(বাংলা) ৬ষ্ঠ: বুঝে পড়ি লিখতে শিখি (৫ম পরিচ্ছেদ: কল্পনানির্ভর লেখা) – সমাধান

বুঝে পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৫ম অধ্যায়। বুঝে পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ৫ম পরিচ্ছেদ কল্পনানির্ভর লেখা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পরিচ্ছেদটি সম্পর্কে জেনে নাও
আমরা এমন কিছু কাহিনি শুনি বা পড়ি, যা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। এসব কাহিনি বা ঘটনায় কিছু চরিত্র বাস্তবে থাকে না। আবার কিছু ঘটনা বাস্তবে ঘটেও না। এসব কাহিনি কল্পনা করে লেখা হয়। এ জাতীয় লেখাকে কল্পনানির্ভর লেখা বলে। কল্পনানির্ভর লেখা পড়ে আমরা নিছক আনন্দ পাই। আবার এ থেকে অনেক কিছু জানাও যায়। ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে কল্পনার আশ্রয়ে এমনই একটি কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এই গল্পটি পড়ে আমরা যেমন আনন্দ পেয়েছি তেমনি এটাও জেনেছি যে, হিংসা করা ভালো নয়।

পাঠ বিশ্লেষণ
ক. পাঠের উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের কল্পনানির্ভর লেখায় পারদর্শী করে তোলা।
খ. নামকরণ : পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কল্পনানির্ভর লেখা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। এতে কল্পনানির্ভর লেখা ও তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেই বিবেচনায় পরিচ্ছেদটির নাম ‘কল্পনানির্ভর লেখা’ সফল ও সার্থক হয়েছে।

‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পের প্রাসঙ্গিক আলোচনা
ক. উৎস সম্পর্কিত তথ্য :
‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পটি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ. লেখক সম্পর্কিত তথ্য : দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ১৮৭৭ সালের ১৫ এপ্রিল ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উলাইল এলাকার কর্ণপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক ও লোককাহিনির সংগ্রাহক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রূপকথাগুলোকে অবিকৃত রেখে লিপিবদ্ধ করা। ১৯৫৭ সালের ৩০ মার্চ এই গুণী লেখক মারা যান।
গ. গল্পের সারাংশ : এই গল্পটিতে রাজার ছোটো রানির প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও বড়ো রানিদের কুচক্রী পরিকল্পনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রানিকে নির্বাসনে পাঠানো এবং আট ছেলেমেয়ের ফুল হয়ে ফিরে আসার কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সবশেষে, রাজার ছেলেমেয়েরা ফিরে এলে বড়ো রানিদের ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে এবং রাজা তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন।
ঘ. নামকরণ : রূপকথাটির মূলকাহিনি আবর্তিত হয়েছে ছোটো রানির সাত ছেলে ও এক মেয়েকে জীবন্ত অবস্থায় পাশগাদায় পুঁতে ফেলা এবং পরবর্তী সময়ে সাত ভাইবোনের চাঁপা ফুল ও পারুল ফুল রূপে পুনরায় জীবন্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে। তাই মূল কাহিনি অনুসারে রচনাটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে বলা যায়।
৫. গল্পের ভাষা : গল্পটি মৌখিক ভাষার মতো সহজবোধ্য প্রমিত রীতিতে লেখা হয়েছে।

কল্পনা
কোনো বিষয় সম্পর্কে ধারণা, আন্দাজ বা অনুমানকে কল্পনা বলে। আমরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিই। সেই ভাবনাকে কেন্দ্র করে মনের ভেতর একটি দৃশ্যপট তৈরি হয়। মনের ভেতরে সৃষ্ট এই দৃশ্যপটই কল্পনা।

কল্পকাহিনি
গল্প লিখিত হয়, বাস্তব ঘটনা বা ইতিহাস নয়। কল্পকাহিনিকে শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। যেমন : সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক, কল্পকাহিনি বা কল্প সাহিত্য বলতে শিল্প-সাহিত্যের এমন এক শাখাকে বোঝায়, যেখানে সাহিত্য রচয়িতার কল্পনা থেকে সৃষ্ট কাহিনি বা টেলিভিশন অনুষ্ঠান, অ্যানিমেশন, ভিডিও গেম ইত্যাদি।
কল্পকাহিনি সৃজনশীল লেখা বলে এর ঘটনা বাস্তবানুগ হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

