(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: দুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

দুই বিঘা জমি হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কবিতা। দুই বিঘা জমি কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

দুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল

১. কাটিপতি শফিক সাহেবের অঢেল সম্পত্তি। কিন্তু তার আরো চাই। তার সুদৃশ্য বহুতল ভবনের পাশেই গরিব মতিন মিয়ার কুঁড়েঘর। শফিক সাহেব মনে করেন, কুঁড়েঘরটি তার ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। শফিক সাহেব মতিন মিয়াকে অনেকবার বাড়িটি তার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু অনেক স্মৃতিবিজড়িত পৈত্রিক বাড়িটি বিক্রি করবে না বলে সে শফিক সাহেবকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। শফিক সাহেব মতিন মিয়ার নামে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। শেষ পর্যন্ত মতিন মিয়া বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের মতিন মিয়া ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মধ্যকার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. শফিক সাহেব যেন ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারদেরই প্রতিনিধি— মূল্যায়ন কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি ‘চিত্রা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ. উদ্ধৃত চরণটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, ধনীরা আরও ধনী হওয়ার জন্য গরীবের সামান্য সম্পদও হরণ করে।
ধনীদের সম্পদের প্রতি লালসা অত্যন্ত বেশি। তাদের অনেক সম্পদ থাকলেও তারা আরও বেশি সম্পদের মালিক হতে চায়। সম্পদ বাড়ানোর জন্য তারা অনৈতিক পথে পা বাড়াতেও দ্বিধা করে না। আলোচ্য কবিতায়ও আমরা দেখি জমিদারের অনেক জায়গা জমি থাকার পরও সে প্রতারণার মাধ্যমে উপেনের সর্বশেষ সম্বল দুই বিঘা জমিও দখল করে নেয়।

গ. উদ্দীপকের মতিন মিয়া ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মধ্যে সর্বস্ব হারানোর দিকটিই সাদৃশ্যপূর্ণ।
সমাজে একশ্রেণির মানুষ আছে যাদের অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অন্যের সম্পদ গ্রাস করতে চায়। সাধারণত দরিদ্র অসহায় শ্রেণি এদের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, কোটিপতি শফিক সাহেব অঢেল সম্পত্তির মালিক। তার বহুতল ভবনের পাশেই গরিব মতিন মিয়ার কুড়ে ঘরটি। ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট করার কারণে শফিক সাহেব মতিন মিয়াকে ঘরটি বিক্রির প্রস্তাব দেন। কিন্তু মতিন মিয়া তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অবশেষে শফিক সাহেব মতিন মিয়ার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে নিরুপায় মতিন মিয়া বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায়ও দেখা যায় যে, দরিদ্র কৃষক উপেন অভাব-অনটনে বন্ধক দিয়ে তাঁর প্রায় সব জমি হারিয়েছে। বাকি ছিল মাত্র দুই বিঘা জমি। কিন্তু জমিদার তার বাগান বাড়ানোর জন্য তার সেই দুই বিঘা জমিরও দখল নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত সেই জমি উপেন দিতে না চাইলে জমিদারের ক্রোধের শিকার হয় সে। মিথ্যে মামলা দিয়ে জমিদার সেই জমি দখল করে নেয়। ভিটেছাড়া হয়ে উপেন পথে বেরুতে বাধ্য হয়। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের মতিন মিয়া ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মধ্যে সর্বস্ব হারানোর দিকটি সাদৃশ্য দেখা যায়।

