(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

অতিথির স্মৃতি হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প। অতিথির স্মৃতি গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পাঠ-পরিচিতি (Summary) :
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেওঘরের স্মৃতি’ গল্পটির নাম পাল্টে এবং ঈষৎ পরিমার্জনা করে এখানে ‘অতিথির স্মৃতি’ হিসেবে সংকলন করা হয়েছে। একটি প্রাণীর সঙ্গে একজন অসুস্থ মানুষের কয়েকদিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মমত্বের সম্পর্কই এ গল্পের বিষয়। লেখক দেখিয়েছেন, মানুষে-মানুষে যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সেই সম্পর্ক নানা প্রতিকূল কারণে স্থায়ীরূপ পেতে বাধাগ্রস্ত হয়। আবার এই সম্পর্কের সূত্র ধরে একটি মানুষ ওই জীবের প্রতি যখন মমতায় সিক্ত হয় তখন অন্য মানুষের আচরণ নির্মম হয়ে উঠতে পারে। এ গল্পে সম্পর্কের এই বিচিত্র রূপই প্রকাশ করা হয়েছে।

অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অতি আদরের একমাত্র ষাঁড় মহেশ। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওকে ঠিকমত খড়-বিচুলি খেতে দিতে পারে না। জমিদারের কাছে সামান্য খড় ধার চেয়েও পায় না। নিজে না খেয়ে থাকলেও গফুরের দুঃখ নেই। কিন্তু মহেশকে খাবার দিতে না পেরে তার বুক ফেটে যায়। সে মহেশের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে- মহেশ, তুই আমার ছেলে। তুই আমাদের আট সন প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছিস। তোকে আমি পেট পুরে খেতে দিতে পারি নে, কিন্তু তুই তো জানিস আমি তোকে কত ভালোবাসি। মহেশ প্রত্যুত্তরে গলা বাড়িয়ে আরামে চোখ বুজে থাকে।

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেওঘরে যাওয়ার কারণ কী?
খ. অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে অতিথির স্মৃতি গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের গফুরের সাথে লেখকের চেতনাগত মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন— অতিথির স্মৃতি গল্পের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন।

খ. গেটের ভেতরে ঢুকলে কী জানি কী ঘটে এ ভয়ে অতিথি কিছুতেই ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না।
দেওঘরে পথ চলতে গিয়ে একটি কুকুরের সাথে লেখকের পরিচয় ঘটে। পথে লেখক প্রাণীটির সাথে অনেক কথা বলেন। কুকুরটিও লেজ নেড়ে লেখকের কথার জবাব দেয়। কিন্তু বাড়ি পৌঁছে গেট খুলে ভেতরে ডাকলে কুকুরটি দাঁড়িয়ে থাকে। সে ভেতরে ঢোকার সাহস পায় না। কারণ, গেটের ভেতরে ঢুকলে কী জানি কী ঘটে এ ভয়ে কুকুরটি ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না।

গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে অতিথির স্মৃতি গল্পে প্রকাশিত মানবেতর প্রাণী তথা কুকুরের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখক মানবপ্রেম ও পশুপ্রেমের গভীর সম্পর্ককে তার কথার শৈল্পিক তুলির টানে তুলে ধরেছেন। একজন অসুস্থ মানুষের সঙ্গে মানবেতর একটি প্রাণীর মধ্যে অল্পদিনের মধ্যে যে গভীর মমত্ববোধ তৈরি হতে পারে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে শরৎচন্দ্র তা-ই তুলে ধরেছেন। মানুষ কখনো কখনো মানবেতর প্রাণীর সাথে স্নেহপ্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নানা বাধার মুখেও সে তার সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়। না পারলে কষ্ট পায়। মানবমনের এই অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায়, গল্পের কুকুরটির প্রতি লেখকের আচরণে।
উদ্দীপকের গফুর আদরের খাঁড় মহেশকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। মহেশের প্রতি ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কারণ প্রিয় প্রাণীটিকে সে পেট পুরে খেতেও দিতে পারে না, যা গফুরকে সব সময় কষ্ট দেয়। গফুরের এই কষ্টের মধ্য দিয়ে একটি পশুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক কুকুরটিকে অতিথির আসনে বসিয়েছেন। তিনি প্রতিদিন অতিথির খাওয়া-দাওয়ার খোঁজ নিতেন। অতিথির ব্যথা লেখককেও ব্যথিত করতো। তাই দেওঘর থেকে চলে আসার সময় কুকুরটির অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা লেখকের মনে গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করে। একটি ইতর প্রাণীর প্রতি লেখকের অকৃত্রিম ভালোবাসা।অতিথির স্মৃতি গল্পের মূল বিষয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে অতিথির স্মৃতি গল্পে প্রকাশিত মানবেতর প্রাণী তথা কুকুরের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের গফুরের সাথে লেখকের চেতনাগত মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন- মন্তব্যটি যথার্থ।
অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখক দেখিয়েছেন, মানুষে-মানুষে যেমন এ স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক, অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে আসলে একটি কুকুরের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রতিদিন কুকুরটি বাড়ির গেটের সামনে অপেক্ষা করে লেখকের সঙ্গী হওয়ার জন্য। কুকুরটির এরূপ আচরণে লেখকের মনে তার জন্য অকৃত্রিম মমত্ববোধ জেগে ওঠে। তাই দেওঘর থেকে চলে যাওয়ার পরও লেখক ভুলতে পারেননি তার অতিথি কুকুরটিকে।
উদ্দীপকের গফুর তার প্রিয় পোষা ষাঁড় মহেশের প্রতি নিজের অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। গফুর নিজের খাবার না এই জোটাতে পারলেও মহেশের খাবার সে সংগ্রহ করে, কারণ মহেশ তার কাছে সন্তানতুল্য। আট বছর ধরে যে ষাঁড়টি তাকে প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছে, তাকে ঠিকমতো খেতে দিতে না পারায় গফুরের চোখে জল আসে। এখানে দেখা যায়, শুধু মানুষে মানুষে নয়, অন্য জীবের সাথেও মানুষের গ্রেীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। পরিবেশ ও ঘটনা আলাদা হলেও সেসব সম্পর্ক ফুড়ে থাকে অকৃত্রিম ভালোবাসার টান।
অতিথির স্মৃতি গল্প ও উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ধরনের। উদ্দীপকের গফুর তার প্রিয় পোষা ষাঁড় মহেশের প্রতি নিজের দরদ প্রকাশ করেছে। আর আলোচ্য গল্পে লেখক প্রবাসে একটি কুকুরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার মমতা প্রকাশ করেছেন। এদিক বিচারে লেখক ও উদ্দীপকের কৃষক গফুরের চেতনাগত মিল স্পষ্ট, যদিও তাদের এমন আচরণের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। অপরিচিত পরিবেশে একটি কুকুরের প্রতি লেখকের ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। আর চাখি গফুর তার প্রিয় পোষা ষাঁড়টির প্রতি মমতা প্রকাশ করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের গফুরের সাথে লেখকের চেতনাগত মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন- মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : লালমনিরহাটের যুবায়ের প্রায় ১০ বছর ধরে তার পোষাহাতি কালাপাহাড়কে দিয়ে লাকড়ি টানা, চাষ করা, সার্কাস দেখানো ইত্যাদি কাজ করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে দারিদ্র্যের কারণে হাতির খোরাক জোগাড় করতে না পেরে একদিন সে কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দিল। ক্রেতা কালাপাহাড়কে নিতে এসে ওর পায়ে বাঁধা রশি ধরে হাজার টানাটানি করে একচুলও নাড়াতে পারল না। কালাপাহাড়ের দুচোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। পরদিন খদ্দের আরও বেশি লোকজন সাথে করে এসে কালাপাহাড়কে নিয়ে যাবে বলে চলে যায়। কিন্তু ভোরবেলা যুবায়ের দেখে কালাপাহাড় মরে পড়ে আছে। হাউমাউ করে সে চিৎকার করে আর বলে- ‘ওরে আমার কালাপাহাড়, অভিমান করে তুই চলে গেলি।’

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন পদক লাভ করেন?
খ. লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. কালাপাহাড়ের আচরণ এবং অতিথির স্মৃতি গল্পের অতিথির আচরণ কীভাবে ভিন্ন- বর্ণনা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকের যুবায়ের-এর অনুভূতি আর অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত’- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।

