(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: পড়ে পাওয়া গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

পড়ে পাওয়া হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কিশোর গল্প। পড়ে পাওয়া গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : রেল স্টেশনের ক্লিনার মতি মিয়া দায়িত্ব পালনের সময় পাঁচশ টাকার নোটে ভর্তি একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান। টাকাগুলো দেখে তাঁর মন খুশিতে ভরে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি যার টাকা তার অসুবিধার কথা ভেবে লোভ সংবরণ করেন। অবশেষে তিনি টাকাসহ মানিব্যাগটি স্টেশন মাস্টারের কাছে জমা দেন। পরে স্টেশন মাস্টার প্রকৃত মালিকের সন্ধান পেয়ে টাকাসহ মানিব্যাগটি ফেরত দেন।
ক. ‘পত্রপাঠ বিদায়’ কথাটির অর্থ কী?
খ. ‘এক মুহূর্তে দুজনের মনই বদলে গেল’ -কেন?
গ. উদ্দীপকের মতি মিয়া কোন দিক থেকে পড়ে পাওয়া গল্পের বালকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে পাওয়া গল্পের মূল চেতনাকে ধারণ করেছে কি? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘পত্রপাঠ বিদায়’ কথাটির অর্থ তাৎক্ষণিক বিদায়।

খ. নৈতিক বোধ জেগে ওঠায় এক মুহূর্তে দুজনের মনই বদলে গেল।
টিনের বাক্সটি কুড়িয়ে পাওয়ার পর গল্পকথক ও বাদল তাদের কর্তব্য স্থির করার জন্য তেঁতুলতলায় বসে পড়ে। বাদল বাক্সটির তালা ভাঙার জন্য প্রস্তাব করে এবং এর ভেতরে যা আছে তা দুজনে ভাগ করে নিতে চায়। সে মজা করে সন্দেশ খাওয়ার কথাও ভাবে। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা যার টিনের বাক্স তার অসুবিধার কথা উপলব্ধি করে। কারণ বাক্সটি হয়তো কোনো গরিব লোকের। তার হয়তো রাতে ঘুম হচ্ছে না। তাই বাক্সটির তালা ভাঙলে অন্যায় ও অধর্ম হবে বলে তারা মনে করে। অবশেষে তারা ভাবে যার বাক্স তাকে তা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরূপ ভাবনার ফলে তাদের উভয়ের মনে নৈতিক বোধ জেগে ওঠে এবং এক মুহূর্তের মধ্যে দুজনের মন বদলে যায়।

