(বাংলা) SSC: পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

পল্লিসাহিত্য হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর প্রবন্ধ। পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধ থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের সৃজনশীল

সৃজনশীল ১ : করিম সাহেব আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ইংরেজি, হিন্দি গান ও সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট। তার ধারণা, পাশ্চাত্য সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে বেশি দূরে আগানো যাবে না। অন্যদিকে তার বন্ধু সালাম সাহেব উচ্চশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হৃদয়ে লালন করেন। পল্লিগীতি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি তাঁর প্রিয় গান। ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে মৈমনসিংহ গীতিকা, পুঁথি ও রূপকথার গল্পসহ বাংলা ভাষার বিভিন্ন বই সংগ্রহ করেছেন।

ক. প্রবাদবাক্য কাকে বলে?
খ. পল্লিসাহিত্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের করিম সাহেবের মানসিকতায় ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের কোন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “সালাম সাহেবের মনোভাব যেন ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লেখকের ‘চাওয়ারই প্রতিফলন” – উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. দীর্ঘদিন ধরে লোকমুখে প্রচলিত বিশ্বাসযোগ্য কথা বা জনশ্রুতিকে প্রবাদবাক্য বলে।

খ. অতীতের সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্বন্ধের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার জন্য পল্লিসাহিত্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
পল্লিসাহিত্যগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। পল্লির ঘাটে, মাঠে, পল্লির আলো-বাতাসে, পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে এ সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। জাতির পুরোনো ইতিহাসের অনেক গোপন বিষয় এ সাহিত্যের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ সময় ও রুচির পরিবর্তনের ফলে পল্লিসাহিত্য অনাদৃত হয়ে বিলীন হতে চলেছে। অথচ এগুলো ধ্বংস হলে জাতির অতীত ঐতিহ্যের স্মৃতি লোপ পাবে। তাই এগুলোকে উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণ করতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

গ. উদ্দীপকের করিম সাহেবের মানসিকতায় ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লিখিত আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা স্রোতে পল্লিসাহিত্যগুলো বিস্মৃতির অতল গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলার পল্লিগ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য সাহিত্যের উপকরণ। লোকগাথা, লোকসংগীত, রূপকথা, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া ইত্যাদি নানারকম সাহিত্যের উপকরণ গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। এগুলো আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে বহন করে। আরব্য উপন্যাস বা পাশ্চাত্য গল্পগুলোর চেয়ে এগুলো কম মূল্যবান নয়। অথচ আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে গ্রামবাংলার এ অমূল্য সম্পদগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
উদ্দীপকে দেখি করিম সাহেব উচ্চশিক্ষিত। তিনি ও তার পরিবার ভিনদেশি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট। দেশীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তারা বিমুখ। আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে তারা পাশ্চাত্যমুখী হয়েছেন। অথচ আমাদের পল্লিসাহিত্য পাশ্চাত্য সাহিত্যের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। আজ আমরা আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে ভুলে গিয়ে আরব্য উপন্যাস, পাশ্চাত্য গল্প, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি। পল্লির আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা পল্লিসাহিত্যের বিশাল ও উন্নত জগৎ আমাদের কাছে অনাবিষ্কৃতই থেকে যাচ্ছে। করিম সাহেবের মানসিকতায় এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

