(সমাজবিজ্ঞান-১ম) এইচএসসি: সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ হচ্ছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী অর্থাৎ এইচএসসি’র সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্রের প্রথম অধ্যায়। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : বাজিতপুর গ্রামের বর্গাচাষী রহিম মিয়ার আজ খুশির দিন। কেননা, নতুন ফসল কেটে সে আজ বাড়িতে তুলেছে। রহিমের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরাও আজ খুব আনন্দিত। তারা মায়ের কাছে নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা ও পায়েস খাওয়ার আবদার করছে। রহিম মিয়ার মনে দুঃখ, কষ্টে ফলানো ফসল অন্যের ঘরে চলে যায়। যদি নিজের কিছু জমি থাকতো তাহলে এ কষ্ট আর থাকতো না।
ক. “সমাজবিজ্ঞান হলো অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান” সংজ্ঞাটি কার?
খ. “সমাজবিজ্ঞান হলো মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান”— কথাটি বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু সমাজবিজ্ঞানের কোন শাখার আলোচ্য বিষয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রহিম মিয়ার অবস্থার উত্তরণে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করো।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. “সমাজবিজ্ঞান হলো অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান”— উক্তিটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমের।

খ. সমাজবিজ্ঞান ন্যায় অন্যায় বোধ নিরপেক্ষ অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিপ্রবণ বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের প্রধান ধর্মই হচ্ছে নৈতিকতার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা। আর তাই সমাজবিজ্ঞানও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। সমাজবিজ্ঞানীগণ ব্যক্তিগত মূল্যবোধের দ্বারা কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়ে যাবতীয় সামাজিক ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করেন। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞানকে মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।
মানবসমাজের আদিম উৎসভূমি হচ্ছে গ্রামীণ সমাজ এবং বর্তমানেও বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ গ্রামনির্ভর। আর এ বিষয়ে জানার জন্যই সমাজবিজ্ঞানে যে শাখার উদ্ভব হয়েছে তা হলো গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের এ শাখায় গ্রামীণ সমাজজীবন, সমাজের অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান, কৃষি কাঠামো, অর্থনীতি, পরিবার, নেতৃত্ব কাঠামো, ক্ষমতা কাঠামো, মর্যাদা, সামাজিক স্তরবিন্যাস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উদ্দীপকেও গ্রামীণ সমাজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এখানে গ্রামের কৃষক রহিম মিয়ার পরিবার ও কৃষি কাঠামোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রহিম মিয়ার ঘরে নতুন ধান ওঠায় পিঠা-পায়েস তৈরির আয়োজন করার বিষয়টি গ্রামীণ সমাজের অন্যতম অনুষ্ঠান নবান্ন উৎসবকে নির্দেশ করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিষয়টি গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানেরই আলোচ্য বিষয়।

ঘ. উদ্দীপকের রহিম মিয়ার অবস্থার উত্তরণে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্দীপকের রহিম মিয়া একজন বর্গাচাষী। সে অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু তার মনে দুঃখ তার ফলানো ফসল অন্যের ঘরে চলে যায়। তার বাসনা তার যদি একটু জমি থাকতো তাহলে এ কষ্ট আর হতো না। রহিম মিয়ার বক্তব্যে সম্পত্তির ভিত্তিতে শ্রেণি বৈষম্যের বিষয়টি বা সম্পত্তির মালিকানার ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাসের দিকটি পরিলক্ষিত হয়। আর সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাস সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাস বলতে বোঝায়, সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে উঁচু-নিচু প্রভেদ। সমাজবিজ্ঞান সমাজের মানুষের এই উঁচু-নিচু প্রভেদ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা চালায়। সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূল কারণ কী, এর শেকড় কোথায় গ্রোথিত, এর পিছনে কোন উপাদানগুলো ক্রিয়াশীল ইত্যাকর বিষয়গুলোর কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি এর সমাধান বা স্তরবিন্যাসের মাত্রা কমিয়ে আনার উপায় নিয়েও বিচার বিশ্লেষণ করে । সমাজে সবাই সম-সম্পদের মালিক নয়, আবার সবাই একই মর্যাদার অধিকারী নয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মানুষই হয় একজনের থেকে বেশি সম্পদশালী, না হয় কম সম্পদশালী। হয় বেশি মর্যাদার অধিকারী, না হয় কম মর্যাদার অধিকারী। সমাজবিজ্ঞান এই কম সম্পদশালী বা কম মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সৎ উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে সামাজিক স্তরবিন্যাস কমিয়ে আনার শিক্ষা দেয়। কেননা, সামাজিক গতিশীলতার মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।
তাই বলা যায়, রহিম মিয়া তার কর্মদক্ষতার মাধমে তার সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান তার জন্য ফলপ্রসূ হবে।

