(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: প্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রার্থনা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর কায়কোবাদ এর কবিতা। প্রার্থনা কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

প্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল

১. আল্লাহ তুমি দয়ার সাগর-
অতি মেহেরবান,
জগৎ-মাঝে যাহা আছে
সবই তোমার দান
দীন দুনিয়ার মালিক তুমি
তুমি মোদের রব,
তোমার দয়ায় চলছে প্রভু
এ জগতের সব।
ক. ‘চারু’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কবি নিজেকে নিঃসম্বল বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থনা’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘চারু’ শব্দের অর্থ সুন্দর।

খ. স্রষ্টাকে ভক্তি বা প্রশংসা করার পন্থা জানা নেই বলে কবি নিজেকে নিঃসম্বল বলেছেন।
বিশ্বজাহানের মালিক পরম স্রষ্টা অসীম করুণাময়। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় এ জগৎ পরচালিত হচ্ছে। তিনিই জীবন-মরণের মালিক। তাঁর অনুগ্রহ ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। তাই তাঁর কাছেই সকলে সাহায্য প্রার্থনা করে। কবিও স্রষ্টার অপার মহিমার কথা স্মরণ করে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানাচ্ছেন। কিন্তু তিনি মনে করেন, স্রষ্টাকে যেভাবে ভক্তি প্রদর্শন ও প্রশংসা করা দরকার তা তাঁর জানা নেই। তাই তিনি নিজেকে রিক্ত ও নিঃসম্বল বলেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থনা‘ কবিতায় বর্ণিত স্রষ্টার অসীম দয়া, তাঁর অফুর সৃষ্টি ও প্রভুত্বের মহিমার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
স্রষ্টা সমস্ত বিশ্ব-জাহানের একমাত্র অধিপতি। তিনি সর্বশক্তিমান ও অসীম দয়ালু। তাঁর অনুগ্রহে জগতের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না।
উদ্দীপকে স্রষ্টার অফুরন্ত মহিমা কীর্তিত হয়েছে। তাতে আল্লাহকে দয়ার সাগরের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে যে, তিনি অতি মেহেরবান। এ জগতের সবকিছু তিনি দান করেছেন। এ দুনিয়ার মালিক তিনি এবং তিনিই আমাদের প্রভু। তাঁর দয়ার ওপর নির্ভর করেই চলছে এ জগৎ। ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কবি মনে করেন, স্রষ্টার সৃষ্ট পাখিরা গাছে গাছে বিচরণ করে তাঁরই গুণগানে মগ্ন। তরুলতা শিরের নানা রকম ফুল ফল আমাদের জন্য স্রষ্টার প্রসাদ স্বরূপ। বসন্তের বায়ু যেন তাঁর নিঃশ্বাস এবং জগতের আয়ু যেন তাঁর স্নেহকণা। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় জগতের সবকিছু চলছে। তাঁর অপার করুণা লাভ করেই বেঁচে আছে বিশ্ব-সংসারের সকল জীব ও উদ্ভিদ। আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত এসব দিক উদ্দীপকের বর্ণনায়ও প্রকাশ পেয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, ‘প্রার্থনা’ কবিতায় স্রষ্টার যে দয়া, সৃষ্টি ও প্রভুত্বের মহিমা তুলে ধরা হয়েছে, উদ্দীপকে তার প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না, কেননা, তাতে উক্ত কবিতায় বর্ণিত স্রষ্টার অসীম দয়া ও অফুরন্ত মহিমার কথা থাকলেও তাঁর কাছে আত্মনিবেদন ও আরাধনার দিকটি প্রতিফলিত হয়নি।
স্রষ্টা সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক ও প্রভু। এ বিশ্বের সবকিছু তাঁর অফুরন্ত দয়া ও মহিমার নিদর্শন। তাঁর দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। তাই স্রষ্টার কাছে সকলেই সাহায্য প্রার্থনা করে।
উদ্দীপকে আল্লাহর অসীম দয়া, অফুরন্ত মহিমা ও তাঁর সৃষ্টির কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তিনি দয়ার সাগর ও অতি মেহেরবান। বিশ্ব-জাহানের সবকিছু তাঁর সৃষ্ট এবং তিনিই জগতের মালিক ও প্রভু। এ জগতের সবকিছু চলছে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে। উদ্দীপকে বর্ণিত এ দিকগুলো ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও রয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় এসবের পাশাপাশি স্রষ্টার প্রতি কবির প্রগাঢ় শ্রদ্ধা- ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। কবি কোনো অবস্থাতেই স্রষ্টাকে ভুলে থাকেন না। সুখে-দুঃখে তিনি সবসময় স্রষ্টাকে স্মরণ করেন। তাঁর জীবনে-মরণে স্রষ্টাই একমাত্র সম্বল। গভীর বিপদের সময়ে স্রষ্টাকে স্মরণ করলে তাঁর হৃদয়ের জ্বালা দূর হয়ে যায়। তাই স্রষ্টাকে যথাযথ ভক্তি-শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করতে না জানলেও তিনি শুধু আঁখি জল নিবেদন করে স্রষ্টার সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু আলোচ্য কবিতার এসব দিকের কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকে দেখা যায় না।
তাই, উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ‘উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না- মন্তব্যটি যথার্থ।