ঘ. পল্লিসাহিত্যের প্রতি সচেতন মনোভাব প্রকাশের দিক থেকে উদ্দীপকের সালাম সাহেবের মনোভাব যেন ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লেখকের চাওয়ারই প্রতিফলন।
পল্লিসাহিত্যগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে বাংলার প্রাচীন সম্পদ পল্লিসাহিত্যের প্রতি আমাদের সচেতন মনোভাব প্রত্যাশা করেছেন। একইসাথে তিনি এগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণে সচেতন মনোভাব পোষণ করলে এগুলো সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।
উদ্দীপকের সালাম সাহেব পল্লিজননীর মনোযোগী সন্তান। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হৃদয়ে লালন করেন। তিনি পল্লিগীতি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি শুনতে পছন্দ করেন। নিজের লাইব্রেরিতে তিনি মৈমনসিংহ গীতিকা, পুথি ও রূপকথার গল্পসহ নানা বই সংগ্রহ করেছেন। পল্লিসাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সালাম সাহেবের আন্তরিকতা ও মূল্যায়ন প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের চাওয়ার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সালাম সাহেবের মতো এমন মনোযোগী পল্লিসন্তানের প্রত্যাশা করেছেন যারা শুধু আধুনিক শিক্ষার স্রোতে গা না ভাসিয়ে পল্লিগ্রামের হারানো সম্পদের প্রতি সচেতন হবে। রূপকথা, ডাক ও খনার বচন, ছড়া গান, পল্লিগাথা ইত্যাদি যেখানেই পাবে সেগুলোকে সংগ্রহ করবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করবে। কারণ, এসব পল্লিসাহিত্যের প্রসার ও চর্চা না ঘটলে গ্রামবাংলার মানুষের জীবনাচরণ ও ঐতিহ্য অগোচরেই থেকে যাবে। শুধু শহুরে জীবন সাহিত্যের উপজীব্য হয়ে উঠলে পল্লিগ্রামের অবদান লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাবে। তাই প্রাবন্ধিক সালাম সাহেবের মতো পল্লিজননীর মনোযোগী সন্তানকে চেয়েছেন। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : তিনি গানওয়ালা। একদিন লিখেছিলেন ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে, কেমন দেখা যায়’। শাহ আবদুল করিমের গান সবার মুখে মুখে। এই লোকশিল্পীর গানের কথা ও সুরের আবেশ আচ্ছন্ন করেছে নতুন প্রজন্মকেও। এটা লক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র সমুদ্র শাহ আবদুল করিমের গানগুলো যেন সঠিক সুরে ও কথায় গাওয়া হয়, তার জন্য গবেষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

ক. নৃতত্ত্ব কী?
খ. পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে যেগুলো অমূল্য রত্নবিশেষ তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
গ. উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লিখিত পল্লিসাহিত্যের কোন উপাদানটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সমুদ্রের উদ্যোগ এবং ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লিখিত প্রাবন্ধিকের আকাঙ্ক্ষা এক ও অভিন্ন -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. নৃতত্ত্ব হলো মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত বিজ্ঞান।

খ. পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে পল্লির গানগুলো অমূল্য রত্নবিশেষ।
পল্লিজীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পল্লি গানগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। গানগুলোর কথায় সুরে রয়েছে প্রেম, আনন্দ, বেদনা, সৌন্দর্য ও তত্ত্বজ্ঞান। তাই এই গানগুলো অমূল্য রত্নবিশেষ। জারি গান, ভাটিয়ালি গান, রাখালি গান, মারফতি গান সবই যেন এর অন্তর্ভূক্ত।

গ. ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পল্লিসাহিত্যের নানা উপাদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন।
এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে পল্লির গান, ছড়া, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদি। একইসাথে এসব উপাদানের প্রয়োজনীয়তা এবং সংরক্ষণের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন। উদ্দীপকে বিখ্যাত লোকশিল্পী শাহ আবদুল করিমের গাওয়া লোকগানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একসময় তিনি এই গান রচনা করতেন এবং সুর করে গাইতেন, কিন্তু সময়ের আবর্তনে এসব গান এখন অনেকেই অন্য সুরে গাওয়ার চেষ্টা করে। এতে গানগুলো বিকৃত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধেও দেখা যায় প্রাবন্ধিক পল্লির গানগুলোকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন এবং এগুলোকে সংরক্ষণের জন্যও আহ্বান জানান। এমনকি তিনি পল্লির এই গানগুলোকে তিনি অমূল্য রত্নবিশেষ বলেও অভিহিত করেন। প্রবন্ধের এই রত্নসমতুল্য উপাদানটিরই ইঙ্গিত পাওয়া যায় উদ্দীপকে।