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : শিহাব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে অধ্যয়ন করে সে বিষয়টির উৎপত্তি সম্পর্কে সন্ধান করতে গিয়ে দেখলেন ল্যাটিন শব্দ Socius ও গ্রিক শব্দ Logos থেকে এর উদ্ভব। ১৮৩৯ সালে একজন ফরাসি দার্শনিক তাঁর ‘কোর্স-ডি-ফিলোসফি পজিটিভ’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম এ বিষয়টিকে বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ক. “সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান” উক্তিটি কার?
খ. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের শিহাব কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত বিষয়টি সমাজের সামগ্রিক পাঠ— বিশ্লেষণ করো।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান’ উক্তিটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমের।

খ. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞান অনুসন্ধানের একটি বিশেষ ক্ষেত্র।
শিক্ষাকে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা বা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হিসেবে “শিক্ষা সমাজবিজ্ঞানের’ উৎপত্তি। সমাজবিজ্ঞানের এ শাখাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবিষয় বহির্ভূত নানাবিধ কার্যকলাপ, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশাসনিক দিক, শিক্ষার মাধ্যম, শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন, শিক্ষার সাথে সামাজিক শ্রেণির সম্পর্ক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের সামাজিক দিক নিয়ে শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান গভীর অনুসন্ধান করে। এছাড়া এটি সমাজের অন্যান্য বিষয় যেমন- অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদির সাথে শিক্ষার সম্পর্ক নিয়েও পঠন-পাঠন এবং গবেষণা করে।

গ. উদ্দীপকের শিহাব সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
সমাজবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Sociology’। শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘Socius’ এবং গ্রিক শব্দ ‘Logos’-এর সমন্বয়ে। ‘Socius’ শব্দের অর্থ সমাজ এবং ‘Logos’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। অর্থাৎ উৎপত্তিগত অর্থে সমাজবিজ্ঞান বলতে বোঝায়, সমাজের জ্ঞান। যে শাস্ত্র সমাজ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ বা বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে তাই সমাজবিজ্ঞান। তবে সমাজবিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন, সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম বলেন, “সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।” সমাজবিজ্ঞানী আর. টি. শেফার তার ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেন, “সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক আচরণ ও সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের সুশৃঙ্খল পাঠ।” মোটকথা, সমাজ ও সমাজের মানুষের সাথে জড়িত সব বিষয় নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই সমাজবিজ্ঞান।
উদ্দীপকে দেখা যায়, শিহাব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে অধ্যয়ন করেন সেটি ল্যাটিন শব্দ Socius ও গ্রিক শব্দ Logos থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বিষয়টি ১৮৩৯ সালে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সমাজবিজ্ঞান বা Sociology এর ক্ষেত্রেও এমনটিই দেখা যায়। সমাজবিজ্ঞান ও ১৮৩৯ সালে বিজ্ঞানের মর্যাদা পায় এবং Sociology শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Socius ও গ্রিক শব্দ Logos এর সমন্বয়ে গঠিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শিহাব সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নরত।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের নবীনতম শাখা সমাজবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিষয়টি মানব সমাজের সামগ্রিক পাঠ।
সমাজবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Sociology, যা ল্যাটিন শব্দ Socius (অর্থ-সমাজ) ও গ্রিক শব্দ Logos (অর্থ-বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান) এই দুটি শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। তাই উৎপত্তিগত অর্থে বলা যায়, সমাজ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞানই সমাজবিজ্ঞান। পারিভাষিক অর্থে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান হলো ঐ বিজ্ঞান যা সমাজের সাথে সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে।
সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি ব্যাপক। বস্তুত, মানব সমাজের এমন কোনো দিক নেই যা সমাজবিজ্ঞানে আলোচিত হয়নি। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি দিক নিয়ে সমাজবিজ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন করে। সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার ব্যাপকতার কারণে শাস্ত্রটিকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করে আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে । যেমন— ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান সমাজের অতীত ইতিহাস নিয়ে, বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞান পরিবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে, নগর সমাজবিজ্ঞান নগরের স্বরূপ, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান গ্রামের স্বরূপ, ধর্মের সমাজবিজ্ঞান ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এমনিভাবে সমাজবিজ্ঞানের আরো বহু শাখা রয়েছে যেগুলো বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনা করে। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় মানবসমাজের সাথে জড়িত সব বিষয়ই আলোচিত হয়। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞানকে মানবসমাজের সামগ্রিক পাঠ বলা হয়।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান মানবসমাজের সামগ্রিক পাঠ, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : হালদারপুর অঞ্চলটি বৃহৎ জমির মালিক যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বর্গাদার আর মজুরি খাটা দিনমজুর। সেখানে চেয়ারম্যান, মেম্বার এরাই সামাজিক বিচার, সালিশ করে থাকেন । তবে অঞ্চলটি শিক্ষায় ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। মানুষ আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে। এরই সাথে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে যুবক-যুবতীদের মধ্যে মাদকাসক্তি বা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কাকে বলে?
খ. মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে আলোচ্য বিষয়টির সাথে সমাজবিজ্ঞানের কোন শাখার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘এলাকাটির সাম্প্রতিক পরিবর্তন অনুধাবন এবং সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন একই সূত্রে গাঁথা’ -তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের দক্ষ উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে।

