(বাংলা)পঞ্চম: অপেক্ষা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

অপেক্ষা হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর সেলিনা হোসেনের গল্প। অপেক্ষা গল্পটির অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

লেখক পরিচিতি জেনে নিই
নাম – সেলিনা হোসেন।
জন্ম পরিচয় –
জন্ম তারিখ : ১৪ জুন, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : রাজশাহী।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় –
পিতার নাম : মোশাররফ হোসেন।
মাতার নাম : মরিয়মন্নেসা বকুল।
শিক্ষাজীবন –
মাধ্যমিক : এসএসসি (১৯৬২), পিএন গার্লস হাই স্কুল। উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি (১৯৬৪), রাজশাহী মহিলা কলেজ।
উচ্চতর শিক্ষা : বিএ, সম্মান (১৯৬৭); এমএ, বাংলা (১৯৬৮), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

কর্মজীবন/পেশা –
পরিচালক : বাংলা একাডেমি।
উপন্যাস : জলোচ্ছ্বাস, হাঙর নদী গ্রেনেড, যাপিত জীবন, পদশব্দ, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, খুন ও ভালোবাসা, যুদ্ধ, ঘুমকাতুরে ঈশ্বর ইত্যাদি।
সাহিত্যকর্ম –
ছোটগল্প : জলবতী মেঘের বাতাস, খোল করতাল, পরজন্ম, মানুষটি, নারীর রূপকথা ইত্যাদি।
শিশুতোষ গ্রন্থ : সাগর, কাকতাড়ুয়া, বর্ণমালার গল্প, আকাশপরী, গল্পে বর্ণমালা, চাঁদের বুড়ির পাস্তা ইলিশ ইত্যাদি।
পুরস্কার/সম্মাননা : বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক (২০০৯), রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা কর্তৃক ডিলিট (২০১০),, দিল্লি সাহিত্য একাডেমি কর্তৃক প্রেমচাদ ফেলোশিপ (২০১১) আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপ্‌স্ সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি।

এক নজরে অপেক্ষা গদ্যের মূলকথাটি জেনে নিই—
রুমা-রুবা দুই বোন। বাবা-মা আর দুই বোনের সুখের জীবন। একদিন ওদের বাবা জসীম মিয়া বাজার থেকে শুনে আসে যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করেছে। এর কয়েক মাস পরে ওদের গ্রামে মিলিটারি আসে। জসীম মিয়া শহর থেকে আসা ছেলেদের কাছ থেকে রাইফেল চালানো শিখে নেয়, গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। একদিন বাজারে গেলে মিলিটারির সামনে পড়ে যায় জসীম মিয়া।

তারা কে নির্মমভাবে হত্যা করে। মিলিটারিরা গ্রামে আগুন দেয়। এরপর থেকে রুমা-রুবার কাছে যুদ্ধের অর্থ পাল্টে যায়। ওদের মা রাহেলা বানু চাল জমিয়ে রাখে। রাতে মুক্তিযোদ্ধারা এলে তাদের ভাত রান্না করে খাওয়ায়। মুক্তিযোদ্ধারা এসে রুমা-রুবা তাদের রাইফেলগুলো ছুঁয়ে দেখে; রাইফেল দুটো কোলে নিয়ে বসে থাকে। চারদিকে ঘোরতর যুদ্ধ চলছে। রুমা-বুবা ঘুমাতে পারে না। অপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধাদের ডাক শোনার জন্য।

সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই—
অপেক্ষা, জন্মদিন, গল্প, উদগ্রীব, গন্ধ, গেঁথে, উৎফুল্ল, হাঁড়ি, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিবাহিনী, ছুড়তে, জ্যোৎস্না, আক্রমণ, জ্ঞান, খুকুমণি, গণহত্যা।

অপেক্ষা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
খুশবু, উদগ্রীব, বিবিসি, গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু, ট্রেনিং, গপগপিয়ে, মুক্তিবাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, ক্যাম্প, মিলিটারি।

উত্তর :
খুশবু – সুগন্ধ।
উদগ্রীব – প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করা। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন।
বিবিসি – ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশিন। যুক্তরাজ্যের বেতার কেন্দ্রের নাম।
গণহত্যা – অনেক লোককে বিনা অপরাধে মেরে ফেলা।
বঙ্গবন্ধু – জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের উপাধি।
ট্রেনিং – কোনো বিশেষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
গপগপিয়ে – গপগপ করে।
মুক্তিবাহিনী – শত্রুর দখল থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করেছিল যে সেনাদল।
মুক্তিযোদ্ধা – যিনি স্বাধীনতা বা মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেন।
ক্যাম্প – সৈনিক বা যোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাঁটি। সেনাছাউনি।
মিলিটারি – সামরিক বাহিনী। গল্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বোঝানো হয়েছে।