ঘ. উদ্দীপকের সমুদ্র এবং ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক দুজনেই বাংলার পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ মনোযোগী।
‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাদেশের পল্লিসাহিত্য এবং এর উপাদানসমূহ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন। আমাদের লোকশিল্পীদের রচিত সাহিত্য তথা ভাটিয়ালি, মারফতি, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গান, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া ইত্যাদির গুরুত্ব তিনি এখানে তুলে ধরেছেন। পল্লিসাহিত্যের অমূল্য রত্ন মৈমনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গ গীতিকা ইত্যাদি এখন বিশ্বসাহিত্যে পরিণত হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে এসব সাহিত্য উপাদান সংরক্ষণের জন্য প্রাবন্ধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।
উদ্দীপকের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্র সমুদ্র শাহ আব্দুল করিমের গাওয়া গানগুলো যাতে বিকৃত না হয়ে যায় সেজন্য গবেষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। তার এই কাজে পল্লিসাহিত্যের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ ফুটে উঠেছে। সমুদ্র মনে করে এসব গানের কথা ও সুর নতুন প্রজন্মকেও উৎসাহিত করে। তাই যাতে এসব গানের সুর বিকৃত না হয় তার ব্যবস্থা নিতে চায় সে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখক পল্লির সাহিত্য উপাদানকে মূল্যবান জাতীয় সম্পদ বলে অভিহিত করেছেন। তাই সকল মানুষের প্রয়োজনে বিশেষকরে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদের সকলের উচিত এই মূল্যবান সাহিত্যকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। একারণে প্রাবন্ধিক মনে করেন, এই বিরাট লোকসাহিত্য উপযুক্ত গবেষক দ্বারা সংগ্রহ করা নিতান্ত প্রয়োজন। এগুলো যত্নের সাথে আহরণ ও সংরক্ষণ করা আবশ্যক। উদ্দীপকের সমুদ্রের মানসিকতায়ও একই বিষয় ফুটে উঠেছে। অতএব, উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, “উদ্দীপকের সমুদ্রের উদ্যোগ এবং ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লিখিত প্রাবন্ধিকের আকাঙ্ক্ষা এক ও অভিন্ন মন্তব্যটি যথার্থ।

পড়ুন → অভাগীর স্বর্গ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → বই পড়া প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : সম্প্রতি বাংলাদেশের লোকজ সংগীতের প্রচার ও প্রসার চোখে পড়ার মতো। এসকল গানে যেমন আছে সুরের বৈচিত্র্য তেমনি ভাবের নানা ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ। বিচিত্র এ সংগীতাঙ্গন একেক অঞ্চলের একেক জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয়কে ধারণ করে। মানবপ্রেম থেকে ঈশ্বরপ্রেম, নিসর্গপ্রেম থেকে দেশপ্রেম, কী অসাধারণ মোহনীয় ধারায় বাণীরূপ পায়। সুরের ঝরনায় মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়।

ক. পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে কোনগুলি চমকপ্রদ ও মনোহর?
খ. ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবি সম্রাটের এ বক্তব্যের মর্মার্থ লেখো।
গ. পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের আলোকে উদ্দীপকের উপকরণটির বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের খণ্ডিত চিত্রমাত্র”- বিশ্লেষণ করো।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. পরিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে পরিগ্রামে বুড়োবুড়ির মুখে সন্ধ্যাকালে যেসব কথা শুনতে শুনতে আমরা ছেলেবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছি সেগুলো চমকপ্রদ ও মনোহর।

খ. ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবি সম্রাটের এ বক্তব্যের মর্মার্থ মূলত পল্লিসাহিত্যের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুলতা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাগরিক সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পল্লিসাহিত্যের মাহাত্ম্য তিনি উপলব্ধি যে করেননি তা নয়। কিন্তু পল্লির জীবন ও পরিবেশ চিত্রনে তাঁর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, যা তিনি নিজেই উপলব্ধি করেছিলেন। পল্লিসাহিত্যের প্রতি তাঁর এক ধরনের আকর্ষণ ছিল। কিন্তু পল্লির মাঝি, জেলে, কামার, কুমোরদের নিয়ে সাহিত্য রচনার জন্য যে অভিজ্ঞতা থাকা দরকার, শ্রেণিগত কারণে তা তার ছিল না। ফলে যদিও তিনি বলেছেন- ‘এবার ফিরাও মোরে’ কিন্তু পল্লিসাহিত্যের কাছে তিনি প্রকৃতপক্ষে ফিরতে পারেননি।

গ. ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের আলোকে উদ্দীপকের উপকরণ তথা লোকগানের প্রসঙ্গটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
পল্লিসাহিত্য বাঙালির এক স্বতঃস্ফূর্ত সাহিত্য আঙ্গিক। গ্রামের অশিক্ষিত ব্যক্তিদের মুখে মুখে এগুলো রচিত ও প্রচারিত হতে হতে কাল থেকে কালান্তরে প্রবাহিত হয়েছে। এই সাহিত্য ধারায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার অকৃত্রিম চিত্র ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে লোকজ সংগীতের সুরের বৈচিত্র্য ও ভাবের ব্যঞ্জনাময় প্রকাশের কথা বলা হয়েছে। এই সংগীত একেক অঞ্চলের একেক জাতিগোষ্ঠীর জীবন-সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। মানবপ্রেম থেকে ঈশ্বরপ্রেম, নিসর্গপ্রেম থেকে দেশপ্রেম এই সংগীতের আঙ্গিকে বাণীরূপ লাভ করে। অন্যদিকে, ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে পরিগানকে অমূল্য রত্নবিশেষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে এসব গানের অপূর্ব সুর ও সংরক্ষণের গুরুত্ব প্রাবন্ধিক তুলে ধরেছেন।

