(বাংলা) ৬ষ্ঠ: সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি (৩য় পরিচ্ছেদ: গল্প) – সমাধান

সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়। সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ গল্প এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

গল্প : ম্যাজিক

১. ‘ম্যাজিক’ গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো।
নির্দেশনা :

ম্যাজিক, গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। গল্পটি পড়ে যা বুঝেছ তা নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর : টুটু নামের একটি মেয়ে তার মায়ের সোনার চুড়ি পরেছিল। পা পিছলে পড়ে গিয়ে চুড়িটা ভেঙে দুটকরা হয়ে যায়। মেয়ের এমন কাজে বিরক্ত হয়ে টুটুর মা টুটুর বাবাকে অভিযোগ জানায়। তারপর টুকরা দুটি বিছানার বালিশের তলায় গুঁজে রাখে। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে একটু পরেই যত্ন করে তুলে রাখতে গিয়ে টুটুর মা টুকরা দুটি আর খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সবাই ভীষণ অবাক হয়ে ভাবল, এইটুকু সময়ের মধ্যে চুড়িটা হাওয়া হয়ে গেল কী করে? সকলে মিলে সব জায়গার এমনকি খাটের তলা পর্যন্ত খুঁজেও চুড়ির টুকরা দুটি পেলো না। একটু পরে, খুঁজে না পাওয়ার কারণ চিন্তা করতে গিয়ে এর আসল রহস্য বুঝতে পেরে টুটুর বাবার হাসি পেল। আসলে তাড়াহুড়া কিংবা অন্যমনস্কভাবে আমরা কোনো কাজ করলে প্রায়শই অস্থানে অনেক কিছু রেখে দিই। টুটুর মা-ও তেমনি চুড়ির টুকরা দুটি বালিশের নিচে রাখতে গিয়েই গোলটা বাধিয়েছেন। টুটুর মাকে টুটুর বাবা ডেকে বললেন যে, এই ঘরে বসেই তিনি ম্যাজিক করে টুকরা দুটি খুঁজে দিতে পারবেন। তিনি বালিশের ওয়াড়ের ভেতরটা খুঁজে দেখতে বললেন। অবশেষে সেখানেই পাওয়া গেল। আসলে, সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজলেও বালিশের ওয়াড় খোঁজার কথা খেয়াল হয়নি।

২. ‘ম্যাজিক’ গল্পের সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, তা লেখো।
নির্দেশনা:

‘ম্যাজিক’ গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। গল্পের কোনো ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে তোমার বাস্তব জীবনের কোনো মিল খোঁজার চেষ্টা করো। এবার মিলগুলো নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর: আমাদের জীবনে হরহামেশাই ‘ম্যাজিক’ গল্পের মতো এমন মজার বিষয়গুলো ঘটে থাকে। কোনো একটা জিনিস আমরা অসচেতনভাবে এক স্থানে রেখে সহজভাবে চিন্তা না করে খুঁজি। কী যে অসহ্য লাগে তখন! আবার মাঝে মাঝে আমরা হাতে কোনো জিনিস রেখেই খুঁজতে থাকি। পরে যখন দেখি জিনিসটা হাতেই আছে, তখন নিজে নিজেই আমরা আমাদের বোকামির জন্য হাসি। কয়েকদিন আগের ঘটনা। দাদু তাঁর চশমাটা তুলে মাথায় রেখেছিলেন। এরপর চশমাটা খুঁজতে খুঁজতে আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, দাদুভাই, আমার চশমাটা দেখেছ? বললাম, দাদু চশমাতো আপনার মাথাতেই আছে। দাদু লজ্জা পেয়ে বললেন, বুড়ো হয়েছি তো, কিছুই মনে থাকে না। শুধু দাদু না, আমরা সবাই এমন করে থাকি। আমার বইয়ের মধ্যে টাকা রাখার অভ্যাস আছে। কিছুদিন আগে বাবা আমাকে পরীক্ষার ফি দিলে আমি তা মায়ের কাছে দিয়েছিলাম। পরের দিন সমস্ত বই খুঁজেও পাচ্ছিলাম না টাকাগুলো। এরপর ঠান্ডা মাথায় ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে টাকাগুলো মায়ের কাছে রেখেছিলাম। আসলে, আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আগেই গোলমাল না পাকিয়ে শান্তভাবে চিন্তা করে রহস্য ভেদ করা উচিত।

৩. ‘পুতুল’ গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো।
নির্দেশনা :