কল্পকাহিনির বৈশিষ্ট্য

  • কল্পকাহিনির অনেক ঘটনার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল থাকে না।
  • কল্পকাহিনি শুনতে বা পড়তে ভালো লাগে।
  • কল্পকাহিনিতে অনেক কাল্পনিক চরিত্র থাকে যেগুলো বাস্তবে দেখা যায় না।
  • কল্পকাহিনিতে বিভিন্ন অলৌকিক ধারণা বর্ণনা করা থাকে।

আরো পড়ো → ৩য় পরিচ্ছেদ : তথ্যমূলক লেখা
আরো পড়ো → ৪র্থ পরিচ্ছেদ : বিশ্লেষণমূলক লেখা

কল্পকাহিনি লেখার কৌশল

  • যে বিষয়ে কল্পকাহিনি লিখতে ইচ্ছুক সেই বিষয়ে ভালো ধারণা লাভ করা।
  • বাস্তবে ঘটে না বা দেখা যায় না এমন চরিত্র সৃষ্টি করা।
  • লেখায় নাটকীয়তার দিকে খেয়াল রাখা।
  • কাদের জন্য লেখা হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখা।
  • লেখা সরল ও সাবলীল করা।

কল্পকাহিনির শ্রেণিবিভাগ
কল্পকাহিনি নিম্নলিখিত শ্রেণির হতে পারে। সেগুলো হলো-
১. রূপকথা
২. উপকথা
৩. বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি
এছাড়া গল্প, উপন্যাস, পৌরাণিক ঘটনা, মহাকাব্য, নাটক, কমিকস ইত্যাদি কল্পকাহিনির অন্তর্ভুক্ত।
১. রূপকথা : মানুষের পাশাপাশি ভূত-পেতনি, ডাইনি-পরি, রাক্ষস-খোক্ষস, দেও-দৈত্য ইত্যাদি কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে যে গল্প বলা বা লেখা হয়, তাকে রূপকথা বলে। শিশুদের মনে আনন্দ জাগিয়ে তুলতেই এসব গল্প বলা বা লেখা হয়। ‘তোতাকাহিনী’, ‘সুয়োরানির সাধ’, ‘ডালিমকুমার’, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ প্রভৃতি রূপকথার গল্পের বই।
২. উপকথা : যে সাহিত্যে পশু-পাখি, গাছ, জড়বস্তু প্রভৃতি মানুষের মতো কথা বলে, আচরণ করে তাকে উপকথা বলে। এ ধরনের সাহিত্যের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়। ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘টুনটুনি আর রাজার কথা’ উপকথা বিষয়ক বই।
৩. বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি : বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে রচিত কাল্পনিক গল্পকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বলে। এ ধরনের গল্পে বৈজ্ঞানিক যুক্তি, তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়। ‘প্রফেসর শঙ্কু’, ‘প্রফেসর শঙ্কুর কাণ্ডকারখানা’, ‘ঘনাদা সমগ্র’, মিছির আলী’, ‘নীল মানুষ’, ‘সবুজ মানুষ’ প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিমূলক বই।

৫ম পরিচ্ছেদ : কল্পনানির্ভর লেখা

১. ‘সাত ভাই চম্পা’ রচনাটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. আগে এ ধরনের আর কোন গল্প পড়েছ?
খ. ‘সাত ভাই চম্পা‘ গল্পে কী কী চরিত্র আছে?
গ. এখানকার কোন কোন ঘটনা বাস্তবে হয় না?
ঘ. এখানকার কোন কোন ঘটনা বাস্তবেও ঘটতে পারে?
ঙ. এই গল্প পড়ে আমরা কী বুঝলাম?