খ. অতিথি তথা কুকুরের সাথে সময় কাটানোর জন্য লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করেন।
লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে যান। সেখানে একটি কুকুরের সাথে লেখকের গভীর মমত্বের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিকাল বেলা লেখক যখন বাইরে বের হতেন তখন অতিথি কুকুরটিও পরম মমতায় লেখকের সঙ্গী হতো। এভাবে কয়েকদিনের মধ্যে অতিধির প্রতি লেখকের গভীর স্নেহ জেগে ওঠে। দেওঘর থেকে ফেরার সময় হয়ে গেলেও এই স্নেহবন্ধন ছিন্ন করে লেখক ফিরতে পারছিলেন না। তাই, লেখক অতিথির সাথে সময় কাটানোর জন্য নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করেন।

গ. কালাপাহাড় বাস্তবতার নির্মমতার শিকার মালিককেও ছেড়ে যেতে পারেনি; বরং মৃত্যুকেই সে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু অতিথির স্মৃতি গল্পের অতিথির মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
অতিথির স্মৃতি গল্পে একটি ইতর প্রাণীর সাথে মানুষের যে গভীর মমত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তার চিত্র ফুটে উঠেছে। লেখক দেওঘরে যাওয়ার পর একটি কুকুরের সাথে মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কুকুরটি লেখকের মনে জায়গা করে নেয়। লেখকের বিদায় মুহূর্তে তার সব কাজের মধ্যে কুকুরটির ছোটাছুটি ও ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় তার করুণ চাহনি লেখকের প্রতি অতিথির গভীর অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকের যুবায়ের তার পোষাহাতি কালাপাহাড়কে অত্যন্ত স্নেহ করতো। তেমনি কালাপাহাড়েরও তার মালিকের প্রতি ছিল গভীর অনুরাগ। দারিদ্র্যের কষাঘাতে যুবায়ের কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দিলেও এই পোষা হাতিটিকে ক্রেতা কিছুতেই নিয়ে যেতে পারেনি। কালাপাহাড়, বাস্তবতার নির্মমতার শিকার মালিককেও ছেড়ে যেতে পারেনি; বরং মৃত্যুকেই সে বরণ করে নিয়েছিল। মানবেতর এই প্রাণীটি তার ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখে গেল নিজের জীবন নিয়ে। ঠিক তেমনিভাবে ‘অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখকের সঙ্গে অতিথি কুকুরটির স্নেহ-মমতার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। লেখকের বিদায়ের দিন কুকুরটিও কুলিদের সাথে ছোটাছুটি করতে লাগল যেন সব ঠিক আছে। কিনা। ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় অতিথির (কুকুরের) করুণ দৃষ্টি যেন লেখকের প্রতি গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু অতিথির ক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। লেখকের বিদায়ের শোকে অতিথি আত্মবিসর্জন দেয়নি। অথচ উদ্দীপকের কালাপাহাড় তার মালিককে গভীর ভালোবাসে বলেই বিক্রি হয়ে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেনি। অভিমানে সে আত্মবিসর্জন দিয়েছে। এদিক থেকে কালাপাহাড়ের আচরণ অতিথির আচরণ থেকে ভিন্ন।