২. “হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,
গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কণ্ঠে গান
সকলি তোমার দান।”
ক. ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. কবি স্রষ্টাকে শুধু আঁখিজল সঁপেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থনা’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না।”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি ‘অশ্রুমালা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ. কবি রিক্ত হস্তে এসেছেন বলে স্রষ্টাকে শুধু আঁখিজল সঁপেছেন।
কবি স্রষ্টার কাছে মনোবল প্রার্থনা করছেন। স্রষ্টাকে কীভাবে কেমন করে ভক্তি বা প্রশংসা করতে হয় তা তিনি জানেন না। তাই তিনি নিজেকে নিঃসম্বল মনে করেন। এ অবস্থায় কবি রিক্ত হস্তে প্রভুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে শুধু আঁখিজল সঁপেছেন। কারণ, স্রষ্টাকে নিবেদন করার মতো নিঃসম্বল কবির যে আর কিছু নেই।

গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থনা’ কবিতায় বর্ণিত স্রষ্টার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দানের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
মহান স্রষ্টার অনুগ্রহের যেন কোনো শেষ নেই। এ পৃথিবীতে রয়েছে তাঁর অসংখ্য নেয়ামত। নানা প্রাকৃতিক উপাদানে তিনি এ বিশ্বকে সাজিয়েছেন। তাঁর অপার করুণা লাভ করেই পৃথিবীতে সবাই জীবনধারণ করে আছে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পরম দয়ালু ও দাতা মহান স্রষ্টা বড়ো “সুন্দর করে পৃথিবী সৃষ্টি করে আমাদের দান করেছেন। তিনি আমাদের দিয়েছেন নানা প্রাকৃতিক উপাদান। তিনি গাছে গাছে নিয়েছেন ফুল ও ফল, নদীকে দিয়েছেন অফুরন্ত জলরাশি এবং পাখির কণ্ঠে দিয়েছেন সুমধুর গান। ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও স্রষ্টার এসব দানের মহিমা তুলে ধরা হয়েছে। স্রষ্টা নানা জাতের পাখি সৃষ্টি করেছেন। তরুলতার শিরে দিয়েছেন তিনি সুন্দর ফুল ও ফল। এরা সব সময় তাঁর গুণগান করে। তাঁর কাছে সকলেই সাহায্য চায়। এতে বোঝা যায়, উদ্দীপকে ‘প্রার্থনা’ কবিতার এসব প্রাকৃতিক উপাদান ও স্রষ্টার মহিমা বর্ণনার দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার একটি বিশেষ দিক তুলে ধরলেও উক্ত কবিতার সমগ্রভাব তুলে ধরেনি।
সারা পৃথিবীতে মহান স্রষ্টার অপার মহিমার অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় চলছে জগতের সবকিছু। তার দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। তাই আমাদের উচিত স্রষ্টার মহিমা বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
উদ্দীপকে মহান স্রষ্টার প্রাকৃতিক দানগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে। পরম দয়ালু ও দাতা মানুষের জন্য এ পৃথিবীকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি গাছে গাছে দিয়েছেন ফুল ও ফল, নদীতে দিয়েছেন পানি আর পাখির কণ্ঠে দিয়েছেন সুমধুর গান। বস্তুত জগতের সবকিছু সৃষ্টি করে তিনি আমাদের দান করেছেন। ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও স্রষ্টার এসব দানের কথা বর্ণিত হয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে কবি স্রষ্টার কাছে মনোবল প্রার্থনা করেছেন। বিপদে-আপদে, সুখে-শান্তিতে তিনি সব সময় মহান স্রষ্টার সাহায্য চান। তিনি মনে করেন, সুখে- দুঃখে, শয়নে স্বপনে স্রষ্টাই আমাদের একমাত্র ভরসা।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, উদ্দীপকে স্রষ্টার দানের বিষয়টি ছাড়া স্রষ্টার কাছে প্রার্থনাসহ অন্যান্য বিষয় প্রতিফলিত হয়নি। তাই উদ্দীপকটি উক্ত কবিতার সময়ভাব ধারণ করে না।

