(বাংলা) ৬ষ্ঠ: সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি (১ম পরিচ্ছেদ: কবিতা) – সমাধান

সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়। সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ১ম পরিচ্ছেদ: কবিতা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কবিতা : আমি সাগর পাড়ি দেবো

১. ‘আমি সাগর পাড়ি দেবো’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো।

নির্দেশনা :
‘আমি সাগর পাড়ি দেবো’ কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। কবিতাটিতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে চেষ্টা করো । কী বুঝতে পেরেছ তা নিজের ভাষায় লেখো

নমুনা উত্তর : ‘আমি সাগর পাড়ি দেবো’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘পুতুলের বিয়ে’ নাটকের ‘সাত ভাই চম্পা’ কবিতার অংশবিশেষ। কবিতায় কবির মাতৃপ্রেম ও দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। মৌমাছি যেমন ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে, কবিও তেমনি দেশমাতৃকার জন্য সওদাগর হয়ে তাঁর বাণিজ্য তরি নিয়ে দেশে দেশে সওদা করতে চান । সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে ধনরত্ন এনে দেশমাতাকে সম্পদশালী করতে চান। কবি এই অভিযানে দস্যুর ভয়ে ভীত নন; তাদের প্রতিহত করতে তিনি সিন্ধু-গাজি, নৌ-সেনা, মাল্লামাঝিদের পাহারায় রেখে যেতে চান। দেশে দেশে মানুষের মধ্যে যে উঁচুনিচু, ধনী-গরিব, জাতপাতের ভেদাভেদের দেয়াল, কবি ভালোবাসার বন্যা বইয়ে সেই বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দিতে চান। কবি তাঁর দুঃখিনী দেশমাতার অভাব দূর করে হীরা-মানিক্য, মণি-জহরতে পরিপূর্ণ করে তাকে রাজরানি করতে চান।

২. ‘আমি সাগর পাড়ি দেবো’ কবিতার সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, তা লেখো।

নির্দেশনা :
‘আমি সাগর পাড়ি দেবো’ কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। কবিতাটির সঙ্গে তোমার বাস্তব জীবনের কোনো ঘটনা বা বিষয়ের মিল খুঁজে বের করো । কী কী বিষয়ের মিল পেয়েছ তা লেখো।

নমুনা উত্তর : আমি সাগর পাড়ি দেবো’ কবিতায় বাড়ি ছেড়ে দূরের দেশে অভিযানে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেসব দেশ থেকে মণি-মানিক এনে দেশমাত্রার দুঃখ ঘুচিয়ে সুখী করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়েছে। আমাদের এক প্রতিবেশীর জীবনের সঙ্গে কবিতাটির মিল খুঁজে পাই। তিনি অন্য অঞ্চল থেকে নানারকম পণ্য এনে সুলভ মূল্যে আমাদের অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। সেসব পণ্যগুলো আমাদের এলাকায় আগে পাওয়া যেত না। আবার আমাদের এলাকার বিভিন্ন জিনিস তিনি কিনে নিয়ে অন্য এলাকায় বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে লোকটির ব্যাবসার সঙ্গে এলাকার অনেক মানুষ সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের অভাব-অনটন কিছুটা হলেও ঘুচেছে।

৩. নিচে কিছু শব্দ দেওয়া হলো। এগুলোর এক বা একাধিক মিলশব্দ লেখো।

নমুনা উত্তর :
১. ঘাট
মিল শব্দ – খাট, মাঠ, চাট, ছাট, পাট, হাট, লাট, নাট, ষাট, গাঁট।

২. কেনা
চেনা, দেনা, ফেনা, বেনা, সেনা, হেনা।

৩. রতন
পতন, মতন, যতন।

৪. দোলা
খোলা, ঘোলা, ডোলা, ঢোলা, তোলা, পোলা

৫. তার
কার, চার, ছার, জার, দার, ধার, পার, বার

৬. আশা
খাসা, চাষা, ঠাসা, নাসা, পাশা, বাসা, ভাসা, ভাষা, হাসা

৭. দেশ
কেশ, ঠেস, পেশ, বেশ, মেষ, রেশ, লেশ, শেষ

৮. ভয়
ক্ষয়, জয়, নয়, রয়, লয়, হয়

৯ হাজার
বাজার, মাজার।

১০. তোর
গোর, ঘোর, চোর, জোর, দোর, ভোর, মোর, শোর

১১. করব
চড়ব, ধরব, পড়ব, পড়ব, ভরব

১২. দেয়াল
খেয়াল, শেয়াল

কবিতা : আমার বাড়ি

৪. ‘আমার বাড়ি’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিজের ভাষায় লেখো।

