(বাংলা) ৬ষ্ঠ: বুঝে পড়ি লিখতে শিখি (৩য় পরিচ্ছেদ: তথ্যমূলক লেখা) – সমাধান

বুঝে পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৫ম অধ্যায়। বুঝে পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ তথ্যমূলক লেখা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
ক. লেখক-সম্পর্কিত তথ্য : সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক। বাঙালির ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে তিনি বেশ কিছু লেখা লিখেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
খ. তথ্যমূলক লেখাটির সারাংশ : তথ্যমূলক এই লেখাটিতে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, সামাজিক আন্দোলন ও মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন যেমন সাহিত্য রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তেমনি নারী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি দুইভাবে নারীদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এক. মেয়েদের জন্য স্কুল স্থাপন করে, দুই. নিজের লেখায় নারীমুক্তির দিকনির্দেশনা দিয়ে।
গ. নামকরণ : তথ্যমূলক এই লেখাটিতে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই রচনাটির নাম ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ সফল ও সার্থক।
ঘ. তথ্যমূলক লেখাটির ভাষা : তথ্যমূলক এই লেখাটি সহজ-সরল প্রমিত ভাষায় লেখা হয়েছে।

তথ্যমূলক লেখা
যেকোনো লেখায় তথ্য থাকে। তবে যে লেখা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে লেখা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়, তাকে তথ্যমূলক লেখা বলে। তথ্যমূলক লেখায় বর্ণনার চেয়ে তথ্যগত শুদ্ধতা জরুরি।

তথ্যমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য
১. তথ্যমূলক লেখা নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বিষয় ও ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়।
২. তথ্যমূলক লেখায় প্রয়োজনে ছক-ছবি-সারণি ও অডিও-ভিডিও লিংক থাকতে পারে।
৩. তথ্যমূলক লেখার জন্য বই, সংবাদপত্র, গবেষণাপত্র, প্রবন্ধ, সরকারি পরিপত্র এবং ইন্টারনেটনির্ভর বিভিন্ন সাইট তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে।
৪. তথ্যমূলক লেখায় সাক্ষাৎকার কিংবা ব্যক্তির বক্তব্য তথ্যভান্ডার হিসেবে ভূমিকা রাখে।
৫. তথ্যমূলক লেখা সাধারণত বর্ণনামূলক ভাষায় লেখা হয় এবং লেখক ব্যক্তিনিরপেক্ষ থেকে তার লেখায় তথ্যগুলো প্রকাশ করেন।

তথ্যমূলক লেখা রচনার উপায়
তথ্যমূলক লেখা লিখতে হলে প্রথমে বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যভান্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হতে হবে। তথ্যমূলক লেখা তৈরিতে লেখককে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

আরো পড়ো →১ম পরিচ্ছেদ : প্রায়োগিক লেখা
আরো পড়ো →২য় পরিচ্ছেদ: বিবরণমূলক লেখা

তথ্যযাচাই ও তথ্যসূত্র
তথ্যমূলক লেখার ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই ও তথ্যসূত্রের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়। যেকোনো তথ্যমূলক লেখার পূর্বে সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। সেসব তথ্য যাতে বস্তুনিষ্ঠ হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তাছাড়া যেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার সূত্র থাকতে হয়। তাহলেই তথ্যমূলক লেখা হয়ে বস্তুনিষ্ঠ।

তথ্যমূলক লেখার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
তথ্যমূলক লেখার জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। যিনি এ ধরনের লেখক, তিনি একজন তথ্য সংগ্রাহকও বটে। ফলে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য- উপাত্ত আগে সংগ্রহ করবেন। প্রয়োজনে, তথ্যগুলোর সংখ্যা, নাম, স্থান, বস্তু বা ব্যক্তি বা প্রাণীর বৈশিষ্ট্য জানতে হবে। বিভিন্ন নাম, ঠিকানা, জরুরি মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ ও সাল, ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত জীবন সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হতে হবে। তথ্যবিন্যাসের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তথ্যগুলো সাজাতে হবে।

তথ্যমূলক লেখার ধরন
তথ্যমূলক লেখা অনেকরকম হতে পারে। ধর্ম, রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলা ও জীবনী তথ্যমূলক লেখার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

৩য় পরিচ্ছেদ : তথ্যমূলক লেখা

১. ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনাটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. এই লেখায় কী ধরনের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে?
খ. এই লেখার কোন তথ্যটি তোমার ভালো লেগেছে?
গ. এ ধরনের আর কী কী রচনা তুমি আগে পড়েছ?
ঘ. কাদের নিয়ে এ ধরনের লেখা তৈরি করা হয়?
ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?

নমুনা উত্তর :
ক. ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনায় একজন মহীয়সী নারীর জীবনভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

খ. এই লেখায় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ ও অনুরাগ তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষা ও উন্নতির জন্য রোকেয়ার জীবনভর প্রচেষ্টার দিক তুলে ধরা হয়েছে। এসব দিকগুলো আমার ভালো লেগেছে।

গ. মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে এ ধরনের ‘তথ্যমূলক লেখা আমি আগে পড়েছি।

ঘ. এ ধরনের লেখা তৈরি করা হয় বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে। এছাড়া যাঁরা মানুষের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন, এমন সুপরিচিত ব্যক্তিদের নিয়েও এ ধরনের লেখা তৈরি হয়।

ঙ. এই লেখা থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জীবন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এছাড়া তার লেখা বিভিন্ন বইয়ের কথা জানতে পেরেছি। তার নানা মহৎ কাজ সম্পর্কে জানতে পেরেছি।

২. ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনায় লেখক যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর :
সেলিনা হোসেনের ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনাটি তথ্যমূলক লেখার চমৎকার দৃষ্টান্ত। এখানে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। তিনি বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ। মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ও চেষ্টার কথা পড়ে আমারা অনুপ্রাণিত হই। তিনি মহৎ কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। এই লেখায় বেগম রোকেয়ার সংগ্রামী জীবনকাহিনি জানতে পারি। তিনি কেবল বাস্তবেই নারীশিক্ষার কথা বলেননি; বরং এই নিয়ে বইও লিখেছেন। প্রতিকূল সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে। ১৮৯৭ সালে কিশোরী বয়সে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনকে বিয়ে করেন। স্বামীর সহযোগিতায় তিনি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। বাংলা ভাষা ছাড়াও ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী হয়েছেন। ১৯০২ সালে কলকাতার ‘নবপ্রভা’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি: ‘মতিচূর’ প্রথম খণ্ড (১৯০৪), ‘সুলতানাজ ড্রিম’ (১৯০৮), ‘মতিচূর’ দ্বিতীয় খণ্ড (১৯২২), ‘পদ্মরাগ’ (১৯২৪) ও ‘অবরোধবাসিনী’ (১৯৩১)। বিশেষ করে বাঙালি মুসলমান নারীদের শিক্ষিত করার জন্য তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এভাবে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমরা ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ শিরোনামের লেখাটি পড়ে এতগুলো তথ্য জেনেছি। কারণ এই লেখাটি তথ্যমূলক লেখা।

1 thought on “(বাংলা) ৬ষ্ঠ: বুঝে পড়ি লিখতে শিখি (৩য় পরিচ্ছেদ: তথ্যমূলক লেখা) – সমাধান”

Leave a Comment