(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

ভাব ও কাজ হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ। ভাব ও কাজ প্রবন্ধ থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পাঠ-পরিচিতি (Summary) :
ভাব ও কাজের মধ্যে পার্থক্য অনেক। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের দরকার হয়। ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায় কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যে কোনো ভালো উদ্যোগ নষ্ট হবে যেতে পারে। এ রচনাটিতে লেখক দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সৃজনশীল

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : তুমি স্বপ্নে রাজা হতে পার, কোটি কোটি টাকা, বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পার। কল্পলোকের সুন্দর গল্পও হতে পার, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন এক জগৎ। এখানে বড় হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। শিক্ষার দ্বারা নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে সঠিক কর্মানুশীলনের মাধ্যমে বড় হতে হবে। সুতরাং কল্পনার জগতে হাবু-ডুবু না খেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।

ক. যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে নাচাবেন তাকে কেমন হতে হবে?
খ. লেখক ‘স্পিরিট’ বা আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে দিকটি নির্দেশ করে তা বর্ণনা কর।
ঘ. ‘কল্পনার জগতে হাবু-ডুবু না খেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক’ – মন্তব্যটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে নাচাবেন তাকে নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষি হতে হবে।

খ. কর্মে শক্তি আনার জন্য লেখক স্পিরিট বা আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে বলেছেন।
মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। কারণ সত্যিকার দেশকর্মী নিজের বুদ্ধি, কর্মশক্তি ও শ্রমশক্তি দিয়ে দেশকে জাগিয়ে তুলতে পারে। প্রবন্ধকার মনে করেন, কর্মে শক্তি আনার জন্য ভাব সাধনা করে ভাবকে নিজের বশে রেখে আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেশের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

গ. উদ্দীপকটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের কর্মশক্তি জাগরণের দিকটি নির্দেশ করে।
প্রবন্ধকার কাজী নজরুল ইসলাম দেশের মঙ্গলের জন্য জাতিকে কর্মী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ভাব ও কাজের পার্থক্য অনেক। ভাব হচ্ছে পুষ্পহীন সৌরভ যা অবাস্তব উচ্ছ্বাসমাত্র। কাজ জিনিসটা ভাবকে রূপ দেয় যা সম্পূর্ণ বস্তুগত। মানুষকে কাজে লাগাতে তার কোমল জায়গায় স্পর্শ করে ভাব জাগিয়ে তাকে মাতিয়ে তোলা প্রয়োজন । কেননা কেবল ভাব অর্থহীন। নিঃস্বার্থ ত্যাগের দৃষ্টি নিয়ে অন্যের ভাব জাগিয়ে তাকে মানুষের কল্যাণকর্মে পরিণত করতে হবে। তাহলেই দেশের কল্যাণ করা সম্ভব হবে।
উদ্দীপকে সঠিক কর্মানুশীলনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ কল্পনার জগতে নিজেকে অনেক কিছুই ভাবতে পারে কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাস্তবমুখী চিন্তা-চেতনাকে কর্মে রূপ না দিলে তার কোনো সার্থকতা থাকে না। কল্পনার জগতে বিচরণ না করে কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন। দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হতে হবে, তাহলেই জীবন সার্থক হবে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখক কর্মশক্তি অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। উদ্দীপকেও কর্মশক্তি জাগরণের দিকটি ফুটে উঠেছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কর্মশক্তি আগরণের দিকটি নির্দেশ করে।

