(বাংলা)পঞ্চম: শহিদ তিতুমীর গল্পের প্রশ্ন উত্তর

শহিদ তিতুমীর হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর গল্প। শহিদ তিতুমীর গল্পটির অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

এক নজরে শহিদ তিতুমীর গদ্যের মূলকথাটি জেনে নিই—
তিতুমীর ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলায় এক বনিয়াদি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী। ছেলেবেলা থেকেই ডানপিটে তিতুমীর দেশকে ব্রিটিশদের শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত করার চিন্তা করতেন। প্রচণ্ড শারীরিক শক্তিধর তিতুমীর মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, অসিচালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষদের একাত্ম করার চেষ্টা করেন।

১৮২২ সালে তিনি হজ পালন করতে যান এবং সেখানে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব হযরত শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। প্রথমে জমিদারদের কাছ থেকে বাধা এলেও তিনি হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নারকেলবাড়িয়ায় তৈরি করেন বাঁশের কেল্লা। ১৮৩০ সালে তিনি আলেকজান্ডারকে পরাজিত করে কয়েকটি নীলকুঠি দখল করেন। এরপর কর্নেল স্টুয়ার্ডের গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণে তার বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয় এবং তিনি শহিদ হন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহিদ।

সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই—
তিতুমীর, পশ্চিমবঙ্গ, চব্বিশ পরগনা, বনিয়াদি, বলিষ্ঠ, বংশ, ভীষণ, ওষুধ, ব্রিটিশ, দারুণ, ডনকুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, অসিচালনা, সঞয়, শান্ত, স্বভাব, ওস্তাদ, দুরবস্থা, আহ্বান, ব্যক্তিত্ব, সংগ্রামী, দুর্ভেদ্য, সশস্ত্র, প্রস্তুতি, ম্যাজিস্ট্রেট, আলেকজান্ডার, বেন্টিঙ্ক, স্টুয়ার্ড, আক্রমণ, প্রশিক্ষিত, অজস্র, শহিদ, মুক্তিকামী।

শহিদ তিতুমীর গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
জেদি, পরাধীন, দাপটে, ডনকুস্তি, অসিচালনা, দুর্ভেদ্য, দুর্গ, বাঁশের কেল্লা, শায়েস্তা, অমিত তেজ, মুক্তিকামী।

উত্তর :
জেদি – একগুঁয়ে, কোনো কাজ করতে নাছোড়বান্দা।
পরাধীন – পরের অধীন, স্বাধীন নয়।
দাপটে – প্রবল প্রতাপের সঙ্গে।
ডনকুস্তি – বুকডন দিয়ে শরীরচর্চা আর শারীরিক শক্তির পরীক্ষা।
অসিচালনা – তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করার বিদ্যা।
দুর্ভেদ্য – যা কষ্টে ভেদ করা যায়।
দুর্গ – প্রাচীর বা দেয়াল ঘেরা সেনানিবাস।
বাঁশের কেল্লা – বাঁশ দিয়ে তৈরি কেল্লা বা দুর্গ।
শায়েস্তা – শাস্তি, জব্দ।
অমিত তেজ -ভঅসীম সাহস আর অদম্য শক্তি।
মুক্তিকামী – স্বাধীনতাকামী।

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
পরাধীন, ডনকুস্তি, অসিচালনা, দুর্গ, দাগটে, মুক্তিকামী
ক. তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন আমাদের বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ ছিল -।
খ. ইংরেজ কর্মচারীরা ঘোড়া ছুটিয়ে চলত দারুণ -।
গ. তিনি লাঠিখেলা, তীর ছোড়া আর – শিখলেন।
ঘ. সেকালে গ্রামে গ্রামে – আর শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো।
ঙ. শহিদ হলেন – অসংখ্য বীর সৈনিক।
চ. হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করলেন বাঁশের -।

