(বাংলা)পঞ্চম: শ্বদেশ কবিতার প্রশ্ন উত্তর

শ্বদেশ হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর আহসান হাবীব এর কবিতা। শ্বদেশ কবিতার অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কবি পরিচিতি জেনে নিই
নাম – আহসান হাবীব।
জন্ম পরিচয়-
জন্ম তারিখ : ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : শঙ্করপাশা, পিরোজপুর।
শিক্ষাজীবন-
উচ্চ মাধ্যমিক : আইএ, ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল।
কর্মজীবন-
সহকারী সম্পাদক— দৈনিক তকবীর, মাসিক বুলবুল। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক— মাসিক সওগাত। স্টাফ আর্টিস্ট— আকাশবাণী, কলকাতা। সাংবাদিকতা- দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক কৃষক, দৈনিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক প্রবাহ।
সাহিত্য সম্পাদক- দৈনিক পাকিস্তান (পরবর্তীকালে দৈনিক বাংলা)।
সাহিত্যকর্ম-
কাব্যগ্রন্থ : রাত্রিশেষ, ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, বিদীর্ণ দর্পণে মুখ প্রভৃতি।
গদ্যগ্রন্থ : অরণ্যে নীলিমা, রাণী খালের সাকো প্রভৃতি।
শিশুতোষ গ্রন্থ : ছোটদের পাকিস্তান, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, ছুটির দিন দুপুরে।
পুরস্কার ও সম্মাননা : বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), একুশে পদক (১৯৭৮) প্রভৃতি।
জীবনাবসান : ১০ জুলাই, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ।

এক নজরে শ্বদেশ কবিতার মূলকথাটি জেনে নিই—
ষড়ঋতুর লীলাভূমি এই বাংলাদেশের রূপের কোনো শেষ নেই। আর এই রূপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদী। যে কারণে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। আর নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষেরা নদীর সাথে মিতালি করে চলে। মানুষের এই জীবনযাত্রা, নদীর জোয়ার, পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ একটি কিশোর মনকে নাড়া দেয়। সে নদীর ধারে বসে চিরচেনা বাংলার রূপসৌন্দর্য উপভোগ করে। মাঠের পরে মাঠে নানা কাজে লেগে থাকা মানুষকে দেখে তার সারা দিন কাটে। দেশের মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি তার স্নেহ-ভালোবাসা জাগে এবং মনের মধ্যে সে ঐসব ছবি আঁকে।

সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই—
জোয়ার, খুশি, আঁকি, জারুল, কড়ি, হাট, শিল্পী, পাখপাখালি।

শ্বদেশ কবিতার প্রশ্ন উত্তর

১. শ্বদেশ কবিতাটির মূলভাব জেনে নিই।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, অর্থাৎ এদেশে সবখানেই নদী দেখা যায়। ‘স্বদেশ’ কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। একটি ছেলে সেই ছবি দেখছে ও তার মনের ভিতরে ধরে রাখছে। নদীর জোয়ার, নদীর তীরে নৌকা বেঁধে রাখা গাছে গাছে পাখির কলকাকলি- সবই ছেলেটির মনে নিজের দেশের জন্য মায়া-মমতা ও ভালোবাসার অনুভূতি জোগাচ্ছে।

২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
কড়ি, টুকটুক, শিল্পী, পাখপাখালি
উত্তর :
কড়ি – এক ধরনের ছোট সাদা ঝিনুক।
টুকটাক – গাঢ়, সুন্দর।
শিল্পী – শিল্প কর্মচারী, কারিগর।
পাখপাখালি – নানা ধরনের পাখি।

৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
টুকটুকে, শিল্পী, পাখপাখালি, কড়ি
ক. এদেশে আগে এখনকার মতো টাকাপয়সা ছিল না। লোকে কেনা-বেচা করত ……… দিয়ে।
খ. মেলা থেকে বোনের জন্য……. একটা জামা কিনে আনব।
গ. জয়নুল আবেদিন ছিলেন একজন বড় মাপের চিত্র……..।
ঘ. বাংলাদেশের গাছে গাছে শোনা যায় …….. কলকাকলি।
উত্তর :
ক. এদেশে আগে এখনকার মতো টাকাপয়সা ছিল না। লোকে কেনা-বেচা করত কড়ি দিয়ে।
খ. মেলা থেকে বোনের জন্য টুকটুকে একটা জামা কিনে আনব।
গ. জয়নুল আবেদিন ছিলেন একজন বড় মাপের চিত্র শিল্পী।
ঘ. বাংলাদেশের গাছে গাছে শোনা যায় পাখপাখালির কলকাকলি।