ঘ. “শফিক সাহেব যেন ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারদেরই প্রতিনিধি”- মন্তব্যটি যথার্থ।
সবলরা চিরদিন দুর্বলদের শোষণ করে এসেছে। দুর্বলদের ওপর অমানবিক নিপীড়নের চিত্র এঁকে আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের মতো লেখকরা।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, শফিক সাহেব কোটিপতি ও অঢেল সম্পদের মালিক। তার বহুতল ভবনের পাশেই ছিল মতিন মিয়ার কুড়েঘরটি। তিনি মতিন মিয়াকে কুড়েঘরটি তার কাছে বিক্রির প্রস্তাব করেন। কিন্তু মতিন মিয়া তার প্রস্তাব নাকচ করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মতিন মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। পরিশেষে নিরুপায় মতিন মিয়া বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। যা একজন অসহায় কৃষকের ওপর অত্যাচার ও শোষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায়ও কবি অত্যাচার ও শোষণের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। দরিদ্র কৃষক উপেন অভাব-অনটনে বন্ধক দিয়ে তাঁর প্রায় সব জমি হারিয়েছে। বাকি ছিল মাত্র দুই বিঘা জমি। কিন্তু জমিদার তাঁর বাগান বাড়ানোর জন্য সেই জমির দখল নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত সেই জমি উপেন দিতে না চাইলে মিথ্যে মামলা দিয়ে জমিদার সেই জমি দখল করে নেন। এখানেও একটি চরম শোষণের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে শফিক সাহেব মতিন মিয়ার অসম্মতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যার কারণে মতিন মিয়া কুে ঘরটি ছাড়তে বাধ্য হন। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায়ও উপেন জমিদারের শোষণের শিকার হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। সুতরাং উদ্দীপক ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার আলোকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, “শফিক সাহেব যেন ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারদেরই প্রতিনিধি।”

২. গগন মাঝির শেষ পৈতৃক সম্বল তার বসতভিটা। হঠাৎ একদিন বাড়ি ফিরে দেখে পেশি শক্তির জোরে তার পড়শি বাড়িটি দখলে নিয়ে নিজের বলে দাবি করছে। পরিবার পরিজন নিয়ে সে পথে পথে ঘোরে। শুরু হয় তার দুঃখের জীবন। অনেক আইনি জটিলতা শেষে দশ বছর পর সে বাড়িটি ফিরে পায়।
ক. ‘রাজা’ কার জমি দখল করে নেয়?
খ. ‘এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি’- কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের পড়শির মাঝে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের চরিত্রের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপক আর ‘দুই বিঘা জমি‘ কবিতার মূল বক্তব্য একই”— উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘রাজা’ উপেনের জমি দখল করে নেয়।

খ. এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি’- কথাটি দিয়ে লোভী মানুষের অগণিত প্রত্যাশাকে বোঝানো হয়েছে।
কবি বলতে চেয়েছেন যে, সমাজের একশ্রেণির লুটেরা, বিত্তবান প্রবল প্রতাপ নিয়ে বাস করে। তারা অন্যায়ভাবে গরিব মানুষের সম্পদ লুট করে নিয়ে সম্পদশালী হয়। তারা অর্থ, শক্তি আর দাপটের জোরে অন্যায়কে ন্যায় মনে করে উপেনের মতো অসহায় লোকদের নিঃস্ব করে। এ জগতে তাদের প্রচুর সম্পদ আছে তবুও আরো সম্পদ চাই। এই হীন মানসিকতার লোকেরা সমাজে ঘৃণিত ও নিন্দিত।

গ. উদ্দীপকের পড়শির মাঝে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের চরিত্রের অন্যায়ভাবে অসহায় লোকদের নির্মম নির্যাতনের দিকটি ফুটে উঠেছে।
ধনীর লালসা কেবল ধনের প্রতি। ধনসম্পদ পাওয়ার মাঝেই তার তৃপ্তি। ধন লাভের নিমিত্ত যে-কোনো অন্যায় কাজ করতেও তার ৰাধে না। যুগ যুগ ধরে এভাবে দরিদ্ররা শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে।
উদ্দীপকের পড়শি পেশি-শক্তির জোরে গগন মাঝির শেষ সম্বল বসতভিটা দখল করে নিয়ে নিজের বলে দাবি করে। দরিদ্র গগন মাঝি এখন পরিবার নিয়ে পথে পথে ঘোরে। শুরু হয় তার দুঃখের জীবন। অনুরূপ ঘটনা ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বর্ণনায় ফুটে উঠেছে। এ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামন্তপ্রভুদের নির্মমতার স্বরূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। বাগান বাড়ানোর জন্য জমিদার বাবু উপেনের দুই বিঘা জমি কেড়ে নিতে চায়। অথচ এই দুই বিঘা জমিই উপেনের একমাত্র সম্বল। সাত-পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত জমির দখল ছাড়তে না চাইলে সে জমিদার বাবুর ক্রোধের শিকার হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে জমিদার উপেনের ভিটে দখল করে তাকে গৃহহারা করেন।

