(বাংলা)পঞ্চম: ভাবুক ছেলেটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

ভাবুক ছেলেটি হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর গল্প। ভাবুক ছেলেটি গল্পের অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

এক নজরে ভাবুক ছেলেটি গদ্যের মূলকথাটি জেনে নিই-
জগদীশচন্দ্র বসু বাঙালির গৌরব। তিনি একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী। এই মহান বিজ্ঞানী ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার বাড়ি বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে। ময়মনসিংহে স্কুলশিক্ষার ধাপ শেষ করে তিনি কলকাতায় ভর্তি হন। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের ধারা অব্যাহত রেখে তিনি ১৮৭৮ সালে এফএ পাস করেন। তারপর বিজ্ঞান শাখায় বিএস পাস করে তিনি বিলেতে যান ডাক্তারি পড়ার জন্য। এক বছর ডাক্তারি পড়ার পর ১৮৮১ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে এসে তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।

এখান থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। তিনি নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন ‘গাছেরও প্রাণ আছে’ এই সত্য প্রমাণ করে। এছাড়া তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গসৃষ্টি আবিষ্কার করেন। তাঁর পরীক্ষাগুলো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমকে দেয়। দেশের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা অপরিসীম। তাই বিলেতে অধ্যাপনার আমন্ত্রণ পেয়েও তা তিনি ফিরিয়ে দেন। তাঁর লেখা ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘নাইট’ উপাধি দেন এবং তখন থেকেই তাঁর নামের আগে ‘স্যার’ যুক্ত হয়। অধ্যাপনা থেকে অবসরগ্রহণ করে তিনি ‘জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই বিজ্ঞান মন্দিরেই গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর ভারতের গিরিডিতে মারা যান।

ভাবুক ছেলেটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
পর্যবেক্ষণ, পাণ্ডিত্যপূর্ণ, বিজয়স্তম্ভ, গিরিডি, কল্পকাহিনি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, প্রবেশিকা, এফএ।
উত্তর :
পর্যবেক্ষণ – কোনো কিছু বা প্রাকৃতিক ঘটনা খেয়াল করে দেখা; নিরীক্ষণ।
পাণ্ডিত্যপূর্ণ – জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাপূর্ণ।
বিজয়স্তম্ভ – কোনোকিছু জয় করার পর যে স্তম্ভ নির্মাণ করে বিজয় ঘোষণা করা হয়।
গিরিডি – ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত। এটি গিরিডহ্ জেলার প্রধান শহর। ১৮৭২ সালে স্থানটি হাজারিবাগ জেলার মধ্যে ছিল।

কল্পকাহিনি – যে কাহিনি কল্পনা করে লেখা হয়।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি – এক প্রকার কল্পকাহিনি আছে, যা বিজ্ঞানকে প্রধান করে লেখা হয়, তাকে বলা হয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি।
প্রবেশিকা – আজকের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। প্রবেশিকা পাস করলে কলেজে প্রবেশ করা যেত। তাই নাম হয়েছিল প্রবেশিকা।
এফএ – (ফাইন আর্টস) আজকের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সমতুল্য।

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
বিজয়স্তম্ভ, কল্পকাহিনি, আবিষ্কার, কল্যাণ, পাণ্ডিত্যপূর্ণ, দুরন্ত, পদার্থে, পদার্থবিজ্ঞানের, বিস্ময়ে, বাড়িতে, অতিক্ষুদ্র, কর্তব্য, প্রাণী জীবনের

ক. তাঁর ……. বক্তৃতা শুনে তাঁকে অধ্যাপনা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
খ. দেশের …….. করার জন্যই তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন।
গ. জগদীশচন্দ্র বসুর আশ্চর্য সব ……… দেখে আইনস্টাইন মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
ঘ. জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি ……….।
ঙ. জগদীশচন্দ্র বসুর ‘নিরুদ্দেশের কাহিনি’ বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম বৈজ্ঞানিক ………।
চ. ছেলেটি তেমন …….. নয়।
ছ. মেঘ ডেকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকে বাজ পড়লে অবাক ……… ভাবে।
জ. ওর পড়াশোনার শুরু ……….।
ঝ. প্রেসিডেন্সি কলেজে ……….. অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
ঞ. প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ তিন বছর বেতন না নিয়ে …….. পালন করেন।
ট. তিনি দেখিয়েছিলেন যে, উদ্ভিদ ও ……… মধ্যে অনেক মিল আছে।
ঠ. তিনি …….. তরঙ্গসৃষ্টি আবিষ্কার করেন।

