আবার আসিব ফিরে হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর জীবনানন্দ দাশ এর কবিতা। আবার আসিব ফিরে কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
আবার আসিব ফিরে কবিতার সৃজনশীল
১. দেশটা আমার দেশ শুধু নয় যেন রূপের হাট,
সবুজ ধানে ঢেউ খেলে যায় নাচে সবুজ মাঠ।
শাপলা ফোটে বিলে-ঝিলে কলমি ভাসে জলে,
রাত্রি হলে জোনাকিদের রূপের নাচন চলে।
হাজার পাখি প্রাণ খুলে গায় নানা সুরের গান,
হাজার নদী কলকলিয়ে তোলে ঐকতান।
দেশটা ছেড়ে কোথাও যে চায় না যেতে মন
আমার দেশের রূপ মাধুরী দেখব আজীবন।
ক. সন্ধ্যার বাতাসে কী উড়ছে?
খ. জীবনানন্দ দাশ এই বাংলায় ফিরে আসতে চান কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাথে কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ছে।
খ. জীবনানন্দ দাশ তাঁর দেশকে ভালোবাসেন বলে এই বাংলায় ফিরে আসতে চান।
জীবনানন্দ দাশ বাংলার সন্তান। বাংলা তাঁর জন্মভূমি। তিনি তাঁর জন্মভূমির প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ। এদেশের অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলো তাঁর দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। এসবের সাথে রয়েছে তাঁর মমতার বন্ধন। তিনি মনে করেন, এ বন্ধন চিরন্তন- যা তাঁর মৃত্যুর পরও ছিন্ন হবে না । তাই তিনি এই বাংলায় ফিরে আসতে চান।
গ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির দেশপ্রেম ও প্রকৃতির প্রতি অনুরাগের দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।
স্বদেশকে ভালোবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। যে দেশে যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, সে দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ তার মনে গভীর মায়া সঞ্চার করে। ফলে মানুষ স্বদেশের মমতার বন্ধনে সবসময় জড়িয়ে থাকতে চায়।
উদ্দীপকে স্বদেশের রূপ-সুষমা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কবির দেশটা যেন এক রূপের হাট। সবুজ ধানের ঢেউ খেলানো মাঠ, বিলে-ঝিলে ভেসে থাকা শাপলা- কলমি, রাতের বেলা জোনাকিদের রূপের মাচন কবিকে মুগ্ধ করে। প্রকৃতির অঙ্গনে হাজার পাখির নানা সুরের গান, হাজার নদীর কলকল ধ্বনির ঐকতান তাঁর ভালো লাগে। তাই তিনি তাঁর দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চান না, সারাজীবন তিনি তার স্বদেশের রূপ-মাধুরী দেখতে চান।
উদ্দীপকের কবির এরূপ স্বদেশপ্রীতি ও প্রকৃতির রূপে মুগ্ধতার বিষয়টি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির দেশপ্রেম ও প্রকৃতি- প্রীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা, উক্ত কবিতায়ও রূপময় প্রকৃতির প্রতি অনুরাগের মধ্য দিয়ে কবির গভীর দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। কবি মৃত্যুর পরও বিভিন্ন রূপ ধরে তাঁর প্রিয় স্বদেশের প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে চেয়েছেন।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না। কেননা, তাতে মৃত্যু-চেতনার আলোকে স্বদেশের প্রকৃতির সাথে মিশে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়নি।
জন্মভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা অন্তহীন। দেশপ্রেমিকেরা জীবনে-মরণে জন্মভূমির মায়ার বাঁধনে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চায়। সবাই আশা করে, মৃত্যুর পরও যেন স্বদেশের সাথে তার মমতার বন্ধন অটুট থাকে।
