(বাংলা)পঞ্চম: বিদায় হজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর

বিদায় হজ হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর গল্প। বিদায় হজ গল্পের অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

এক নজরে বিদায় হজ গদ্যের মূলকথাটি জেনে নিই—
হিজরি দশম সনে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) হজ শেষে আরাফাত ময়দানে যে ভাষণ দেন তা-ই ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত। এ ভাষণই হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনের শেষ ভাষণ। এ ভাষণে তিনি ক্রীতদাস এবং নারী ও পুরুষের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সবাইকে উপদেশ দেন। তিনি গোটা মানবজাতিকে চারটি মৌলিক দিকের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআন ও তাঁর প্রেরিত প্রিয় রাসুল (স)-এর জীবনাদর্শ রেখে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নেন।

সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই—
হিজরি, স্থির, ক্রীতদাস, ঋণ, আত্মসাৎ, উজ্জ্বল, কণ্ঠ, পূর্ণ, সাক্ষী, কর্তব্য, দ্রুত, শ্রদ্ধা, প্রশংসা, আঁকড়ে ধরা।

বিদায় হজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
হিজরি, হজ, মহানবি, কাবাশরিফ, আরাফাত, ভাষণ, বান্দা, আমির, উপাসনা, ক্রীতদাস, যিলকাদ।

উত্তর :
হিজরি – ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর আদেশে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যান। একে বলা হয় হিজরত। তিনি যেদিন মক্কা ছেড়ে যান, সেদিন থেকে আরবি সাল গণনা করা হয়। আরবি সালকে ‘হিজরি’ বলা হয়।

হজ – হিজরি জিলহজ মাসের ৯ তারিখে নির্দিষ্ট স্থানে ইহরাম বেঁধে মক্কার অদূরবর্তী আরাফাত ময়দানে অবস্থান ও পরে কাবার তওয়াফ সংবলিত ইসলামি অনুষ্ঠান।

মহানবি – আল্লাহর পয়গম্বর; রাসুল; প্রেরিত পুরুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি। শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স) কে মহানবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

কাবাশরিফ – সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত আল্লাহর পবিত্র ঘর। আর্থিকভাবে সচ্ছল মুসলমানেরা পবিত্র হজ পালন করতে সেখানে যান। হজ পালনের সময় এর চারদিকে ঘুরতে হয়।

আরাফাত – মক্কা থেকে প্রায় বারো মাইল পূর্বে অবস্থিত প্রসিদ্ধ ময়দান।

ভাষণ – বক্তৃতা, বিবৃতি, উক্তি।

বান্দা – গোলাম, দাস, একান্ত বাধ্য।

আমির – সম্ভ্রান্ত ধনী মুসলমান, মুসলমান শাসকের উপাধি।

উপাসনা – এবাদত, আরাধনা, আল্লাহ্র ধ্যান।

ক্রীতদাস – কেনা দাস, চাকর।

যিলকাদ – আরবি বছরের একটি মাসের নাম।

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
আরাফাত, ক্রীতদাস, কাবাশরিফ, মহানবি, হিজরি, হজ
ক. দশম ……. হজের সময় এসে গেল।
খ. তাঁদের ইচ্ছা নবিজির (স) সঙ্গে ……. পালন করবেন।
গ. ………. হযরত মুহাম্মদ (স) প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন।
ঘ. যাঁরা তাঁকে কখনও দেখেন নি তাঁরাও এই মহামানবকে একবার দেখার জন্য ………. এলেন।
ঙ. ………. ময়দান থেকে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হল, ‘হ্যাঁ, আপনি পেরেছেন।’
চ. কোনো ……… যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হয়, তবে তাকে মেনে চলবে।

উত্তর :
ক. দশম হিজরি হজের সময় এসে গেল।
খ. তাঁদের ইচ্ছা নবিজির (স) সঙ্গে হজ পালন করবেন।
গ. মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন।
ঘ. যাঁরা তাঁকে কখনও দেখেন নি তাঁরাও এই মহামানবকে একবার দেখার জন্য কাবাশরিফ এলেন।
ঙ. আরাফাত ময়দান থেকে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হল, ‘হ্যাঁ, আপনি পেরেছেন।’
চ. কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হয়, তবে তাকে মেনে চলবে।

৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. হিজরি কোন সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর :
হিজরি দশম সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন খ. আরাফাত ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখে নবিজির (স) মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল?
উত্তর :
আরাফাত ময়দানে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রিয় নবি (স)-কে শেষবারের মতো দেখার জন্য সমবেত হয়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে মহানবির মন আনন্দে ভরে ওঠে। এত মানুষ। এরা সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। মহানবি ভাবলেন, পৃথিবীতে তাঁর কাজ শেষ হয়েছে।

প্রশ্ন গ. মহানবি (স) তাঁর ভাষণে ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর :
মহানবি (স) তাঁর ভাষণে বলেনছেন, “তোমাদের ক্রীতদাস- ক্রীতদাসীরাও আল্লাহর বান্দা। তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার করো না। তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তাই খেতে দেবে; নিজেরা যে কাপড় পরবে, তাদেরও তাই পরতে দেবে। কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হন, তবে তাকে মেনে চলবে। তখন বংশমর্যাদার কথা বলো না। মনে রেখো, সব মুসলমান একে অন্যের ভাই।”

