রচনা: ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান (সহজ ভাষায়)

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান

উপস্থাপনা : ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ করা, মেনে চলা, আনুগত্য করা ইত্যাদি। অন্য কথায় বলা যায়, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ হতে বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স) যে শাশ্বত জীবনবিধান নিয়ে এসেছেন তাই ইসলাম। ইসলামের আগমন হয়েছে মানবকল্যাণে এবং মানবতার মুক্তি দিতে। মানবজীবনের সকল সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান রয়েছে ইসলামে।

১। পরিপূর্ণ জীবনবিধানে ইসলাম : ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।” অর্থাৎ মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় তথা সকল ক্ষেত্রে ইসলাম এক অনুপম আদর্শ উপস্থাপন করেছে।

২। মানবকল্যাণে ইসলাম : ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে মজলুম মানবতা পেয়েছে মুক্তির দিশা। অত্যাচারিত, অবহেলিত ও বিপর্যন্ত মানুষ পেয়েছে শান্তির ঠিকানা। তাই মানবকল্যাণে ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য।

৩। অধিকারহারা মানুষের কল্যাণে ইসলাম : মহানবি (স) যখন পৃথিবীর বুকে আগমন করেন তখন সাধারণ মানুষ ছিল নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও অধিকারহারা। এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে মহানবি (স) মানুষের মাঝে নিয়ে আসলেন সাম্যের বাণী এবং বঞ্চিতের অধিকার সংরক্ষণে তিনি উপস্থাপন করলেন এক ন্যায়নীতির আদর্শ ইসলাম।

৪। বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলাম : ইসলামই পৃথিবীতে সমঅধিকারের ভিত্তিতে বিশ্বভ্রাতৃত্বের জন্ম দেয়। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, উঁচু- নিচুর ভেদাভেদ ধূলিসাৎ করে ইসলামই সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে মানবতাবোধের ধারণা জন্ম দেয়।

৫। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম : ইসলাম নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা দান করে তার হৃত গৌরব প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাক ইসলামি যুগে যেখানে নারী পণ্যের মতো বিক্রি হতো, যেখানে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হতো, সেখানে ইসলামই সর্বপ্রথম নারীকে উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা প্রদান করেছে।

আরো পড়ো →স্বদেশপ্রেম বা দেশপ্রেম
আরো পড়ো →অধ্যবসায়

৬। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইসলাম : পরিপূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলাম সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা, “তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে বিচার অথবা আপস-রফা করবে, তখন ন্যায়ের সাথেই করবে।”

৭। শোষণমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় : একমাত্র ইসলামই জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মাঝে সহাবস্থানের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

৮। সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম : বর্ণ, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সকলের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলাম এক অনুপম আদর্শ। রাসুলে আকরাম (স)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণই তার সুস্পষ্ট দলিল।

৯। সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা : সৃষ্টিকে ভালোবাসা ও তার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা ইসলামি মূলনীতির অন্যতম আদর্শ। সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার মাঝেই স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন সম্ভব।

১০। প্রতিবেশীর অধিকার : ইসলামে এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর আমানতস্বরূপ। প্রতিবেশীর ইজ্জত-আবরু ও ধন-সম্পদ রক্ষা করা, তার বিপদাপদে এগিয়ে আসা, তার উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে কল্যাণ কামনা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান।

১১। ছোটদেরকে স্নেহ ও বড়দেরকে সম্মান করা : ছোটদের প্রতি স্নেহ ও বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে ইসলাম অবশ্য কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মহানবি (স) বলেন, যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়।

১২। শাস্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম : হাজার হাজার বছর যাবৎ মানবজাতি কখনো রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আবার কখনো যুদ্ধ করে কিংবা জাতীয় বিপ্লব ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, কিন্তু লোম ছাড়া সত্যিকারভাবে এসব কোনোটিতেই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

উপসংহার : ইসলাম পৃথিবীর বুকে উপহার দিয়েছে কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। মানবজীবনের সকল দিক ও বিভাগের সকল সমস্যার পরিপূর্ণ। সমাধান একমাত্র ইসলামই দিয়েছে বিধায় ইসলাম একটি পরিপূর্ণ – জীবনবিধান। তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে নিরন্তর চেষ্টা সাধনা করা।

Leave a Comment