ঘ. ইতর প্রাণীর প্রতি গভীর ভালোবাসার দিক বিবেচনায় উদ্দীপকের যুবায়েরের অনুভূতি আর অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত।
অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখক মানবেতর প্রাণীর সাথে মানুষের মমত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। মানুষে মানুষে যেমন সম্পর্ক তৈরি হয় তেমনি পশুতে মানুষেও সম্পর্ক হতে পারে। আলোচ্য গল্পে লেখকের সাথে অতিথি কুকুরের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা মানবিকতাবোধ থেকেই। এজন্য কুকুরটিকে ছেড়ে আসতে লেখকের অনেক কষ্ট হয়েছে। মানুষের মতো পশুপাখির বিচ্ছেদেও যে মানুষ কাতর হয়ে পড়ে তা লেখকের অনুভূতির মাধ্যমে প্রতীয়মান।
উদ্দীপকে যুবায়েরের চরিত্রেও পশুপ্রেমের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। যুবায়ের যতদিন সামর্থ্য ছিল কালাপাহাড়কে লালনপালন করেছে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ঠিকমতো খাবার না পেয়ে কালাপাহাড় কষ্ট পাবে, তাই যুবায়ের তাকে বিক্রি করে দিতে চায়, যদিও কালাপাহাড়কে সে প্রচণ্ড ভালোবাসে। পশুর সাথে মানুষের এই সম্পর্ক প্রীতি ও মমত্বের। যুবায়ের কালাপাহাড়ের মৃত্যুতে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, কারণ কালাপাহাড়ের প্রতি ছিল তার গভীর মমত্ববোধ।
অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের অনুভূতি এবং উদ্দীপকের যুবায়েরের অনুভূতি একই ধারায় প্রবাহিত হলেও প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন। যুবায়ের তার দশ বছর ধরে পোষা প্রাণীটির মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। তাই সে তার আবেগ সংযত করতে পারেনি। প্রাণীটির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক মমত্ব ও ভালোবাসার। তাই তার এই হঠাৎ মৃত্যু তাকে কাঁদিয়েছে, হৃদয়ের অঞ্চগুলে কুঠারাঘাত করেছে। ঠিক তেমনি অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখক তার বিদায় নেওয়ার সময়কার বিচ্ছেদ ব্যথা সহজে মেনে নিতে পারেননি। যাওয়ার সময় হয়ে গেলেও নানা অজুহাতে তিনি দু’দিন দেরি করেছেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে যুবায়েরের ব্যথার অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের হৃদয়ের ব্যথার অনুভূতির প্রকাশ একই ধারায় উৎসারিত।

অনুশীলনের জন্য আরও প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : গ্রীষ্মের ছুটিতে আরমান মামাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে একটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে দেখে তার খুব মায়া হয়। সে কুকুরটিকে কিছু খাবার দেয়। সেই থেকে কুকুরটি তার আশেপাশে মুরঘুর করতে থাকে। মামাবাড়ি থেকে চলে আসার সময় কুকুরটি তার গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে আসে এবং গাড়ি ছাড়ার পর একদৃষ্টে অনেক সময় তাকিয়ে থাকে। আরমান আজও সেই স্মৃতিটুকু ভুলতে পারেনি।

ক. বেনে-বৌ পাখি দুটি কী রঙের?
খ. অতিথির চোখ দুটি ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক.বেনে-বৌ পাখি দুটি হলদে রঙের।

খ. মালিনীর নির্মম আচরণের কারণে দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকায় অতিথির চোখ দুটি ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল।
লেখক দেওঘরে অবস্থানকালে পথের একটি কুকুরের সঙ্গে তাঁর মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বাড়ির বামুন ঠাকুরকে বলেছিলেন, কুকুরটিকে যেন পেটভরে খেতে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির মালিনী কুকুরটিকে মেরে ধরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ফলে লেখকের অতিথি কুকুরটি দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকে। তাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় চোখে পানি নেমে আসায় অতিথির চোখ দুটি ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল।