প্রশ্ন ঘ. ধর্ম সম্পর্কে মহানবি (স) কী উপদেশ দিয়েছেন?
উত্তর :
ধর্ম সম্পর্কে মহানবি (স) বলেছেন, “ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। নিজের ধর্ম পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাদের ওপর তোমরা ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো না।”

প্রশ্ন ঙ. কোন চারটি কথা নবিজি (স) বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেছেন?
উত্তর :
নবিজি (স) যে চারটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেছেন সেগুলো হলো-
১. আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না;
২. অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করো না;
৩. পরের সম্পদ আত্মসাৎ করো না;
৪. কারও ওপর অত্যাচার করো না।

প্রশ্ন চ. তিনি আমাদের কাছে কোন দুইটি জিনিস রেখে গেছেন?
উত্তর :
মহানবি (স) আমাদের কাছে যে দুইটি জিনিস রেখে গেছেন। সেগুলো হলো-
১. আল্লাহর বাণী অর্থাৎ আল কুরআন এবং
২. আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ।

৪. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. বিদায় হজ কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
১. মদিনায়
২. মক্কায়
√ ৩. আরাফাতের ময়দানে
৪ জেদ্দায়
খ. আরাফাতের ময়দানে কত লক্ষ মানুষ হজ পালন করতে আসেন?
১. প্রায় এক লক্ষ
√ ২. প্রায় দুই লক্ষ
৩. প্রায় তিন লক্ষ
৪. প্রায় চার লক্ষ
গ. হযরত মুহাম্মদ (স) কাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে নিষেধ করেছেন?
১. সৈন্যদের
২. সাহাবিদের
৩. আলেমদের
√ ৪. ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীদের
ঘ. মহানবি (স) কয়টি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বললেন?
১. দুইটি
√ ২. চারটি
৩. ছয়টি
৪. আটটি
ঙ. মহানবির (স) চোখ-মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল কেন?
√ ১. মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য
২. মক্কা জয়ের আনন্দে
৩. সাহাবিদের নিয়ে হজ পালন করতে পারায়
৪. বিদায় হজের ভাষণে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে

৫. নিচের বাক্যগুলো এককথায় প্রকাশ করি।
যার তুলনা হয় না – অতুলনীয়
যার শত্রু জন্মায় নি – অজাতশত্রু
আকাশে যে উড়ে বেড়ায় – খেচর
বিদেশে থাকে যে – প্রবাসী
যা কষ্টে লাভ করা যায় – দুর্লভ
যা জলে চরে – জলচর।

৬. বিরামচিহ্নগুলো চিনে নিই।
বিরামচিহ্নের নাম – চিহ্নের আকৃতি
কমা → ,
সেমিকোলন → ;
দাঁড়ি → |
জিজ্ঞাসা-চিহ্ন → ?
বিস্ময়-চিহ্ন → !
বাক্যের অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝাবার জন্য বাক্যের মধ্যে বা শেষে আমরা বিরামচিহ্ন ব্যবহার করি। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যও এই চিহ্নের জায়গায় আমরা থামি।

এবার নিচের বাক্যগুলো পড়ি এবং ঠিক জায়গায় বিরামচিহ্ন বসাই :
এত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে নবিজির (স) মন আনন্দে ভরে গেল এত মানুষ এরা সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে তাঁর মনে হলো হয়ত এটাই তাঁর জীবনের শেষ হজ
উত্তর : এত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে নবিজির (স) মন আনন্দে ভরে গেল। এত মানুষ। এরা সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাঁর মনে হলো, হয়ত এটাই তাঁর জীবনের শেষ হজ।

আরো পড়োভাবুক ছেলেটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়ো দুই তীরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর

৭. কর্ম-অনুশীলন।
‘বিদায় হজ’ রচনাটি থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো লিখ।
উত্তর : দশম হিজরির যিলকাদ মাসে আরাফাতের ময়দানে বিপুল সংখ্যক মানুষের সামনে জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) যে ভাষণ দেন তা-ই বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে পরিচিত। এ ভাষণের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-

১. মানুষ পৃথিবীতে যা কিছু করছে আল্লাহ্র কাছে তার হিসাব দিতে হবে।
২. ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না।
৩. ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীদের বেলায় খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না।
৪. ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীরা নিজের যোগ্যতায় আমির হলে তাকে যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে।
৫. প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। কারও সম্পত্তি জোর করে দখল করা যাবে না।
৬. কখনো অন্যায়-অবিচার করা যাবে না।

৭. একজনের অপরাধের জন্য অন্যকে দায়ী করা যাবে না।
৮. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, জোর করে কারও ওপর ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
৯. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করা যাবে না।
১০. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না।
১১. কারও ওপর অত্যাচার, কারও সম্পদ অপহরণ করা যাবে না।
১২. জীবনের সব কর্মকাণ্ডে আল্লাহ্র বাণী কুরআন আর তাঁর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে হবে।