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
বঙ্গবন্ধুর, মিলিটারির, গণহত্যা, উদগ্রীব, বিবিসির, মুক্তিযোদ্ধারা
ক. রুবা – হয়ে বলে, মা আমার গল্পটা বল।
খ. সবাই আমগাছের নিচে বসে রেডিওতে — খবর শুনছে।
গ. ঢাকা শহরে গত মধ্যরাতে – শুরু করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
ঘ. জসীমের মনে পড়ে কিছুদিন আগে ওরা – ৭ই মার্চের ভাষণ শুনছিল।
ঙ. বিকেলে বাজারে গেলে পাকিস্তানি – সামনে পড়ে যায় জসীম।
চ. রাতে – এলে তার জন্য ভাত রান্না করবে।

উত্তর :
ক. রুবা উদগ্রীব হয়ে বলে, মা আমার গল্পটা বল।
খ. সবাই আমগাছের নিচে বসে রেডিওতে বিবিসির খবর শুনছে।
গ. ঢাকা শহরে গত মধ্যরাতে গণহত্যা শুরু করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
ঘ. জসীমের মনে পড়ে কিছুদিন আগে ওরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনছিল।
ঙ. বিকেলে বাজারে গেলে পাকিস্তানি মিলিটারির সামনে পড়ে যায় জসীম।
চ. রাতে মুক্তিযোদ্ধারা এলে তার জন্য ভাত রান্না করবে।

৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।

প্রশ্ন ক. রুমার জন্মদিনের গল্পটি কী?
উত্তর : রুমা-রুবা দুই বোন। দুই বোনের জন্মদিন নিয়ে ওদের বাবা-মার কাছে একটি গল্প আছে।
রুমার জন্মদিনের গল্পটি হলো, যেদিন রুমার জন্ম হয় সেদিন ওদের বাড়ির উঠানের শিউলি গাছটা ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছিল। এত ফুল ওদের মা আর কখনো দেখেনি। ফুলের মিষ্টি গন্ধে বাড়ির চারদিক ভরে গিয়েছিল।

প্রশ্ন খ. রুবার জন্মদিনের গল্পটি কী?
উত্তর : রুমা আর বুবা দুই বোন। রুমা বড় আর রুবা ছোট। কুমার মতো ওদের বাবা-মার কাছে রুবার জন্মদিনের একটি গল্প আছে। যেদিন রুবার জন্ম হয় সেদিন ওর বাবা বাড়ির বাইরের আম গাছটার নিচে বসে ছিল। হঠাৎ সে মাথার উপর তাকিয়ে দেখে বোলে ভরে আছে গাছটা। এত বোল আগে কোনোদিনই দেখেনি সে। বোলের গন্ধে চারদিক ভরে ছিল।

প্রশ্ন গ. রাহেলা বানু প্রতিদিন দুই মুঠো চাল উঠিয়ে রেখে দিত কেন?
উত্তর : রাহেলা বানু প্রতিদিন রান্নার সময় দু-মুঠো চাল মাটির কলসিতে উঠিয়ে রাখত রাতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা এলে তার জন্য ভাত রান্না করবে বলে। সত্যিই একদিন গভীর রাতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা আসে ওদের বাড়িতে। রাহেলা বানু সেই জমানো চাল দিয়ে তাদের জন্য ভাত রান্না করে।

প্রশ্ন ঘ. গভীর রাত পর্যন্ত দুই বোন কেন জেগে থাকত?
উত্তর : কোনো না কোনো মুক্তিযোদ্ধা আবার ওদের বাড়িতে আসবে। এসে ওদের দরজা খোলার জন্য ডাকবে। এই অপেক্ষায় দুই বোন গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকত।

প্রশ্ন ঙ. মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জসীম মিয়ার পরিবারের সম্পর্কটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : জসীম মিয়ার সূত্রে মুক্তিযোদ্ধারা রুমা-রুবাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করে। তারা রাহেলা বানুকে মা বলে সম্বোধন করে। রাহেলা বানুও নিজ সন্তানের মতোই ওদের স্নেহ করে। তাদের জন্য চাল জমিয়ে রাখে যেন ক্ষুধার্ত হয়ে এলে তাদের ভাত রান্না করে দিতে পারে। মুক্তিযোদ্ধারা আসে, ভাত খায়, নয়তো একটু ঘুমিয়ে নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা যেন ওদের পরিবারেরই সদস্য ছিল।

প্রশ্ন চ. “আমার মেয়েগুলোর অনেক বুদ্ধি। অনেক বড় হ মা।” ‘অনেক বুদ্ধি’ এবং ‘বড় হ’ বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তর : “আমার মেয়েগুলোর অনেক বুদ্ধি। অনেক বড় হ মা।”- এখানে ‘অনেক বুদ্ধি’ বলতে আমি বুঝি মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি বা বিচক্ষণ ক্ষমতা। আর ‘বড় হ’ বলতে বুঝি লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হওয়া।