নির্দেশনা :
“আমার বাড়ি” কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। কবিতায় কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা অনুধাবন করো। তুমি কী বুঝতে পেরেছ তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর : ‘আমার বাড়ি’ কবিতাটি পল্লিকবি জসীমউদদীনের ‘হাসু’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়জনকে নিজের গ্রামের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কবির বন্ধু তাঁর বাড়িতে বেড়াতে এলে, তিনি তাকে নানাভাবে আদর-আপ্যায়ন করবেন। কবি বন্ধুকে বসায় জন্য পিড়ে পেতে দিবেন। শালি ধানের চিড়া, বিন্নিধানের খই, বাড়ির গাছের কবরি কলা এবং গামছা বাঁধা দুই দিয়ে অতিথি বন্ধুকে আপ্যায়ন করবেন। কবিতায় কবি প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে কীভাবে অতিথির প্রাণ জুড়াবেন তার বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর বন্ধুর সঙ্গে সারা দিন খেলা করার কথা বলেছেন। এছাড়া কবি তাঁর বন্ধু কেমন করে, কোন পথে তাঁর বাড়ির পথ চিনবেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন। মূলত, কবিতায় কবি যুগ যুগ ধরে বাঙালির অতিথি আপ্যায়ন, সৌজন্য, শিষ্টাচার এবং প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

আরো পড়োবুঝে পড়ি লিখতে শিখি (৪র্থ পরিচ্ছেদ)
আরো পড়োবুঝে পড়ি লিখতে শিখি (৫ম পরিচ্ছেদ)

৫. ‘আমার বাড়ি’ কবিতার সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো।

নির্দেশনা :
‘আমার বাড়ি’ কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। কবিতার কোনো বিষয়ের সঙ্গে তোমার জীবনের মিল পাও কি না, তা দেখো। কী কী মিল পেলে তা নিজের ভাষায় লেখো।

নমুনা উত্তর : আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে অতিথিরা বেড়াতে আসেন। আমরাও বিভিন্ন সময়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাই। বাড়িতে কেউ বেড়াতে এলে সবার মধ্যেই আনন্দধারা প্রবাহিত হয়। সবাই মিলে গল্প করা, ঘুরতে যাওয়া, খেলাধুলা করা কতই না আনন্দের! তারপর পিঠাপুলিসহ কত রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়। ‘আমার বাড়ি’ কবিতায় কবি তাঁর অতিথি বন্ধুকে যেমনিভাবে আদর- আপ্যায়ন করার বর্ণনা দিয়েছেন, আমাদের গ্রামেও একই রকম করে প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব এলে আদর যত্ন করা হয়।

কবিতা : বাঁচতে দাও

৬. ‘বাঁচতে দাও’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো।

নির্দেশনা :
পাঠ্যবইয়ের ‘বাঁচতে দাও’ কবিতাটি ভালোভাবে পড়ো। কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিজের ভাষায় লেখো।

নমুনা উত্তর : ‘বাঁচতে দাও’ কবিতাটি কবি শামসুর রাহমানের ‘রংধনুর সাঁকো’ কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান আশ্রয়স্থল। অথচ মানুষের হাতেই দিনকে দিন এগুলো ধ্বংস হচ্ছে। তাই ‘বাঁচতে দাও’ কবিতায় কবি শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণিজগতের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের কামনা করেছেন। একটি শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার সঙ্গে তার চারপাশের সুস্থ পরিবেশের সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীতে যদি ফুল না ফোটে, পাখি না ডাকে, আকাশে মেঘ না জমে, সবুজ ধ্বংস হয়ে প্রকৃতি তার যৌবন হারায়, তবে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই কবি প্রকৃতির ফুল, পাখি, জোনাকপোকা, গাছের সবুজ সবকিছুকে তাদের আপন অবস্থানে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে দিতে আহ্বান করেছেন।