ঘ. ‘কল্পনার জগতে হাবুডুবু না খেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্ব’- ভাব ও কাজ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটি যথার্থ।
কাজী নজরুল ইসলাম ভাব ও কাজ প্রবন্ধে ভাব ও কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামতো কাজে মনোনিবেশ করার কথা ব্যক্ত করেছেন। কেননা, শুধু ভাবকল্পনা ব্যক্তিজীবনে অর্থবহ হয় না। ভাবকে কাজের দাসে পরিণত করতে না পারলে ভাব অর্থহীন। ভাবকে নিজের বশে রেখে কর্মশক্তিতে উজ্জীবিত হলেই দেশের কল্যাণ সম্ভব হবে। সঠিক কর্মানুশীলনের মাধ্যমেই সার্থক মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।
উদ্দীপকে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ না করে সঠিক কর্মানুশীলনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কল্পনায় মানুষ নিজেকে অনেক বড় জায়গায় দেখতে পারে কিন্তু সে অনুযায়ী যদি কর্ম সম্পাদন করা না হয় তাহলে কল্পনা কখনো বাস্তবরূপ নিবে না। এজন্য কর্মশক্তি ও সঠিক উদ্যোগের দরকার হয়। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য জাতিকে কর্মী হতে পরামর্শ দিয়েছেন। উদ্দীপকেও একই কথা ধ্বনিত হয়েছে।
ভাব ও কাজ প্রবন্ধে ভাব ও কাজের সম্পর্ক আলোকপাত করে কর্মে তৎপর হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে উদ্দীপকেও সত্যিকারের মানুষ হতে কল্পনার রাজ্য ত্যাগ করে বাস্তবধর্মী সঠিক কর্মানুশীলনের কথা বলা হয়েছে। কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে মনুষ্যত্ব অর্জন সম্ভব নয়। সুতরাং এ কথা বলা যায়, কল্পনার জগতে হাবুডুবু না খেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্ব- ভাব ও কাজ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটি যথার্থ।

অনুশীলনের জন্য আরও প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : ভাব থাকিলে হয় না কেবল
ভাবের কিবা দাম!
ভাবনা মতো কাজ করিলে
পুরবে মনস্কাম।
ভাবছ যাহা করবে তাহা
রাখবে মনোবল,
কাজের মাঝে থাকলে ডুবে
পাবে নগদ ফল।

ক. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন?
খ. লোকেরা মহাবিরক্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বে কেন?
গ. উদ্দীপকে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ’- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কাজী নজরুল ইসলাম তেতাল্লিশ বছর বয়সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন।

খ. কার্যক্ষের প্রস্তুত না থাকলে লোকেরা মহা বিরক্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বে।
মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের দরকার কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তাই নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষিকে মানুষের কল্যাণের জন্য কার্যক্ষেত্র তৈরি করে ভাবের বাঁশি বাজাতে হবে। যদি কার্যক্ষেত্র তৈরি না করে ভাবের বাঁশি বাজানো হয় তাহলে লোকেরা জেগে দেখবে তারা অনর্থক জেগেছে, কোনো কাজ করার নেই। তখন তারা মহা বিরক্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বে।

গ. উদ্দীপকে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের ভদ্র যায়ী কাজের গুরুত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও ভাবের সার্থকতা কাজের মধ্যে নিহিত। শুধু ভাব নিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। ভাব অনুযায়ী কাজ করার মধ্য দিয়েই মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করা সম্ভব।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বলা হয়েছে যে, কেবল ভাব থাকলেই হয় না, ভাব অনুসারে কাজ করতে পারলেই মনের আশা পূরণ হয়। তাই ভাব অনুসারে কাজ করতে হবে। কাজের মধ্যে ডুবে থাকলেই নগদ ফল তথা তাৎক্ষণিক সার্থকতা লাভ করা যায়। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও ভাবের চেয়ে কাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লেখক বলেছেন, ভাব ও কাজের মধ্যে পার্থক্য অনেক। শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য কর্মশক্তি ও সঠিক উদ্যোগের প্রয়োজন। যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা না থাকলে যে-কোনো ভালো উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হতে হবে। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের ভাব অনুসারে কাজ করার গুরুত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. ‘উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূল ভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ’- মন্তব্যটি যথার্থ।
ভাব ও কাজের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও কাজ ছাড়া ভাব মূল্যহীন । কেননা, শুধু ভাব দিয়ে মানুষের কোনো কল্যাণ সাধন করা যায় না। ভাবের সার্থকতা কাজের মধ্যে নিহিত।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, কেবল ভাব থাকলেই হয় না। ভাব অনুসারে কাজ করলেই তবে মনের আশা পূরণ হয়। তাই ভাবনা অনুসারে মনোবল নিয়ে কাজ করতে হবে এবং কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে নগদ ফল পাওয়া যাবে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের মূলভাবও তাই। উক্ত প্রবন্ধের লেখকের মতে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু শুধু ভাৰ দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে না পারলে ভাবের কোনো সার্থকতা থাকে না। তাই ভাবের সার্থকতার জন্য কর্মশক্তি ও সঠিক উদ্যোগের প্রয়োজন। ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায় বটে, কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যে-কোনো মহৎ ভাবও অর্থহীন হয়ে পড়ে। লেখক তাঁর এ প্রবন্ধে দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সাথে কাজের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন- যা প্রবন্ধটির মূলসুর হিসেবে বিবেচ্য। উদ্দীপকে আলোচ্য প্রবন্ধের মূলকথা তথা মূলসুরের প্রতিফলন স্পষ্ট। কেননা তাতে ভাবকে নয়, কাজকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলভাবের সাথে সামজস্যপূর্ণ, কেননা তাতে ভাবের চেয়ে কাজের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