উত্তর :
ক. তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতা শুনে তাঁকে অধ্যাপনা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
খ. দেশের কল্যাণ করার জন্যই তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন।
গ. জগদীশচন্দ্র বসুর আশ্চর্য সব আবিষ্কার দেখে আইনস্টাইন মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
ঘ. জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি বিজয়স্তম্ভ।
ঙ. জগদীশচন্দ্র বসুর ‘নিরুদ্দেশের কাহিনি’ বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি।
চ. ছেলেটি তেমন দূরন্ত নয়।
ছ. মেঘ ডেকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকে বাজ পড়লে অবাক বিস্ময়ে ভাবে।
জ. ওর পড়াশোনার শুরু বাড়িতে।
ঝ. প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
ঞ. প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ তিন বছর বেতন না নিয়ে কর্তব্য পালন করেন।
ট. তিনি দেখিয়েছিলেন যে, উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক মিল আছে।
ঠ. তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গসৃষ্টি আবিষ্কার করেন।

৩. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখি ও বলি।
প্রশ্ন ক. ভাবুক ছেলেটি আসলে কে ছিলেন?
উত্তর :
ভাবুক ছেলেটি আসলে ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু।

প্রশ্ন খ. তিনি ছোটবেলায় কী কী নিয়ে ভাবতেন?
উত্তর :
জগদীশচন্দ্র বসু ছোটবেলায় তাঁর চারপাশের প্রকৃতিকে অবাক বিস্ময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন। আকাশে মেঘ ডাকে। বিদ্যুৎ চমকায়। বাজ পড়ে। তিনি অবাক বিস্ময়ে ভাবেন কেন এমন হয়। ঝড়ে গাছপালা ভেঙে গেলে তিনি ভাবেন, গাছ ভেঙে গেলে, ওদেরকে কাটলে ওরা ব্যথা পায় কিনা।

প্রশ্ন গ. তিনি কবে, কোথা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন?
উত্তর :
তিনি ১৮৭৪ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

প্রশ্ন ঘ. কখন থেকে তিনি ‘বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু’ হয়ে ওঠেন?
উত্তর :
১৮৮৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসু দেশে ফিরে এসে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
তখন দেশ ছিল পরাধীন। এ সময় একই পদের জন্য একজন ইংরেজ অধ্যাপক যে বেতন পেতেন, ভারতীয়রা পেতেন তার তিন ভাগের দুই ভাগ। তিনি অস্থায়ীভাবে চাকরি করছিলেন বলে তাঁর বেতন আরও এক ভাগ কেটে নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ তিন বছর কোনো বেতন না নিয়ে কর্তব্য পালন করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ সরকার তাঁকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। সব বকেয়া পরিশোধ করে চাকরিতে স্থায়ী করে। তখন থেকেই তিনি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু হয়ে ওঠেন।

প্রশ্ন ঙ. কোন সত্য প্রমাণ করে তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন?
উত্তর:
গাছেরও প্রাণ আছে— এই সত্য প্রমাণ করে তিনি যেদি পরিচিতি লাভ করেন।

প্রশ্ন চ. তার বক্তৃতার সফলতা সবচেয়ে বেশি ছিল কোন বিষয়ে?
উত্তর :
বিদ্যুৎ রশ্মির সমাবর্তন বিষয়ে তাঁর বক্তৃতার সফলতা ছিল সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন ছ. বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সফলতাকে কোন নামকরা বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর :
বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সফলতাকে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ও নিউটনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন জ. ‘পলাতক তুফান’ নামে লেখাটির আগে কী নাম ছিল? তাঁর কোন বইয়ে এটি ছাপা হয়?
উত্তর :
‘পলাতক তুফান’ নামে লেখাটির আগে নাম ছিলো “নিরুদ্দেশের কাহিনি’। এটি পরে তাঁর ‘অব্যন্ত’ বইয়ে ছাপা হয়।

