(শিল্প ও সংস্কৃতি) ৬ষ্ঠ: পলাশের রঙে রঙিন ভাষা – সমাধান

পলাশের রঙে রঙিন ভাষা হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বই এর শিখন অভিজ্ঞতা। পলাশের রঙে রঙিন ভাষা অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পলাশের রঙে রঙিন ভাষা

কাজ-১: শীতের সময়ে দেখা ভালোবাসার গাছটির (আম গাছ) বসন্তকালীন পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করে বন্ধুখাতায় লেখো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান:
শীতের সময়ে আমাদের দেখা ভালোবাসার গাছটির (আম গাছ) বসন্তকালীন পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করা হলো-
i. পাতাগুলো তুলনামূলক সজীব হয়ে ওঠে।
ii. গাছের শীর্ষে মুকুল দেখা দেয়।
iii. মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক ভরে উঠে।

received 366634149561972

চিত্র: মুকুলসহ আমগাছ

কাজ-২: ফুল, পাতা জোগাড় করে রং ও রঙিন কাগজসহ ফুলের তোড়া তৈরি করো।
কাজের ধরন: দলগত কাজ।

নমুনা সমাধান:
প্রয়োজনীয় উপকরণ- ককশিট/শক্ত বোর্ড কাগজ, কাঁচি/কাটার, রং, রঙিন কাগজ, মার্কার, চিকন তার/সুতা, স্কচ টেপ/আঠা, পছন্দের ফুল, পাতা ইত্যাদি।

received 729331655849389

চিত্র: ফুলের তোড়া

কাজের ধারা:
ধাপ-১: ককশিট বা শক্ত বোর্ড কাগজকে সার্কেল বা চাকার আকারে কেটে নিব অথবা নিজের পছন্দ মতো যে কোনো আকারে কেটে নিতে পারি। এটি হবে তোড়াটির বেস বা ভিত্তি।
ধাপ-২: ককশিট বা শক্ত বোর্ড কাগজটি রং করবো।
ধাপ-৩: এবার পছন্দ মতো ফুল দিয়ে বোর্ড/শিটটির উপর সাজাই এবং আঠা/টেপ/তার/সুতা ব্যবহার করে শক্ত করে এঁটে দেই। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বাধাইয়ের মাধ্যম আমরা নির্বাচন করতে পারি। বেস বা ভিত্তিতে। এমনভাবে ফুল আর পাতা আটকাতে হবে যেন তা খুলে না আসে।

ধাপ-৪: রঙিন কাগজ কেটে তাতে মার্কার দিয়ে বিভিন্ন শব্দ বা বাক্য লিখা যায়। যেমন- ‘২১শে ফেব্রুয়ারি’, ‘৮ই ফাল্গুন ১৩৫৮’, ‘শহিদ দিবস’, ‘অমর একুশে’, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’, ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ বা বিভিন্ন বর্ণমালা আঁকা যায়।
ধাপ-৫: কাগজটি তোড়ার উপরে লাগিয়ে দেই যেন তা দৃশ্যমান হয়। এরপর চাইলে রঙিন ফিতা দিয়েও নকশা করতে পারি। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে এভাবেই আমরা ফুলের তোড়াটি তৈরি করতে পারি।

কাজ-৩: শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে গান/নাট্যদৃশ্য/ছড়া/কবিতা ইত্যাদি বিষয়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করো।
কাজের ধরন: দলগত কাজ।

নমুনা সমাধান:
ক. শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে নাট্যদৃশ্য: নাট্যদৃশ্য উপস্থাপনের জন্য নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করতে পারি। যেমন-
ধাপ-১: প্রথমে শ্রেণিকক্ষের সব শিক্ষার্থীরা মিলে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হব।
ধাপ-২: দলে বিভক্ত হয়ে নাট্যদৃশ্য উপস্থাপন করার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত, মঞ্চ সজ্জা, অভিনয় শিল্পী ইত্যাদি বিষয়গুলো ভাগ করে নিয়ে কাজ শুধু করবো। [মঞ্চ প্রস্তুত করতে কালো ব্যানার ব্যবহার করতে হবে।]