ঘ. ‘পল্লিসাহিত্য’ এক অফুরন্ত আনন্দের উৎস। পল্লির জীবন ও সমাজ সংস্কৃতির এক অনুপম চিত্র এই সাহিত্য আঙ্গিকে উঠে আসে। সাধারণ মানুষের জীবনের এক অকৃত্রিম প্রকাশ এই সাহিত্যধারাকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
উদ্দীপকে পল্লিসাহিত্যের একটি বিশেষ দিক উঠে এসেছে। তা হলো পল্লিগান। পল্লিগানের বিষয় বৈভব ও সুরব্যঞ্জনার কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। মানবপ্রেম থেকে ঈশ্বরপ্রেম, নিসর্গপ্রেম থেকে দেশপ্রেম এ সকলকিছুই পরিগানের বিষয়। আলোচ্য প্রবন্ধেও পল্লিসাহিত্যের অনন্য উপকরণ হিসেবে পল্লিগানের কথা আলোচিত হয়েছে। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে এই সাহিত্যের প্রায় সব আঙ্গিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পল্লির কবিতা, ছড়া, গান ধাঁধা থেকে শুরু করে রূপকথা, ডাক ও খনার বচনের অনন্য দিকটি এখানে উঠে এসেছে। পল্লিসাহিত্য’ যে বহুমাত্রিক ও বহুব্যঞ্জনায় অভিসিক্ত তা আমরা ‘পল্লিসাহিত্য’ রচনায় লক্ষ করি, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে পল্লিগানের দিকটি উঠে এলেও ‘পল্লিসাহিত্য’ রচনায় এই সাহিত্যের প্রায় সামগ্রিক দিক আলোচিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের খন্ডচিত্রমাত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : পল্লিগ্রামের অশিক্ষিত গ্রাম্য মানুষ ও শিশুদের প্রাণে লোককাহিনি প্রচুর আনন্দ দেয়। ‘ফোকলোর সমাজ’ এই লোককাহিনির মধ্যে সামাজিক বহু আচার, রীতিনীতি ও সমস্যার ইতিহাস খোঁজেন এবং এসবের প্রাচীন উৎস নির্ণয়ে অত্যন্ত যত্নশীল। সম্প্রতি গ্রামা বৃদ্ধা আহসান বিবির নিকট থেকে একটি লোককাহিনি সংগৃহীত হয়েছে। কাহিনিটি কিন্তু সেই বৃদ্ধার নিজের নয়— বৃদ্ধা তার পূর্ববর্তী কারো নিকট শুনেছে এবং সেই কাহিনি তার স্মৃতির ভান্ডারে রক্ষা করেছে। সুতরাং বলা যায়, কাহিনির একটি ইতিহাস আছে এবং এই কাহিনি কোনো একটি বিশেষ দেশে জন্ম নিলেও ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ঘুরে আজ বিচিত্র সভ্যতার এক চিহ্ন ধারণ করেছে।

ক. ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ কাদের প্রিয় বই?
খ. পল্লির উপকথাগুলো বিস্মৃতির অতল গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকের লোককাহিনিতে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে আলোচিত কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিক আলোচিত হলেও তাতে লেখকের মনের পূর্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়নি”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ শিশুদের প্রিয় বই।

খ. আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা স্রোতের কারণে পল্লির উপকথাগুলো বিস্মৃতির অতল গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে।
বাংলা পল্লিসাহিত্যের মধ্যে উপকথাগুলো বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কোনো এক সময়ে পল্লিগ্রামের বুড়োবুড়ির মুখে এসব উপকথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ত ছেলেমেয়েরা। কারণ এসব উপকথা ছিল অত্যন্ত মনোহর ও চমকপ্রদ। আরব্য উপন্যাসের আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ, আলিবাবা কিংবা চল্লিশ দস্যুর চেয়ে পল্লির উপকথাগুলোর মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু এসব উপকথাগুলো আধুনিক কর্মনাশা শিক্ষার স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল গর্ভে । কারণ এখন শিক্ষিত জননীরা এসব উপকথার পরিবর্তে সন্তানদের কোনো ইংরেজি উপন্যাসের অনুবাদ শেখান।