প্রশ্ন ঝ. অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি কী প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর :
অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ‘জগদীশচন্দ্র বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন ঞ. ‘তাঁর প্রতিটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি বিজয়স্তম্ভ’ এমন কথা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন? কেন বলেছিলেন?
উত্তর :
‘তাঁর প্রতিটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি বিজয়স্ত- এমন কথা বলেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। জগদীশচন্দ্র বসুই প্রথম আবিষ্কার করেন, পাছের প্রাণ আছে। তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গসৃষ্টি আবিষ্কার করেন। কোনো তার ছাড়া তরঙ্গ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণে সফলতা অর্জন করেন। তাঁর প্রতিটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক-একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে, বিজয়ের সূচনা করে। এ কারণে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এ কথা বলেছিলেন।

৪. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. কোন সত্যটি প্রমাণ করে জগদীশচন্দ্র বসু বেশি পরিচিতি লাভ করেন?
√ ১. গাছের প্রাণ আছে
২. অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি করে
৩. মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে
৪. বেতার এবং টেলিভিশন আবিষ্কারের মাধ্যমে

খ. জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে কোন বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন?
১. বাংলা
√ ২. পদার্থবিজ্ঞান
৩. ইংরেজি
৪. গণিত

গ. জগদীশচন্দ্র বসু কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
√ ১. ময়মনসিংহ
২. ঢাকা
৩. কুমিল্লা
৪. ফরিদপুর

ঘ. ‘জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতিটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি বিজয়স্তম্ভ’ কথাটি কে বলেছিলেন?
১. বিজ্ঞানী অলিভার লজ
২. বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন
√ ৩. বিজ্ঞানী আইনস্টাইন
৪. বিজ্ঞানী গ্যালিলিও

৫. কথাগুলো বুঝে নিই।
শিক্ষার ধাপ পার – প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষা হলো একটার পর একটা শিক্ষার ধাপ।

বকেয়া পরিশোধ – কারো নিকট কোনো টাকা-পয়সা পাওনা থাকলে যদি সময়মতো দেওয়া না হয় তখন তা বকেয়া হয়ে যায়। পরে যদি আগের পাওনা দিয়ে দেওয়া হয় তবে তাকে বলে বকেয়া পরিশোধ।

অন্যতম – বহুর মধ্যে এক হলে তাকে বলা হয় অন্যতম। কোনো কিছুকে বিশেষভাবে বোঝানোর জন্য ‘অন্যতম’ শব্দটি ব্যবহার করা যায়।

তথ্যের আদান-প্ৰদান – তথ্য বলতে ঠিক সংবাদ, প্রকৃত অবস্থা বা সত্যকে বোঝাতো। কিন্তু আজকের দিনে লিখে, ছাপিয়ে অথবা বেতার, টেলিভিশন, ফোন, ইন্টারনেটের সাহায্যে যত রকম কিছু পাওয়া যায়, পাঠানো যায় তার সবই তথ্যের আদান-প্রদান।

নাইট উপাধি – নাইট উপাধি ব্রিটিশরাজের অত্যন্ত সম্মানজনক উপাধি। এঁদেরকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করা হয়।

৬. কর্ম-অনুশীলন।
‘বিজ্ঞান শিক্ষাই সভ্যতা বিনির্মাণের একমাত্র হাতিয়ার’- বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকের সহায়তায় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।
উত্তর : শিক্ষকের সহায়তায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ কর।

আরো পড়োশিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতার প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়োঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর

৭. আমার জানা যেকোনো একজন বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে ২০টি বাক্য লিখি।

উত্তর : মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা
মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা ছিলেন বাংলাদেশের একজন রসায়নবিদ, গ্রন্থকার ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মাড়গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ, মাতা ফামিহা খাতুন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় মড়গ্রাম এম.ই. স্কুলে।

পরবর্তীতে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে ম্যাট্রিক এবং বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে এমএসসি পাস করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯২৯ সালে রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৩৬ সালে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি এ কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন। গবেষণা জীবনের প্রথমে তিনি স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ।

তিনি পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও ভিনেগার থেকে মল্ট তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। দেশে ও বিদেশের বিখ্যাত গবেষণামূলক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো ‘বিজ্ঞানের সরস কাহিনী’, ‘বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনী’, ‘বিজ্ঞানের সূচনা’, ‘বিচিত্র বিজ্ঞান’, ‘পরমাণু পরিচিতি’ প্রভৃতি। কেবল গবেষণাই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ প্রণীত হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সালে তাঁকে ‘একুশে পদকে ভূষিত করে। ১৯৮৪ সালে তাঁকে ‘মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এই মহান গবেষক, শিক্ষাবিদ ও গ্রন্থকার ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Comment