নমুনা উত্তর :
ক. আগে এ ধরনের গল্প পড়েছি। রূপকথার গল্প, সিন্দাবাদের কাহিনি, আলিফ লায়লার কাহিনি, পরিদের গল্প, পশুপাখির কাহিনি ইত্যাদি গল্প পড়েছি আগে।

খ. ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে রাজা, বড়ো রানি, মেজো রানি, সেজো রানি, নোয়া রানি, কনে রানি, ছোটো রানি, দুয়োরানি, মালি, ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী, রাজপুত্র, রাজকন্যা ইত্যাদি চরিত্র আছে।

গ. রাজা ও রানির কোমরে সোনার শিকল বেঁধে রাখা হয় না, মানুষের ঘরে ইঁদুর, ব্যাঙ আর কাঁকড়ার জন্ম হয় না, পারুল ফুল আর চাপার ফুল কথা বলে না।

ঘ. রাজার ছেলে না-ও হতে পারে, মানুষ মানুষকে হিংসা করতে পারে, রাজার মনে দুঃখ থাকতে পারে ইত্যাদি।

ঙ. ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে হিংসা ও তার পরিণতি দেখেছি। গল্পটি পড়েছি, হিংসা করা ভালো নয়। আরও বুঝেছি, হিংসা করলে তা নিজের অমঙ্গল ডেকে আনে।

২. ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে লেখক যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর :
‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পটি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার রচিত ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এক রাজার সাত রানি ছিল। বড়ো রানিরা ছিল খুবই অহংকারী। ছোটো রানি শান্ত স্বভাবের ছিল। রাজা ছোটো রানিকে বেশি ভালোবাসতেন। কিন্তু রাজার মনে সুখ ছিল না। কারণ, রাজার কোনো সন্তান হয়নি। অনেক দিন পর ছোটো রানির সন্তান হবে। রাজার মনে আনন্দের শেষ নেই। রাজভান্ডার খুলে দিয়েছেন। রাজা নিজের কোমরে শিকল বেঁধে ছোটো রানির কোমরেও বাঁধলেন। যখন ছেলে হবে, তখনই রানি শিকলে নাড়া দেবে। রানির চাঁদের মতো সাতটি ছেলে ও একটি মেয়ে হলো। কিন্তু হিংসুটে নিষ্ঠুর বড়ো রানিরা ছেলেমেয়েগুলো হাঁড়িতে ভরে ছাইয়ের স্তূপে পুঁতে ফেলে এলো। এরপর শিকলে টান দিলে রাজা এলেন। তারা রাজাকে কতকগুলো ব্যাঙের ছানা, ইঁদুরের ছানা এনে দেখাল। রাজা অগ্নিশর্মা হয়ে ছোটো রানিকে রাজ্য থেকে বের করে দিলেন। বড়ো রানিরা তো মহা আনন্দে দিন কাটাতে লাগল। ওদিকে ছোটো রানি দাসী হয়ে পথে পথে ঘুরতে লাগল। এমনি করে দিন যায়, রাজার রাজ্য খাঁ খাঁ করে, রাজার বাগানে ফুল, ফোটে না। কিন্তু ছাইয়ের স্তূপে সাতটি চাঁপা ও একটি পারুল ফুল ফোটে। মালি ফুল তুলতে গেলে ফুলগুলো গান গেয়ে একে অপরকে সাড়া দেয় আর অনেক ওপরে উঠে যায়। আশ্চর্য মালি রাজাকে খবর দিলে রাজা এসে একই অবস্থা দেখে। ফুলগুলো রাজাকে রানিদের আনতে বললেন। বড়ো রানিরা সবাই এলেও তারা নিচে নামে না। আরো ওপরে আকাশে তারার মতো ফুটে থাকে। তারা ছোটো রানিকে আনতে বললেন। পাইক-পেয়াদারা ছোটো রানিকে খুঁজে আনলে তারা নেমে এসে মা মা বলে ছোটো রানির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাজা সবকিছু বুঝতে পেরে কাঁদতে লাগলেন। বড়ো রানিদের শাস্তি দিয়ে সাত রাজপুত্র, পারুল-রাজকন্যা আর ছোটো রানিকে নিয়ে রাজপুরীতে গেলেন। রাজপুরীতে খুশির বাজনা বেজে উঠল।

Leave a Comment