৭. ‘বাঁচতে দাও’ কবিতার সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না তা নিচে লেখো।

নির্দেশনা :
পাঠ্যবইয়ের ‘বাঁচতে দাও’ কবিতাটি ভালোভাবে পড়ো। তোমার চারপাশের দেখা প্রকৃতির সঙ্গে কবিতাটি মেলানোর চেষ্টা করো। কী মিল খুঁজে পেলে তা নিজের ভাষায় লেখো।

নমুনা উত্তর : ‘বাঁচতে দাও’ কবিতার সঙ্গে আমাদের চারপাশের পরিবেশের অনেক কিছুরই মিল রয়েছে। বাগানে ফুল ফোটা, শিশুদের ঘুড়ি ওড়ানো; জোনাকপোকার আলোর খেলা; নীল আকাশে পাখির ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো: ঘুঘু, শালিক, কোকিল প্রভৃতি পাখির কলতান; ধুলো-বালিতে শিশুর খেলা করা; মাঝিদের ভাটিয়ালি গান; সবুজ মাঠ, বনবনানী এগুলোর সবকিছুই আমাদের বিমোহিত করে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও শীতের দিনে অতিথি পাখির বেড়াতে আসায় আমাদের প্রকৃতি যেন নতুনভাবে প্রাণ সঞ্চার করে। কিন্তু কিছু মানুষ বন কেটে উজাড় করছে; পাখিদের নির্বিচার হত্যা করছে; অপরিকল্পিতভাবে নদী খননের জন্য নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে; শিশুরা তাদের স্বাভাবিক ছন্দে বেড়ে উঠতে পারছে না পিঠ ভর্তি বইয়ের বোঝার চাপে। এভাবে আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সুদ ও স্বাভাবিক বিকাশে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছি। ফলে প্রকৃতি দিন দিন তার ঐশ্বর্য হারিয়ে আমাদের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে।

৮. ‘বাঁচতে দাও’ কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে টিকচিহ্ন দাও।

নির্দেশনা :
‘বাঁচতে দাও’ কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। কোন কোন বৈশিষ্ট্য কবিতার সঙ্গে মিলছে বা মিলছে না তা চিহ্নিত করো।

নমুনা উত্তর :
১. পরপর দুই লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে? → হ্যাঁ
২. হাতে তালি দিয়ে দিয়ে কি পড়া যায়? → হ্যাঁ
৩. লাইনগুলো কি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের? → হ্যাঁ
৪. লাইনগুলো কি সুর করে পড়া যায়? → হ্যাঁ
৫. এটি কি পদ্য-ভাষার লেখা? → হ্যাঁ
৬. এটি কি গদ্য-ভাষার লেখা? → না
৭. এর মধ্যে কি কোনো কাহিনি আছে? না
৮. এর মধ্যে কি কোনো চরিত্র আছে? না
৯. এখানে কি কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে? না
১০. এটি কি কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করা? না
১১. এর মধ্যে কি কোনো সংলাপ আছে? না
১২. এটি কি অভিনয় করা যায়? না

৯. কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল রেখে নিজে নিজে একটি কবিতা লেখার চেষ্টা করো।

নির্দেশনা :
কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নাও। এরপর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিজে নিজে একটি ছড়া লেখার চেষ্টা করো। নিচে নমুনা হিসেবে সুকুমার রায়ের ‘ছুটি’ কবিতা দেওয়া হলো।
নমুনা উত্তর :

ছুটি
সুকুমার রায়
ছুটি! ছুটি! ছুটি!
মনের খুশি রয়না মনে হেসেই লুটোপুটি
ঘুচল এবার পড়ার তাড়া অঙ্ক কাটাকুটি
দেখব না আর পণ্ডিতের ঐ রক্ত আঁখি দুটি।
এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।
পাড়ার লোকের ঘুম ছুটিয়ে আয়রে সবাই জুটি
গ্রীষ্মকালের দুপুর রোদে গাছের ডালে উঠি।
আয়রে সবাই হল্লা ক’রে হরেক মজা লুটি
একদিন নয় দুই দিন নয় দুই দুই মাস ছুটি।

Leave a Comment