ঘ. উদ্দীপক আর দুই বিঘা জমি’ কবিতার মূল বক্তব্য একই”- উক্তিটি যথার্থ।
সমাজে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার অত্যন্ত প্রকট। মানুষের রয়েছে বিবেক-বোধ। মানুষের মানবিকতাই পারে অসহায়দের রক্ষা করতে আর সবলদের ন্যায়-অন্যায় বুঝিয়ে দিতে। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় বাবু সাহেব শুধু অত্যাচারীই নন, ন্যায়বোধহীন, অসৎ চরিত্রও বটে। দরিদ্র কৃষক উপেনের শেষ সম্বল সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত ভিটার দিকে নজর পড়ে তার।
তাই মিথ্যে সেনার অজুহাতে তার সামান্য আশ্রয়টুকু কেড়ে নিতেও সে পিছপা হয় না।
উদ্দীপকে যেমন নির্মমতার চিত্র ফুটে উঠেছে, তেমনি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার মূল বক্তব্যেও অনুরূপ বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। গগন মাঝির শেষ সম্বল ছিল তার একমাত্র বসতভিটা । বসবাসের সে জায়গাটুকুও জোর করে তার এক পড়শি দখল করে নেয়। কবিতার উপেনের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। উপেন যেমন শেষ সম্বলটুকু জমিদারের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি, তেমনি উদ্দীপকের গগন মাঝিও অনুরূপ নির্যাতনের শিকার। অবশেষে আইনের আশ্রয় নিয়ে সে বাড়িটি ফিরে পায়। উপেন মিথ্যা মামলার দায়ে ভিটেছাড়া হয়ে পড়ে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

আরো পড়ো →বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো →ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. সাব্বির দীর্ঘদিন ধরে শহরে থাকে। নিজ গ্রাম মহেশপুরে তার আপনজন বলতে কেউ নেই। ছোটবেলায়ই তার বাবা- মা মারা যায়। জমিজমা যা ছিল তার চাচা দখল করে নিয়েছে। সাব্বির যে দোকানে থাকে সেও তাকে তার প্রাপ্য বেতন দেয় না। প্রায়ই তার মন ছুটে যায় সুদূর গ্রামের পানে। নিজ এলাকার কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারে না।
ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার দুই বিঘা জমির মালিকের নাম কী?
খ. রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’ বলতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সাব্বিরের চাচা এবং ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের চরিত্রের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাব্বির ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সার্থক প্রতিনিধি- মতামত দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার দুই বিঘা জমির মালিকের নাম উপেন।

খ. এখানে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, ধনীরা আরো ধনী হওয়ার নেশায় দরিদ্রদের সামান্য যা কিছু আছে তাও হরণ করে।
ধনীদের সম্পদের প্রতি লালসা অত্যন্ত বেশি। তাদের অনেক সম্পদ থাকলেও তারা আরো বেশি সম্পদের মালিক হতে চায়। সম্পদ বাড়ানোর জন্যে তারা অনৈতিক পথে পা বাড়াতেও দ্বিধা করে না। এই কবিতায়ও আমরা দেখি জমিদারের অনেক জায়গা জমি থাকার পরও সে প্রতারণার মাধ্যমে উপেনের সর্বশেষ সম্বল দুই বিঘা জমিও দখল করে নেয়।