গ. লোভ সংবরণ, উন্নত মানবিক বোধ ও দায়িত্বশীলতার দিক থেকে উদ্দীপকের মতি মিয়া ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের বালকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
লোভ সংবরণ করা একটি উন্নত মানবিক গুণ। যারা সৎ, আদর্শবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ তারা অনায়াসে লোভ সংবরণ করতে পারেন। তারা পরের ধন হাতের কাছে পেলেও কখনো তা আত্মসাৎ করার চিন্তা করেন না।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, রেল-স্টেশনের ক্লিনার মতি মিয়া দায়িত্ব পালনকালে পাঁচশ টাকার নোটে ভর্তি একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান। ব্যাগের টাকাগুলো দেখে তার মন খুশিতে ভরে উঠলেও পরক্ষণেই তিনি যার টাকা তার অসুবিধার কথা ভেবে লোভ সংবরণ করেন। অবশেষে তিনি টাকাসহ মানিব্যাগটি স্টেশন মাস্টারের কাছে জমা দেন। পরে ব্যাগের প্রকৃত মালিক তা ফিরে পায়। মতি মিয়ার এরূপ বোধ দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। পড়ে পাওয়া গল্পের বালকদের মধ্যেও অনুরূপ গুণাবলি লক্ষ করা যায়। তারা কুড়িয়ে পাওয়া টিনের বাক্সটির প্রতি কোনো লোভ করেনি। তারা ভেবেছে, টিনের বাক্সটি হয়তো কোনো গরিব লোকের। সে হয়তো রাতে ঘুমোতে পারছে না। বালকেরা অন্তর দিয়ে লোকটির কষ্ট অনুভব করেছে। তাই অন্যায়, অধর্ম হবে মনে করে তারা টিনের বাক্সের তালাটি ভাঙেনি। শুধু তাই নয়, তারা টিনের বাক্সটি এর প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তা এর মালিককে ফেরত দিতে পেরেছে। এতে বোঝা যায়, নির্লোভ মানসিকতা, উন্নত মানবিক বোধ ও দায়িত্বশীলতার দিক থেকে উদ্দীপকের মতি মিয়া পড়ে পাওয়া গল্পের বালকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে পাওয়া গল্পের মূল চেতনাকে ধারণ করেছে। কেননা, তাতে উক্ত বালকদের নির্লোভ মানসিকতা, উন্নত মানবিক বোধ ও দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটেছে।
সততা মহৎ মানবিক গুণ। মানুষের চিন্তা, কর্ম ও আচরণে এর প্রকাশ ঘটে। সৎ ও আদর্শবান মানুষেরা সহজেই লোভ সংবরণ করতে পারেন। সুযোগ পেলেও তারা পরের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করেন না।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, রেল-স্টেশনের ক্লিনার মতি মিয়া দায়িত্ব পালনের সময় পাঁচশ টাকার নোটে ভর্তি একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান। ব্যাগের টাকাগুলো দেখে খুব খুশি হলেও পরক্ষণে যার টাকা তার অসুবিধার কথা ভেবে তিনি লোভ সংবরণ করেন এবং টাকাসহ মানিব্যাগটি স্টেশন মাস্টারের কাছে জমা দেন। পরে স্টেশন মাস্টার প্রকৃত মালিকের সন্ধান পেয়ে টাকাসহ মানিব্যাগটি ফেরত দেন। উদ্দীপকের এরূপ বর্ণনায় ক্লিনার মতি মিয়ার চারিত্রিক সততা তথা নির্লোভ মানসিকতা, উন্নত মানবিক বোধ ও দায়িত্বশীলতার প্রকাশ ঘটেছে। ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের বালকদের মধ্যেও অনুরূপ চারিত্রিক গুণাবলির পরিচয় পাওয়া যায়। তারা কুড়িয়ে পাওয়া অর্থ-সম্পদের প্রতি কোনো লোভ করেনি। যার টিনের বাক্স তাকে তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে তারা বয়সের চেয়েও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের নৈতিক অবস্থানও বেশ দৃঢ়। বালকদের এরূপ উন্নত মানবিক বোধ, নির্লোভ মানসিকতা ও দায়িত্বশীল আচরণ গল্পটির মূল চেতনা- যা উদ্দীপকের মতি মিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকটি পড়ে পাওয়া’ গল্পের মূল চেতনাকে ধারণ করেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : অলিপুর মাদরাসার পিয়ন রহমত আলী একজন দরিদ্র মানুষ। একদিন তিনি মাদরাসার ওজুখানার পাশে একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান। ব্যাগের ভিতর এক হাজার টাকার চকচকে নোটসহ কয়েকটি পাঁচ টাকার নোট ছিল। কিন্তু রহমত আলীর কোনো লোভ হলো না। তিনি মানিব্যাগটি এনে মাদরাসার অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন। পরে ব্যাগের মালিক তা ফেরত পায়।
ক. বালকদের মধ্যে কার হাতের লেখা ভালো ছিল?
খ. লোকটা অপ্রতিভভাবে চলে গেল কেন?
গ. উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে পড়ে পাওয়া গল্পের বালকদের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘পড়ে পাওয়া শিক্ষণীয় দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বালকদের মধ্যে বাদলের হাতের লেখা ভালো ছিল।