ধাপ-৩: যারা অভিনয় করবে তারা দুটি দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ভাষা আন্দোলনের মিছিল এবং অন্য দল বন্দুক হাতে পুলিশ- এই দুই চরিত্রে অভিনয় করবে। ভাষা আন্দোলনকারীদের পোশাক সন শার্ট বা সাদা পোশাক হবে এবং পুলিশের খাকি বা কালো রঙের।
ধাপ-৪: এই নাট্যদৃশ্যে কালো ব্যানার হাতে আন্দোলনকারীদের মিছিল যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে পুলিশ-মিছিলকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। একসময় আন্দোলনকারীদের থামাতে না পেরে পুলিশ বন্দুক দিয়ে গুলি করতে শুরু করবে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকে জীবন হারাবে।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে সহজেই একটি নাট্যদৃশ্য উপস্থাপন করতে পারি।

খ. শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে গান পরিবেশন: বন্ধুরা মিলে নিচের গানটি পরিবেশন করতে পারি। যেমন-
অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা
সেই থেকে শুরু…………….
সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা।
নতুন মন্ত্রে ভরেছিলে অঞ্জলি
আর নয় ভীরু ফাল্গুনী পদাবলী।
কণ্ঠে তোমার বেজেছিলো গান…….. কণ্ঠে তোমার
কন্ঠে তোমার বেজেছিলো গান দারুন অগ্নিজ্বালা।

গীতিকার: আবু হেনা মোস্তফা কামাল
সুরকার: অজিত রায়
তাল: দাদরা

গ. শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে কবিতা পরিবেশন: একক/দলগতভাবে নিচের কবিতাটি পরিবেশন করতে পারি। যেমন-

স্মৃতিস্তম্ভ
আলাউদ্দিন আল আজাদ

স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধূলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক। ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চারকোটি পরিবার।

আরো পড়োআনন্দধারা
আরো পড়োশীত-প্রকৃতির রূপ

কাজ-৪: ‘পলাশের রঙে রঙিন ভাষা’ পাঠে যা যা করেছো তা লেখো এবং অনুভূতি বর্ণনা করো।
কাজের ধরন: একক কাজ।

নমুনা সমাধান:
ক. এই অধ্যায়ে আমি যা যা করেছি:

  • আমরা সহপাঠীরা প্রথমে আমাদের বিদ্যালয়ের শহিদ মিনার দেখেছি অথবা শ্রেণীকক্ষে ছবি দেখেছি তারপর আমাদের শহরের/ গ্রামের অন্যান্য শহিদ মিনার ঘুরে দেখেছি।
  • আম গাছটি শীতের সময়ে যেমন দেখেছি, এখন বসন্তে এসে এটির যেসব পরিবর্তন হয়েছে বন্ধুখাতায় তা লিখে রেখেছি।
  • আমরা সহপাঠীরা গোলাপ, গাঁদা, শিউলি, রজনীগন্ধা ইত্যাদি ফুল জোগাড় করে সেগুলো দিয়ে ফুলের তোড়া তৈরি করেছি।
  • আমরা ফুলের তোড়া তৈরি করার সময় লাল, নীল, হলুদ ও সবুজ রংয়ের কাগজ দিয়ে সুন্দরভাবে সাজিয়েছি।
  • শহিদ দিবসকে উপলক্ষ্য করে পছন্দের গান সহপাঠীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • সহপাঠীরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে শহিদ দিবসকে উপলক্ষ্য করে নাট্যদৃশ্য/কবিতা/সংগীত পরিবেশন করেছে।
  • ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালবেলা খালি পায়ে প্রতীকী শহিদ মিনারে ফুল দিয়েছি।
  • পছন্দের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়েছি।

খ. আমার অনুভূতি: এই অধ্যায়ের মাধ্যমে আমি মায়ের ভাষা সম্পর্কে ভাষা শহিদদের সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমরা সহপাঠীরা শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে ভাষা দিবসের গুরুত্ব জেনেছি। আমাদের শ্রেণি শিক্ষক আমাদেরকে ভাষা শহিদদের পরিচয় জানিয়েছেন এবং শহিদ মিনার কেনো তৈরি করা হয়েছে সে সম্পর্কে বলেছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে নিজ হাতে ফুলের তোড়া বানিয়ে এবং সহপাঠীরা মিলে গান, কবিতা, গল্প, অভিনয় ইত্যাদি করার মাধ্যমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। এ অধ্যায়ের সকল কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে আমাদের ভাষা শহিদদের সাথে সাথে বিশ্বের সকল জাতিসত্তার মানুষের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর সুযোগ পেয়েছি।