গ. উদ্দীপকের সাব্বিরের চাচা ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের প্রতিরূপ।
আমরা উদ্দীপকে লক্ষ করি, সাব্বির দীর্ঘদিন যাবৎ শহরে বাস করে। তার বাবা-মা ছোটবেলায়ই মারা যায়। তার নিজ গ্রাম মহেশপুর। তার জমা-জমি যা কিছু ছিল তার চাচা দখল করে নিয়েছে। শিশু ভাতিজার প্রতি কোনোরূপ মায়া-মমতা, দাক্ষিণ্য চাচা দেখাননি। নির্দয়ভাবে জমা-জমি কেড়ে নিয়ে এতিম সাব্বিরকে ভিটেছাড়া করেছে, গ্রামছাড়া করেছে। তাই বাধ্য হয়ে সাব্বির শহরে এসে উঠেছে। এখানে এক দোকানে কাজ করে সে জীবিকানির্বাহ করে যদিও দোকান মালিক তাকে ন্যায্য প্রাপ্য দেয় না। এতিম সাব্বির নির্যাতিত, শোষিত, নিগৃহীত দুই জায়গায়ই।
‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দেখা যায়, হতদরিদ্র উপেন অভাব- অনটনে পড়ে সব জমি হারিয়েছে। বাকি আছে মাত্র দুই বিঘা জমি। কিন্তু জমিদার তার বাগান দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বৃদ্ধি করার জন্য সেই জমিটুকু কিনতে চায়। কিন্তু সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত সেই ভগ্নি উপেন দিতে না চাইলে জমিদারের কোপানলে পড়ে সে। দিচ্ছে মামলা দিয়ে জমিদার সে জমি দখলে নেয়। ভিটেছাড়া হয়ে উপেন বাধ্য হয়ে পথে বের হয়। এরপর উপেন দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। এখানে জমিদার উপেনের জমি কেড়ে নিয়ে তাকে ভিটেছাড়া করেছে, তাকে গ্রামছাড়া করেছে। অপরপক্ষে, উদ্দীপকেও চাচা সাব্বিরের জমি কেড়ে নিয়ে তাকে ভিটেছাড়া করেছে, গ্রামছাড়া করেছে। এখানে, চাচা ও বাবু সাহেব তথা জমিদার দুজনই গোষ্ঠী, স্বার্থপর, পরের সম্পদ হরণকারী। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের চাচা ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেব এক ও অভিন্ন, উভয়েই স্বার্থান্ধ, নীচ প্রকৃতির মানুষ।

ঘ. উদ্দীপকের সাব্বির ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সার্থক প্রতিনিধি- মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি, সাব্বির দীর্ঘদিন যাবৎ শহরে বাস করে। সংসারে তার আপন বলতে কেউ নেই। ছোটবেলায়ই তার মা-বাবা মারা যায়। জমা-জমি যা কিছু ছিল তার চাচা দখল করে নিয়েছে। তাই নিজ গ্রাম মহেশপুর ছেড়ে সে শহরে এসে এক দোকানে কাজ করে। দোকান মালিক তাকে তার প্রাপ্য বেতন দেয় না। সর্বত্রই সে শোষিত, অবহেলিত, নিগৃহীত।
আমরা ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দেখতে পাই, হতদরিদ্র উপেন অভাব-অনটনে পড়ে জমা-জমি সব হারিয়েছে। বাকি ছিল দুই বিঘা জমি। জমিদার বাবু তার বাগানের জায়গা বাড়ানোর জন্য ওই দুই বিঘা জমি কিনতে চান। সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত ভিটেটুকু বিক্রি করতে না চাইলে উপেনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বাবু সেই দুই বিঘা জমি দখল করে নেয়। শেষ সম্বল হারিয়ে উপেন গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। সাধুর সঙ্গী হয়ে সে নানান দেশে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু নিম্ন জন্মভূমির কথা সে কখনো ভুলতে পারে না।
আমরা উদ্দীপকের সাব্বির ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মধ্যে একই রূপ দেখতে পাই। উভয়ই নিজের সাত পুরুষের ভিটে ছেড়েছে স্বার্থান্ধ মানুষের দ্বারা। উপেনের দুই বিঘা জমি জমিদার বাবুর বাগানের জন্য একান্ত প্রয়োজন। তাই ছলেবলে, কৌশলে বাবু ওই দুই বিঘা জমি দখল করেছে উপেনকে গ্রামছাড়া করেছে। আর সাব্বিরের চাচা এতিম ভাতিজার জমি-জমা কেরে নিয়ে তাকে গ্রামছাড়া করেছে। উপেন ও সাব্বিরের জন্মভূমির প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। কারণ এ গ্রামগুলো হচ্ছে তাদের মাতৃভূমি। সবদিক বিবেচনা করে উপসংহারে বলা যায়, উদ্দীপকের সাব্বির ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সার্থক প্রতিনিধি, একে অপরের পরিপূর্ণ পরিপূরক।