উদ্দীপকে স্বদেশের প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ এক কবির গভীর দেশপ্রেমের পরিচয় ফুটে উঠেছে। কবি তাঁর দেশকে প্রকৃতির রূপের হাট মনে করেন। স্বদেশের সবুজ ধানের ঢেউ খেলানো মাঠ, বিলে-ঝিলে ভাসা শাপলা- কলমি, রাতের বেলায় জোনাকিদের রূপের নাচন কবির ভালো লাগে। হাজার পাখির নানা সুরের গান, আর হাজার হাজার নদীর কলকল ধ্বনির ঐকতানে তিনি মুগ্ধ। তাই স্বদেশ ছেড়ে কোথাও যেতে তাঁর মন চায় না। তিনি আজীবন তাঁর দেশের রূপ-মাধুরী দেখতে চান।
উদ্দীপকে বর্ণিত স্বদেশের প্রতি গভীর অনুরাগের দিকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাও রয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় কবির যে মৃত্যু-চেতনার প্রকাশ ঘটেছে, উদ্দীপকে তার প্রতিফলন নেই। আলোচ্য কবিতার কবি মনে করেন, যখন তাঁর মৃত্যু হবে তখন দেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেত, কলমির গন্ধভরা বিল প্রভৃতিকে ভালোবেসে এই বাংলায় ফিরে আসবেন এবং দেশের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন। উদ্দীপকে আলোচ্য কবিতার কবির এরূপ মনোভাবের দিকটি ফুটে ওঠেনি।
কাজেই, উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না’- মন্তব্যটি যথার্থ।
২. বাংলার তরু বাংলার ফল
বাংলার পুষ্প বাংলার কমল
মাঠে ঘাটে পথে তটিনী সৈকতে
যে দেখে সে আপন হারা।
ক. কবি জীবনানন্দ দাশ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. কবি এই বাংলায় আবার ফিরে আসতে চান কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাথে কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না – মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. কবি তাঁর জন্মভূমি বাংলাকে ভালোবাসেন বলে আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান।
কবি জীবনানন্দ দাশ জন্মভূমি বাংলাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। বাংলার প্রকৃতির রূপ-সুষমা তাকে মুগ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু কবি জানেন, একদিন এসব ছেড়ে তাকে মরণের দেশে চলে যেতে হবে। তাই পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী কবি মৃত্যুর পর তাঁর ভালোবাসার বাংলাদেশে আবার ফিরে আসতে চান। মৃত্যুর পরও তিনি অন্যভূমির মায়ার ধ্যাধন ছিন্ন করতে চান না।
গ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাথে প্রকৃতিপ্রেমের দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।
জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা মানুষকে আবেগাপ্লুত করে। মানুষ অনন্তকাল জন্মভূমির মায়ার বাধনে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চায়। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশও তার আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মৃত্যুর পরও নানা রূপ ধরে এদেশের বুকে মিশে থাকতে চান।
উদ্দীপকে অত্যন্ত সরল ভাষায় প্রকৃতিপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে। কবি জন্মভূমি বাংলার প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ। তিনি মনে করেন, বাংলার বৃক্ষ-লতা, ফুল-ফল, মাঠ-ঘাট, নদী ও সৈকতের রূপ-মাধুর্য যে দেখে সে আত্মহারা হয়ে যায়। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায়ও কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতিপ্রেমের চমৎকার বর্ণনা ফুটে উঠেছে। কবি বাংলার প্রকৃতিকে এত ভালোবাসেন যে, জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিসগুলো তাঁর দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। তাই তিনি মৃত্যুর পর আবার স্বদেশের প্রকৃতির অঙ্গনে নানা রূপ ধরে ফিরে আসতে চেয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকটি প্রকৃতিপ্রেমের দিক থেকে আলোচ্য কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না, কেননা তাতে উক্ত কবিতায় মৃত্যু-চেতনা প্রতিফলিত হয়নি।