প্রশ্ন ছ. একজন মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধ করার জন্য কী কী যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা দরকার?
উত্তর : একজন মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধ করার জন্য যেসব যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা দরকার, তা নিচে তুলে ধরা হলো :
মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য সর্বপ্রথম যোগ্যতা হলো অকৃত্রিম দেশপ্রেম। মুক্তিযোদ্ধাকে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মতো মানসিক শক্তির অধিকারী হতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অবশ্যই অন্ত চালনায় দক্ষ হতে হবে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে ভীরু, কাপুরুষ সে কখনো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। স্বার্থপর ব্যক্তি কখনো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না।

৪. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে দুই বোন কোথায় রাখত?
১. বইয়ের ভিতর
২. বালিশের নিচে
৩. কৌটার ভিতর
√ ৪. খাতার ভিতর
খ. আমগাছের নিচে বসে জসীম কিসের খবর শুনছিল?
১. বাজারের খবর
২. যুদ্ধের খবর
√ ৩. গণহত্যার খবর
৪. বাড়ির খবর
গ. রুবা রুমার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে, যুদ্ধ মানে কী বুবু? রুমা দুই হাতে চোখ মুছে বলে-
√ ১. বাবার মরে যাওয়া
২. মায়ের মরে যাওয়া
৩. ভাই বোনের মরে যাওয়া
৪. স্বামী মরে যাওয়া
ঘ. কখন শিউলি ফুল ফোটে?
√ ১. আশ্বিন মাসে
২. কার্তিক মাসে
৩. দিনের বেলা
৪. মাঘ মাসে

৫. শব্দগুলোকে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ অনুযায়ী সাজাই।
এমন কিছু শব্দ আছে যা দিয়ে কারোর নাম, জায়গার নাম বোঝায় সেগুলো বিশেষ্য। যেমন- নদী শুকিয়ে গেছে। এখানে ‘নদী’ বিশেষ্য পদ। আবার এমন শব্দ আছে যা দিয়ে বিশেষ্য শব্দের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ, সংখ্যা বোঝায় সেগুলো বিশেষণ পদ। যেমন— মুনা দৌড়ে দ্রুত পালিয়ে গেল। এখানে ‘দ্রুত’ বিশেষণ পদ। এবার নিচের শব্দগুলো থেকে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ আলাদা করি।
গাছ, ভাত, শুকনো, ভীষণ, নদী, কাঁপা, দরজা, রাইফেল, গরম, গভীর, হাঁড়ি, দ্রুত।

বিশেষ্য
নদী, গাছ, ভাত, দরজা, রাইফেল, হাঁড়ি

বিশেষণ
গরম, শুকনো, ভীষণ, কাঁপা, গভীর, দ্রুত।

৬. বিপরীত শব্দ লিখি এবং তা দিয়ে একটি করে বাক্য লিখি।

উত্তর :
জন্ম – মৃত্যু → যুদ্ধের সময় দেশের অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
কান্না – হাসি → সন্তানের হাসি দেখলে মায়ের মন ভরে ওঠে।
ভরা – খালি → খালি কলসি বাজে বেশি।
যুদ্ধ -শান্তি → গৌতম বুদ্ধ শান্তির বাণী প্রচার করেছেন।
দূর – নিকট → আমার বাড়ির নিকটে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত।
শুকনো – ভেজা → বৃষ্টির পর মাঠ-ঘাট সব ভেজা থাকে।

৭. বাক্য রচনা করি।
জন্মদিন, আয়ু, অপেক্ষা, মুক্তিযোদ্ধা, রেডিও।

উত্তর :
জন্মদিন – রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিন ৯ ডিসেম্বর।
আয়ু – এই পৃথিবীতে সবাই দীর্ঘ আয়ু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না।
অপেক্ষা – ভালো কোনোকিছুর জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর।
মুক্তিযোদ্ধা – মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অসীম সাহসী।
রেডিও – মুক্তিযুদ্ধের সব খবর রেডিওতে প্রচারিত হতো।

৮. কথাগুলো বুঝে নিই।
ধপাস করে পড়া – হঠাৎ ধপ করে পড়া। ট্রাক থেকে চালের বস্তাটি ধপাস করে পড়ে গেল।
মুখ থুবড়ে পড়া – উপুড় হয়ে বা হুমড়ি খেয়ে পড়া। ছেলেটা হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।
গপগপিয়ে খাওয়া – একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে পুরে দ্রুত খাওয়া। সে গপগপিয়ে সব ভাত খেয়ে ফেলল।
দুই সের – আমাদের দেশে আগে ওজন মাপের জন্য ‘সের’ ব্যবহার করা হতো। ১ সের পরিমাণ বর্তমান মাপে ১ কেজির কিছু কম (প্রায় ০.৯৩৫ কেজি।) ১ কেজি = ১.০৭ সের (প্রায়)

আরো পড়োশহিদ তিতুমীর গল্পের প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়োরৌদ্র লেখে জয় কবিতার প্রশ্ন উত্তর

৯. কর্ম-অনুশীলন।
আমার শ্রেণিশিকক্ষ, মা-বাবা, দাদা-দাদি, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিকট থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প শুনে তা লিখি ও শ্রেণির সহপাঠীদের পড়ে শোনাই।
উত্তর : নিজে কর।