উত্তর :
ক. তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন আমাদের বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন।
খ. ইংরেজ কর্মচারীরা ঘোড়া ছুটিয়ে চলত দারুণ দাপটে।
গ. তিনি লাঠিখেলা, তীর ছোড়া আর অসিচালনা শিখলেন।
ঘ. সেকালে গ্রামে গ্রামে ডনকৃষ্টি আর শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো।
ঙ. শহিদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক।
চ. হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করলেন বাঁশের দুর্গ।

৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. ‘তিতুমীর’ নামটি কেমন করে হলো? তাঁর প্রকৃত নাম কী?
উত্তর : তিতুমীরের শিশুকালে একবার কঠিন অসুখ হলে রোগ সারানোর জন্য ভীষণ তেতো ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। বুড়োরাও যে ওষুধ মুখে দিতে নারাজ সে ওষুধ ছোট্ট তিতুমীর সবাইকে অবাক করে দিয়ে খেয়ে নেয় আনন্দের সাথে। এজন্য ওর ডাক নাম রাখা হয় তেতো। তেতো থেকে তিত্ব। তার সাথে মীর লাগিয়ে হলো তিতুমীর। তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।

প্রশ্ন খ. এ দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার চিন্তা কেন তাঁর মনে এলো?
উত্তর : তিতুমীরের সময়ে বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন। ব্রিটিশদের শাসন-শোষণ আর অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন তখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে ছিল দেশি জমিদারদের জুলুম-নির্যাতন। ইংরেজ কর্মচারীরা অত্যাচার চালাত, ঘোড়া ছুটিয়ে দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত। এসব দেখে তিতুমীরের মনে এ দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার চিন্তা এলো।

প্রশ্ন গ. হিন্দু-মুসলমান সবাইকে তিনি কী বলে একতাবদ্ধ করতে চাইলেন?
উত্তর : দেশের মানুষের দুরবস্থা দেখে তিতুমীরের মনে দেশকে স্বাধীন করার চিন্তা আসে। এজন্য তিনি মুসলমানদের সত্যিকার মুসলমান হতে আহ্বান জানালেন। আর হিন্দুদের বললেন অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। এ কথা বলেই তিনি হিন্দু-মুসলমানদের একতাবদ্ধ করতে চাইলেন।

প্রশ্ন ঘ. ইংরেজদের পাশাপাশি কারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাত?
উত্তর : ইংরেজদের পাশাপাশি দেশি জমিদাররা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাত।

প্রশ্ন ঙ. নারকেলবাড়িয়া কোথায়? এখানে তিতুমীর কী তৈরি করলেন?
উত্তর : নারকেলবাড়িয়া পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে অবস্থিত। এখানে তিতুমীর হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ তৈরি করেন। যা বাঁশের কেল্লা নামে পরিচিত।

প্রশ্ন চ. কত খ্রিস্টাব্দে তিতুমীরের কাছে ব্রিটিশ শক্তি পরাজিত হয়?
উত্তর : ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তিতুমীরের কাছে ব্রিটিশ শক্তি পরাজিত হয়।

প্রশ্ন ছ. কখন কোন ইংরেজ সেনাপতির নেতৃত্বে তিতুমীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়?
উত্তর : ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বরের ভোর হওয়ার আগের আবছা আলোয় ইংরেজ সেনাপতি কর্নেল স্টুয়ার্ডের নেতৃত্বে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্য আর অজস্র গোলাবারুদ নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন জ. তিতুমীর কীভাবে শহিদ হলেন?
উত্তর : ইংরেজ সেনাপতি কর্নেল স্টুয়ার্ডের নেতৃত্বে হাজার হাজার সৈন্য তিতুমীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তিতুমীর আর তাঁর বীর সৈনিকরা প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরে সৈনিকদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে যায় বাঁশের কেল্পা। অসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তিতুমীর শহিদ হলেন।

প্রশ্ন ঝ. পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধে প্র শহিদ কে?
উত্তর : পরাধীন ভারতর্ষে ইংরেজবিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথ শহিদ হন সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর।