পড়ুন → অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → মদিনার পথে রচনার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : মুজিব একজন ভালো ছেলে। সে কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবে না, মানুষের কল্যাণের জন্যও চিন্তা করে। সামাজিক বিভেদ-বৈষম্য ও অসঙ্গতিগুলো দূর করে সে একটি আদর্শ সমাজ গড়তে চায়। কিন্তু সে তার ভাবনার আলোকে কোনো কর্মপন্থা স্থির করতে পারে না। ফলে কোনো কাজ হয় না এবং তার ভাবনাগুলো বাস্তব রূপ পায় না।

ক. ‘পুয়াল’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. ভাবকে কার্যের দাসরূপে নিয়োগ করতে হবে কেন?
গ. উদ্দীপকের মুহিবের মধ্যে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের ফুটে ওঠা নিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মুহিবের মধ্যে ফুটে ওঠা দিকটি দ্বারা মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না’ – মন্তব্যটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘পুয়াল’ শব্দটির অর্থ খড়।

খ. ভাবের সার্থকতা কাজের মধ্যে নিহিত বলে ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে হবে।
মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম, কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায়, কিন্তু কাজের স্পৃহা না থাকলে ভালো উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ভাবের সার্থকতা তখনই নিশ্চিত হয় যখন তা উপযুক্ত পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে কাজে পরিণত করা যায়। তাই ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে হবে।

গ. উদ্দীপকের মুহিবের মধ্যে ভাব ও কাজ প্রবন্ধে বর্ণিত ভাবের দিকটি ফুটে উঠেছে।
ভাব ও কাজের মধ্যে পার্থক্য অনেক। ভাব হলো পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো একটা উচ্ছ্বাস মাত্র। কাজ ছাড়া ভাবের কোনো সার্থকতা নেই। কাজই ভাবকে বাস্তবে রূপায়িত করে। কাজের মধ্যেই ভাবের সার্থকতা নিহিত।
উদ্দীপকের মুহিব একজন ভালো ছেলে। সে কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবে না, মানুষের কল্যাণের জন্যও চিন্তা করে। সামাজিক বিভেদ বৈষম্য দূর করে সে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে চায়। কিন্তু ভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না বলে তার ভাবনাগুলো বাস্তব রূপ পায় না। ভাব ও কাজ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে না পারলে ভাবের কোনো সার্থকতা থাকে না। লেখক মনে করেন, ভাব ও কাজের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দেশের উন্নতি ও মুক্তি সম্ভব। অন্যথায় কেবল ভাব দ্বারা মানুষের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব হবে না। উদ্দীপকের মুজিব কেবল ভাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, ভাবকে সে কাজের মাধ্যমে সার্থক করতে পারে না। তাই বলা যায়, মুহিবের মধ্যে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের ভাবের নিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের মুহিবের মধ্যে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের ভাবের দিকটি ফুটে উঠেছে, যা দ্বারা মহৎ কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়।
মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম, কিন্তু কেবল ভাব থাকলেই হয় না; ভাবকে কাজের মাধ্যমে বাস্তব রূপ দিতে হয়। অন্যথা ভাবের কোনো সার্থকতা থাকে না। তাই ভাব ও কাজ প্রবন্ধের লেখক দেশের উন্নতি ও মুক্তির জন্য ভাব অনুযায়ী বাস্তবধর্মী কাজে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মুহিব একজন ভালো ছেলে। সে কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবে না, মানুষের কল্যাণের জন্যও চিন্তা করে। সে সমাজের বিভেদ-বৈষম্য দূর করে একটি আদর্শ সমাজ গড়তে চায়। কিন্তু সে তার ভাবনা অনুযায়ী কর্মপন্থা স্থির করতে পারে না বলে তার ভাবনাগুলো বাস্তব রূপ পায় না। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ভাবকে সার্থক করার জন্য সঠিক উদ্যোগ ও কর্মশক্তি প্রয়োজন। কেননা, ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হলেও যথার্থ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া ভালো উদ্যোগও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ভাবকে কাজের মাধ্যমে বাস্তব রূপ না দিতে পারলে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের মুহিবের মধ্যে সুন্দর ভাবনা থাকলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতার অভাব রয়েছে। কাজেই তার মধ্যে ফুটে ওঠা দিকটি দ্বারা মহৎ কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : প্ৰবীণ শিক্ষক আজহার সাহেব তার ছাত্রদের যথার্থ শিক্ষিত করতে চান। তিনি নিয়মিত পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। তাঁর পাঠদানের কৌশল শিক্ষার্থীদের অভিভূত করে। তাঁর মধ্যে রয়েছে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও সৃষ্টিশীল উদ্দীপনা, যা তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। ফলে তাঁর ছাত্ররা প্রতি ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করে।