আরো পড়োদুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োপাছে লোকে কিছু বলে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. “দ্যুলোক ভূলোক সবারে ছাড়িয়া
তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া
তোমারি সকাশে যাচি যে শকতি
তোমারি করুণাকামী।
ক. ‘চারু’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ভুলিনি তোমারে এক পল’- পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার মূলভাব এক ও অভিন্ন”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘চারু’ শব্দের অর্থ সুন্দর।

খ. ‘ভুলিনি তোমারে এক পল’- পদ্ধতিটি দ্বারা কবির এক মুহূর্তও স্রষ্টাকে না ভুলে থাকার কথা বোঝানো হয়েছে।
স্রষ্টার দয়ায় জগতের সব কিছু চলছে। তাঁর অপার করুণা লাভ করেই বিশ্ব-সংসারের প্রতিটি জীব ও উদ্ভিদ প্রাণধারণ করে আছে। তাঁর কাছেই সকলে সাহায্য চায়। কবিও মনে করেন, স্রষ্টাই তার একমাত্র সম্বল। তাই তিনি স্রষ্টাকে এক মুহূর্তও ভুলে থাকেন না। কারণ স্রষ্টাই তাঁর একমাত্র ভরসা।

গ. উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো স্রষ্টার প্রতি অবিচল অনুরাগ ও তাঁর সাহায্য কামনা।
জগতের সবকিছুর মালিক মহান স্রষ্টা। তার অফুরন্ত দয়ায় পরিচালিত হচ্ছে জগৎ-সংসার সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তিনিই আমাদের একমাত্র সম্বল। তাই সবাই তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করে।
উদ্দীপকে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাঁর কাছে শক্তি প্রার্থনা করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবি দ্যুলোক-ভূলোক ছেড়ে কেবল স্রষ্টাকেই পেতে চান। তাই তিনি স্রষ্টা চরণে নিজেকে সমর্পণ করেন। তিনি স্রষ্টার কাছেই শক্তি চান এবং স্রষ্টার করুণাই তার একমাত্র কাম্য। ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও কবি স্রষ্টার কাছে মনোবল কামনা করেছেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সব সময় তিনি বিধাতার কাছে শক্তি কামনা করেন। তাই বলা যায়, স্রষ্টার প্রতি গভীর অনুরাগ ও শক্তি কামনার বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।

ঘ. মহান স্রষ্টার কাছে সাহায্য কামনার দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার মূলভাব এক ও অভিন্ন।
মহান স্রষ্টা বিশ্বজাহানের একমাত্র প্রতিপালক। তাঁর অফুরন্ত দয়ায় জগতের সবকিছু চলছে। তাঁর করুণা লাভ করেই বেঁচে আছে সকল জীব ও উদ্ভিদ। তাঁর দয়া ছাড়া কেউ এক মুহূর্তও চলতে পারে না। তাই সবাই স্রষ্টার সাহায্য কামনা করে। উদ্দীপকে স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ পেয়েছে। দ্যুলোক-ভূলোক ছেড়ে উদ্দীপকের কবি শুধু স্রষ্টাকে পেতে চান এবং তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়েন। তিনি স্রষ্টার কাছেই শক্তি প্রার্থনা করেন। স্রষ্টার করুণাই তার একান্ত কাম্য। ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর অনুরাগ ও তাঁর সাহায্য কামনা করা হয়েছে। কবি মনে করেন বিধাতাই তাঁর একমাত্র সম্বল এবং তিনিই জগতের একমাত্র প্রতিপালক। তাঁর অপার করুণায়ই চলছে জগতের সব কিছু। তাই কবি বিধাতার কাছে মনোবল প্রার্থনা করেন। কারণ বিধাতাই তাঁর একমাত্র ভরসা।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে তার কাছে শক্তি কামনা করা হয়েছে। তাই উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার মূলভাব এক ও অভিন্ন- মন্তব্যটিকে সঠিক বলা যায়।

