(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

পাছে লোকে কিছু বলে হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর কামিনী রায় এর কবিতা। পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার সৃজনশীল

১. করেছ প্রতিজ্ঞা যখন-
ভয় করো না আর,
মহৎ কাজে আসুক বাধা-
আসুক হাজার বার।
দ্বিধা-সংকোচ যাও ভুলে যাও
চিত্তে ধর বল,
সফল তুমি হবেই কাজে থাকলে অবিচল।
ক. কামিনী রায়ের কবিতায় কার প্রভাব স্পষ্ট?
খ. ‘সম্মুখে চরণ নাহি চলে’- কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি মহৎ কাজ সম্পাদনের জন্য প্রেরণাদায়ক — এ উক্তিটি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কামিনী রায়ের কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব স্পষ্ট।

খ. পেছনে লোকে কিছু বলবে কি না তা ভেবে ‘সম্মুখে চরণ নাহি চলে।’
মানুষ অনেক সময় কল্যাণমূলক কাজ করতে গিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ অপরাপর মানুষের সমালোচনার ভয়। কে কী বলবে, কে কী সমালোচনা করবে- এই ভেবে কেউ কেউ ভীত হয়ে পড়ে। কাজটি করব কি না, করা যাবে কি না, করা ঠিক হবে কি না- এরূপ চিন্তা তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে । ফলে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিধা-সংকোচের কারণে তারা আর অগ্রসর হতে পারে না। তাদের চরণ আর সামনে চলতে চায় না।

গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার শিক্ষণীয় দিকটি ফুটে উঠেছে।
দ্বিধা-সংকোচ, লজ্জা-ভয় মানুষের মহৎ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করে। এসবের কারণে অনেকে সংকল্প অনুযায়ী কাজ করতে পারে না। তাই এসব নেতিবাচক দিক পরিহার করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে মহৎ কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
উদ্দীপকে সংকল্প অনুযায়ী কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। তাতে পরামর্শের মতো করে বলা হয়েছে, মহৎ কাজে হাজার বার বাধা এলেও ভয় করা চলবে না। সব দ্বিধা-সংকোচ ভুলে কাজে অবিচল থাকলে সাফল্য অর্জন করা যাবে। উদ্দীপকের এ বিষয়টি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার শিক্ষণীয় দিকটি। প্রতিফলিত করে। কেননা, উক্ত কবিতায় বর্ণিত হয়েছে, কোনো মহৎ কাজ করতে গেলে কেউ কেউ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে- এই ভেবে তারা বসে থাকে। ফলে কাজ এগোয় না। তাই সমাজে যারা অবদান রাখতে চান তাদের দ্বিধা-সংকোচ থাকলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনা উপেক্ষা করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। বস্তুত আলোচ্য কবিতায় নিঃসংকোচে জীবনপথে পরিচালিত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়েছে যা উদ্দীপকের কবিতাংশেরও মূলকথা। এদিক থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার শিক্ষণীয় দিকটি ফুটে উঠেছে। কেননা, তাতে মহৎকাজে সফল হওয়ার জন্য ভয়-ভীতি ও দ্বিধা-সংকোচ পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকটি মহৎ কাজ সম্পাদনের জন্য প্রেরণাদায়ক”- উক্তিটি পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে যথার্থ বলা যায়।
লোকলজ্জা ও দ্বিধা-সংকোচের কারণে কেউ কেউ মহৎ উদ্যোগ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে যারা এসব নেতিবাচক দিক উপেক্ষা করতে পারে, তারাই কাজে সফল হয়। তাই কোনো মহৎ কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে দ্বিধা-সংকোচ, ভয়-ভীতি ও লোকলজ্জা পরিহার করে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে।
উদ্দীপকে মহৎ কাজ সম্পাদনে মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মহৎ কাজের প্রতিজ্ঞা করলে ভয় করা চলবে না। হাজারো বাধার সম্মুখীন হলেও প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে হবে। দ্বিধা-সংকোচ ভুলে চিত্তে শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে কাজে অবিচল থাকলেই তবে সফলতা সুনিশ্চিত হবে। বস্তুত উদ্দীপকে সকল বাধা-বিপত্তি ও মনের দুর্বলতা পরিহার করে সংকল্প অনুযায়ী কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলকথাও তাই। উক্ত কবিতায় বলা হয়েছে, দ্বিধা-সংকোচের কারণে অনেকে মহৎ উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ায়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে- এই ভেবে তারা বসে থাকে। ফলে কাজ এগোয় না। লোকলজ্জার কারণে সুন্দর ভাবনাগুলো আবার অন্তরেই মিশে যায়। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’- এই মানসিক দুর্বলতার কারণে মনের শক্তির মৃত্যু ঘটে। তাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হলে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ভয়-ভীতি, সংকোচ উপেক্ষা করতে হবে। উদ্দীপকে আলোচ্য কবিতার এ মূলকথাটি উপস্থাপনের মাধ্যমে মহৎ কাজের সংকল্পে অটল থাকার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
তাই, উপর্যুক্ত আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, ‘উদ্দীপকটি মহৎ কাজ সম্পাদনের জন্য প্রেরণাদায়ক’- উক্তিটি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার আলোকে যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়।