গ. উদ্দীপকে অতিথির স্মৃর্তি গল্পের মানবেতর প্রাণীর সঙ্গে মানুষের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
সুন্দর হৃদয়ের মানুষেরা স্বভাবত পশু-পাখি তথা মানবেত্তর প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই মানুষের সাথে যেমন তাদের স্নেহ প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তেমনি মানবেতর প্রাণীর সাথেও অনুরূপ সম্পর্ক রচিত হতে পারে। নানা কারণে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটলেও মানুষ সহজে এসব সম্পর্কের স্মৃতি ভুলতে পারে না।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, গ্রীষ্মের ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে গেলে আরমান একটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে দেখে কিছু খাবার দেয়। এরপর থেকে কুকুরটি আরমানের আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে শুরু করে। মামাবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় কুকুরটি আরমানের পিছু পিছু গাড়ি পর্যন্ত যায় এবং গাড়ি ছাড়ার পর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। উদ্দীপকের এ বিষয়টি অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের মানবেতর প্রাণীর সাথে স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। উক্ত গল্পে দেখা যায়, দেওঘরে অবস্থানকালে পথের একটি কুকুরের সাথে লেখকের মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখকের বিদায়ের দিন কুকুরটি রেল-স্টেশন পর্যন্ত আসে এবং ট্রেন ছাড়ার পর লেখক দেখলেন, স্টেশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে কুকুরটি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। এ থেকে বোঝা যায়, অতিথির স্মৃতি গল্পে বর্ণিত মানবেতর প্রাণীর সঙ্গে গল্পের লেখকের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কের দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না, কেননা, তাতে মানবেতর প্রাণীর সাথে মানুষের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কের দিকটি থাকলেও নির্মম আচরণের দিকটির প্রকাশ ঘটেনি।
অন্য জীবের প্রতি মানুষের মমতা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রমও দেখা যায়। একজন মানুষ যখন কোনো একটি জীবের প্রতি মমতায় সিক্ত হয়, তখন অন্য কোনো মানুষ সেই জীবটির প্রতি নির্মম আচরণ করতে পারে। কেননা, সব মানুষের বোধ ও অনুভূতি শক্তি একরকম নয়।
উদ্দীপকে একটি কুকুরের সাথে মানুষের মমত্বের সম্পর্কের কথা জানা যায়। গ্রীষ্মের ছুটিতে আরমান মামাবাড়ি বেড়াতে গেলে একটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে সে কিছু খাবার দেয়। এরপর থেকে কুকুরটি সবসময় তার আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে থাকে। মামাবাড়ি থেকে চলে আসার দিন কুকুরটি আরমানের পিছু পিছু গাড়ি পর্যন্ত যায় এবং গাড়ি ছাড়ার পর একদৃষ্টে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আরমান আজও সেই স্মৃতি ভুলতে পারেনি। একটি মানবেতর প্রাণীর সাথে এরূপ স্নেহ-মমতার সম্পর্কের বিষয়টি অতিথির স্মৃর্তি গল্পের সাথে মিলে যায়। উক্ত গল্পে মানবেতর প্রাণী পথের একটি কুকুরের সাথে লেখকের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কের কথা ব্যক্ত হয়েছে। তবে গল্পে কুকুরটির প্রতি মালিনীর নির্মম আচরণের চিত্রও ফুটে উঠেছে, যার কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকে দেখা যায় না। এছাড়া উক্ত গল্পে আরও কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে- যা গল্পটিকে রসসমৃদ্ধ করেছে। উদ্দীপকে কেবল অন্য জীবের সাথে মানুষের মমত্বের বিষয়টি রয়েছে; গল্পের অন্যান্য দিকের কোনো আভাস নেই।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ‘উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না’ – মন্তব্যটি যুক্তিসঙ্গত।

পড়ুন → মদিনার পথে রচনার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : প্রবাসী মিঠুন এবার দেশে এলে একদিন একটি কুকুর তার পিছু নিয়ে বাড়িতে আসে। মিঠুন যতদিন দেশে ছিলেন কুকুরটি তার বাড়িতেই ছিল। তিনি নিয়মিত কুকুরটিকে খাবার দিতেন। কুকুরটিও সারাদিন তার পাশে ঘুরঘুর করত। পুনরায় বিদেশে যাওয়ার দিন মিঠুন সবাইকে বলে গেলেন কুকুরটিকে যেন না তাড়ানো হয়। বিদেশে গিয়েও তিনি কুকুরটিকে ভুলতে পারেননি।

ক. প্রাচীরের ধারে উঁচু গাছটির নাম কী?
খ. লেখকের সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল কীভাবে?
গ. উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সমগ্রভাব ধারণ করে না’ -মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. প্রাচীরের ধারের উঁচু গাছটির নাম ইউক্যালিপটাস।

খ. বেনে-বৌ পাখি দুটিকে ফিরে আসতে দেখে লেখকের সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল।
লেখক দেওঘরে যে বাড়িতে থাকতেন, সেখানে প্রতিদিন অনেক পাখি দেখতে পেতেন। বাড়ির প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছটায় প্রতিদিন দুটি বেনে বৌ পাখি আসত। কিন্তু পাখি দুটি হঠাৎ দুদিন না আসায় তিনি ভেবেছিলেন ব্যাধ হয়তো এদের ধরে চালান করে দিয়েছে। আবার তিন দিনের দিন হঠাৎ পাখি দুটি ফিরে আসায় তাঁর সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল।