৪. শিল্পপতি আলম আহম্মেদের বাড়ির পাশে দরিদ্র তোতা মিয়ার বাড়ি। বাড়ির পাশের এক টুকরো ফসলি জমিই তার শেষ সম্বল। তোতা মিয়ার একমাত্র সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। সন্তানের চিকিৎসার জন্য সে তার শেষ সম্বলটুকু আলম সাহেবের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিলে তিনি তা বিক্রি করতে বারণ করেন আর তার সন্তানের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার আলম সাহেব বহন করেন।
ক. ‘ভূস্বামী’ শব্দের অর্থ কী?
খ. জমিদার বাবু উপেনকে খুন করতে চেয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের তোতা মিয়ার সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের বৈসাদৃশ্যের দিক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলম সাহেৰ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের চরিত্রের বিপরীত- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ভূস্বামী’ শব্দের অর্থ জমিদার বা যিনি অনেক জমির মালিক।

খ,. আম চুরির অভিযোগে মালি উপেনকে জমিদারের কাছে নিয়ে গেলে, জমিদার সবকিছু শোনার পর রেগে গিয়ে উপেনকে খুন করতে চেয়েছিল।
অভাব-অনটনে থাকা দরিদ্র কৃষক উপেন তার সব জমি হারিয়েছে। অবশিষ্ট ছিল শুধু দুই বিঘা জমি কিন্তু মিথ্যা ঋণের দায়ে জমিদার তাকে তার জমি ছাড়তে বাধ্য করে। এমনকি তার নিজ গাছের আম চুরির মিথ্যা অপরাধে জমিদার তাকে খুন করার হুমকিও দেয়।

গ. উদ্দীপকের তোতা মিয়ার সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
উদ্দীপকের তোতা মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক। তার শেষ সম্বল বলতে বাড়ির পাশে এক টুকরো ফসলি জমি। কিন্তু তোতা মিয়ার একমাত্র সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে, চিকিৎসার জন্য সে তার শেষ সম্বলটুকুও আলম সাহেবের নিকট বিক্রি করতে প্রস্তুত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন তার পৈতৃক সম্পত্তি ধরে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। পরধনলোভে মত্ত ভূস্বামীর অনৈতিক ক্ষমতার দাপটে উপেন তার জমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। উদ্দীপকের তোতা মিয়া একমাত্র সন্তানের চিকিৎসার জন্য নিজের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি না করার আকাঙ্ক্ষার দিকটি সুস্পষ্ট।

ঘ. উদ্দীপকের আলম সাহেবের চরিত্রটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের চরিত্রের বিপরীত- উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের আলম সাহেব একজন শিল্পপতি। তার বাড়ির পাশেই দরিদ্র তোতা মিয়ার বাড়ি। তিনি ইচ্ছা করলেই তোতা মিয়ার ফসলি জমিটুকু কিনতে পারতেন কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো তোতা মিয়াকে তার জমি বিক্রি না করার উপদেশ দেন এবং তার সন্তানের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার বিপরীত মেরুর মানুষ। তার ন্যায়-অন্যায়বোধ ছিল না। তাই তিনি তার বাগানের সীমানা বৃদ্ধির জন্য জোর করে উপেনকে ভিটেছাড়া করেন। মিথ্যা দেনার অভিযোগে উপেনের সামান্য ঠাঁইটুকুও গ্রাস করেন। জমিদার ভালো মানুষ ছিল না বলেই জোর করে অন্যের জমি হস্তগত করেন।
‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা ও উদ্দীপকের বিশ্লেষণের আলোকে বলা যায়, আলম সাহেব ও জমিদার দুই বিপরীত চরিত্রের মানুষ। কবিতার জমিদার প্রচণ্ড মাত্রায় অমানবিক, অত্যাচারী চরিত্রের অধিকারী, অথচ উদ্দীপকের আলম সাহেব মানবতার মূর্ত প্রতীক। তিনি তোতা মিয়ার বিপদের দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

