(অর্থনীতি) এসএসসি: উৎপাদন ও সংগঠন অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

উৎপাদন ও সংগঠন হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র অর্থনীতি বই এর চতুর্থ অধ্যায়। উৎপাদন ও সংগঠন অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

উৎপাদন ও সংগঠন অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. কবির একজন আসবাবপত্র ব্যবসায়ী। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার কয়েকটি আসবাবপত্রের দোকান আছে। তিনি ৩৫ জন কর্মচারীর সাহায্যে কাঠ থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে দোকানে সরবরাহ করেন। প্রতিটি দোকানের জন্য তিনি আলাদা লোক নিয়োগ করেন। পণ্যের বাজার বিস্তৃত করার জন্য তিনি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন বাজারে তার আসবাবপত্রের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ক. শ্রম কাকে বলে?
খ. ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি বলতে কী বোঝায়?
গ. কবিরের উপযোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কবিরকে কি একজন সফল সংগঠক বলা যায়? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত মানুষের সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমকে শ্রম বলে।

খ. উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্যান্য উপকরণ স্থির রেখে একটি উপকরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি করলেও প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমশ কমতে থাকে। প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমশ কমে যাওয়ার এ নিয়মকে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি বলা হয়।
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপাদন কৌশল ও অন্যান্য উপকরণ স্থির রেখে একটি উপকরণ বৃদ্ধির ফলে মোট উৎপাদন প্রাথমিকভাবে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ে। এক পর্যায়ে উপকরণটি আরও বাড়লে মোট উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে। ফলে প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমশ কমে। প্রান্তিক উৎপাদন এভাবে কমে যাওয়ার নিয়মকে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি বলা হয়।

গ. পাঠ্যবইয়ের আলোকে উদ্দীপকের কবিরের কাজটি রূপগত ও স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে।
সাধারণত দ্রব্যের রূপ পরিবর্তন করে নতুন দ্রব্য উৎপাদন করাকে রূপগত উপযোগ বলা হয়। অপরদিকে কোনো কোনো দ্রব্য এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হওয়াকে স্থানগত উপযোগ বলে। উদ্দীপকে করিম বাগানের কাঠ সরবরাহ করে ফার্নিচার তৈরি করা হলে তা হচ্ছে রূপগত উপযোগ। আবার সেই ফার্নিচার বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে তার উপযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এটি হচ্ছে স্থানগত উপযোগ। পরিশেষে বলা যায়, কবির মুনাফা লাভের আশায় কাঠকে রূপগত এবং পরবর্তীতে ফার্নিচার বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের মাধ্যমে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করেন।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, কবির একজন সফল সংগঠক। যে ব্যক্তি উৎপাদনের উপকরণের সমন্বয় সাধন এবং যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেন তাকে সংগঠক বলা হয়।
সংগঠকের প্রধান দায়িত্ব ব্যবসায় উদ্দেশ্য কী হবে তা নির্ধারণ করা এক্ষেত্রে রহিমের ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। সংগঠকের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে ব্যবসার কার্যাবলি নির্ধারণ। এক্ষেত্রে কবির সাহেব উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, অর্থসংস্থান, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ইত্যাদি খুবই সুন্দরভাবে পরিচালিত করা হয়েছে। রহিম তার উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসায় একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ প্রদান করতে পেরেছেন। কর্তব্য বণ্টন একটি সফল সংগঠকের প্রধান কাজ। তাই এক্ষেত্রে রহিম তার কর্মচারীদের সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পেরেছেন। অতএব বলা যায়, কবির একজন সফল সংগঠক।

২. হাবিব সাহেব একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি দক্ষতার সাথে কাজ করে দ্রুত সুনাম অর্জন করেন। তার দেখাদেখি একই এলাকায় আরও ৫/৬টি আসবাবপত্র তৈরির দোকান গড়ে ওঠে। তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ৭/৮ জন শ্রমিক কাজ করে। এতে অন্য দোকান গড়ে ওঠে একই এলাকায় এবং তাদের বাচ্চার স্কুলে যাওয়াও শুরু করে।

ক. উদ্যোক্তা কী?
খ. অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে কী বোঝায়?
গ. হাবিব সাহেবের কাজটিতে কোন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত এ ধরনের সংগঠনের বিকাশ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে কি? তোমার মতামত ব্যাখ্যা কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যাবতীয় উপকরণসমূহের সমন্বয় সাধন যিনি করেন তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়।

খ. অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে মূলত উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়।
উৎপাদিত দ্রব্যের বিনিময় মূল্য থাকে। উপকরণ বা প্রাথমিক দ্রব্য ব্যবহার করে নতুন কোনো দ্রব্য বা উপযোগ সৃষ্টি করাকে উৎপাদন বলে। যেমন— আটা, লবণ, পানি, বেলুন ইত্যাদি ব্যবহার করে রুটি বানানো হয়। রুটি একটি উৎপাদিত নতুন দ্রব্য। রুটি তৈরি করে উপযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