খ. ধরা পড়ে গেছে বুঝতে পেরে লোকটি অপ্রতিভভাবে চলে গেল।
টিনের বাক্স পাওয়ার খবর জানতে পেরে একজন কালোমতো লোক এসে বাক্সটি তার বলে দাবি করে। কিন্তু সে বাক্স সম্বন্ধে লেখকের বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে না। সে একবার বলে বাক্সটি কাঠের, আবার টিনের। বাক্সের রং কেমন তাও সে বলতে পারে না। লেখকের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পেরেই লোকটি অপ্রতিভভাবে চলে গেল।

গ. উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে পড়ে পাওয়া গল্পের বালকদের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই রয়েছে।
মানুষ দোষ-গুণের সমন্বয়ে সৃষ্ট। কিন্তু মানুষ যখন নিজের দোষ সম্বন্ধে বুঝতে পেরে তা পরিত্যাগ করে তখন সে হয়ে ওঠে আদর্শ। মানুষ। পড়ে পাওয়া গল্পে বালকরা যখন টিনের বাক্সটি পায়, তখন প্রথমে তাদের লোভ জেগে উঠলেও পরে তারা সেই লোভ ত্যাগ করে নৈতিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
উদ্দীপক থেকে জানা যায়, অলিপুর মাদরাসার পিয়ন রহমত আলী একদিন মাদ্রাসার ওজুখানার পাশে একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান। মানিব্যাগে এক হাজার টাকার চকচকে নোটসহ কয়েকটি পাঁচশ টাকার নোট ছিল। কিন্তু দরিদ্র রহমত আলীর একটুও লোভ হলো না। তিনি মানিব্যাগটি এনে অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন। পরে ব্যাগের মালিক তা ফেরত পায়। ‘পড়ে পাওয়া গল্পের বালকেরাও একটি টিনের বাক্স কুড়িয়ে পেয়ে তা মালিককে ফেরত দেয়। তবে প্রথম দিকে তাদের মধ্যে বাক্সটি আত্মসাৎ করার লোভ জেগে উঠেছিল। কিন্তু উদ্দীপকের রহমত আলীর মধ্যে অনুরূপ কোনো লোভ জেগে উঠেনি। তাই বলা যায় যে, রহমত আলীর সাথে ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের বালকদের যেমন সাদৃশ্য রয়েছে, তেমনি কিছু বৈসাদৃশ্যও দেখা যায়।

ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে পাওয়া গল্পের শিক্ষণীয় দিক তথা সততা ও নৈতিকতার প্রতিনিধিত্ব করে।
পড়ে পাওয়া গল্পের শিক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে সততা ও নৈতিকতা। অন্যের হারানো সম্পদ পাওয়ার পর তা মালিককে ফেরত দেওয়া নৈতিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। গল্পের বালকেরা টিনের বাক্সটি কুড়িয়ে পেয়ে লোভের জালে বন্দি থাকেনি। বাক্সটি তার মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে তারা সততা ও নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে অলিপুর মাদরাসার পিয়ন রহমত আলী একজন দরিদ্র মানুষ। তিনি একদিন মাদরাসার ওজুখানার পাশে একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান। ব্যাগটির ভিতরে চকচকে এক হাজার টাকার নোটসহ কয়েকটি পাঁচশ টাকার নোট ছিল। কিন্তু রহমত আলী কোনো লোভ না করে ব্যাগটি মাদরাসার অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন। পরে ব্যাগের মালিক তা ফেরত পায়। রহমত আলী টাকার প্রতি লোভ না করে এবং ব্যাগটি তার মালিকের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে সততা ও নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘পড়ে পাওয়া গল্পের বালকেরাও কুড়িয়ে পাওয়া টিনের বাক্সটি মালিককে ফেরত দিয়ে অনুরূপ সততা ও নৈতিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। এই বালকদের বয়স কম হলেও তাদের নৈতিক অবস্থান বেশ দৃঢ়।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পড়ে পাওয়া গল্পের বালকদের যে নৈতিক দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়, উদ্দীপকটি গল্পের সেই শিক্ষণীয় দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।