গ. উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের প্রতিফলিত দিকটি হলো মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসা।
মানুষের হৃদয় সংবেদনশীল। তাই মানুষে মানুষে যেমন স্নেহ প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তেমনি অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের মমত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। অতিথির স্মৃতি গল্পে পথের একটি কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধের বর্ণনা ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রবাসী মিঠুন এবার দেশে এলে একদিন একটি কুকুর তার পিছু নিয়ে বাড়িতে আসে। মিঠুন কুকুরটিকে প্রতিদিন খাবার দিতেন এবং কুকুরটিও সারাদিন তার পাশে ঘুরঘুর করত। পুনরায় বিদেশে যাওয়ার দিন মিঠুন সবাইকে বলে গেলেন যেন কুকুরটিকে না তাড়ানো হয়। বিদেশে গিয়েও তিনি কুকুরটিকে ভুলতে পারেননি। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখক দেওঘরে থাকার সময় পথের একটি কুকুরের সঙ্গে তাঁর মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কুকুরটির জন্য তিনি নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করতে বলতেন। তার যাওয়ার সময় হলেও কুকুরটির প্রতি মমত্বের কারণে তিনি বাহানা করে আরও দুদিন থেকে যান। দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার পরও তিনি কুকুরটির স্মৃতি ভুলেননি। মানবেতর প্রাণীর প্রতি লেখকের এরূপ মমত্ববোধের দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সমগ্রভাব ধারণ করে না, কেননা এতে উক্ত গল্পে বর্ণিত সব বিষয় প্রতিফলিত হয়নি।
মানুষে মানুষে যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক, তেমনি মানবেতর প্রাণীর সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সেই সম্পর্ক আবার নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়।
উদ্দীপকে পথের একটি কুকুরের সঙ্গে প্রবাসী মিঠুনের মমত্ববোধের সম্পর্কের বর্ণনা ফুটে উঠেছে। একদিন একটি কুকুর তার পিছু নিয়ে বাড়িতে আসার পর তিনি কুকুরটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। কুকুরটিও সারাদিন তার পাশে ঘুরঘুর করত। মিঠুন পুনরায় বিদেশে যাওয়ার দিন সবাইকে বলে গেলেন যেন কুকুরটিকে না তাড়ানো হয়। বিদেশে গিয়েও তিনি কুকুরটিকে ভুলেননি। মানবেতর প্রাণীর প্রতি মিঠুনের এরূপ মমত্ববোধ।অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের মধ্যেও পাওয়া যায়। তবে উক্ত গল্পে লেখকের প্রিয় কুকুরটির প্রতি বাড়ির চাকরদের ও মালি-বৌ এর নির্মম আচরণের দিকটিও বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া উক্ত গল্পে ভোরের পরিবেশ, পাখিদের আনাগোনা, ব্যাধের পাখি চালান দেওয়ার প্রসঙ্গ, বিভিন্ন রোগাক্রান্ত নারী-পুরুষের করুণ অবস্থা প্রভৃতি বিষয়েরও বর্ণনা রয়েছে, যার কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকে নেই। তাই উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পে বর্ণিত সব বিষয় প্রতিফলিত না হওয়ায় উদ্দীপকটি উক্ত পদ্মের সমগ্রভাব ধারণ করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : সিহাব মাদরাসা থেকে ফিরবার সময় রাস্তার পাশে একটি আহত পাখি দেখতে পায়। সে পাখিটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং যত্ন করে রাখে। রাতে পাখিটি সুস্থ না হওয়ায় সে পরদিন পাখিটিকে স্থানীয় পশু-চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। ফলে পাখিটি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ এক রাতে পাখিটি মারা যায়। পাখিটির মৃত্যুতে সিহাবের দুচোখ বেয়ে অঙ্ক গড়িয়ে পড়ে। সে পাখিটিকে আজও ভুলতে পারে না।