গ. উদ্দীপকের লোককাহিনিতে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে আলোচিত উপকথার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
পল্লিসাহিত্যের অন্যতম একটি সমৃদ্ধশালী উপাদান উপকথা। বাংলার নিভৃত কোণের কোনো পিতামহীমাতামহীর গল্প শুনে ছেলেমেয়েরা আনন্দ পেত। এই উপস্থাগুলো ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য প্রান্তে কিংবা এর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আছে। Folklore Society এসব উপকথাগুলোকে সংগ্রহ করে অন্যান্য দেশের উপকথার সাথে সাদৃশ্য বিচার করে।
উদ্দীপকে পল্লিগ্রামের লোককাহিনি তথা উপকথার কথা বলা হয়েছে। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ ও শিশুদের প্রাণে এসব লোককাহিনি প্রচুর আনন্দ দিয়ে থাকে। আর এসবের মধ্যে সামাজিক বহু আচার, রীতিনীতি ও সমস্যার ইতিহাস খোঁজে ফোকলোর সমাজ। ফলে পল্লিগ্রামের এসব লোকগীতি নিজের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে স্থান করে নেয় বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনে। উদ্দীপকের বৃদ্ধা আহসান ৰিৰি সম্প্রতি এমনি একটি লোককাহিনি সংগ্রহ করেছেন। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধেও লোককাহিনি বা উপকথার এই দিকটি আলোচিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে আলোচিত উপকথার দিকটি আলোচিত হলেও তাতে লেখকের পূর্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়নি।
‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখক আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ পল্লিসাহিত্যের নানা উপাদানের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে ছড়া, গান, প্রবাদ, উপকথা ইত্যাদি। এসব বিষয় বা উপাদান এখন বিলুপ্তপ্রায়। লেখক এসব উপাদানের সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন।
উদ্দীপকে পল্লিসাহিত্যের একটি উপাদান লোককাহিনি বা উপকথার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। লোককাহিনি গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ শিশুদের প্রাণে প্রচুর আনন্দ যেমন দেয়, তেমনি এগুলো বিশ্ব সাহিত্যের ভাণ্ডারকেও করে পরিপূর্ণ। পরিগ্রাম থেকে বিশ্বসাহিত্য এসব লোকটা মহি নিয়ে যাওয়ার কাজ করে Folklore Society ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লোককাহিনির পাশাপাশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছড়া, গান, প্রবাদ প্রবচন, ঋষিনি ইত্যাদির কথা। এসব সাহিত্য যে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় সেটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন লেখক। তাই পল্লিসাহিত্যের এসব উপাদানকে সংরক্ষণের জন্য সকলকে সচেতন হওয়ার আবেদন জানান লেখক।
উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে দেখা যায় ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখকের মূল উদ্দেশ্য পল্লির সাহিত্য সম্পদকে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানো। আর এ লক্ষ্যেই লেখক আলোচ্য প্রবন্ধে পল্লিসাহিত্যের পরিচিতি, প্রয়োজনীয়তা, ধ্বংসের কারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। কিন্তু উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর মাঝে লেখকের এসব অভিব্যক্তি ফুটে ওঠেনি। অতএব, আমরা বলতে পারি— “উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিক আলোচিত হলেও তাতে লেখকের মনের পূর্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়নি” – মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : এগারো বছর বয়সের সুমনের জন্য জন্মদিনের উপহার হিসেবে তার বাবা ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বইটি এনেছেন। লেখাপড়ার ফাঁকে সুমন বইটি পড়ে। পড়া শেষে সুমনের বাবা জানতে চাইলেন, ‘বইটি কেমন লেগেছে?’ সুমন এ রকম আরও বই আবদার করল। সুমনের বাবা বললেন, ‘আমাদের গ্রাম এলাকায় অনেক পল্প কাহিনি অযত্নে অবহেলায় সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গ্রামের সাহিত্য আমাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন’