ক. ভাবকে রূপ দেয় কে?
খ. ভাব ও কাজের সম্পর্ক বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের আজহার সাহেবের মধ্যে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকের আজহার সাহেব যেন ভাব ও কাজ প্রবন্ধের লেখকের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ’ – মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ভাবকে রূপ দেয় কাজ।

খ. ভাব ও কাজের সম্পর্ক খুব কাছাকাছি মনে হলেও এ দুটোর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
ভাব হলো কল্পনা বা উচ্ছ্বাস আর কাজ হলো ভাবকে বাস্তবে রূপায়িত করার উপায় বা অবলম্বন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম, কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। ভাবকে বাস্তব রূপদানের জন্য কাজের প্রয়োজন। কেনন কাজই ভাবকে সার্থকতা দান করে। তাই ভাব ও কাজের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গ. উদ্দীপকের আজহার সাহেবের মধ্যে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সত্যিকার কর্মীর গুণটি ফুটে উঠেছে।
ভাবকে কাজের মাধ্যমে বাস্তব রূপ দিতে না পারলে ভাে সার্থকতা থাকে না। যারা যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের পূর্ণ দ্বারা ভাবকে বাস্তব রূপ দিতে পারেন, তারাই সত্যিকার কর্মী। তাই ভাবের সার্থকতার অন্য কর্মতৎপর হওয়া দরকার। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, প্রবীণ শিক্ষক আজহার সাহেব তাঁর ছাত্রদের যথার্থ শিক্ষিত করতে চান। তিনি নিয়মিত পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। তাঁর পাঠদানের কৌশল শিক্ষার্থীদের অভিভূত করে। তিনি তাঁর মধ্যে থাকা আত্মবিশ্বাস ও সৃষ্টিশীল উদ্দীপনা শক্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
ফলে তাঁর ছাত্ররা প্রতি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে। ভাব ও কাজ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় ভাব অনুযায়ী সঠিক উদ্যোগ ও কাজের স্পৃহা থাকলেই ভাবের সার্থকতা অর্জিত হয়, তথা মহৎ কিছু অর্জন করা যায়। উদ্দীপকের আজহার সাহেবও তাঁর ভাবনা অনুযায়ী সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবধর্মী কাজে তৎপর হয়েছেন। ফলে তাঁর মধ্যে লেখকের প্রত্যাশিত সত্যিকার কর্মীর গুণটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের আজহার সাহেব যেন ভাব ও কাজ প্রবন্ধের লেখকের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ, কেননা তাঁর মধ্যে লেখকের প্রত্যাশিত কর্মীর বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
শুধু ভাব দ্বারা মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। ভাবের সার্থকতার জন্য সঠিক উদ্যোগ ও কর্মশক্তি প্রয়োজন। যিনি ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তুলে কাজের উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিতে পারেন, তিনিই সত্যিকার কর্মী।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, প্রবীণ শিক্ষক আজহার সাহেব তাঁর ছাত্রদের যথার্থ শিক্ষিত করতে চান। তিনি নিয়মিত পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। তার মধ্যে রয়েছে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও সৃষ্টিশীল উদ্দীপনা, যা তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। ফলে তাঁর ছাত্ররা প্রতিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে। ভাব ও কাজ প্রবন্ধের লেখকও এমন সত্যিকার কর্মীর প্রত্যাশা করেছেন, যিনি ভাব অনুযায়ী সঠিক পরিকল্পনা ও কর্ম-তৎপরতার মাধ্যমে মহৎ কিছু অর্জনে সক্ষম হবেন। উদ্দীপকের আজহার সাহেব কেবল ভাবে নিমগ্ন থাকেননি, তিনি তাঁর ভাবকে বাস্তবায়িত করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মতৎপর হয়েছেন। তাই তাঁর ছাত্ররাও প্রতি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের প্রবীণ শিক্ষক আজহার সাহেব ভাবনা অনুযায়ী কাজ করেন বলে তিনি যেন ভাব ও কাজ প্রবন্ধের লেখকের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : কোরাইশী দাখিল দশম শ্রেণির ছাত্র। ইদানীং তার লেখাপড়ায় মনোযোগের অভাব লক্ষ করা যায়। সে কারো সাথে কথা বলে না। মনে হয় কোনোকিছু ভাবছে। ক্লাসের পড়াও ঠিকমতো করে না। অথচ তার স্বপ্ন, বড় হয়ে সে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা লাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে।