পড়ুন → ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : রাণী ঝাড়ুদারের কাজ করে। রাস্তা ঝাড়ু দিতে গিয়ে সে একটি গহনার বাক্স কুড়িয়ে পায়। তার মধ্যে লোভ জন্ম নেয়। সে বাক্সটি নিজের কাছে রাখতে চাইলে তার বোন তাকে থানায় জমা দিতে বলে। পরের দিন রাণী বাক্সটি নিকটস্থ থানায় জমা দিয়ে আসে। প্রকৃত মালিক বাক্সটি ফেরত পেয়ে রাণীর জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে আসে।
ক. কালবৈশাখী ঝড় মানে কীসের সময়?
খ. ‘দুজনই হঠাৎ ধার্মিক হয়ে উঠল’ -কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘পড়ে পাওয়া গল্পের কোন দিকটি সংগতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রাণীর বোনের নীতিবোধ ‘পড়ে পাওয়া” গল্পের মূল চেতনারই অংশ- বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কালবৈশাখী ঝড় মানে আম কুড়ানোর সময়।

খ. দুজনই হঠাৎ ধার্মিক হয়ে উঠল।- কথাটিতে গল্পের কিশোরদের সৎ ও নির্লোভ মানসিকতা ফুটে উঠেছে।
পড়ে পাওয়া গল্পের বাদল ও গল্পকথক একটি টিনের কুড়িয়ে পায়। বাক্সটার মধ্যে দামি কিছু আছে বলে তারা মনে করে। তাই ভারা এটি ভাঙতে চায়। কিন্তু হঠাৎ তাদের মনে আসে- ‘না, বাক্সটি ভাঙা ঠিক হবে না। কারণ এই বাক্সের মালিক তো তারা নয়। যে লোকের বাক্সটি সে হয়তো চিন্তায় রাতে পারবে না।’ এই কথা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুজনেই ধার্মিক হয়ে উঠল এবং বাক্সটির প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার উপায় খুঁজতে লাগল।

গ. উদ্দীপকের সাথে পড়ে পাওয়া গল্পের গোষ্ঠী মানসিকতার পাশাপাশি কিশোরদের সত্যাশ্রয়ী দিকটি সংগতিপূর্ণ । সততা মানুষের একটি মহৎ গুণ। সৎ মানুষেরা কখনো অন্যের জিনিস আত্মসাৎ করে না। বিবেকবোধ তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করে।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তু লোভী মানসিকতার পাশাপাশি সততা-নির্ভর। এখানে রাণী প্রথমে সত্যাশ্রয়ী হতে পারেনি। তার মধ্যে লোভ তাড়া করে। যে কারণে সে কুড়িয়ে পাওয়া গহনার বাক্স আত্মসাৎ করতে চেয়েও তা সম্ভব হয়নি। পরে বোনের কথায় তার সংবিদ ফিরে আসে এবং সত্যাশ্রয়ী হয়। অনুরূপ সংগতিপূর্ণ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে পড়ে পাওয়া গল্পে। এ গল্পে দুই কিশোর একটি বাক্স কুড়িয়ে পায়। তারা প্রথমে বাক্সের জিনিস নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে চায়। পরক্ষণেই তাদের মধ্যে চেতনা ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হয়। বাক্সের মালিকের কষ্টের কথা স্মরণ করে তারা বাক্সটি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে নৈতিকতাবোধ ও সদগুণের বিষয়টি উভয় ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ।