জন্মভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা অবিচ্ছেদ্য। তাই মানুষ জীবনে-মরণে স্বদেশের নিবিড় সান্নিধ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চায়। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবিও মনে করেন, যখ তাঁর মৃত্যু হবে তখন স্বদেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না। মরণের পরেও তিনি জন্মভূমি বাংলার রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকবেন।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরার মধ্য দিয়ে গভীর স্বদেশপ্রেমের পরিচয় ফুটে উঠেছে। এদেশের প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ কবি মনে করেন, বাংলার গাছগাছালি, ফুল, ফল, মাঠ-ঘাট, নদী ও সৈকতের রূপ অতি মনোহর। তাই এসবের রূপ যে প্রত্যক্ষ করে সে আত্মহারা হয়ে যায়। আবার আসিব ফিরে’ কবিতায়ও প্রকৃতিপ্রেমের মধ্য দিয়ে কবির স্বদেশপ্রেমের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেম মৃত্যু-চেতনা থেকে উৎসারিত।
কবি বাংলাকে ভালোবেসে মৃত্যুর পরও বাংলার প্রকৃতির অঙ্গনে নানাভাবে বিচরণ করতে চান। তিনি জন্মভূমি বাংলায় ফিরে আসতে চান ভোরের কাক হয়ে, হাঁস হয়ে শঙ্খচিল শালিকের বেশে, ধবল বক, লক্ষ্মীপেঁচা কিংবা সুদর্শনের রূপ ধরে। উক্ত কবিতায় কবির দেশপ্রেম ও প্রকৃতিপ্রীতির যে পরিচয় ফুটে উঠেছে, তার মূলে রয়েছে পুনর্জন্মে বিশ্বাসী কবির মৃত্যু-চেতনা, যা উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি।
তাই বলা যায়, প্রকৃতিপ্রেমের মধ্য দিয়ে স্বদেশপ্রেমের পরিচয় ফুটে উঠলেও তা মৃত্যুচেতনা থেকে উৎসারিত নয় বলে উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবের প্রতিনিধিত্ব করে না।
৩. স্তবক-১ : হৃদয় আমার তোলপাড় হয় ফুল ফসল আর সবুজে,
এই দেশকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি চোখ খুলে চোখ বুজে।
স্তবক-২ : এই দেশেতে জন্য আমার এই দেশেতে মরতে চাই,
দেশকে ভালোবেসে আমি মিলেমিশে থাকতে চাই।
ক. ধানসিঁড়ি কিসের নাম?
খ. ‘আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে’- ব্যাখ্যা কর।
গ. স্তবক-১ এর মাঝে আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ভবক-২-এ যেন ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ধানসিঁড়ি একটি নদীর নাম।
খ. ‘আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে’- বলতে কবি বাংলার সবুজ প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে মিশে একাকার হয়ে নিজে বেঁচে থাকাকে বোঝাতে চেয়েছেন।
কবি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল, শালিক, ভোরের কাক হয়ে কার্তিকের নবান্নের দেশে ফিরে আসতে চান। কবি লাল ঘুরে পরা কিশোরীর হাঁস, সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শনের উড়ে চলা, শিমুল ডালে লক্ষ্মীপেঁচার ডাক, ধবল বক— এ সবের ভিড়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার কথা বলেছেন।
গ. উদ্দীপকের স্তবক-১ এ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির জন্মভূমি ও তার প্রকৃতির প্রতি যে গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ রয়েছে সে দিকটি ফুটে উঠেছে।
বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরেছে আপন পূর্ণতায়। ফুলে ফলে ভরে দিয়েছে তার চার পাশকে। বাংলার নদী, মাঠ-ঘাট, পাখি সবকিছুতেই ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের নানা উপাদান।