২. রাহেলা মাদরাসার মেধাবী ছাত্রী। সে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার এ সিদ্ধান্তের কথা জেনে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য শুরু করে। কিন্তু রাহেলা তাতে কর্ণপাত করে না। সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং বিজয় দিবসে চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করে। তার বক্তব্য শুনে সবাই মুগ্ধ হয়।
ক. শুভ্র চিন্তা কোথায় মিশে যায়?
খ. কবি আড়ালে থেকে নিজেকে নীরবে ঢেকে রাখেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার সাথে কোন দিক থেকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের রাহেলার মনোভাবে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলভাব ফুটে উঠেছে।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. শুভ্র চিন্তা হৃদয়ের তলে মিশে যায়।

খ. কবি সমালোচনার ভয়ে আড়ালে থেকে নিজেকে নীরবে ঢেকে রাখেন।
কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে- এই ভেবে তারা বসে থাকে। ফলে কাজ এগোয় না। কবিও একজন দ্বিধাগ্রস্ত দুর্বল চিত্তের মানুষ। তিনি অন্যের সমালোচনার ভয়ে নিজের সংকল্প অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না। তাই তিনি আড়ালে থেকে নিজেকে নীরবে ঢেকে রাখেন।

গ. উদ্দীপকটি রাহেলার সিদ্ধান্তে অটল থাকার দিক থেকে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
সব মানুষের মনের দৃঢ়তা এক রকম নয়। মনোবলের অভাবে এবং অন্যের সমালোচনার ভয়ে কেউ কেউ নিজের সংকল্পে অটল থাকতে পারে না। আবার কেউ কেউ অন্যের সমালোচনাকে মোটেই ভয় পায় না। তারা নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে নিজের কাজ করে সাফল্য ছিনিয়ে আনে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মাদরাসার মেধাবী ছাত্রী রাহেলা বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সিদ্ধান্ত নিলে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য শুরু করে। কিন্তু রাহেলা এসবের প্রতি কর্ণপাত না করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং বিজয় দিবসে চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সবাইকে মুগ্ধ করে। এতে রাহেলার মনের দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে মনোবলহীন বিধ্যস্ত মানুষের কথা, যারা অন্যের সমালোচনার ভয়ে নিজের সংকল্পে অটল থাকতে পারে না। তারা মানুষের সমালোচনাকে ভয় পায় এবং নিজেকে নীরবে ঢেকে রাখে। ফলে তাদের কাজ আর এগোয় না। এতে বোঝা যায়, উদ্দীপকটি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলভাবের দিক থেকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. সমালোচনার ভয়ে দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে রাহেলা তার নিজের সংকল্পে অটল থাকার কারণে উদ্দীপকে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলভাব ফুটে উঠেছে।
কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে, তা ভেবে বসে থাকলে কাজ এগোয় না। তাই দৃঢ় মনোবল নিয়ে সকল সমালোচনা উপেক্ষা করে সংকল্প অনুযায়ী কাজ করা দরকার।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মাদরাসার মেধাবী ছাত্রী রাহেলা বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার এই সিদ্ধান্তের কথা জেনে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য শুরু করে। কিন্তু রাহেলা এসবকে উপেক্ষা করে বিজয় দিবসে চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায়ও মানুষের সমালোচনাকে ভয় না করে সংকল্পে অটল থাকার কথা ব্যক্ত হয়েছে। যারা সমাজে অবদান রাখতে চান তাদের দ্বিধাগ্রস্ত হলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে নিজের সংকল্প অনুযায়ী মহৎ কাজ করতে হলে ভয়-ভীতি-সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। উদ্দীপকের রাহেলার মনোভাবে আলোচ্য কবিতার এই মূলভাবের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের রাহেলার অদম্য মনোভাব ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার মূলভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বস্তুত তার মনোভাবে উক্ত কবিতার মূলভাব ফুটে উঠেছে।