৪. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. গ্রাম বাংলার কোন ছবিটি আমাদের চেনা?
উত্তর :
নদী, নদীর জোয়ার, নদীতে সারে সারে নৌকা বাঁধা আছে- গ্রামবাংলার এই ছবিটি আমাদের চেনা।

প্রশ্ন খ. কোন ছবিটি টাকা দিয়ে কেনা যায় না?
উত্তর :
নদী, নদীর জোয়ার, নদীতে সারে সারে নৌকা বাঁধা, একটি ছেলের আপন মনে নদীর ধারে বসে থাকা আর নদীর এক তীরে একটি জারুল গাছে দুটি হলুদ পাখির বসে থাকা- এসব নিয়ে গ্রামবাংলার যে ছবি তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

প্রশ্ন গ. স্বদেশ কবিতায় কী দেখে ছেলেটির দিন কেটে যায়?
উত্তর :
অন্তহীন মাঠ, নানা কাজের নানান বেশের মানুষ, মাঠের মানুষের মাঠে যাওয়া আর হাটের মানুষের হাটে যাওয়া দেখে ছেলেটির সারাটি দিন কাটে।

প্রশ্ন ঘ. ‘সব মিলে এক ছবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর :
প্রকৃতি ও জনজীবন নিয়ে আমাদের দেশের যে ছবি সেটিকে কবি ‘সব মিলে এক ছবি’ বলেছেন।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই নদীতে জোয়ার আসে, নদীর ঘাটে সারে সারে নৌকা বাঁধা থাকে। নদীর দুই তীরে নানা রকম গাছপালা। সে গাছে সারা দিন পাখিরা ডাকে। এ দেশে রয়েছে দিগন্তজোড়া মাঠ। নানান কাজের নানান বেশের মানুষ বাস করে এই দেশে। এই বাড়ি, বাগান, মাঠ, ফসল, পাখপাখালি মিলে যে ছবি সেটিকে কবি ‘সব মিলে এক ছবি’ বলেছেন।

পড়ুন →স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন গল্পের প্রশ্ন উত্তর
পড়ুন →বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর

IMG 20230404 093728

৬. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. নদীর তীরে সারি সারি কী রাখা ছিল?
১. জেলেদের জাল
২. গাছের গুঁড়ি
৩. খড়ের গাদা
৪. নৌকা √

খ. ছেলেটির সারাদিন কীভাবে কাটে?
১. খেলাধুলা করে
২. মাঠের মানুষ আর হাটের মানুষ দেখে √
৩. পড়াশোনা করে
৪. বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে

গ. ‘স্বদেশ’ কবিতায় ছেলেটি কীভাবে তার ছবি আঁকে?
১. রং-তুলি দিয়ে
২. পেনসিল দিয়ে
৩. নিজের মনের মধ্যে √
৪. মা বাবার সহযোগিতা নিয়ে

ঘ. ‘স্বদেশ’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের কোন ছবিটি তুলে ধরেছেন?
১. বাংলাদেশের শহরের মানুষের ছবি
২. নদীর পাড়ের জেলেদের ছবি
৩. বাংলাদেশের পাহাড়ি মানুষের ছবি
৪. বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ছবি √

ঙ. ‘এই ছেলেটির মুখ সারাদেশের সব ছেলেদের মুখেতে টুকটুক’– কথাটি কী অর্থে বোঝানো হয়েছে?
১. ছেলেটির মুখের রং
২. ছেলেটির মুখের গড়ন
৩. ছেলেটির মুখের প্রতিচ্ছবি √
৪. ছেলেটির মুখের কথা

৭ শূন্যস্থান পূরণ করি।
‘এই যে ছবি……
……..মতো দেশ,
………দেশের মানুষ
নানা রকম বেশ,
বাড়ি বাগান…….
সব মিলে এক…….
নেই…… নেই……. তবুও
আঁকতে পারি সবই।’
উত্তর :
‘এই যে ছবি এমন আঁকা
ছবির মতো দেশ,
দেশের মাটি দেশের মানুষ
নানা রকম বেশ,
বাড়ি বাগান পাখপাখালি
সব মিলে এক ছবি,
নেই তুলি নেই রঙ,
তবুও আঁকতে পারি সবই।’