খ. মানুষ সম্পর্কে যে বিজ্ঞান ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধান চালায় তাকে মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞান বলে। এ অর্থে মনোবিজ্ঞানকে মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞান বলা যায়। কেননা, মনোবিজ্ঞান সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, ব্যক্তিত্ব, শিক্ষণ, মনোভাব, আবেগ, প্রেষণা, নেতৃত্ব ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক অধ্যয়ন করে।

গ. উদ্দীপকের আলোচ্য বিষয়টির সাথে সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান এবং অপরাধ সমাজবিজ্ঞানের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্যতম দিক। শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্য, আদর্শ, মূল্যবোধ, ভূমিকা ও কার্যাবলি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায়। সমাজজীবনের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়। ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত করার জন্য সমাজজীবনে গড়ে উঠেছে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণের সাথে সমাজজীবনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। অন্যদিকে অপরাধ সমাজবিজ্ঞান সমাজে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ, এর কারণ, প্রতিকার ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে। শুধু তাই নয়, অপরাধ সংঘটনে যে সামাজিক কারণ দায়ী তাও অপরাধ সমাজবিজ্ঞান তুলে ধরে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত হালদারপুর অঞ্চলটি ক্রমশ শিক্ষায় উন্নত হচ্ছে। এ কারণে মানুষ আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে, যা শিক্ষার সমাজবিজ্ঞানের ভূমিকাকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে এলাকার যুবক যুবতীদের মধ্যে মাদকাসক্তি এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকার এ অবস্থাটি অপরাধ সমাজবিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা অপরাধ সমাজবিজ্ঞান অপরাধ নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের অঞ্চলটির পরিস্থিতি সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান এবং অপরাধ সমাজবিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উপরের আলোচনায় ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের এলাকাটির সাম্প্রতিক পরিবর্তন শিক্ষার উন্নতি, আধুনিক জীবনযাপন এবং একই সাথে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নের সাথে একই সূত্রে গাঁথা। কেননা, এগুলোর উদ্ভব ও বিকাশ সমাজকে কেন্দ্র করে। আর সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হলো সমাজ।
সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন বিজ্ঞান যে বিজ্ঞান সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় যেমন- শিক্ষা, অপরাধ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক আন্দোলন, মানুষের উৎপত্তি ইত্যাদি নিয়ে গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে। সামাজিক পরিবর্তন সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয়। সমাজ কেন পরিবর্তিত হচ্ছে, এই পরিবর্তনে কোন উপাদান ভূমিকা রাখছে, কোন প্রেক্ষিতে এটি ঘটছে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সমাজবিজ্ঞান গবেষণা করে।
উদ্দীপকের গ্রামটিতে শিক্ষার উন্নতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। অর্থাৎ গ্রামটিতে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এই পরিবর্তন কিভাবে সংঘটিত হয়েছে, কেন সংঘটিত হয়েছে তা জানতে হলে সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন জরুরি। আবার লক্ষণীয় উদ্দীপকের গ্রামটিতে মাদকাসক্তি ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। আর সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সমস্যা নিয়ে বৃহাদাকারে আলোচনা-পর্যালোচনা করে।
সামাজিক সমস্যা সমাজ থেকেই উদ্ভূত হয়; সমাজের মানুষ দ্বারাই সংঘটিত হয়। সে কারণে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান বা অধ্যয়নকে উপেক্ষা করে এসব সমস্যার সমাধান নয়।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হোক ইতিবাচক বা নেতিবাচক তা সমাজবিজ্ঞান ছাড়া বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। তাই উদ্দীপকের পরিবর্তন এবং সমাজবিজ্ঞান একই সূত্রে গাঁথা।