আরো পড়ো বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োদুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. সাদিয়া সমাজের সুবিধা-বঞ্চিত নারীদের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী। তাই সে নিজের গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এজন্য তাকে প্রায়ই এসব গ্রামে যাতায়াত করতে হয়। ফলে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানুষের সমালোচনার ভয়ে সাদিয়া তার উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ায়।
ক. কামিনী রায়ের লেখা ছোটদের কবিতা সংগ্রহের নাম কী?
খ. ‘সম্মুখে চরণ নাহি চলে’- কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. সাদিয়ার উদ্যোগ থেকে সরে দাড়ানোর বিষয়টি ‘পাছে লোকে কিছু বলে‘ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সাদিয়ার ক্ষেত্রে কবি কামিনী রায়ের ‘শক্তি মরে ভীতির কবলে’ কথাটির প্রমাণ পাওয়া যায়।”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কামিনী রায়ের লেখা ছোটদের কবিতা সংগ্রহের নাম ‘গুঞ্জন’।

খ. পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয়ে সম্মুখে চরণ চলে না।
কোনো কাজ করতে হলে দৃঢ় মনোবল থাকা দরকার। কিন্তু কেউ কেউ কাজ করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে- এই ভেবে তারা কাজ করতে সাহস পায় না। লোকলজ্জা ও সমালোচনার ভয়ে তারা সংকল্পে অটল থাকতে পারে না। মনের সংশয় ও সংকোচের কারণে এসব মানুষের চরণ সম্মুখে চলতে চায় না।

গ. সাদিয়ার উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার ভয়-ভীতি, সমালোচনা ও দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার দিকটিকে তুলে ধরে।
মানুষের সমালোচনার ভয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হলে কোনো কাজে সফল হওয়া যায় না। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে- এই ভয় থাকলে কাজ এগোয় না। দৃঢ় মনোবলের অভাবে ও মনের সংকোচের কারণে কোনো কোনো উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সাদিয়া সমাজের সুবিধা-বঞ্চিত নারীদের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী। তাই সে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এজন্য সে আশেপাশের গ্রামে যাতায়াত শুরু করলে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমাজের সমালোচনার ভয়ে সে উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ায়। সাদিয়ার এ বিষয়টি ‘পাছে লোকে কিছু বলে কবিতায় বর্ণিত দ্বিধাগ্রস্তদের আচরণের সাথে তুলনীয়। উক্ত কবিতায় বলা হয়েছে, কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মানুষের সমালোচনার ভয়ে তারা সংকল্পে অটল থাকতে পারে না। ফলে তারা কাজে সফল হয় না। উদ্দীপকের সাদিয়াও সমাজের সমালোচনার ভয়ে তার উদ্যোগকে সফল করতে পারেনি।

ঘ. উদ্দীপকের সাদিয়ার ক্ষেত্রে কবি কামিনী রায়ের ‘শক্তি মরে ভীতির কবলে’ কথাটির প্রমাণ পাওয়া যায়, কেননা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সমালোচনার ভয়ে সে উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
সমালোচনার ভয় কাজের সাফল্যের অন্তরায়। কে কী ভাববে, কে কী মনে করবে- এসব ভেবে বসে থাকলে কাজে অগ্রসর হওয়া যায়। না। দ্বিধা, সংকোচ, ভয় ও লোকলজ্জার কারণে কেউ কেউ সংকল্পে অটল থাকতে পারে না।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, সাদিয়া সমাজের সুবিধা-বঞ্চিত নারীদের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী। তাই সে তার নিজের গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এজন্য সে এসব গ্রামে যাতায়াত শুরু করলে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমাজের সমালোচনার ভয়ে সাদিয়া তার উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ায়। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায়ও সাদিয়ার মতো বিধাগ্রস্তদের কাজের পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা সমাজে অবদান রাখতে চান তাদের দৃঢ় মনোবল নিয়ে দ্বিধা, সংকোচ, লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ সমালোচনার ভয়ে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে এবং ভীতির কারণে তাদের শক্তি মরে যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, “উদ্দীপকের সাদিয়ার ক্ষেত্রে কবি কামিনী রায়ের ‘শক্তি মরে ভীতির কবলে’ কথাটির প্রমাণ পাওয়া যায়।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