উদ্দীপকের স্তবক-১ এ বলা হয়েছে, জন্মভূমির রূপ সৌন্দর্যের কথা। কবির কাছে তার নিজ দেশকে মনে হয়েছে ফল আর ফসলের সবুজ অরণ্য। তাই কবি এ দেশটিকে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখতে চান। কবি তার দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে বলেছেন- ভালোবেসে এদেশ হতে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে চান। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাতেও কবি জীবনানন্দ দাশ জন্মভূমির প্রতি এমনই ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন। মৃত্যুর পরও কবি এদেশে ফিরে আসতে চান। কবি এদেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতিতে কবি মিশে যেতে চান। এদিক থেকে আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের স্তবক-১ ‘আবার আসিব ফিরে কবিতার কবির জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ. “উদ্দীপকের স্তবক-২ এ যেন আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে,” মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রত্যেকেই তার জন্মভূমিকে মায়ের মতো ভালোবাসে। জন্মভূমির প্রকৃতি তাই মানুষের এত আপন। জন্মভূমির প্রতি যখন মানুষের মমত্ববোধ প্রগাঢ় হয়ে দেখা দেয়, তখন মানুষ তার অস্তিত্বে অনুভ করে জন্মভূমির প্রতিটি স্মৃতি। এ কারণেই জননী ও জন্মভূমিকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
উদ্দীপকের স্তবক-২ এ জলাভূমির প্রতি কবির অপার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। বিচিত্র উপমা ও রূপকল্পের সাহায্যে উদ্দীপকে তার ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। দেশকে ভালোবেসে তিনি এখানেই মরতে চান। দেশকে ভালোবেসে মিলেমিশে থাকতে চান। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায়ও কবি পৃথিবীর আর রূপ খুঁজতে চান না। অন্যভূমির তুচ্ছ জিনিসও তার কাছে অনেক সুন্দর।
উদ্দীপকের অবক-২ এ কবি দেশপ্রেমের এক অপূর্ব চিত্র তুলে ধরে সারাজীবন দেশকে নিজের মাঝে ধারণ করার যে অভিপ্রায় ব্যস্ত করেছেন, ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মাঝেও দেশপ্রেমের সে গভীর রূপ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, “উদ্দীপকের স্তবক-২ এ যেন ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।
৪. আমার এ দেশ ভাই স্বপ্নের মতোই সুন্দর
ফুলে আর ফসলে ভরে আছে এর অন্তর,
অতিথিপরায়ণ এ দেশের মানুষ যেন।
মিলে মিশে আছে সবাই আত্মীয় হেন।
ক. সুদর্শন কোথায় উড়ে?
খ. কবি জীবনানন্দ দাশকে কোথায় পাওয়া যাবে?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না। – বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সুদর্শন সন্ধ্যার বাতাসে উড়ে।
খ. বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির মধ্যে করিকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
কবি জীবনানন্দ দাশ মনে করেন, জন্মভূমি বাংলার সঙ্গে তাঁর আত্মার বাধন কোনো দিনও শেষ হবে না। মৃত্যুর পর তিনি এদেশে আবার ফিরে আসবেন। ভোরের কুয়াশা, ফসলের মাঠ, শঙ্খচিল, কলমির গন্ধভরা বিল কিংবা দিনের শেষে নীড়ে ফেরা সাদা বক- এদের মধ্যে কবি তাঁকে খুঁজে নিতে বলেছেন। কারণ এই বাংলার রূপময় প্রকৃতির মধ্যেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার দেশের সৌন্দর্যের প্রতি মমত্বের দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
এদেশের গ্রামের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের নানা উপকরণ। সবুজ মাঠে, নীল আকাশে, স্বচ্ছ নদীর স্নিগ্ধ জলে, পাখির অবিরাম কিচিরমিচিরে প্রতিনিয়ত যে সৌন্দর্য রচিত হয় তার তুলনা চলে না অন্য কোনো সৌন্দর্যের সাথে। তাই গ্রামবাংলার রূপে মানুষ মুগ্ধ হয়।