৪. দৃশ্যকল্প-১ :
সরল সঠিক পুণ্যপন্থা
মোদের দাও গো বলি
চালাও সে পথে যে পথে তোমার
প্রিয়জন গেছে চলি।

দৃশ্যকল্প-২ :
যে পথে তোমার চির অভিশাপ
যে পথে ভ্রান্তি, চির পরিতাপ
হে মহাচালক, মোদের কখনো
করো না সে পথগামী।
ক. কবি কায়কোবাদ রচিত মহাকাব্যের নাম কী?
খ. ‘তোমারি নিঃশ্বাস বসন্তের বায়ু বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে ‘প্রার্থনা’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ কায়কোবাদের প্রত্যাশাকেই ধারণ করেছে- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কবি কায়কোবাদ রচিত মহাকাব্যের নাম ‘মহাশ্মশান’।

খ. ‘তোমারি নিঃশ্বাস বসন্তের বায়ু’ বলতে কবি সৃষ্টিকর্তার দয়ায় জগতের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হওয়া বুঝিয়েছেন।
সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত দয়ায় জগতের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তাঁর দয়ার বাইরে কোনোকিছুর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাঁর অপার করুণা লাভ করে বিশ্বসংসারের প্রতিটি জীব ও উদ্ভিদ প্রাণ ধারণ করে আছে।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে ‘প্রার্থনা’ কবিতার আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও সাহায্য প্রার্থনার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেছেন। কবি বলেছেন, দারিদ্র্য পেষণে, বিপদের সময়ে স্রষ্টাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তাই কবি সর্বাবস্থায়ই বিধাতার কাছে শক্তি কামনা করেন। কবি দেহে ও হৃদয়ে শক্তি দেওয়ারও প্রার্থনা করেছেন, যেন আমরা তার আরাধনায় আমাদেরকে নিবেদন করতে পারি। দৃশ্যকল্প-১ এ আমরা দেখিছি যে, কবি অপার ক্ষমতাধর প্রভুর কাছে সরল সঠিক কল্যাণময় পথে চলে নিজেকে বিসর্জিত হওয়ার প্রার্থনা ও স্রষ্টার প্রিয়জনদের পথে চলার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন, যা কবিতায় বর্ণিত মহান প্রভুর অফুরন্ত দয়া ও সাহায্য প্রার্থনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘দৃশ্যকল্প-২ কায়কোবাদের প্রত্যাশাকেই ধারণ করেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে তাঁর উদ্দেশে প্রার্থনা জানিয়েছেন। কবি ভক্তি বা প্রশংসা না জেনেও চোখের জলে নিজেকে নিবেদন করেন। সৃষ্টিকর্তা চিরন্তন এবং সব শক্তির উৎস। মানুষ তাঁর কাছে সম্পূর্ণ অসহায়। তাঁর দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। তাই কবি বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তাঁর কাছে শক্তি প্রার্থনা করেন।
দৃশ্যকল্প-২ এ পৃথিবীর মহাচালকের কাছে কবির প্রার্থনা যেন মহান প্রভু তাকে অভিশাপের পথে, ভুল পথে এবং চির দুঃখ-কষ্ট ও ভর্ৎসনার পথে পরিচালিত না করেন। ‘প্রার্থনা’ কবিতায়ও কবি শূন্য হাতে দেহ ও হৃদয়ে শক্তি দেওয়ার জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন। মিনতি করেছেন, দারিদ্রের কারণে দুঃখ-কষ্টে কিংবা ধনী হয়ে সুখী হলে, জীবনে মরণে সর্বদা যেন তাকে স্মরণ করতে পারেন। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, জগতের সবকিছুর প্রতিই তাঁর অফুরন্ত দয়া বিরাজমান। তাই বিপদের কোলেও দুঃখবোধের সময় প্রভুকে স্মরণ করলে সব দুঃখ তথা শোকের আগুন নিভে যায়। তারই প্রত্যাশায় কবি প্রভুর কাছে দেহ ও মনে শক্তির প্রত্যাশা করেছেন।
সুতরাং, দৃশ্যকল্প-২এ মহান প্রভু ও পৃথিবীর মহাচালকের নিকট সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার যে প্রার্থনা করেছেন, ‘প্রার্থনা কবিতায় কবি কায়কোবাদ সুখে-দুঃখে, শয়নে স্বপনে প্রভুর প্রতি ভরসা করে সর্বক্ষমতাধর হিসেবে আরাধনার প্রত্যাশাই করেছেন যা দৃশ্যকল্প-২এ কায়কোবাদের প্রত্যাশাকেই ধারণ করেছে- যা প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করে।