গ. হাবিব সাহেবের কাজটিতে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দ্রব্যের রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন দ্রব্য উৎপাদন করাকে রূপগত উপযোগ বলে। যেমন— কাঠকে সুবিধামতো পরিবর্তন করে খাট, চেয়ার, টেবিল বানানো হয়। খাট, চেয়ার, টেবিল হলো রূপগত উৎপাদন।
উদ্দীপকের হাবিব সাহেব কাঠ কিনে আসবাবপত্র তৈরি করে বিক্রি করেন। এতে তার সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি লাভবান হন। উদ্দীপকে কাঠমিস্ত্রি হাবিব সাহেব কাঠ কিনে আসবাবপত্র তৈরি করে বিক্রি করেন। এতে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং তার দোকানে বর্তমানে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, হাবিব সাহেব কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করে। অর্থাৎ কাঠের রূপ পরিবর্তন করে আসবাবপত্র তৈরি করে, যা রূপগত উপযোগ সৃষ্টিকে নির্দেশ করে।

ঘ. হ্যাঁ, কাঠমিস্ত্রি হাবিব সাহেবের গড়ে তোলা সংগঠনটি তার এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
হাবিব সাহেব কাঠ সংগ্রহ করে আসবাবপত্র তৈরি করে সেই আসবাবপত্র বিক্রি করে শুধু নিজে লাভবান হচ্ছেন, তাই নয়। এছাড়া যারা সেই আসবাবপত্র ব্যবহার করছে তারাও লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া সেই আসবাবপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্রব্য ও পরিবহনের মালিকেরা লাভবান হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার দোকানে ৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঘটেছে, যা এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া তার দেখাদেখি অনেক দোকান গড়ে উঠেছে, য আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটেছে। সুতরাং দেখা যায়, কাঠমিস্ত্রি হাবিব সাহেবের সংগঠনটি তার এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

পড়ুন → অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → অর্থনীতি পরিচয় অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. উদ্দীপক-১ : জাহাঙ্গীর একজন আলু চাষি। এ বছর আলুর ফলন বেশি হওয়ায় আলুর দাম কমে যায়। তখন জাহাঙ্গীর তার এক কৃষক বন্ধুর পরামর্শে আলু হিমাগারে গুদামজাত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই আলু পরবর্তীতে বিক্রি করে সে লাভবান হয়।
উদ্দীপক-২ : তাসফিয়া গ্রামের তাঁতিদের কাছ থেকে তাঁতের কাপড় সংগ্রহ করে শহরে তার পোশাকের শোরুমে বিক্রি করে। এতে তার পাশাপাশি আরও কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়।

ক. উৎপাদন কাকে বলে?
খ. উৎপাদন ক্ষেত্রে সব উপকরণের গুরুত্ব একরকম নয় কেন?
গ. উদ্দীপব-১-এ জাহাঙ্গীরের কর্মকাণ্ডে কোন ধরনের উপযোগের সৃষ্টি হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক-২-এর আলোকে তাসফিয়াকে কি একজন দক্ষ সংগঠক বলা যায়? বিশ্লেষণ কর।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কোনো দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়াই উৎপাদন।

খ. উৎপাদন ক্ষেত্রে সব উপকরণের গুরুত্ব একরকম নয়। অবস্থাভেদে কোনো উপকরণ বেশি আবার কোনো উপকরণ কম প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান ও জনবহুল দেশ বলে এখানে মূলধনের তুলনায় ভূমি ও শ্রমের গুরুত্ব বেশি। আবার উন্নত শিল্পপ্রধান দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশে ভূমি ও শ্রমের তুলনায় মূলধনের গুরুত্ব বেশি।