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি মুগ্ধ হয়েছেন গ্রামবাংলার -সৌন্দর্য অবলোকন করে। কার্তিকের নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠা, সবুজ করুণ ডাঙায় শঙ্খচিল-শালিকের উড়ে বেড়ানো, কলমির পদ্ধভরা জলে হাঁসের সাতার কাটা, লক্ষ্মীপেঁচার শিমুলের ডালে বসে ডাকতে থাকা, রূপসার ঘোলা জলে কিশোরের ডিঙা বাওয়া- সৌন্দর্যের এতসব উপকরণ বাংলার গ্রাম ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এমন দেশপ্রেম-চেতনা ও সৌন্দর্যের প্রতিফলন উদ্দীপকেও লক্ষণীয়। কারণ এখানে মমতা-মিশ্রিত দেশকে স্বপ্নের মতোই সুন্দররূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে সবাই মিলেমিশে আত্মীয়ের মতো বসবাস করে। তাই উদ্দীপকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার দেশের প্রতি মমত্ব ও সৌন্দর্যের দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. বাস্তবিকই উদ্দীপকটি ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না।
মানুষের দেশপ্রেম সহজাত, স্বাভাবিক এক অনুভব। কিন্তু দেশকে আপন হৃদয়ে অনুভব করার ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষই ভিন্ন। যারা প্রকৃত অর্থেই দেশকে ভালোবাসেন তাদের কাছে দেশ হলো মায়ের মতো।
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির দেশপ্রেম এক ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপিত হয়েছে। মাতৃভূমির সৌন্দর্যে কবি মুগ্ধ বিমোহিত। তাই মাতৃভূমির ক্ষুদ্র বরও তাঁর চোখে অপরিসীম সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়। স্বদেশের প্রতি এ ভালোবাসা, মুগ্ধতার কারণেই কবি মৃত্যুর পরও আবার ফিরতে চান স্বদেশের মাটিতে। অন্যদিকে উদ্দীপকেও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা ও স্বদেশের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে স্বদেশের সৌন্দর্য এবং স্বদেশপ্রেম এ দুটি দিক প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় এ দুইয়ের সম্মিলনে কবির অনুভব ভিন্ন মাত্রায় ব্যঞ্জিত। স্বদেশের প্রতি গভীর অনুরাগের কারণে তিনি স্বদেশের মাটি সংলগ্ন হয়ে থাকতে চান। মৃত্যুর পরও ফিরে আসতে চান, বাংলার মাটিতে। এ বিষয়টি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। এছাড়া উদ্দীপকে অতিথিপরায়ণ হয়ে মিলেমিশে আত্মীয়ের মতো বসবাসের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় এভাবে বসবাসের কথা বলা হয়নি। ফলে, ফসলে ভরা, স্বপ্নের মতোই সুন্দর এদেশ ইত্যাদি স্বদেশপ্রেম- চেতনা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হলেও কবিতার অন্যান্য কিছু বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত বলে তা উক্ত কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না।
আরো পড়ো → বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো → নারী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
৫. জন্ম থেকে দেখছি আমি বাংলা মায়ের রূপের মেলা,
গাছগাছালি পাখপাখালি সবুজ ছায়ার রঙের খেলা।
সর্ষে খেতের পাশে নদী কী অপরূপ শোভার দেশ
হলুদ রাঙা প্রজাপতি অরুণ রাঙার দারুণ বেশ।
জীবনটা কাটবে যখন হাজার রঙের রঙিন ফুলে
এই মাটিই গায়ে মেখে মৃত্যুকোলে পড়ব ঢুলে।
মৃতদেহ যেদিন আমার সবুজ মাঠে নিয়ে যাবে
পাথর চোখের দৃষ্টি দিয়ে দেখব সে মাঠ বিভোরভাবে।
ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উঠানের ঘাসে শিশু কী ছড়াচ্ছে?
খ. জীবনানন্দ দাশ বাংলাকে ‘সবুজ করুণ ডাঙা’ বলেছেন কেন?