৪. গ্রীষ্মের ছুটি হলো। শফিক বাড়িতে আসে। কয়েকজন বেকার যুবক ও সহপাঠী বন্ধুকে নিয়ে পরিকল্পনা করে গ্রামে নৈশবিদ্যালয় খোলার। স্বাই তার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। এজন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র, ঘর, শিক্ষক সবই নির্বাচন করে। এমন সময় গ্রামের এক লোক বলে, এর আগে কামাল মাস্টারের মতো মানুষ এ কাজে ফেল মেরেছে, সেখানে কচি শিশুরা ঘুলবে নৈশ বিদ্যালয়? একথা শুনে তারা দমে যায়।
ক. ‘সংকল্প’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. একটি গ্রেহের কথায় কীভাবে আমাদের ব্যথা দূর হতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
গ. শফিকের উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার কারণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শফিকের মাঝে কী ধরনের পরিবর্তন এলে সে তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হতো তা ‘পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার আলোকে যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মনের দৃঢ় ইচ্ছাই ‘সংকল্প’ শব্দটির অর্থ।

খ. একটি স্নেহের কথায় মানুষের মন আপ্লুত হলেই সকল ব্যথা দূর হয়ে যায়।
মানুষের মন সংবেদনশীল বলেই কটু কথায় কষ্ট পায় আর স্নেহের কথায় সুখ অনুভব করে। মানুষের মনে যদি কোনো গভীর কষ্ট জমে থাকে, তখন কেউ যদি তাকে স্নেহের কথা বলে তবে সেই কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়ে যায়। তাই কবি বলেছেন, একটি স্নেহের কথায় আমাদের কষ্ট দূর হতে পারে।

গ. নিন্দুকের সমালোচনাই শফিকের উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার প্রধান কারণ।
নিন্দুকেরা সব সময় ভালো মানুষের কাজ নিয়ে সমালোচনা করে। তাদের কারণে ভয় পেয়ে ভালো মানুষেরা যে-কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় নিন্দুকের প্রভাব ভালো নয়, খারাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উদ্দীপকের শফিক গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে আসে এবং কয়েকজন বেকার যুবক ও সহপাঠী বন্ধুকে নিয়ে পরিকল্পনা করে গ্রামে নৈশবিদ্যালয় খোলার। আর এর জন্য তারা বেশ প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু গ্রামের এক লোক তাদের উৎসাহকে দমিয়ে দেয়। এ লোকটিই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার নিন্দুক। যাদের কাজ কোনো ভালো মানুষের সমালোচনা করা, যাতে করে সেই ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করতে না পারে। উদ্দীপকের শফিকের উদ্যোগ স্থগিত থাকার একমাত্র কারণ গ্রামের সেই নিন্দুকের সমালোচনা।

ঘ. শফিক তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে পারত যদি সে মনের দ্বিধা ও সংশয় দূর করতে পারত।
ভালো মানুষদের ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখে নিন্দুকেরা। এসব নিন্দুক ও সমালোচকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিঃসংকোচ চিত্তে জীবনপথে পরিচালিত হওয়ার আহ্বান জানাতে হবে। তাহলে সমাজের মানুষের ওপর নিন্দুকের কোনো প্রভাব পড়বে না। এসব কথাই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকের শফিক গ্রামে নৈশবিদ্যালয় খুলতে গেলে গ্রামের এক লোক বলে- এর আগে কামাল মাস্টারের মতো মানুষ এ কাজে ফেল মেরেছে। সেখানে কচি শিশুরা খুলবে নৈশ বিদ্যালয়? এতে তারা দমে যায়। কিন্তু শফিকের মনের দ্বিধা ও সংশয় যদি দূর হতো, সে যদি সমালোচকের সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করতো তাহলে সে তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হতো। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কবিও সমালোচকদের সমালোচনাকে উপেক্ষা করে পথ চলার কথা বলেছেন।
কবি মনে করেন, যারা সমাজে অবদান রাখতে চান তাদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। উদ্দীপকের শফিক যদি তার মাঝে এমন পরিবর্তন আনতে পারত তাহলে অবশ্যই সে তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হতো।