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : হাসিব পড়াশোনা শেষ করে রাজনীতি করতে চায়। কিন্তু রাজনৈতিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, আদর্শ ইত্যাদি সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কেও সে কিছুই জানে না। এ বিষয়ে জানার জন্য সে বিভিন্নজনের সাথে আলোচনা করে। একদিন তার বন্ধু কমল তাকে জানাল যে, সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত একটি শাস্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে, যা পাঠ করলে এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে।
ক. ‘Economy and Society’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
খ. ‘সমাজবিজ্ঞান সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতার বিজ্ঞান’- ব্যাখ্যা করো।
গ. কমল হাসিবকে কোন শাস্ত্র পাঠ করার কথা বলেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয়টির পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’- তুমি কি এ বক্তব্যটি সমর্থন কর? যুক্তিসহ মতামত উপস্থাপন করো।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘Economy and Society’ গ্রন্থটির রচয়িতা জার্মান দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার।

খ. ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ তার Systeme de Politique Positive’ গ্রন্থে সমাজবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে শাস্ত্রটিকে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক গতিশীলতার বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কোঁৎ সামাজিক স্থিতিশীলতা বলতে পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা, বিবাহ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির পারস্পরিক সম্পর্কের আলোচনাকে বুঝিয়েছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এ বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে স্থায়ী। অন্যদিকে সামাজিক গতিশীলতা বলতে তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান কীভাবে কালের চক্রের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে তার আলোচনাকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ সামাজিক গতিশীলতা সমাজের পরিবর্তন, বিবর্তন, প্রগতি, স্তরবিন্যাস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করে। কোঁৎ মনে করেন, সমাজবিজ্ঞানে এ দুটি বিষয় সম্পর্কেই মূলত আলোচনা করা হয়। আর অগাস্ট কোঁৎ-এর এ মতের ওপর ভিত্তি করে সমাজবিজ্ঞানকে ‘সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতার বিজ্ঞান’ বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের কমল হাসিবকে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্র পাঠ করার কথা বলেছে।
আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান এমন একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান, যার মূল বিষয় হলো মানুষের সামাজিক সম্পর্কের সামগ্রিক আলোচনা । সামাজিক এ সম্পর্কের ভিতরে পারিবারিক জীবন যেমন অন্তর্ভুক্ত, তেমনি ব্যক্তির রাজনৈতিক জীবনও এর আওতাভুক্ত। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের সেই বিশেষ শাখা, যা সমাজের রাজনৈতিক বিষয়াবলি আলোচনা করে। এ জন্যই বলা হয়, সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন না করলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ অনুধাবন প্রায় অসম্ভব। কেননা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয় হলো রাষ্ট্র, আর এই রাষ্ট্র প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল সামাজিক সংগঠন। এ জন্যই সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি রাজনীতি করতে চাইলে তাকে অবশ্যই সমাজবিজ্ঞান পাঠ করতে হবে।
উদ্দীপকের হাসিব পড়াশোনা শেষ করে রাজনীতি করতে চায়। কিন্তু রাজনৈতিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, আদর্শ ইত্যাদি সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কেও সে কিছুই জানে না। পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হাসিবকে অবশ্যই সমাজবিজ্ঞান পাঠ করতে হবে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায় যে, কমল হাসিবকে রাজনীতি করার পূর্বে এ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের জন্য সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্র পাঠ করতে বলেছে।

ঘ. ‘উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে- আমি এ বস্তুবাকে সমর্থন করি। এ বিষয়ে আমার যুক্তি নিচে উপস্থাপন করা হলো-
প্রতিটি শাস্ত্রের মতো সমাজবিজ্ঞানেরও সুনির্দিষ্ট আলোচনার পরিধি রয়েছে। তবে অন্যান্য শাস্ত্রের চেয়ে এর আলোচনার পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। কেননা সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, যা ব্যাপক ও বিস্তৃত। বস্তুত মানুষের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ের সঙ্গেই সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইতিহাস, অর্থনীতি, মন ও শরীর সম্পর্কীয় বিষয়সমূহ, ধর্ম, শিক্ষা, রাজনীতি, আইন, শিল্প প্রভৃতি সব বিষয়ের সাথেই সমাজবিজ্ঞানের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সমাজ যতো আধুনিক হচ্ছে এ বিষয়গুলোর পরিধিও ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজবিজ্ঞানের পরিধিও ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। আর এ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা-প্রশাখা। এসব নতুন সৃষ্ট শাখার মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণ ও নগর সমাজবিজ্ঞান, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, শিল্প সমাজবিজ্ঞান, শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান, আইনের সমাজবিজ্ঞান, সামাজিক পরিসংখ্যান, অপরাধের সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি। আবার এসব শাখাসমূহের আলোচ্য বিষয় নিয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে বহু প্রশাখা। যেমন- পরিবার ও বিবাহের সমাজতত্ত্ব, চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান, আত্মহত্যার সমাজতত্ত্ব, পেশার সমাজবিজ্ঞান, নামের সমাজবিজ্ঞান, কাঠামোগত সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, সময়ের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রের ব্যাপ্তি ও পরিধি ক্রমশ বিস্তৃতি লাভ করছে। আর তাই প্রশ্নোল্লিখিত বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি।