ঘ. বাস্তবিকই উদ্দীপকের রাণীর বোনের নীতিবোধ পড়ে পাওয়া পক্ষের মূল চেতনারই অংশ।
চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। আর সততা মানুষের এই চরিত্র গঠনের অন্যতম উপায়। সততার সাথে যারা জীবনযাপন করে তারা সর্বত্রই সম্মানিত হয়।
উদ্দীপকের রাণী একজন ঝাড়ুদার। সে রাস্তায় ঝাড়ু দিতে গিয়ে একটা গহনার বাক্স কুড়িয়ে পায়। এজন্য তার মনে প্রথমে লোভ জনে এবং বাক্সটি তার নিজের কাছে রাখতে চায়। কিন্তু তার বোন তা করতে দেয়নি। গহনার বাক্সটি তাকে থানায় জমা দিতে বলে। রাণীর বোনের এমন মনোভাবে সত্যাশ্রয়ী দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। তার বিবেকবোধ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
‘পড়ে পাওয়া’ গল্পে কিশোরদের ঐক্যচেতনার যেমন পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি তাদের উন্নত মানসিক বোধেরও প্রকাশ ঘটেছে। কিশোরদের এমন সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধ আলোচ্য গল্পের মূল চেতনা। এমন চেতনাবোধ উদ্দীপকের রাণীর বোনের মাঝে লক্ষণীয়। কারণ তার বোনের নীতিবোধের কারণেই প্রকৃত মালিক বাক্সটি ফেরত পায় এবং রাণীর জন্য উপহার নিয়ে আসে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : রতন দীর্ঘদিন ধরে কবুতর পোষে। প্রতিবেশী স্বপন রতনের কবুতর পোষা দেখে সেও একজোড়া কবুতর কিনল। কয়েকদিন পরে স্বপনের কবুতর জোড়া রতনের কবুতরের সাথে কবুতরের ঘরে প্রবেশ করল। রতন দেখে খুশি হয়ে তার মাকে বলে স্বপনের কবুতর জোড়া রেখে দেই। মা রতনকে বুঝিয়ে স্বপনকে কবুতর ফিরিয়ে দেয়।
ক. পড়ে পাওয়া গল্পে বাক্সের রং কী ছিল?
খ. পড়ে পাওয়া গল্পের আলোকে “দুজনেই হঠাৎ ধার্মিক হয়ে উঠলাম”- কথা দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মা চরিত্রের সাথে পড়ে পাওয়া গল্পের মিল পাওয়া যায়- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে পড়ে পাওয়া পরের ঘটনাটি কি সঙ্গতিপূর্ণ তোমার মতামত দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. পড়ে পাওয়া গল্পে সবুজ রঙের বাক্স ছিল।

খ. দু’জনই হঠাৎ ধার্মিক হয়ে উঠলাম’ কথাটি দ্বারা কিশোরদের সৎ ও নির্লোভ মানসিকতার দিকটি বোঝানো হয়েছে।
পড়ে পাওয়া গল্পে গল্প কথক ও তার বন্ধু একটি টিনের বাক্স কুড়িয়ে পায়। বাক্স পেয়ে প্রথমে নানা রকম ফন্দি আঁটল, দুই কিশোরদের চাঞ্চল্য তাদের সন্দেশ খাওয়ার ইচ্ছাকে উসকে দিল। এজন্য তারা বাক্সটি ভেঙে ভাগাভাগি করার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে নৈতিক দায়বোধ জেগে উঠল। বাক্সটি ভাঙলে অন্যায় হবে, হয়তো কোনো পরিব লোকের বাক্স হবে, এই ভেবে বাক্সটির প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিল বলে হঠাৎ তারা ধার্মিক হয়ে গেল।