প্রশ্ন ঞ. শহিদ তিতুমীর কেন অমর হয়ে আছেন?
উত্তর : দেশের মানুষের পরাধীনতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে, দেশকে স্বাধীন করতে তিতুমীর আর তাঁর সৈনিকরা অত্যাচারী ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হন। দেশকে ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে তিনি দেশের মানুষের মনে অমর হয়ে আছেন।

৪. নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করি।
বাঁশের কেল্লা, জেদি, সশস্ত্র, শায়েস্তা, প্রিয়পাত্র, দুর্ভেদ্য।

উত্তর :
প্রদত্ত শব্দ → বাক্য
বাঁশের কেল্লা → তিতুমীর ও তাঁর সৈন্যরা নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন।
জেদি → তনিমা খুব জেদি মেয়ে।
সশস্ত্র → তিতুমীর ও তাঁর সঙ্গীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হন।
শায়েস্তা → পুলিশ অপরাধীদের শায়েস্তা করে।
প্রিয়পাত্র → তমাল তার মেধার কারণে শিক্ষকদের কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে।
দুর্ভেদ্য → সুন্দরবনে অনেক দুর্ভেদ্য অঞ্চল রয়েছে।

৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. তিতুমীরের প্রকৃত নাম কী?
১. মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
√ ২. সৈয়দ মীর নিসার আলী
৩. মোঃ শামসুল হক
৪. সৈয়দ নজরুল ইসলাম
খ. তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন এদেশ কাদের অধীন ছিল?
১. ফরাসিদের
২. ডাচদের
√ ৩. ব্রিটিশদের
৪. পর্তুগিজদের
গ. মক্কায় কোন সংগ্রামী পুরুষ ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির সাথে তিতুমীরের পরিচয় হয়েছিল?
√ ১. হযরত শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর সঙ্গে
২. হাফেজ নেয়ামত উল্লার সঙ্গে
৩. গোলাম মাসুদের সঙ্গে
৪. হযরত আলী (রা) এর সঙ্গে

ঘ. তিতুমীরের দুর্গের নাম কী?
১. লাঠির কেল্লা
২. লোহার কেল্লা
৩. বেতের কেল্লা
√ ৪. বাঁশের কেল্লা
ঙ. তিতুমীর ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে কত সালে পরাজিত করেন?
ক. ১৮২২
√ খ. ১৮৩০
গ. ১৮৩১
ঘ. ১৮৩৪
চ. তিতুমীর ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন কেন?
১. তাঁর সৈনিকদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে
√ ২. প্রশিক্ষিত সৈন্য ও উন্নত অস্ত্র-শস্ত্রের অভাবে
৩. সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে
৪. অদূরদর্শিতার কারণে

৬. বিপরীত শব্দ লিখি এবং তা দিয়ে একটি করে বাক্য লিখি।
পরাধীন – স্বাধীন → বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ।
তেতো – মিষ্টি → কোকিলের কণ্ঠস্বর খুব মিষ্টি।
পরাস্ত – জয়ী → আমরা খেলায় জয়ী হয়েছি।
দুর্বল – সবল → পাখির ছানাটি ধীরে ধীরে সবল হয়ে উঠছে।
আনন্দ – বেদনা → কারও মনে বেদনা দিতে নেই।
শান্ত – অশান্ত → তিয়াস ছোটবেলা থেকেই অশান্ত।

আরো পড়োরৌদ্র লেখে জয় কবিতার প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়োদেখে এলাম নায়াগ্রা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

৭. কর্ম-অনুশীলন।
ক. শহিদ তিতুমীরের ‘বাঁশের কেল্লা’ সম্পর্কে যা জান লিখ।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিতুমীর স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি সাধারণ মানুষদের সংগঠিত করেন নীলকরদের রুখতে। আর এজন্য তিনি নিজ গ্রাম ছেড়ে বারাসাতের নারকেলবাড়িয়ায় গেলেন। সেখানে হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করলেন এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ দুর্গ। এটাই নারকেলবাড়িয়ায় শহিদ তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা।

Leave a Comment