৫. হোসেন একজন বর্গাচাষী। অন্যের জমি চাষাবাদের মাধ্যমে তার সংসার চলে। একমাত্র মেয়ে রহিমাকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠায় কিন্তু বিত্তবান রহমত আলী বিষয়টা ভালোভাবে নেয় না। ষড়যন্ত্র করে রহমত তাকে ভিটে-মাটি ছাড়া করে। হোসেন নিরুপায় হয়ে দূর গ্রামে চলে যায়। রহমত আলীর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে অমিত পিতার কর্মকাণ্ডে বিব্রত ও লজ্জিত হয় এবং পিতাকে এ ধরনের অমানবিক আচরণ থেকে বিরত করে হোসেনকে তার ভিটায় ফেরার ব্যবস্থা করে।
ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন কতদিন পর ভিটে-মাটি ছেড়ে পথে বের হলো?
খ. তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ একথা বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে দুই বিঘা জমি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন যদি উদ্দীপকের হোসেনের অবস্থায় পড়তেন তাহলে উপেনকে ভিটেমাটি হারাতে হতো না- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন দেড় মাস পর ভিটেমাটি ছেড়ে পথে বের হলো।

খ. জমিদার বাবু উপেনকে চোর বলে অপবাদ দেওয়ায় উপহাস ও আক্ষেপে উপেন আলোচ্য কথাটি বলেছে।
বাগান সাজাতে নিরীহ উপেনের বসতভিটার ওপর চোখ পরে জমিদারের। মিথ্যা মামলা দিয়ে অবশেষে জমিদার তাকে ভিটেছাড়া করেন। দীর্ঘ পনেরো-ষোলো বছর পথে পথে সন্ন্যাসীবেশে কাটায় উপেন। জন্মভূমির মায়ায় একদিন ফিরে এসে তার দখলি ভূমিতে বিশ্রাম নিতে বসে। বিশ্রামকালে আম গাছের দুটি আম তার কোলে পড়ে। এতে বাগানের মালী তাকে চোর অপবাদ দিয়ে জমিদারের নিকট নিয়ে যায়। উপেন জমিদারের কাছে দুটি আম ভিক্ষে চায়। জমিদার তখন তাকে চোর অপবাদ দেয়। যে জমিদার তাকে ভিটেছাড়া করেছে আজ তার মুখেই চোর অপবাদ শুনে উপেনের চোখে জল এসে যায় এবং উপহাস ও আক্ষেপ করে বলে, “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ।”