গ. উদ্দীপক-১-এ জাহাঙ্গীরের কর্মকাণ্ডে সময়গত উপযোগের সৃষ্টি হয়েছে।
আকোনো কোনো ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানে অনেক জিনিসের উৎপাদন না বাড়লেও উপযোগ বাড়ে। এদেরকে সময়গত উপযোগ সৃষ্টি বলে। যেমন- পৌষ-মাঘ মাসে ধানের মৌসুমে ফলন বেশি হয়। আবার এই সময়ে ধানের দাম কম থাকে। এ সময় ধান মজুদ করে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বিক্রি করলে বেশি দাম পাওয়া যায়। এখানে ধানের উৎপাদন হ্রাস বা বৃদ্ধি না পেলেও তার উপযোগ বা দাম বর্ধিত হবে।
উদ্দীপক-১-এ জাহাঙ্গীর তার কৃষক বন্ধুর পরামর্শে আলু হিমাগারে রেখে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হয়। অর্থাৎ সময় ব্যবধানে তার আলুর উপযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সময়গত উপযোগকে নির্দেশ করে। অতএব বলা যায়, জাহাঙ্গীরের কর্মকাণ্ডে সময়গত উপযোগের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, তাসফিয়াকে একজন দক্ষ সংগঠক বলা যায়।
যে ব্যক্তি উৎপাদনের উপকরণের সমন্বয় সাধন এবং যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেন তাকে সংগঠক বলা হয়। সংগঠকের প্রধান দায়িত্ব ব্যবসায় উদ্দেশ্য কী হবে তা নির্ধারণ করা। এক্ষেত্রে তাসফিয়ার ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। সংগঠকের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে ব্যবসার কার্যাবলি নির্ধারণ। এক্ষেত্রে তাসফিয়া উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, অর্থসংস্থান, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ইত্যাদি খুবই সুন্দরভাবে পরিচালনা করছে। তাসফিয়া তার শোরুমের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসায় একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ প্রদান করতে পেরেছে। কর্তব্য বন্টন একটি সফল সংগঠকের প্রধান কাজ। এক্ষেত্রে তাসফিয়া তার কর্মচারীদের সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পেরেছে।
অতএব বলা যায়, তাসফিয়া একজন দক্ষ সংগঠক।

৪. লিটনের ৪ বিঘা জমির ওপর একটি আম বাগান আছে। এ বছর তার বাগানে আমের ফলন হয়েছে ব্যাপক। তবুও তার ভাবনার শেষ নেই। কারণ স্থানীয় বাজারে লিটন আশানুরূপ দামে বিক্রি করতে পারছে না। অবশেষে বন্ধু নাজিমের পরামর্শে আম পার্শ্ববর্তী শহরে নিয়ে যায় এবং ভালো দামে বিক্রি করে।

ক. উপকরণ কাকে বলে?
খ. অপ্রকাশ্য ব্যয় বলতে কী বোঝায়?
গ. লিটনের কাজটি অর্থনীতিতে কোন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অর্থনীতির ভাষায় লিটনকে কি সংগঠক বলা যায়? মতামত দাও।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদানসমূহকে উপকরণ বলা হয়।

খ. অ-প্রকাশ্য ব্যয় বলতে উদ্যোক্তার নিজের শ্রমের মূল্য ও অন্যান্য ব্যয়, স্বনিয়োজিত সম্পদের খরচ যেমন- নিজ বাড়িতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, কারখানা স্থাপন, অফিস বানানো ইত্যাদি প্রকাশ করে। এ ধরনের ব্যয় ফার্মের হিসাব বইয়ে থাকে না। যেমন- ব্যক্তিমালিকানাধীন ফার্মের ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের বেতন পৃথকভাবে হিসাব না করে মুনাফাকে তার সেবার পারিশ্রমিক হিসেবে গণনা করে। এক্ষেত্রে মালিকের যেকোনো রকমের ভাতাদি অ-প্রকাশ্য ব্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়।

গ. লিটনের কাজটি অর্থনীতিতে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করেছে।
কোনো দ্রব্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করলে তার উপযোগ বৃদ্ধি পায়। যেমন- বনের কাঠ সাধারণ বনের আশপাশের লোকজন খড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। শহরে আনলে মানুষ এই কাঠ দিয়ে আকর্ষণীয় আসবাবপত্র বানাতে পারে ফলে এর উপযোগ বাড়ে। আবার বনে ফুলের তেমন কদর নেই। কিন্তু সেই ফুলসহ গাছ শহরের বাড়ির আঙিনায় রাখলে কদর বাড়ে অর্থাৎ উপযোগ বাড়ে। উদ্দীপকে লিটন তার উৎপাদিত আম স্থানীয় বাজারে আশানুরূপ দামে বিক্রি করতে না পারায় তার বন্ধু নাজিমের পরামর্শে পার্শ্ববর্তী শহরে আম বেশি দামে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে স্থান পরিবর্তনের ফলে সে তার আম ভালো দামে বিক্রয় করতে পেরেছে। এভাবে স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে উপযোগ বৃদ্ধি পেলে তাকে স্থানগত উপযোগ বলা হয়।