ক. ভাব ও কাজ লেখাটি কোন ধরনের সাহিত্য?
খ. ভাবকে কার্যের দাসরূপে নিয়োগ করিতে না পারিলে ভাবের কোনো সার্থকতা থাকে না – কেন?
গ. উদ্দীপকটি ভাব ও কাজ প্রবন্ধের যে দিকটি নির্দেশ করে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপক ও ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলসুর একসূত্রে গাঁথা। -বিশ্লেষণ কর।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ভাব ও কাজ একটি প্রবন্ধ সাহিত্য।

খ. ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করাই হলো সত্যিকার কাজ।
ভাব ও কাজ দুটো ভিন্ন জিনিস। ভাব হচ্ছে পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো। ভাব না থাকলে কোনো কাজের উৎপত্তি হয় না। কিন্তু শুধু ভাবকে ভাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। ভাবকে কাজের দাস বানাতে হবে। তাহলেই সকল কাজ সিদ্ধ হবে।

গ. উদ্দীপকটিতে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের ভাবের দিকটি উৎসারিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কোরাইশী দাখিল দশম শ্রেণির ছাত্র। সম্প্রতি তার লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ নেই। কারো সাথে সে কথা বলে না। তার মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে। সে কিছু ভাবছে। সে ভাবছে বড় হয়ে সে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সে তদনুযায়ী লেখাপড়া বা কাজ করছে না। তার এ ভাবনা পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো।
ভাব ও কাজ প্রবন্ধে দেখা যায়, ভাবকে পুষ্পবিহীন সৌরভের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ভাব একটি অবাস্তব উচ্ছ্বাস মাত্র। ভাবকে কাজে পরিণত করতে না পারলে সে ভাব অবাস্তব থেকে যায়। উদ্দীপকের কোরাইশীর ভাবনা তাই পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো।
যার কোনো মূল্য নেই।

ঘ. ‘উদ্দীপক ও ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলসুর একসূত্রে গাঁথা’ —উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, কোরাইশী দাখিল দশম শ্রেণির ছাত্র। ইদানীং তার লেখাপড়ার প্রতি অমনোযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে। কারো সাথে সে কথা বলে না। তার মধ্যে যেন কিছু একটা ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে ভাবছে বড় হয়ে সে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। অথচ তদনুযায়ী সে কাজ করছে না। তার এ ভাবনা পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো- যার কোনো মূল্য নেই।
ভাব ও কাজ প্রবন্ধে দেখা যায়, ভাবকে পুষ্পবিহীন সৌরভের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ভাব একটি অবাস্তব উচ্ছ্বাস মাত্র। ভাবকে কাজে পরিণত করতে না পারলে সে ভাব অবাস্তব থেকে যায়। যার কোনো মূল্যই থাকে না।
আমরা উদ্দীপকে দেখতে পাই, কোরাইশী বড় হওয়ার জন্য শুধু ভেবেছে, কিন্তু তার জন্য যে কাজ করা দরকার, তা সে করেনি। কাজ করা ছাড়া জীবনে সাফল্য আসতে পারে না, এটা সে বুঝতে পারেনি। তার এ কাজ পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো- যার কোনো মূল্য নেই। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও এই দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে সুন্দরভাবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ভাব ও কাজ প্রবন্ধের মূলসুর একসূত্রে গাঁথা- উক্তিটি যথার্থ।

Leave a Comment