‘পুতুল’ গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। গল্পটি পড়ে যা বুঝতে পেরেছ তা নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর: এগারো বছরের ছেলে পুতুল, যার প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার ঘর থেকে তাদের বাগানটা দেখা যায়। নিঃসঙ্গ পুতুলের শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে বাগানের দিকে। বাগানে বিশাল তিনটি গাছ রয়েছে। একটি রেনট্রি গাছ আর দুটি কদম ফুলের গাছ। কদমগাছ দুটি যেন যমজ বোনের মতো পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে আছে। বর্ষাকালে সোনার বলের মতো অদ্ভুত, সুন্দর ফুল ফোটে কদমগাছে। কিন্তু শুঁয়োপোকা হয় বলে পুতুলের মা জেসমিন গাছগুলো কেটে ফেলতে চান। তিনি শুয়োপাকা অপছন্দ করেন। শীতকালে হঠাৎ একদিন পুতলের মা বজলু মিয়াকে ডেকে গাছগুলো কাটার জন্য লোক ঠিক করেন। এমন সিদ্ধান্তে পুতুলের মন খারাপ হয়ে যায়। গাছগুলো শৈশব থেকে তার সঙ্গী ছিল। বাগানে এলে সে গাছগুলোর গায়ে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে। কিন্তু গাছ কাটার সিদ্ধান্তে তার মনে যে চিন্তা ও অনুভূতি, তা নিয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। আজ বাগানের মধ্যে তার বাবা রহমান সাহেব স্নেহমাখা কণ্ঠে তাকে কাছে ডাকেন। নিঃসঙ্গ পুতুলকে দেখলে তার শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে। বাবা শান্ত গলায় কথা বলায় পুতুল তাকে জিজ্ঞাসা করে- ‘গাছগুলো কেন কাটবে? কারণ, গাছ কাটা তার পছন্দ নয়। তার বাবা তাকে বোঝায়, গাছগুলোতে শুঁয়োপোকা হওয়ায় তার মা তা পছন্দ করেন না। এছাড়াও গাছগুলো কাটলে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসও ঢুকতে পারবে। কিন্তু তার বাবা এসব যুক্তি দিলেও তার মন বিষাদে ভরে থাকে।

৪. ‘পুতুল’ গল্পের সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, তা লেখো।
নির্দেশনা:

‘পুতুল’ গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো। গল্পে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে তোমার জীবনের কোনো ঘটনা মেলাতে চেষ্টা করো। কী মিল পেলে তা নিজের ভাষায় লেখো।
নমুনা উত্তর : আমাদের জীবনে বা চারপাশে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা ‘পুতুল’ নামক গল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত। নগরায়ণের এই যুগে জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে বন উজাড় করে নতুন নতুন বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে শিশুরা সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া শহরের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও আমাদের বাড়ির সামনে কী সুন্দর একটা পুকুর ছিল ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে পুকুরে সাঁতার কাটত। পুকুরের পাড়ে বাঁশঝাড় ছিল। পাশেই ছিল। সুপারি বাগান। বাগানটা পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকত। বাড়ির পাশে বড়ো একটা খাল ছিল। খালে দৈনিক জোয়ার-ভাটার পানি আসত। কিন্তু এখন আর এসবের তেমন কিছুই নেই। চোখের সামনেই পুকুরটা ভরাট করে সেখানে খামার করা হলো। বাগান কেটে চাচা ঘর তৈরি করলেন। বাগানটা যখন কাটা হলো, পাখিদের সে কী আর্তনাদ! মনটা ব্যথায় হুহু করে কেঁদে উঠেছিল। নীড় হারিয়ে পাখিগুলো উড়ে চলে গেল। এখন আর আগের মতো পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মনটা ভরে যায় না।

আরো পড়োসাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি ১ম পরিচ্ছেদ
আরো পড়োসাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি ২য় পরিচ্ছেদ

৫. গল্পের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো।
নমুনা উত্তর :

১. পরপর দুই লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে? – না
২. হাতে তালি দিয়ে দিয়ে কি পড়া যায়? – না
৩. লাইনগুলো কি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের? – না
৪. লাইনগুলো কি সুর করে পড়া যায়? – না
৫. এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা? – না
৬. এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা? – হ্যাঁ
৭. এর মধ্যে কি কোনো কাহিনি আছে? – হ্যাঁ
৮. এর মধ্যে কি কোনো চরিত্র আছে? – হ্যাঁ
৯. এখানে কি কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে? – হ্যাঁ
১০. এটি কি কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করা? – হ্যাঁ
১১. এর মধ্যে কি কোনো সংলাপ আছে? – হ্যাঁ
১২. এটি কি অভিনয় করা যায়? – হ্যাঁ