গ. উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসবে সমাজেই তাকে বসবাস করতে হয়। তাছাড়া ধনী-গরিব মিলেই সমাজ। কিন্তু ধনীরা কেবল তাদের ধনবৃদ্ধির লালসায় থাকে। এজন্য সবলরা দুর্বল ও অসহায়দের ওপর অত্যাচার করে এবং অন্যায় আবদারে তাদেরকে ভিটেছাড়া করে। এতে করে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী হয় সর্বস্বান্ত আর ধনীরা হয় আরও ধনী।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রহমত আলী একজন পরশ্রীকাতর মানুষ। বর্গাচাষী হোসেনের মেয়ে রহিমা লেখাপড়া শেখার জন্য স্কুলে যায়। কিন্তু ভুলে যাওয়াটা রহমত আলী অপছন্দ করেন। রহিমার স্কুলে যাওয়া বন্ধের জন্য হোসেনকে তিনি ভিটেছাড়া করেন। হোসেন নিরুপায় হয়ে দূরে কোনো এক গ্রামে চলে যায়। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন এক দরিদ্র কৃষক। দরিদ্রতা ও ঋণের ভারে জমি হারাতে হয় তাকে। এখন দুই বিঘা জমিই তার শেষ সম্বল। কিন্তু নিষ্ঠুর জমিদার তার বাগানের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান করার জন্য তার শেষ সম্বল এই দুই বিঘা জমি কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু সাতপুরুষের ভিটেমাটি ছাড়তে উপেন নারাজ। নিষ্ঠুর জমিদার তাকে শাসিয়ে মিথ্যে ঋণের মামলা করে। এতে সাত পুরুষের রেখে যাওয়া ভিটেখানিও ছাড়তে বাধ্য হয় নিরীহ কৃষক উপেন । তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রহমত আলী ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার নিষ্ঠুর-নির্দয় কথিত জমিদার চরিত্রটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন যদি উদ্দীপকের হোসেনের অবস্থায় পড়তেন তাহলে উপেনকে ভিটেমাটি হারাতে হতো না- মন্তব্যটি যথার্থ।
বর্তমান সমাজ বৈষম্যপূর্ণ। চতুর্দিকে সাম্যের হাহাকার। অবশ্য ধনী-গরিব ব্যবধানই এর মূল কারণ। সমাজে ধনীরা কখনো অল্পে তুষ্ট হয় না। সর্বদা তারা আরও চায় এবং আরও পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় লিপ্ত। এভাবে দরিদ্ররা হয় আরও দরিদ্র এবং শোষণের শিকারে নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে সর্বস্ব হারায়।
উদ্দীপকে হোসেন বর্গাচাষী কৃষক। অন্যের জমিতে চাষাবাদে তার সংসার চলে। মেয়ে রহিমাকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠায়। কিন্তু বিত্তবান রহমত আলী রহিমার শিক্ষিত হওয়া মেনে নিতে পারে না। তাই হোসেনকে সে ষড়যন্ত্র করে ভিটেছাড়া করে। কিন্তু রহমত আলীর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে অমিত পিতার এ ধরনের আচরণ থেকে মুক্ত করে হোসেনকে তার ভিটেতে ফিরিয়ে আনে। এদিকে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন দরিদ্রতা ও ঋণের কারণে সর্বস্ব হারিয়ে এখন কেবল দুই বিঘা জমির মালিক সে। কিন্তু জমিদার তার বাগানের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান করার জন্য উপেনকে সে জমিও বিক্রির প্রস্তাব দেন। উপেন সাত পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে বিনয়ের সাথে অসম্মতি প্রকাশ করে। কথিত জমিদার উপেনকে শাসিয়ে মিথ্যে ঋণের দায়ে আদালতের নির্দেশ জারি করে ভিটেছাড়া করে। দীর্ঘ পনেরো ষোলো বছর পর ভিটের মায়ায় পুনরায় ভিটেতে একটু বিশ্রাম নিতে আসলে অযথা তাকে আম চুরির অপবাদ দেওয়া হয়।
তাই বলা যায়, ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন যদি উদ্দীপকের হোসেনের অবস্থায় পড়তেন, তাহলে উপেনকে ভিটে ছাড়তে হতো না। কেননা, রহমত আলীর মধ্যে র্খা ছিল রহিমার শিক্ষিত হওয়া নিয়ে। আর কথিত জমিদারের লোভনীয় দৃষ্টি ছিল উপেনের জমির প্রতি। কিন্তু উদ্দীপকের রহমত আলীর মতো জমিদারকে শোধরানোরও কেউ ছিল না। রহমত আলীর ছেলে অমিত পিতার আচরণ শোধরানোর ব্যবস্থা করেছেন বলেই হোসেন ভিটেমাটি ফিরে পায়। এসব কারণে, প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি যথার্থ বলা যায়।

Leave a Comment