ক. আজকাল বাংলা সাহিত্যে কত আনা শহরে সাহিত্য বিদ্যমান?
খ. পরির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে বুঝিয়ে লেখো
গ. উদ্দীপকে সুমন ঠাকুরমার ঝুলি’ বইটির মত আরও বই আনতে বলেছে’ – ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে গ্রামের আর কী কী সাহিত্য সম্ভার আছে বর্ণনা করো।
ঘ. সুমনের বাবার মতে, গ্রামের সাহিত্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন— কিন্তু কীভাবে? ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধ অবলম্বনে উপস্থাপন করো।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. আজকাল বাংলা সাহিত্যে পনেরো আনা শহুরে সাহিত্য বিদ্যমান।

খ. পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে বলতে পল্লির আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকসাহিত্যকে বোঝানো হয়েছে।
আমাদের দেশের গ্রামগুলো পল্লিসাহিত্যের প্রধান উৎস। পরির মাঠেঘাটে, আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পল্লিসাহিত্য। আমরা যেমন বাতাসের মাঝে বাস করে ভুলে যাই বাতাসের কথা, ঠিক তেমনি পল্লিসাহিত্যের অফুরন্ত ভান্ডারের মধ্যে থেকে ভুলে যাই যে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পল্লিসাহিত্য।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বইটির মতো ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে আরও আছে ডাক ও খনার বচন, পল্লিগান, ছড়াসহ নানা উপাদান।
‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন পল্লির আলো বাতাসে, পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। তাঁর মতে, পল্লিতে রয়েছে সাহিত্যের অমূল্য খনি। পল্লিসাহিত্যের বিশেষ কয়েকটি দিক যথা ঠাকুরমার ঝুলি, প্রবাদ, ডাক ও খনার বচন, লোকগীতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন প্রাবন্ধিক।
উদ্দীপকে পল্লিসাহিত্যের জনপ্রিয় উপাদান ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র কথা উল্লিখিত হয়েছে। বাংলার নানা অঞ্চলের বহু রূপকথার সংমিশ্রণ ঠাকুরমার ঝুলি’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। পল্লিগ্রামে আরও সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। প্রবাদ বাক্য, ডাক ও খনার বচনে জাতির পুরোনো ইতিহাসের অনেক গোপন কথা রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে ছড়া, গৎ, বুলি, ঘুমপাড়ানি গান প্রভৃতি। এগুলো সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস। সাহিত্যের ভান্ডারে দান করবার মতো উপাদানের অভাব পল্লিসাহিত্যে নেই। এসব উপাদান আমাদের পুরোনো দিনের ঐশ্বর্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। অতীতের ভূয়োদর্শনের পরিপক্ব ফল সঞ্চিত হয়ে আছে সাহিত্যের এসব ভান্ডারে। নানা উপাদানে পল্লিসাহিত্য সমৃদ্ধ যা আমাদের মনের খোরাক মেটায়।

ঘ. বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক পল্লিসাহিত্যের বিভিন্ন উপকরণের পরিচয় তুলে ধরেছেন।
পল্লিসাহিত্যের এ উপাদানগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। পল্লির গান, ছড়া, প্রবাদ, প্রবচন, ধাঁধা, রূপকথা-উপকথা এসবই বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
উদ্দীপকে পল্লিসাহিত্যের অন্যতম উপাদান ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কেননা, পল্লিসাহিত্য কালের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ সাহিত্য দেশের আলো-বাতাসের মতো সকলেরই সাধারণ সম্পত্তি। তাতে হিন্দু-মুসলমান কোনো ভেদ নেই। তাই এগুলো সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। পল্লিসাহিত্যের উপাদানগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে দেখা যায়, এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত আধুনিক মানুষেরা পল্লিসাহিত্যের প্রতি উদাসীন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে Folklore Society গুরুত্ব সহকারে পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণ করলেও আমাদের দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রাবন্ধিক সম্ভাব্য বিলুপ্তির কবল থেকে সাহিত্যের এ সমৃদ্ধ ধারাটিকে বাঁচাতে পল্লিসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে উপযুক্ত গবেষক, আগ্রহী সাহিত্যিক ও সচেতন নাগরিকদের আশু উদ্যোগ কামনা করেছেন। উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনের বাবা পল্লিসাহিত্যের গুরুত্ব অনুধাবনকারী একজন সচেতন নাগরিক। তিনি লক্ষ করেছেন পল্লিসাহিত্যের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয়বাহী পল্লিসাহিত্যের প্রাণবন্ত উপাদানগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের আশু উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন, যা প্রাবন্ধিকের মূল বক্তব্যের অনুসারী।

Leave a Comment