গ. উদ্দীপকের মা চরিত্রের সাথে পড়ে পাওয়া গল্পের কিশোরদের কুড়িয়ে পাওয়া টিনের বাক্স প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আমরা উদ্দীপকে দেখতে পাই, রতন নামে একটি ছেলে দীর্ঘদিন ধরে কবুতর পোষে। রতনের কবুতর পোষা দেখে তার প্রতিবেশী স্বপন কবুতর পোষার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং সে একজোড়া কবুতর কিনে পুষতে থাকে। কিছুদিন পর রতনের কবুতরগুলোর সাথে স্বপনের কবুতর জোড়া রতনের কবুতর ঘরে প্রবেশ করে। এ দৃশ্য দেখে রতন খুব আনন্দিত হয়ে তার মাকে বলে, সে স্বপনের কবুতর জোড়া রেখে দেবে। রতনের এ অন্যায় আবদার মা রাখেননি। তিনি রতনকে বুঝিয়ে স্বপনের কবুতর জোড়া ফেরত দেন।
আমরা পড়ে পাওয়া গল্পে দেখতে পাই, গল্পকথক এবং তার বন্ধু বাদল একটি টিনের বাক্স পড়ে পায়। প্রথমে তারা ওই বাক্সটি আত্মসাতের পরিকল্পনা করে। পরক্ষণেই তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়। তারা টিনের বাক্সটি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। একসময় বাক্সের প্রকৃত মালিকের সন্ধান পায়। ওই টিনের বাক্সের প্রকৃত মালিক ছিল অসহায়, গরিব মানুষ। বাদল এবং তার বন্ধুরা মালিককে টিনের বাক্স ফেরত দেয়। এখানে বাদল এবং তার বন্ধুদের নৈতিকতা ও মানবিকতাবোধের যে দৃষ্টান্ত আমরা পাই তার তুলনা মেলা ভার। উদ্দীপকে মা তার সন্তানের অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় না দিয়ে স্বপনের কবুতর জোড়া ফেরত দিয়ে যে নৈতিক মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন, পড়ে পাওয়া গল্পে বাদল এবং তার বন্ধুদের মধ্যেও অনুরূপ মানবতাবোধের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এ দিকটি উদ্দীপক ও ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে পড়ে পাওয়া গল্পটি সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ।
রতনের কবুতর পোষা দেখে তার প্রতিবেশী স্বপনও কবুতর পোষার ইচ্ছা পোষণ করে এবং সে এক জোড়া কবুতর ক্রয় করে তার লালন পালন করতে থাকে। কিছুদিন পর কবুতর জোড়া রতনের কবুতর ঘরে প্রবেশ করে। রতন এতে খুশি হয়। সে তার মাকে কবুতর জোড়া নিজের কাছে রেখে দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। মা ছেলের অন্যায় আবদার গ্রহণ করেননি। তিনি ছেলেকে বুঝিয়ে দেন। এখানে মায়ের উন্নত স্বপনের কবুতর ফেরত নৈতিকতাবোধের পরিচয় বিধৃত হয়েছে।
পড়ে পাওয়া গল্পে আমরা দেখি বিধু, সিধু, নিধু, তিনু বাদল এবং আরো কয়েকজন কিশোর কালবোশেখির ঝড়ে মজা করে আম কুড়িয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে বাদল একটি পরিত্যক্ত টিনের বাক্স কুড়িয়ে পায়। বাদল এবং বন্ধু দুজনে তখন একসাথে ছিল। তারা প্রথমে বাক্সটি আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু পরক্ষণেই তাদের মধ্যে নৈতিক চেতনাবোধের উদোষ ঘটে। তারা চিন্তা করে কী করে বাক্সটি এর প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া যায়। এক সময় তারা মূল মালিককে খুঁজে পায় এবং বাক্সটি অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেয়। বলা বাহুল্য, ওই বাক্সটির মধ্যে স্বর্ণালংকার এবং বেশ কিছু টাকা ছিল। এখানে কিশোরদের মধ্যে যে নৈতিক মূল্যবোধের পরিচয় বিস্তৃত হয়েছে তার তুলনা সত্যিই বিরল।
উদ্দীপকের মা তার ছেলের অন্যায় ও অমানবিক আবদার অনান্য করেছেন এবং ছেলেকে বুঝিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করে স্বপনের কবুতর তাকে ফেরত দিয়েছেন। মায়ের মানবিক মূল্যবোধ আমাদের চিত্তকে বিমোহিত করে। অনুরূপভাবে গল্পের কিশোররা পড়ে পাওয়া টিনের বাক্সের সম্পদের প্রতি লোভ না করে প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে তার হাতে বাক্সটি ফেরত দিয়ে যে উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা সত্যিই তুলনাহীন। কিশোরদের এই নৈতিক মানবিকতাবোধ আমাদের মনকে নাড়া দেয়। এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের সাথে ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের ঘটনাটি সত্যিই সাদৃশ্যপূর্ণ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : দুবলার চরে হঠাৎ করে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বানভাসী মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে। ঘরবাড়ি সব পানির নিচে। দুবলার চরের সবুজ ফসলি খেতে এখন শুধুই পানি। এলাকার জুম্মন মাতবর তার বাড়ির আঙ্গিনায় টিনের ছাদের ছাউনি দিয়ে অসহায় মানুষদের আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করেছেন তিনি ৷
ক. ঝড়ের সময় লেখকেরা কোন গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন?
খ. ‘যাও যাও, যা পার করো গিয়ে’- কথাটি দ্বারা বিষ্ণু কী বুঝিয়েছিল?
গ. পড়ে পাওয়া গল্পের অক্ষরপুরের কোন ঘটনাটির প্রতিফলন উদ্দীপকের মধ্যে ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পড়ে পাওয়া গল্পে লেখকের বাবার মানসিকতা উদ্দীপকের চেয়ারম্যান ধারণ করেছেন কি না তা বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ঝড়ের সময় লেখকেরা তেঁতুল গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

