ইচ্ছা জাগে ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিক, বৈমানিক, ডাক্তার বা সাহিত্যিক হওয়ার। কিন্তু সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাকে দ্বিধান্বিত করে তোলে। পরিশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মানবসেবী হওয়ার।

পেশা নির্ধারণ : মানবসেবী হওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক পেশার আকর্ষণ আমাকে অস্থির করে তুলেছে কোন পেশার মাধ্যমে মানবের সেবা করা যাবে। অবশেষে সকল দিক বিবেচনা করে আমি ডাক্তার হওয়ার সংকল্প করেছি।

ডাক্তার হওয়ার কারণ : বিশ্বের অভাব ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশসমূহের মধ্যে আমাদের দেশ অন্যতম। অর্থাভাব ও উন্নত চিকিৎসার অভাবে এদেশের লাখ লাখ লোক রোগে-শোকে প্রতিবছর অকালে প্রাণ হারায়। এ অবস্থা আমাকে বেদনায় ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। তাই মানবসেবার মধ্যে সর্বোত্তম সেবা ‘পীড়িতের সেবা’ করার জন্য আমি ডাক্তার হওয়ার মহান ব্রত গ্রহণ করেছি।

প্রকৃতি : আমি বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। আমি আমার লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য এখনই তৈরি হচ্ছি। অন্ত ও বিজ্ঞানের প্রতি আমার বরাবরই আকর্ষণ আছে। অবসর পেলেই আমি বিজ্ঞান পড়ি ও অঙ্ক করি। নির্ধারিত লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি পরবর্তী ক্লাস থেকেই বিজ্ঞান বিভাগ বেছে নেব। আশা করি সুস্থ শরীরে নিয়মিত লেখাপড়া করে অষ্টম বৃত্তি, দাখিল ও আলিম এসব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারব।

উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন : আমি যথাসময়ে এম.বি.বি.এস. পাস করে ডাক্তার হতে পারব বলে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি। তারপর অভিজ্ঞতা- অর্জনের জন্য কিছুদিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হাউস সার্জনের কাজ করব। তারপর আমি ইনশাআল্লাহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের শাখাগুলোর মধ্যে যে-কোনো একটিতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য উচ্চতর শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জন করব।

কর্মজীবন : প্রয়োজনীয় অধ্যয়ন শেষে আমার কর্মজীবন শুরু করব। আমি সরকারি চাকরি গ্রহণ করব না। আমি স্বাধীনভাবে রোগী দেখব। আমি গরিব জনসাধারণের সেবা করতে চাই। তাই আমি গ্রামে থেকে ডাক্তারি করব। গ্রামে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খুব অভাব, কারণ তারা গ্রামে যেতে চান না। ফলে অনেক জটিল রোগী সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করে। প্রয়োজনে বিনা ফি’তে আমি গরিব রোগীদের সেবা করব। তাদেরকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলব।

অন্যান্য সেবা : শুধু তা-ই নয় আমি সরকারি সহযোগিতায় আমাদের গ্রামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করব। পাশাপাশি দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য নৈশ বিদ্যালয় স্থাপনসহ সমাজকল্যাণ ও দেশ সেবামূলক কাজ চালিয়ে যাব।

আরো পড়োমাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
আরো পড়োইসলাম ও মানবাধিকার

উপসংহার : অর্থোপার্জন নয়, দরিদ্র জনগণের সেবাই হবে আমার উদ্দেশ্য। এসব দিক চিন্তা করে আমি একজন ডাক্তার হতে জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি। কেননা কবি আবদুল কাদির বলেন-

হাশরের দিন বলিবেন খোদা
হে আদম সন্তান,
তুমি মোরে কর নাই সেবা
যবে ছিনু রোগে অজ্ঞান।