(বাংলা)পঞ্চম: রৌদ্র লেখে জয় কবিতার প্রশ্ন উত্তর

রৌদ্র লেখে জয় হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর শামসুর রহমানের কবিতা। রৌদ্র লেখে জয় কবিতাটির অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কবি পরিচিতি জেনে নিই
নাম – শামসুর রাহমান।
জন্ম পরিচয় –
জন্ম তারিখ : ২৩ অক্টোবর, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : মাহুতটুলী, ঢাকা।
পৈতৃক নিবাস : পাড়াতলী, রায়পুরা, নরসিংদী।
পিতৃপরিচয় –
পিতার নাম : মুখলেসুর রহমান চৌধুরী।
শিক্ষাজীবন –
মাধ্যমিক : পোগোজ স্কুল (১৯৪৫), ঢাকা।
উচ্চ মাধ্যমিক : ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (১৯৪৭)।
উচ্চতর : বিএ (অনার্স), এমএ (ইংরেজি); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কর্মজীবন/পেশা –
সাংবাদিকতা। সম্পাদক- দৈনিক বাংলা। সভাপতি- বাংলা একাডেমি।

সাহিত্যকর্ম –
কাব্যগ্রন্থ : প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা, নিরালোকে দিব্যরথ, নিজ বাসভূমে, বন্দী শিবির থেকে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
উপন্যাস : অক্টোপাস, নিয়ত মন্তাজ, অদ্ভুত আঁধার এক, এলো সে অবেলায়।
প্রবন্ধ : আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ।
শিশুতোষ : এলাটিং বেলাটিং, ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো, স্মৃতির শহর ঢাকা, গোলাপ ফোটে খুকির হাতে, রংধনু সাঁকো, লাল ফুলকির ছড়া।
অনুবাদ : ফ্রস্টের কবিতা, হ্যামলেট, ডেনমার্কের যুবরাজ।
সম্পাদনা : হাসান হাফিজুর রহমানের অপ্রকাশিত কবিতা।
পুরস্কার/ খেতাব –
পুরস্কার : আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯১)।
জীবনাবসান – ১৭ আগস্ট, ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ।

received 823451179333864 1

একনজরে রৌদ্র লেখে জয় কবিতার মূলকথাটি জেনে নিই
বর্ণিরা আগের দিনে এদেশে এসে শহর গ্রাম পুড়িয়ে লুট করে নিয়ে যায়। তাদের মতো পশ্চিম পাকিস্তানিরাও এদেশে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে; পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছে। কিন্তু বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা তা করতে দেয়নি। মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলে হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করেছে। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে লাখো প্রাণের বিনিময়ে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ‘বাংলাদেশ’। বাংলা মায়ের বীর সন্তানরা বুকের রক্ত দিয়ে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে আলোকোজ্জ্বল স্বাধীন জগতে বাংলাদেশকে অধিষ্ঠিত করেছে।

সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই-
শামসুর রাহমান, বর্ণি, শ্যামল, হানাদার, আঁধার, সন্ধ্যা, রৌদ্র।

রৌদ্র লেখে জয় কবিতার প্রশ্ন উত্তর

১. কবিতার মূলভাব জেনে নিই ৷
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি জয়লাভ করে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। আগে এ দেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হয়েছিলেন। এই কবিতায় পাকিস্তানিদের অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন এদেশের সন্তানেরা সংগ্রাম করেছিল সে কথাও বলা হয়েছে।

২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
বর্গি, হানাদার, খাজনা।
উত্তর :
বর্গি – মারাঠা দস্যু।
হানাদার – আক্রমণকারী।
খাজনা – কর বা ট্যাক্স।

৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
হানাদারদের, বর্গি, খাজনা
ক. সরকারকে – দেওয়া সকল নাগরিকের কর্তব্য।
খ. বহু পূর্বে বাংলায় – এসে হানা দিত, মানুষ মারত, ধনসম্পদ লুট করত।
গ. – পরাজিত করেই মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
উত্তর :
ক. সরকারকে খাজনা দেওয়া সকল নাগরিকের কর্তব্য।
খ. বহু পূর্বে বাংলায় বর্গি এসে হানা দিত, মানুষ মারত, ধনসম্পদ লুট করত।
গ. হানাদারদের পরাজিত করেই মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।