খ. কথাটির দ্বারা বিধু আগত লোকটির প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছিল। টিনের বাক্স পাওয়ার খবর পেয়ে লোভে পড়ে একাধিক ব্যক্তি তা নিতে আসে। তেমনি একটি লোক বিধুর কাছে বাক্সের দাবি নিয়ে আসে। বিধু লোকটির কাছে বাক্সের বর্ণনা জানতে চাইলে লোকটির দেওয়া বর্ণনার সাথে বিধু মিল পায় না। তখন বিধু লোকটিকে চলে যেতে বলায় সে রেগে গিয়ে বিধুকে শাসিয়ে যায়। বিধু তখন সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে তাচ্ছিল্যের সুরে উক্ত মন্তব্যটি করে।

গ. ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের অক্ষরপুর চরের কাপালিরা নিরাশ্রয় হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি উদ্দীপকের মধ্যে ফুটে উঠেছে।
নদীভাঙ্গন বা বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলের লোকদের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। এর ফলে তারা হঠাৎ করেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তাদের জীবনে চরম দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা হয়ে পড়ে উদ্ধাত্ত।
উদ্দীপকের দুবলার চরে হঠাৎ করেই নদীতে পানি বাড়তে থাকে। নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকে। তাদের বাড়িঘর, ধীরে ধীরে পানির নিচে চলে যায়। সবুজ ফসলের ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এলাকার জুম্মন মাতবর তার বাড়ির আঙ্গিনায় তাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। তেমনি ‘পড়ে পাওয়া’ গল্পের অন্তরপুর চরের কাপালিরাও নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। পটলের আবাদ, কুমড়োর ক্ষেত, লাও-কুমড়োর মার্চ নষ্ট হয়ে কাপালিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। গল্পের এই মানবেতর নিকটির উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. পড়ে পাওয়া গল্পে লেখকের বাবার মানসিকতা উদ্দীপকের চেয়ারম্যান ধারণ করেছেন। তিনিও লেখকের বাবার মতো মানবিক চরিত্রের অধিকারী।
মানবিকতাই মানুষের ধর্ম। বিপদে একজন মানুষ আর একজন মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই কাম্য। আর এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেই মানুষ যুগে যুগে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে আসছে।
উদ্দীপকের জুম্মন মাতবর দুবলার চরের বানভাসী মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি তার বাড়ির আঙ্গিনায় অসহায় মানুষদের জন্য আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি পড়ে পাওয়া গল্পে লেখকের বাবা অম্বরপুর চরের নিরাশ্রয়, সর্বস্বান্ত কাপালিদের আশ্রয় ও দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
উদ্দীপকের চেয়ারম্যান ও পড়ে পাওয়া গল্পে লেখকের বাবার মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। তারা দুজনই ব্যক্তিস্বার্থকে ভুলে গিয়ে মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের চেয়ারম্যান পড়ে পাওয়া গল্পের লেখকের বাবার মানসিকতা ধারণ করেছেন।

Leave a Comment