ক. বেনে-বৌ পাখি দুটি কী রঙের?
খ. ‘ওর মতো তুচ্ছ জীব শহরে আর নেই’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সাথে কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি অতিথির স্মৃতি গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না’ -মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বেনে-বৌ পাখি দুটি হলদে রঙের।

খ. ‘ওর মতো তুচ্ছ জীব শহরে আর নেই’- বলতে কুকুরটির অনাদৃত জীবনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অসুস্থ লেখকের দেওঘরে অবস্থানকালে একটি কুকুরের সঙ্গে মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেওঘর হতে বিদায় নেওয়ার দিন কুকুরটি তাঁর সাথে স্টেশন পর্যন্ত আসে এবং স্টেশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। লেখকের তখন বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। তাঁর মনে হলো, এ কুকুরটির মতো তুচ্ছ জীৰ হয়তো এ শহরে আর নেই। কারণ কুকুরটির প্রতি কারো কোনো মমতা তিনি দেখতে পাননি।

গ. উদ্দীপকটি মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিক থেকে অতিথির স্মৃতি গল্পের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
অতিথির স্মৃতি গল্পে একটি কুকুরের সঙ্গে অসুস্থ লেখকের মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা বর্ণিত হয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন, মানুষে মানুষে যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি অন্য জীবের সঙ্গেও মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। আর এরূপ সম্পর্কের কারণে মানুষ জীবটিকে সহজে ভুলতে পারে না।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সিহাব মাদরাসা থেকে ফিরবার পথে রাস্তার পাশে একটি আহত পাখি দেখতে পায়। সে পাখিটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং যত্ন করে রাখে। পাখিটি রাতে সুস্থ না হওয়ায় সিহাব পাখিটিকে স্থানীয় পশু-চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে কিছু ওষুধ খাইয়ে দেয়। ফলে পাখিটি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। কিন্তু এক রাতে হঠাৎ পাখিটি মারা যায়। পাখিটির মৃত্যুতে সিহাবের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে আজও পাখিটিকে ভুলতে পারে না। পাখির প্রতি সিহাবের এরূপ মমত্ববোধ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে বর্ণিত একটি কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপক ও গল্প উভয় ক্ষেত্রেই মানবেতর প্রাণীর প্রতি মানুষের মমত্ববোধের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের সব দিক প্রতিফলিত না হওয়ায় উদ্দীপকটি উক্ত গল্পের সমগ্রভাব ধারণ করে না।
অতিথির স্মৃতি গল্পে মানবেতর প্রাণীর প্রতি মানুষের মমত্ববোধের পাশাপাশি নির্মমতার পরিচয়ও পাওয়া যায়। লেখক দেখিয়েছেন, মমত্ববোধের সম্পর্ক কেবল মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। তবে এ সম্পর্কের সূত্রে মানুষ যখন ওই জীবের প্রতি মমতায় সিক্ত হয়, তখন অন্য মানুষের নির্মম আচরণও লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে একটি আহত পাখিকে কেন্দ্র করে মানবেতর প্রাণীর প্রতি সিহাবের মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে। সে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা আহত পাখিটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং যত্ন করে রাখে। পাখিটিকে সুস্থ করার জন্য সে স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাইয়ে দেয়। পাখিটি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলেও এক রাতে হঠাৎ মারা যায়। পাখিটির মৃত্যুতে সিহাবের চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে পাখিটিকে আজও ভুলতে পারেনি। মানবেতর প্রাণীর প্রতি সিহাবের এরূপ মমত্ববোধ ও ভালোবাসায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের একটি কুকুরের প্রতি মমত্ববোধের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। তবে উক্ত গল্পে এ দিকটি ছাড়াও গাছে গাছে পাখিদের আনাগোনা, ব্যাধের পাখি চালান দেওয়া, রোগাক্রান্ত রোগীদের করুণ অবস্থা এবং সর্বোপরি মানবেতর প্রাণীর প্রতি অন্যদের নির্মমতার দিকও বর্ণিত হয়েছে, যা উদ্দীপকে হয়নি।
তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের সব বিষয় প্রতিফলিত না হওয়ায় উদ্দীপকটি উক্ত গল্পের সমগ্রভাব ধারণ করে না।

2 thoughts on “(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর”

Leave a Comment