৬. নিচের ফাঁকা জায়গায় নিজের কল্পনা থেকে তুমি একটি গল্প লেখো। লেখার সময় গল্পের বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল রেখো। গল্পটির একটি নাম দাও।
নমুনা উত্তর :

রতনের স্বপ্ন

ফারুক সুমন বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর রতনদের পরিবার অথৈ সাগরে পড়ে যায়। কারণ, বাবাই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবার অনুপস্থিতিতে সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়। একরকম বাধ্য হয়েই রতনকে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়। রতনের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের হাল ধরবে। রতনের বাবা ইদ্রিস আলী ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁর ইচ্ছা ছিল রতনকে ডাক্তার বানাবেন। যে কিনা গ্রামের গরিব-দুঃখী মানুষদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবে। সেই স্বপ্ন আজ অধরাই থেকে যাচ্ছে। রতনের ছোটো ভাই সৌরভ ও বোন রত্না। রতন এখন তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে। নিজে যা পারেনি সেটা ছোটো ভাই-বোনের মাধ্যমে পূরণ হোক এটাই তার ইচ্ছা। রতনের খাবার আকস্মিক মৃত্যুর বিষয়টি তার মা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। শোকে তিনি যেন পাথর হয়ে গেছেন। তিনি সবসময় চুপ করে থাকেন। বাকরূদ্ধ ও স্মৃতিশূন্য। মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই টাকা কে দেবে তাদের। আর্থিক সহযোগিতা দেবে এমন আত্মীয়স্বজনও নেই। রতন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, যে করেই হোক মা এবং ভাই-বোনের দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। ১০ হাজার টাকা বেতনে একটি দোকানে কাজ নেয়। যতটা সম্ভব মায়ের চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়। ভাই-বোনদের কাছে ডেকে নিয়ে বলে, চিন্তা করিস না; যত কষ্টই হোক আমি তোদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করব। তবে তোদের পড়ালেখায় মনোযোগী হতে হবে। রতন চাকরির বেতন থেকে যে টাকা পায়, সেটা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করে। গাছ বিক্রি করে, পুকুর বন্ধক দিয়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। ইদ্রিস মাস্টারের এক ছাত্র, তার নাম আসাদ। তিনি একটি প্রাইভেট মেডিকেলের নামকরা ডাক্তার। রতনের এক শিক্ষক আসাদ সাহেবের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রতন কথা বলেছে। মূলত তাঁর পরামর্শে রতন ঢাকায় এসেছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে মায়ের চিকিৎসা শুরু হয়। এমনকি তাঁর চেম্বারেই সহকারী হিসেবে রতন চাকরি পায়। শুধু তাই নয়, চেম্বারে কাজের আগে- পরে রতন বাড়তি আয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ছুটা কাজ করে। বড়োভাই রতনের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় ছোটো ভাই-বোনের পড়াশোনা চলতে থাকে। এভাবে প্রায় ১৫টি বছর অতিবাহিত হলো। সৌরভ এখন ইঞ্জিনিয়ার। আর রত্না হয়েছে ডাক্তার । রতন তার বাবার মৃত্যুর পর একদিন সংসারের যে দায়িত্ব নিয়েছিল সেটা আজও পর্যন্ত ছেড়ে দেয়নি। একদিন অসুস্থ মা আর ছোটো ভাই- বোনদের নিয়ে যে অর্থকষ্টে পড়েছিল আজ সেটা নেই। বহুবছর আগে অসুস্থ মা আর ছোটো ভাই-বোনকে নিয়ে শহরে এসেছিল। আজ সে খুশি। কারণ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার ভাই ও ডাক্তার বোনকে নিয়ে সে গ্রামে যাচ্ছে। চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি। ইদ্রিস মাস্টারের সন্তানেরা আজ মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। তারা এলাকার গর্ব। আজ বাবা বেঁচে থাকলে নিশ্চয় অনেক খুশি হতেন। একদিন ইদ্রিস মাস্টার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। গ্রামের গণ্যমান্য মানুষ তাদের দেখতে এসেছে। আজ তারা অনেক খুশি। রতন বাবার ইচ্ছার কথা ছোটোবোন রত্নাকে বলল। বাবার ভিটায় ইদ্রিস আলী মাস্টারের নামে বিনা মূল্যে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এখানে দরিদ্র মানুষেরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাবেন। রতনের উপলব্ধি হলো, ধৈর্য ও পরিশ্রম থাকলে একদিন সফলতা আসবেই। আজ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ।।

Leave a Comment