ঘ. হ্যাঁ, অর্থনীতির ভাষায় লিটনকে সংগঠক বলা যায়।
উৎপাদন ক্ষেত্রে ভূমি, শ্রম, মূলধন ইত্যাদি উপকরণের মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয় ঘটিয়ে যিনি উৎপাদন কাজ পরিচালনা করেন তাকে সংগঠক বা উদ্যোক্তা বলা হয়। বিভিন্ন কাজ যেমন কোনোকিছু উৎপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভূমি, শ্রম, মূলধন একত্রীকরণ ও তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কাজ সংগঠক পরিচালনা করে থাকেন। ব্যবসার বিভিন্ন অংশ একসাথে ধরে রাখা এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় রূপরেখা তৈরি সংগঠকের বা উদ্যোঞ্জার সাংগঠনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব বণ্টন, নিয়মশৃঙ্খলা গড়ে তোলা ইত্যাদিও তার কাজের অন্তর্ভুক্ত। ব্যবসার আয়তন, উৎপাদিত পণ্যের প্রকৃতি ও পরিমাণ, শিল্পের প্রকৃতি, শ্রমিকের দক্ষতা প্রভৃতির ওপর তিনি নজর রাখেন। এছাড়া ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মীদের পদগুলো তিনি ক্রমানুসারে সাজান।
উদ্দীপকে লিটন তার জমিতে আম উৎপাদন করে তা আবার পার্শ্ববর্তী শহরে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এক্ষেত্রে লিটন উৎপাদনের উপাদানসমূহ সমন্বয় করে উৎপাদন করছে। যা একজন সংগঠকের কাজ।
সুতরাং বলা যায়, অর্থনীতির ভাষায় লিটন একজন সংগঠক।

৫. রহিমা বেগম হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। খামার থেকে সারা বছরই প্রচুর ডিম উৎপাদিত হয়। গ্রামে ডিমের দাম কম থাকায় শহরে ডিমগুলো বিক্রয় করে তিনি প্রচুর মুনাফা পান। হাঁস-মুরগির খামারের পাশাপাশি তিনি মাছ চাষও শুরু করেন। রহিমা বেগম হাঁস-মুরগি এবং মাছ চাষের জন্য ১৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন।

ক. উৎপাদন কী?
খ. প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় বলতে কী বোঝায়?
গ. রহিমা বেগমের হাঁস-মুরগির খামারটি কোন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর রহিমা বেগম একজন দক্ষ সংগঠক? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কোনো দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়াই উৎপাদন ম

খ. প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় একটি মানবিক ধারণা, যা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যায় না। যেমন- রোগীকে সেবা করার জন্য সেবিকার ঘুম ও আরাম ত্যাগ, লেখকের বই লেখার সময়ে আরাম, আনন্দ, বিশ্রাম, ঘুম ত্যাগ। আবার শ্রমিকের শ্রম যোগান দিতে বিশ্রাম ও আরাম ত্যাগ। এ ধরনের বায়কে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় বলে।

গ. উদ্দীপকে রহিমা বেগমের হাঁস-মুরগির খামারটি স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করেছে।
কোনো কোনো দ্রব্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করলে তার উপযোগ বাড়ে। যেমন- বনের কাঠ সাধারণত বনের আশপাশের লোকজন খড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। শহরে আনলে মানুষ এই কাঠ দিয়ে আকর্ষণীয় আসবাবপত্র বানাতে পারে। ফলে এর উপযোগ বাড়ে। আবার বর্নে ফুলের তেমন কদর নেই। কিন্তু সেই ফুলসহ গাছ শহরের বাড়ির আঙিনায় রাখলে এর কদর বাড়ে অর্থাৎ উপযোগ বাড়ে। উদ্দীপকে রহিমা বেগম খামারে ডিম উৎপাদন করেন। ডিমের দাম গ্রামে কম থাকায় শহরে বিক্রি করে মুনাফা পান, যা স্থানগত উপযোগকে নির্দেশ করে।
সুতরাং দেখা যায়, রহিমা বেগমের হাঁস-মুরগির খামারটি স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করেছে।

ঘ. উদ্দীপকের রহিমা বেগম একজন দক্ষ সংগঠক। উৎপাদন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনের কাজকে সংগঠন বলে। আর যিনি এ দায়িত্ব পালন করেন তাকে সংগঠক বলে। উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সাংগঠনিক ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সুষ্ঠু সংগঠনের অভাবে উৎপাদন বিপর্যন্ত হতে থাকে। একজন সংগঠকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদনের উপকরণসমূহের সুষ্ঠু ও সর্বোচ্চ ব্যবহার দ্বারা সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ্য সংখ্যক উৎপাদন ও মুনাফা অর্জন করা।
উদ্দীপকের রহিমা বেগম প্রথমে একটি হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। এরপর আয় থেকে পুকুরে মৎস্য চাষ করেছেন। তিনি শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন এবং নিজে তদারকির মাধ্যমে ব্যবসায়ে উত্তরোত্তর অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বাজারজাত থেকে শ্রমিক খামারসহ যাবতীয় উপাদান ও ক্ষেত্র যথাযথভাবে তদারকি করে সংগঠকের উদ্দেশ্য সফল করতে সক্ষম হয়েছেন। এর অংশ হিসেবে সংগঠক হিসেবে তারা লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, তত্ত্বাবধায়ন, ঝুঁকি বহন প্রভৃতি সম্পাদনা করেছেন, যার কারণে রহিমা বেগম একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

Leave a Comment