৫. এহসান তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র। সে মেসে থাকে। একদিন রাস্তা পার হওয়ার সময় বিপরীতগামী একটি ট্রাক চাপা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে পড়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাদরাসায় তার নামাজে জানাযা হয়। নামাযশেষে অধ্যক্ষ সাহেব তার জন্য দোয়া করেন, “হে আল্লাহ, এই মাসুম বালককে তুমি জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান কর। আর তার পরিবারকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান কর।
ক. ‘আরতি’ শব্দের অর্থ কী?
খ. দারিদ্র্য পেষণে, বিপদের ক্রোড়ে/ অথবা সম্পদে, সুখের সাগরে ভুলিনি তোমারে এক পল- উক্তিটির অর্থ কী?
গ. উদ্দীপকটির সঙ্গে ‘প্রার্থনা’ কবিতার সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার একটি বিশেষ দিক নির্দেশ করে- বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘আরতি’ শব্দটির অর্থ প্রার্থনা।”

খ. সুখে-দুখে সকল অবস্থায় কবি আল্লাহকে ভুলে যাননি, এখানে তিনি এ কথাটি বলার চেষ্টা করেছেন।
কবি কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেছেন তবুও আল্লাহকে ভুলে যাননি। তিনি বিপদের মধ্যে দিনযাপন করেছেন তবু বিধাতাকে ভুলেননি। সুখের সাগরে থেকেও কবি আল্লাহকে ভুলে যাননি। অর্থাৎ সুখে-দুখে-বিপদে সকল অবস্থায়ই কবি আল্লাহকে না ভুলে তার গুণগান করেছেন।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে কবিতায় বর্ণিত আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, এহসান মাদরাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র। রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাক চাপায় সে মারা যায়। তার নামাজে জানাযায় অধ্যক্ষ সাহেব আল্লাহর দরবারে তার নাজাতের জন্য এবং বেহেশতের সর্বোচ্চ মর্যাদাদানের জন্য দোয়া করেন। তিনি তার পরিবারের জন্যও দোয়া করেন।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় দেখা যায়, কবি নিজেকে দীনতার পূর্ণ ছবি হিসেবে মনে করেন। তিনি আল্লাহকে ভক্তি করতে জানেন না, তার প্রশংসা করতে জানেন না। কারণ তিনি সম্বলহীন। জ্ঞানের দীনতার জন্য তিনি আল্লাহকে ডাকতে না পারলেও সকল অবস্থায় তাকে স্মরণ করেন। বিপদে-আপদে, অভাব-অনটনে, সম্পদে সকল অবস্থায় আল্লাহকে কবি আরাধনা করেন। উদ্দীপকটির সঙ্গে কবিতার এই সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার একটি বিশেষ দিক নির্দেশ করে-মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, এহসান ৮ম শ্রেণির ছাত্র। সে রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাক চাপা দিলে মাটিতে পড়ে যায়। হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাদরাসায় তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যক্ষ সাহেব তার নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন এবং তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দানের জন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন।
‘প্রার্থনা’ কবিতায় দেখা যায়, কবি প্রথমেই তার দীনতার কথা বলেছেন। তিনি কীভাবে ভক্তি করতে হয় জানেন না, আল্লাহর প্রশংসা কেমন করে করতে হয় তাও তিনি জানেন না। কবি শুধু তার আঁখিজলে নিজেকে নিবেদন করেন। তিনি সকল অবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সকল অবস্থায় তিনি আল্লাহর আরাধনা করেন।
এছাড়া কবিতার বর্ণনা অনুযায়ী জগতের অন্যান্য প্রাণী এমনকি বৃক্ষলতা, পশু-পাখি, আকাশ, বায়ু প্রভৃতি আল্লাহর ধ্যানে মশগুল, তার প্রার্থনায় রত থাকে। আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা, নিবেদন ও প্রশংসার এই ব্যাপক দিক উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘প্রার্থনা’ কবিতার একটি বিশেষ দিক নির্দেশ করে- সমগ্র দিক নয়।

Leave a Comment