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : দীর্ঘ পাঁচ দশকের গৃহযুদ্ধের পর কলম্বিয়ায় শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে রেভুলেশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া (ফার্ক) ও সে দেশের সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ সংবাদ শুনে তানিশা মনে করে, সম্পদ ও সম্পত্তিই সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করে।
ক. শিল্পকলা ও সাহিত্য কী হিসেবে বিবেচিত হয়?
খ. সামাজিক জনবিজ্ঞান বলতে কী বোঝ ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চুক্তির মাধ্যমে কোন দুটি বিষয়ে জ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের উক্ত বিষয় দুটির মধ্যকার পার্থক্য উপস্থাপন করো।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. শিল্পকলা ও সাহিত্য সমাজের দর্পণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

খ. জনসংখ্যাতত্ত্ব, জনসংখ্যার কাঠামো, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, জনসংখ্যার বণ্টন, এবং তার সামাজিক প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণা করে সমাজবিজ্ঞানের যে শাখা, তাকে সামাজিক জনবিজ্ঞান (Social Demography) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ, সমাজের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এবং একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বণ্টন ব্যবস্থা সম্পর্কে সামাজিক জনবিজ্ঞান অনুসন্ধান চালায়। সমাজবিজ্ঞানের বিশেষ এ শাখাটি জনসংখ্যার স্থানান্তর গমন সম্পর্কেও গবেষণা করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চুক্তির মাধ্যমে যে দুটি বিষয়ের জ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে তা হলো অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান।
অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান এ দুটি সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সমাজজীবনকে যেমন অর্থনীতি প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে থাকে, তেমনি সামাজিক পরিবেশ দ্বারাও অর্থনীতি প্রভাবিত হয়ে থাকে। অনেকের মতে, সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া অর্থনীতির আলোচনা ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে এবং এ ধরনের পদক্ষেপ অসম্পূর্ণ হতে পারে। অনুরূপভাবে সমাজবিজ্ঞানের আলোচনাও অর্থনৈতিক বিধিসমূহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধারণা ছাড়া মূল্যহীন প্রতিপন্ন হয়। অর্থনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পদ, উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, সন্ধায় প্রভৃতি। অর্থনীতির এসব প্রতিপাদ্য বিষয়রে ওপর ভিত্তি করে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রত্যয়কে বিশ্লেষণ করা হয়। উদ্দীপকে যেহেতু সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তির কথা বলা হয়েছে সে দিক থেকে বলা যায় এটি অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত। আর তানিশার বক্তব্যে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক পরিবর্তনের কথা ফুটে উঠেছে যা সমাজবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং আমরা বলতে পারি, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিকৃত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান।
সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু অনেক ব্যাপক। কারণ সমাজস্থ মানুষের সামগ্রিক আলোচনা সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে অর্থনীতি কেবল মানুষের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা করে থাকে। অর্থনীতি হচ্ছে বিশেষীকৃত সামাজিক বিজ্ঞান। অপরদিকে সমাজবিজ্ঞানকে বলা হয় সাধারণ সমাজবিজ্ঞান। মূলত সমাজবদ্ধ মানুষের সমষ্টিগত আচার-আচরণই সমাজবিজ্ঞানের উপজীব্য বিষয়। পক্ষান্তরে, অর্থনীতির আলোচনায় মানুষের ব্যক্তিগত আচার-আচরণ ও কার্যকলাপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে বস্তুনিরপেক্ষ বিজ্ঞান। অপরপক্ষে, অর্থনীতি হলো একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের আলোচনা হলো সমাজকেন্দ্রিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। পক্ষান্তরে অর্থনীতির আলোচনায় মানুষের ব্যক্তিগত আচার, আচরণও গুরুত্ব পায়। সমাজবিজ্ঞান একটি নতুন সামাজিক বিজ্ঞান। কিন্তু অর্থনীতির উৎপত্তি হয়েছে বহু প্রাচীনকালে। উপরের আলোচনায় সুস্পষ্ট যে, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য বিদ্যমান।

Leave a Comment