৮. ডান দিক থেকে কবিতায় ব্যবহৃত ঠিক কথাটি নিয়ে খালি জায়গায় বসাই।
ক. একলা বসে আপন মনে বসে ……। পুকুর পাড়ে/গাছের তলে/নদীর ধারে
খ. এমনি পাওয়া এই ছরিটি নয় কেনা। টাকায়/কড়িতে/ সোনায়
গ. এক পাশে তার জারুল গাছে দুটি। হলুদ পাখি/জারুল ফুল/শালিক পাখি
উত্তর :
ক. একলা বসে আপন মনে বসে নদীর ধারে।
খ. এমনি পাওয়া এই ছবিটি কড়িতে নয় কেনা।
গ. এক পাশে তার জারুল গাছে দুটি হলুদ পাখি।

৯. কর্ম-অনুশীলন।
নিচের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দেশ সম্পর্কে একটি রচনা লিখি।
আমাদের দেশের নাম, দেশের সীমারেখা ও আয়তন, রাজধানী, বিভাগীয় শহর, প্রধান প্রধান নদনদী, জনসংখ্যা ও ভাষা, জাতীয় প্রতীকসমূহ (ফুল, ফল, মাছ, পশু, পাখি), প্রকৃতি ও পরিবেশ।
উত্তর :

আমাদের দেশ

সংকেত : ভূমিকা; অবস্থান ও আয়তন: স্বাধীনতা লাভ; জনসংখ্যা: জাতি ও ভাষা; ভূ-প্রকৃতি; মানুষের পেশা; ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। অর্থনৈতিক অবস্থা; প্রাকৃতিক সম্পদ; উপসংহার।

ভূমিকা : প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট আমাদের এই বাংলাদেশ যেন শ্যামলিমা ছায়াছবি। শাল, পিয়াল, তাল, তমাল, আঁকাবাঁকা নদ-নদী: ছায়াঘেরা, মায়াভরা, পাখি ডাকা এদেশের রূপের যেন কোনো শেষ নেই। বাংলার মাঠ-ঘাট সবুজ ফসলে ভরা।

অবস্থান ও আয়তন : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিয়ানমার, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের আয়তন ৫৬,১৭৭ বর্গমাইল বা ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার।

স্বাধীনতা লাভ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে । জনসংখ্যা : বাংলাদেশ’ পৃথিবীর একটি অন্যতম জনবহুল দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।

জাতি ও ভাষা : বাংলাদেশে অনেক জাতি বাস করে এবং এদের রয়েছে প্রত্যেকেরই নিজস্ব ভাষা। বাংলাদেশে বসবাসরত জাতিগুলো হলো- মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মগ, চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, ত্রিপুরা, মুড়ং, মণিপুরি, রাখাইন ইত্যাদি। রাষ্ট্রভাষা বাংলা ছাড়াও এখানে রয়েছে ইংরেজি, আরবি, ফারসিসহ বিভিন্ন উপজাতির ভাষা। তবে এখানে মুসলমান সবচেয়ে বেশি এবং বাংলা ভাষা অধিক মানুষের মুখের ভাষা।

ভূপ্রকৃতি : বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকাই পলিবাহিত সমভূমি। মধুপুর ও ভাওয়াল গড়, সিলেটের কিছু অংশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিছু অংশে পাহাড় রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী।

মানুষের পেশা : বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। বাংলাদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক কৃষক। এছাড়া রয়েছে জেলে, মাঝি, তাঁতি, কামার, কুমোর, ছুতার ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ।

ধর্মীয় এ জাতীয় উৎসব : মুসলমানদের দুটো ঈদ রয়েছে : ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। হিন্দুদের দুর্গাপূজা ছাড়াও ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ চলতেই থাকে । বৌদ্ধদের আছে সারা বছরে কয়েকটি বৌদ্ধপূর্ণিমা। খ্রিস্টানদের আছে ‘ইস্টার সানডে’, ‘বড়দিন’ ইত্যাদি উৎসব।
জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সারা জাতিই অংশ নেয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সেগুলো পালিত হয়। এসব দিনে সরকারি ছুটি থাকে। দিনগুলো হলো : ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’, ‘স্বাধীনতা দিবস’, ‘পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ’ ও ‘বিজয় দিবস’। বাংলাদেশের মানুষ ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এসব জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপন করে।

অর্থনৈতিক অবস্থা : বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকেরা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শুরু করায় কৃষির উৎপাদন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাট, তৈরি পোশাক ও চায়ের ওপরও কিছু পরিমাণে বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভর করে।

প্রাকৃতিক সম্পদ : বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। এছাড়াও অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।

উপসংহার : মা ও মাতৃভূমি আমাদের সবার প্রিয়। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। কবির ভাষায়-
“আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।”

Leave a Comment