গ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন দিকটি উদ্দীপকের তৃতীয় ও চতুর্থ চরণে প্রকাশ পেয়েছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় দেশপ্রেমের গভীর রূপটি উদ্দীপকের মধ্যে যথার্থভাবে প্রকাশ পেয়েছে কি না তা বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার উঠানের ঘাসে শিশু খইয়ের ধান ছড়াচ্ছে।
খ. বাংলার ‘সবুজ করুণ ডাঙা’ বলতে সবুজে আবৃত আর্দ্রভূমির বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাছাড়া এদেশের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের অপূর্ব সমারোহ চোখে পড়ে। নদীমাতৃক বাংলার পলিমাটি সবসময় আর্দ্র ও উর্বর থাকে। কবি বাংলার এমন মাটি ও প্রকৃতিকেই সবুজ করুণ ডাঙা বলেছেন।
গ. উদ্দীপকের তৃতীয় ও চতুর্থ চরণে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার স্বদেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে।
‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি অফুরন্ত দেশপ্রেমের কারণে মৃত্যুর পরেও বাংলার প্রকৃতিকে তথা মাতৃভূমিকে ভালোবেসে পুনরায় বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন। তিনি বাংলার মাঠ, নদী, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন বলেছেন। আবার কখনো বা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যেতে চেয়েছেন।
তেমনি উদ্দীপকের তৃতীয় ও চতুর্থ চরণে মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকে কবি এই মাটিই গায়ে মেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে চেয়েছেন। এমনকি মৃত্যুর পরেও চোখের দৃষ্টি দিয়ে বিভোর হয়ে গ্রাম-বাংলার মাঠ দেখতে চেয়েছেন। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবির ভাবনাও আলোচ্য উদ্দীপকের অনুরূপ। কবিতায় কবি তার অস্তিত্বের সাথে বাংলার প্রকৃতির সম্পর্ক দেখিয়েছেন। কবি হয়তো থাকবেন না, কিন্তু বাংলার প্রকৃতিতে তাকে খুঁজলেই পাওয়া যাবে বিভিন্ন রূপে।
ঘ. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় দেশপ্রেমের গভীর রূপটি উদ্দীপকের মধ্যে যথার্থভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা কোনো মানুষ বিস্মৃত হয় না। মনের গভীরে সে লালন করে ভালোবাসার অব্যক্ত অনুরাগ। কৰি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছেন এদেশের বিচিত্র সৌন্দর্যকে, ভালোবেসে ঠাঁই দিয়েছেন হৃদয়ের গভীরে। তাই তিনি এদেশের নদী-মাঠ- ঘাট, ফসলের খেত এসবকে ভালোবেসে শঙ্খচিল ও শালিকের বেশে আবারও এদেশে ফিরে আসতে চান।
এদেশের মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকেও। কবি যেমন সন্ধ্যার আকাশে সুদর্শন হয়ে গোধূলির আলো-আঁধারিতে, লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে শিমুলের ডালে অথবা খইয়ের ধান ছড়ানো শিশুর প্রতীকে এ বাংলায় বার বার ফিরে আসতে চেয়েছেন। তেমনি উদ্দীপকেও কবি এই মাটি গায়ে মেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে চেয়েছেন। মৃত্যুর পরেও তিনি পাথর চোখের দৃষ্টি দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।
স্বদেশের মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি কবির অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মধ্য দিয়ে। তেমনি উদ্দীপকেও স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। কবি বিমুগ্ধ চিত্তে প্রিয় স্বদেশভূমির সৌন্দর্য অবলোকন করে অভিভূত হয়েছেন। কবি এই বাংলায় চিরদিন থাকবেন না। কিন্তু বাংলার প্রকৃতিতে তার অন্তর মিশে আছে। কবির এই অভিব্যক্তিই তার অপরিসীম দেশপ্রেম প্রকাশ করে, যা আলোচ্য উদ্দীপকেও যথাযথভাবে লক্ষ করা যায়।