৪. নিচের কথাগুলো বুঝে নিই।
ক. বর্গি এলো খাজনা নিতে, মারল মানুষ কত। – ‘খাজনা নিতে’ অর্থ লুটতরাজ করতে। বর্গিরা বাংলাদেশে এসে মানুষ মেরে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে বাঙালির ধনসম্পদ নিয়ে পালিয়ে যেত।
খ. তাদের কথা দেশের কখনো ভুলবে না। – মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে মানুষ না, কারণ তাঁরাই হানাদার পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের এদেশ থেকে তাড়িয়েছিলেন।
গ. মা হয়ে যায় দেশের মাটি, তার বুকেতেই থাকা। – মা ও মাতৃভূমি সমান গর্বের, সমান আনন্দের। জননীহীন সন্তান যেমন দুর্ভাগা, যার মাতৃভূমি নেই সেও তেমনি ভাগ্যহীন।

৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে মুখে বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. বর্গি কারা? তারা কী করেছিল?
উত্তর : বর্গি হলো মারাঠা দস্যু। বহুকাল আগে তারা বাংলায় হানা দিয়ে ধন-সম্পদ লুট করত, মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিত, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করত। তবে ‘রৌদ্র লেখে জয়’ কবিতায় কবি বর্গি বলতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেই বুঝিয়েছেন। তারা এদেশের মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। মাঠ-ঘাট, ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে এই দেশকে এক নরকে পরিণত করেছিল।

প্রশ্ন খ. হানাদারদের কথা মানুষ কেন ভুলবে না?
উত্তর : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। তারাও নির্বিচারে হত্যা করে বাঙালিদের। ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার সব আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস চলতে থাকে তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা বাংলার মানুষ কখনো ভুলবে না।

প্রশ্ন গ. মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে না কেন?
উত্তর : মুক্তিযোদ্ধারা বাংলা মায়ের বীর সন্তান। তাঁরা শত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তারা দেশকে শত্রুমুক্ত করেন। তাঁদের জন্যই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। তাই তাঁদের কথা মানুষ কখনো ভুলবে না।

প্রশ্ন ঘ. মুক্তিসেনারা কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল এবং কেন?
উত্তর : মুক্তিসেনারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চেয়েছিল। তাই তারা এ দেশে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। হত্যা, লুটপাট আর ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে তারা শস্য-শ্যামলা বাংলাকে নরকে পরিণত করে। তাই এ দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য এবং এ দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিসেনারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।

প্রশ্ন ঙ. ‘কাল যেখানে আঁধার ছিল আজ সেখানে আলো।’- কথাটি ব্যাখ্যা করি।
উত্তর : আমাদের বাংলাদেশ এক সময় ছিল পাকিস্তানের একটি অংশ। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নানাভাবে বাংলাকে শাসন-শোষণ করত। বাঙালির স্বাধীনতা, অধিকার বলতে কোনো কিছুই ছিল না। ১৯৭১ সালে তারা এদেশের বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে। বাংলার মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে কেড়ে নেওয়ার জন্য তারা এদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। হত্যা, নির্যাতন আর লুট করে তারা বাংলাদেশকে পরিণত করে এক ধ্বংসস্তূপে। তাদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র পণ্ড করে দেয় বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুদের ধ্বংস করে তারা দেশকে স্বাধীন করে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন পরাধীনতার অন্ধকারে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশে স্বাধীনতার আলো এসেছে, অন্ধকার দূর হয়েছে। কবি এ বিষয়টি বোঝাতে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

৬. বিপরীত শব্দ জেনে নিই। খালি জায়গায় ঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
আধার – আলো, কালো – সাদা, ভালো – খন্দ, জয় – পরাজয়, সকাল – সন্ধ্যা
ক. বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজ দলের – দেখে ছেলেটি আনন্দে নেচে উঠল।
খ. একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা – ব্যাজ পরে শহিদ মিনারে যাই।
গ. – হওয়ার আগেই আমরা বাড়ি পৌঁছে যাব।
ঘ. – নামলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে কিছুই দেখা যায় না।
ঙ. – ছেলের সঙ্গ ত্যাগ করাই উত্তম।

উত্তর :
ক. বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজ দলের জয় দেখে ছেলেটি আনন্দে নেচে উঠল।
খ. একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা কালো ব্যাজ পরে শহিদ মিনারে যাই।
গ. সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমরা বাড়ি পৌঁছে যাব।
ঘ. আঁধার নামলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে কিছুই দেখা যায় না।
ঙ. মন্দ ছেলের সঙ্গ ত্যাগ করাই উত্তম।

৭. কবিতাটি আবৃত্তি করি ও না দেখে লিখি।
উত্তর : কবিতাটি ভালোভাবে মুখস্থ করে আবৃত্তি কর ও না দেখে লেখ।

আরো পড়োবিদায় হজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়োদেখে এলাম নায়াগ্রা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

৮. কর্ম-অনুশীলন।
পাঠ্যবইয়ের বাইরের কোনো কবিতা বা ছড়া পড়ে তা শ্রেণিতে আবৃত্তি করি।
উত্তর : নিজে নিজে কর।