৫. সুমী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার মনে অনেক স্বপ্ন। একটি সুন্দর সমাজ গঠনের চিন্তা তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। দরিদ্র এবং অসহায় মানুষের জন্য সে কিছু করতে চায়। কিন্তু বৃদ্ধ দাদুর রক্ষণশীল মনোভাবের জন্য তার মতো মেয়ের পক্ষে এসব করা সম্ভব নয় বলে সে বুঝতে পারে। অবশেষে সে বাধ্য হয়ে তার স্বপ্নগুলোকে তার নিজের অন্তরেই গোপন রাখে।
ক. আমরা কেন কাজ করতে পারি না?
খ. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ – বলতে কী বোঝ?
গ. সুমীর স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ার কারণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’- কবিতার কোন দিকটির সাথে সাময়স্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুমীর ব্যর্থতার পেছনে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় নির্দেশিত কারণটি কতটা প্রভাব ফেলেছে? বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সদা ভয় ও লাজে আমরা কোনো কাজ করতে পারি না।

খ. পাছে লোকে কিছু বলে বলতে অন্যের সমালোচনার প্রতি ভীতি ও সংশয়কে বোঝানো হয়েছে।
সমাজে যারা অবদান রাখতে চায়, তাদের দ্বিধা করলে চলবে না।
দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এমন অনেকেই আছে যারা কাজ করতে গেলেই ভাবে, লোকে কী ভাববে- অর্থাৎ বিধাগ্রস্ত হয়ে ভাবতে থাকে যে তার কাজের জন্য কে, কী সমালোচনা করে।

গ. সুমীর স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ার কারণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় চিত্রিত দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকে সুন্দর সমাজ গঠনে স্বপ্নাতুর সুমীকে ব্যর্থ হতে দেখা যায়। দরিদ্র এবং অসহায় মানুষের জন্য তার অন্তরের শুভ স্বপ্নগুলো দাদুর রক্ষণশীল মনোভাবের জন্য বিকশিত হতে পারেনি।
‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ মানসিকতা আমাদের শুভ উদ্যোগে কীভাবে বাধা দেয় তা প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মনে বুদ্বুদের মতো অসংখ্য শুভ চিন্তা দেখা দিলেও সংশয় ও শঙ্কার জন্য তা পরক্ষণেই হৃদয়ের আড়ালে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শুভ ভাবনাগুলো বিকশিত হওয়ার আগেই অঙ্কুরে ঝরে পড়ে। অন্তরের সংকল্প দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে না। উদ্দীপকের সুমীর স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ার কারণ কবিতার সংশয়তাড়িত মনোভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. সুমীর মাঝে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় নির্দেশিত কারণটি পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করে আছে।
উদ্দীপকে সুমীকে ভালো কাজের স্বপ্ন-পথিক হিসেবে দেখতে পাই। কিন্তু দাদুর রক্ষণশীল মনোভাবের জন্য সুমীর শুভ স্বপ্নগুলো ব্যর্থ হয়। মানসিক শক্তির অভাবে তাকে আদর্শ পথ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে।
‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতায় আমাদের সংশয় ও শঙ্কাজর্জরিত মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। ভয়, লজ্জা ও সংকোচ নামক ব্যাধি আমাদের শুভবুদ্ধিকে ধ্বংস করছে। আড়ালে লুকিয়ে থেকে নিজেকে গোপন করে রাখার মানসিকতা প্রবল হয়েছে এ কবিতায়।
উদ্দীপক ও কবিতায় দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকে সুমী শুভ স্বপ্নকে লালন করলেও শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ দাদুর রক্ষণশীল মনোভাবের কথা ভেবে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সুমীর মনের জোর নেই বলেই অন্য লোক কী বলবে সে বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়েছে সে। আমাদের ব্যর্থতার পেছনে আলোচ্য কবিতার কবি এ কারণটিকেই দায়ী করেছেন।

Leave a Comment